★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) - Ja-al-haq Discussions on

ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

edited November 2016 in Ja-al-haq
ইদে মিলাদুন্নবী ﷺ পালন করা জায়েজ না হারাম.......??????

This Is A Celebration Of The Prophet (SALLALLAHO ALAHI WASALLAM) Honorable Milaad In Egypt In The Year 1904.

ইদে মিলাদুন্নবী ﷺ পালন করা জায়েজ না হারাম.......??????
★★★★★---------★★★-----★★★★
বাতিলপন্থীরা বলে থাকে মীলাদ বা মীলাদুন্নবী শব্দের ব্যবহার নাকি কুরআন শরীফ হাদীস শরীফে কোথাও নাই। এটা নাকি মনগড়া এবং নতুন উদ্ধাবিত শব্দ। তাহলে আসুন দেখা যাক মীলাদ ও মীলাদুন্নবী শব্দ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে আছে কিনাঃ
মিলাদ শব্দটির মূল অক্ষর হচ্ছে و + ل + د) ولد) । আমরা দেখব কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে মূল অক্ষরে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কিনা।
কোরআন শরীফে মীলাদ শব্দের প্রমানঃ
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
আর শান্তি বর্ষিত হোক আমার উপরে যে দিন আমার জন্ম হয়েছিলো, আর যে দিন আমি ইন্তেকাল করবো । আর যে দিন আমাকে পুররুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায় । (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরূপ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিজের বক্তব্য উল্লেখ করে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- 
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আমার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন আমি বিলাদতী শান প্রকাশ করি, যেদিন আমি বিছালী শান প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
আমরা দেখলাম কুরআন মাজীদে মূল অক্ষরে وَلَدَتُ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে; যার অর্থ আমি জন্ম গ্রহণ করেছি । এ শব্দটি প্রমাণ করে মিলাদের মূল অস্তিত্ব কুরআন শরীফে বিদ্যমান ।
হাদীস শরীফে মীলাদ শব্দের প্রমানঃ
আসুন দেখা যাক, কুরআন শরীফের পাশাপাশি হাদীস শরীফে এ শব্দটির ব্যবহার হয়েছে কিনা । ছিয়া ছিত্তার অন্যতম কিতাব, জামে তিরমিযী শরীফে ميلاد ‘মিলাদ’ (জন্মের সময়) শব্দটি নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ব্যবহার করেছেন ।
ঈদে মীলাদুন নবীর দলিল পবিত্র কুরআন শরীফেই আছে
.......................................................................
১২ রবিউল আ্উয়াল শরীফ উপলক্ষে খুশি করতে হবে, কি না হবে এটা নিয়ে ডিবেট করে। বলে এর কোন দলিল নাই। অথচ পবিত্র কু্রআন পাকেই এ ব্যাপারে স্পষ্ট দলিল আছে, এর ব্যাখ্যার জন্য হাদীস শরীফে যাওয়ার দরকার নাই।
আসুন সূরা ইউনুস এর ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত দুটি দেখি
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নসিহতকারী, অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকারী, হিদায়েত দানকারী ও ঈমানদারদের জন্য রহমত দানকারী।
হে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তারা যে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ‘ফযল ও রহমত’ পেয়েছে সে জন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। নিশ্চয় তাদের এ খুশি প্রকাশ করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয়ের থেকে উত্তম।
(সূরা ইউনুস শরীফ : ৫৭-৫৮)
সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াতে বোঝা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ যে বিষয়টি এসেছে, তার জন্য খুশি প্রকাশ করতে বলা হচ্ছে। সেই বিষয়টির হচ্ছে-
১) নসিহতকারী
২) অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকারী,
৩) হেদায়েত দানকারী
৪) রহমতদানকারী
এবার আসুন, কুরআন পাকের সূরা আলে ইমরানের ১৬৪ নং আয়াতখানা দেখি-
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍنٍ
“আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সুরা আলে ইমরান ১৬৪)
এ আয়াত শরীফ অনুসারে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই হচ্ছেন নসিহতকারী, আমাদের অন্তরের পরিশোধকারী এবং হেদায়েতদানকারী।
আবার সূরা আল আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। ( সুরা আল আম্বিয়া, ১০৭) অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে সমগ্র কায়েনাতের জন্য রহমত।
সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত, সূরা আল ইহরানের ১৬৪ নং আয়াত এবং সূরা আম্বিয়ার ১০৭ আয়াত গুলো থেকে পাওয়া যায়---
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন নসিহতকারী, হেদায়েতদানকারী, অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকারী এবং রতমত। তাই উনাকে পাওয়ার জন্য খুশি প্রকাশ করাটা মহান আল্লাহ তায়ার নির্দেশ এবং সব চাইতে ফজিলতপূর্ণ আমল। সুবহানাল্লাহ
পবিত্র হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
---------+---+-+---------------------------------------------
– أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ الْقَطَّانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ، وَالْحَجَّاجُ، قَالَا: حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا غَيْلَانُ بْنُ جَرِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ صَوْمُ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ؟ قَالَ: ” فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ الْقُرْآنُ ” أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ فِي الصَّحِي
(১) অর্থহযরত আবু কাতাদা আনসারী رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিঁনি ইরশাদ করেন-সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং সোমবারই আমার প্রতি ওহী নাজিল করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, পৃঃ৩৬৮হাদীছ নং১৯৭৭, মুসনাদে ইমাম আহমদ, খন্ড-৫ম, পৃ-২৮৭ হা.নং২১৫০৮, মিশকাত পৃঃ১৭৯, বায়হাকী শরীফ, খন্ড ১ম, পৃ-৭২, মেরকাত শরহে মিশকাত, খন্ড-৪র্থ, পৃ-২৯১, সুনালুল কোবরা, খন্ড-৪র্থ, পৃ-২৯৩)।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শুভ বেলাদতের বর্ণনা দিতে গিয়ে আরো বলেন- অর্থ
৩৫৫৭ – حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَمْرٍو عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي آدَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا حَتَّى كُنْتُ مِنْ الْقَرْنِ الَّذِي كُنْتُ فِيهِ
নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামÑএর আওলাদ হতে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নির্বাচন করেছেন এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম হতে কেনানাহকে নির্বাচন করেছেন এবং কেনানার বংশ হতে কুরাইশ, কুরাইশের বংশ হতে হাশেমকে নির্বাচন করেছেন আর আমাকে হাশেমের আওলাদ হতে নির্বাচন করেছেন। মুসলিম শরীফ, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৫৮; তিরমিযি শরীফ, হাদিস নং ৩৬০৫; মসনদে আহমদ, হাদীস নং ১৭০২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১১/৪৭৮, হদীস নং ৩২৩৮৯
এছাড়া হযরত ইমাম তিরমিযি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত জামে তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দিয়েছেন :
بَابُ مَا جَاءَ فى مْيلَادُ النَّبِى َصَّلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّ
তিরমিজী শরীফে ২য় খন্ড ২০৪ পৃষ্ঠা মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরতমুত্তালিব বিন আব্দুসাল্লামহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা رضي الله عنه হতে বর্ণনা করেছেন-এতদসত্ত্বেও কি প্রমাণিত হয়নি যে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করেছেন এবং তা করতে উম্মতদেরকে নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন যা হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
পবিত্র রবিউল আউওয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সুবহে সাদিকের সময় সৃষ্টির মূল তথা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুনিয়াতে শুভাগমন করেছেন। প্রিয় নবীজির শুভাগমনের আলোচনা তিঁনি নিজেই সাহবায়ে কিরামের সাথে বর্ণনা করতেন। বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী খন্ড-২য়, পৃ-২০২, মিশকাত শরীফ পৃ-৫১৩ সহ অসংখ্য বিশুদ্ব হাদিস গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা রয়ে
খোলাফায়ে রাশেদীনের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ
-----------------------------------------------------------------
১। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন
হাফেজ ইবনে হাজর আল হাইতুমী রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল নে‘মাতুল কুবরা আলাল আলামীন’ শরীফে বর্ণনা করেন-
قَالَ اَبُوْ َبكَرِ الْصِدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِى فَىْ الْجَنَّةِ-
অর্থ: ইসলামের প্রথম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম খলিফা সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনে একটি দেরহামও ব্যয় করবে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (জাওয়াহিরুল বিহার- ৩/৩৫০ পৃষ্ঠা) রাদিয়াল্লাহু
২। হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قََالَ عُمَرَابْنِ الْخِطَّابٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْىِ اَلْاِسْلِامَ-
অর্থ: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে উদযাপন করল, সে যেন ইসলামকে পুনঃর্জীবিত করল।
৩। হযরত উসমান গণি রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قال عثمان رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرِ وَحُنَيْنٍ-
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি দেরহামও ব্যয় করবে, সে যেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল।
৪। হযরত শে‘রে খোদা আলী রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাল-
مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبِبًا لِقِرْاَتِهِ لَايَخْرُجُ مِنْ الدُّيْنَا اِلَّا بِالْاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةِ بِغَيْرِ حِسَابِ –
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে, সে যেন উহা উদযাপনের মাধ্যম হল, সে পৃথিবী হতে ঈমানের সাথে প্রস্থান করবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৫। হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
আব্বাস রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন,
وانت لما ولدت اشرفت الارض وضائب بنورك الافق-
অর্থ: ইয়া রাসুলাসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার যখন শুভাগমন হল, তখন আপনার নূরে পাকের আলোতে সমগ্র আসমান জমিন আলোকিত হয়ে গেল।
ونحن فى ﺫالك الضياء وفى النور- روسبل الرشاد لخترق-
অর্থ: আমরা সেই নূরের আলোতে আছি। আর হেদায়েতের সকল পথে আমরা রয়েছি। সেগুলো অন্ধকারকে দূরীভূত করেছে।
فنقل من صالب الى رحم- واﺫامضى عالم بدا طبق-
অর্থ: ইয়া রাসুলাসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার এমন এক যুগ অতিবাহিত হয়েছিল, সে সময় আপনি পবিত্রময় পিতার রেহেম হতে পবিত্রময় মাতার রেহেমে স্থানান্তরিত হতে ছিলেন এ যুগ চলে যাওয়ার পর আরেক যুগ তথা যুগে যুগে এসেছেন।
وردت نار الخليل مستترا- فى صلبه انت كيف جترك-
অর্থ: ইব্রাহিম খলিলুসাল্লামহর পৃষ্ঠদেশে আপনি তো আগুনের মধ্যে লুকায়িত ভাবে গিয়ে ছিলেন। আপনি যখন আছেন ঐ আগুন দিয়ে কিভাবে আপনি দগ্ধ হতে পারেন। (মাওয়াহিবে লাদুনিয়া- ১/১৭৫ পৃষ্ঠা, বেদায়া ও নেহায়া- ২/২৪০-৪১ পৃষ্ঠা, মাছাবাতা মিন সুন্নাহ- ৭৭ পৃষ্ঠা, নুর নবী- ৩৫ পৃষ্ঠা
তাবেঈ গণের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
------------+----------------------------------+---------
(১)قال حسن البصرى (التابعى) رضى الله تعالى عنه : لو كان لى مثل جبل احد ذهبا فانفقته على قرأة مولد النبى صلى الله عليه وسلم ـ
হযরত হাসান বসরী رضي الله عنه বলেন-যদি আমার কাছে ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো, তাহলে আমি সম্পূূর্ণভাবে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে খরচ করতাম (আন্ নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলম পৃ-০৮)।
(২) হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন رضي الله عنه ‘লাক্বাদ যা-আকুম রাসূলুম মিন আন্ফুসিকুম’এই আয়াতের ব্যাখার মধ্যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা দিয়ে বলেন, – হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার যুগের অবৈধ জন্মের সামান্যতম বংশ স্পর্শ করেনি। পূতঃপবিত্র হিসেবে উত্তম ব্যক্তিদের মাধ্যমে দুনিয়াতে আগমন করেন (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া খন্ড-১ম, পৃ-৫৬-৫৭, বিদায়া ওয়ান নিহায়া খন্ড-২য়, পৃ-২৫৫, বায়হাকী ফি শু’আবুল ঈমান খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)।
(৩) ইমাম বাকের رحمة الله عليه হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ভাবস্থায় হযরত মা আমেনা رضي الله عنه কে স্বপ্নের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হল, গর্ভের মধ্যে যে নবীর শুভাগমন হয়েছে, ঐ নবীর নাম রাখবেন ‘আহমদ’ তথা অধিক প্রশংসিত (সিরাতে হালাভীয়া খন্ড-১ম পৃ-৭২)।
(৪) ইমাম আবু হানিফা রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্র্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন, তিনি বলেন:
وبك المسيح اتى بشيرا مخبرا بصفات حسنك مادحا بعلاك-
অর্থ: হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আপনার আগমনের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি আপনার সৌন্দর্য আর উচ্চমর্যাদার প্রশংসা করে ছিলেন। ((কসীদায়ে নূমানে পৃ-০৭)
ভিন্ন মতালম্বী আলেমদের কাছে ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ
_-------------------+-+---------------+--_---------------------
(১) হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী رحمة الله عليه কী বলেন-
مشرب فقير كا يہ ہے- كہ محفل مولد ميں شريک ہوتا ہون بلكہ ذريعاۓ بركات سمجہ كر ہرسال منعقد كرتا ہون اور قيام ميں لطف ولذت پاتاہوں-
অর্থ : এ ফকিরের নিয়ম হল- আমি মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে থাকি বরং মিলাদ অনুষ্ঠানকে বরকত লাভের অছিলা মনে করে প্রত্যেক বৎসরই মিলাদের মজলিস করে থাকি এবং অনুষ্ঠানে কিয়ামের সময় অশেষ আনন্দ ও আরাম উপভোগ করি। (হাফতে মাসয়ালা-১৫ পৃষ্ঠা)
(২) মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর উস্তাদ শাহ আহমদ সাঈদ হানাফী رحمة الله عليه তার ‘মালফুজাত’এ বলেছেন-“মিলাদ শরীফ পাঠ করা এবং জন্মবৃক্তান্ত আলোচনা কালে দাঁড়িয়ে (ক্বিয়াম) যাওয়া মুস্তাহাব (মিলাদ ও ক্বিয়ামের ফতোয়া, পৃঃ৭৯, মাকামাতে সাঈদীয়া ওয়া মাকামাতে আহমাদীয়া পৃ-১২৮)।
(৩) দেওবন্দীদের অন্যতম বুযুর্গ মৌলভী আশরাফ আলী থানভী বর্ণনা করেন-হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারকের উছিলায় সমস্ত জগৎ সৃজন হয়েছে (মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , পৃ-১৯২, কৃত;আশ্রাফ আলী থানভী)।
(৪) মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী দেওবন্দীর দৃষ্টিতে মিলাদ ও কি¦য়াম মুস্তাহাব (মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম, ১ম খন্ড, পৃ-৩৩৯)।
(৫) দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাজী সৈয়্যদ আবেদ হুসাইন হানাফী, তিনি প্রত্যেক শুক্রবার মাগরীবের পর মিলাদ শরীফের আয়োজন করতেন। হাজী সাহেবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঐ মিলাদ ও ক্বিয়ামের অনুষ্ঠান জারী ছিল (মিলাদ ও কিয়ামের ফতোয়া, পৃ-৮৬)।
(৬) এ প্রসঙ্গে মক্কা শরীফের তৎকালীন মুফতী এনায়েত আহমদ রহমাতুল¬াহি আলাইহি তার প্রসিদ্ধ তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ গ্রন্থেও ১২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
اور بهى علماءے لكها ہے كہ اس محفل ميں ذكر وفات شريف كا نہ چاہے اس لئے كہ يہ محفل واسطے خوشى ميلاد شريف كے منعقد ہوتى ہے ذكر غم جانكاه اس ميں محض نازيبا ہے – حرمين شريف ميں ہرگز اجازت ذكر قصة وفات كى نہیں ہے –
অর্থাৎ-আলেম সমাজ এ কথাই লিখিয়াছেন যে, এই মাহফিলে রাসূলের ওফাত শরীফ বা ইন্তেকালের আলোচনা করা ঠিক নয়, এ জন্য যে এ রবিউল আউয়াল মাসে অনুষ্ঠিত মাহফিল মীলাদুন্নবী সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর খুশি উদযাপন করার জন্য অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মক্কা মদীনা শরীফে রাসূল সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম এর ওফাত শরীফের আলোচনা করার অনুমতি কখনোই ছিল না।
(৭) ইবনে তাইমিয়া বলেন- (লামাযহাবী)
وَكَذَلِكَ مَايُحْدِثُهُ بَعْضَ النَّاسِ اِمَّا مُضَاهَاةُ لِلْنَصَارَى فِىْ مِيْلَادَ عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلَامِ وَاِمَّا مُحَبَّةِ لِلِنَّبِى صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعْظِيْمًا وَاَللهُ قَد ْيُثيْبُهُمْ عَلَى هَذِهِ الْمُحَبَّةِ وَاَلْاِجْتِهَادِ-
অর্থ : এভাবে কিছু লোক মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করে থাকে। এটার উদ্দেশ্য হয়ত খৃষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য। (তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্ম দিন পালন করে) অথবা তাদের উদ্দেশ্য কেবল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শন করা। যদি দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আল্লাহ এ ধরনের মুহাব্বত ও প্রচেষ্টামূলক কার্যকলাপে সওয়াব দিবেন। (একতেদাউ সিরাতেল মুস্তাকিম পৃষ্ঠা ২৯৪)
ذكر ابن تيمية في كتابه “اقتضاء الصراط المستقيم في مخالفة أصحاب الجحيم” (২/৬৩৪-৬৩৫)
(৮) সিফায়ে সায়েল গ্রন্থে শাহ আব্দুল গণি দেহলভী সাহেব লেখেছে –
وحق انست كہ نفسى ذكر ولادت انحصرت صلى الله عليہ وسلم وسرور و فاتحة نمودن يعنى ايصال ثوب فتوح سيد الثقلين ازكمال سعادت انسان است-
অর্থ : সত্য কথা হল, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা ফাতিহা পড়ে তাঁর মহান রুহে সওয়াব রেসানী এবং তাঁর মিলাদ শরীফে আনন্দ করার মধ্যেই রয়েছে মানুষের পূর্ণাঙ্গ সৌভাগ্য। (সেফায়ে সায়েল ১৪পৃঃ)
হক্কপন্থী উলামা ও ফুকাহাবৃন্দের সমর্থনসূচক দলিল:-
-------++-+-------------------------++-----------++-+--
১/ - ইবনে কাসীর, যাকে সালাফী/ওহাবীরা তাফসীর ও ইতিহাস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে থাকে,তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামের মুজাহিদ সুলতান গাযী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ভগ্নিপতি শাহ মালিক আল-মুযাফফর সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। অথচ সালাফীরাই ইবনে কাসীরের কথাকে বিকৃত করে এই মর্মে মিথ্যে ছড়িয়েছে যে মুযাফফর শাহ একজন ফাসেক, নিষ্ঠুর ও বেদআতী শাসক ছিলেন (নাউযু বিল্লাহ)। প্রকৃতপক্ষে ইবনে কাসীর লিখেন:
”(মুযাফফর শাহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজ ছিল অতি উত্তম। তিনি কাসিইউন-এর কাছে জামেয়া আল-মুযাফফরী নির্মাণ করেন.....(প্রতি) রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকের সাথে মীলাদ শরীফ (মীলাদুন্নবী (ﷺ) ) উদযাপন করতেন। উপরন্তু, তিনি ছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক - রাহিমুহুল্লাহ ওয়া একরাম - শায়খ আবুল খাত্তাব رحمة الله عليه সুলতানের জন্যে মওলিদুন্ নববী সম্পর্কে একখানি বই লিখেন এবং নাম দেন ‘আত্ তানভির ফী মওলিদ আল-বাশির আন্ নাযীর’. এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করেন। সালাহিয়া আমল পর্যন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান।
”আস্ সাবত্ এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন যিনি সুলতানের আয়োজিত মওলিদ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; ওই ব্যক্তি বলেন: ‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-ভর্তি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মিষ্টির আয়োজন করতেন’।” [’তারিখে ইবনে কাসীর’, ‘আল-বেদায়াহ ওয়ান্ নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা]
২/ - ইমাম সেহাবউদ্দীন আবুল আব্বাস কসতলানী رحمة الله عليه যিনি ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’ শীর্ষক সীরাতের বই রচনা করেন, তিনি বলেন:
”মহানবী (ﷺ)-এর বেলাদত তথা এ ধরণীতে শুভাগমন রাতে হয়েছে বলা হলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে দুটো রাতের মধ্যে কোনটি বেশি মর্যাদাসম্পন্ন - কদরের রাত (যা’তে কুরআন অবতীর্ণ হয়), নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমনের রাত?
হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর বেলাদতের রাত এ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতর ৩টি কারণে -
প্রথমতঃ নবী করীম (ﷺ) এ বসুন্ধরায় আবির্ভূত হন মওলিদের রাতে, অথচ কদরের রাত (পরবর্তীকালে) তাঁকে মন্ঞ্জুর করা হয়। অতএব, মহানবী (ﷺ)-এর আবির্ভাব, তাঁকে যা মন্ঞ্জুর করা হয়েছে তার চেয়েও শ্রেয়তর। তাই মওলিদের রাত অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন।
দ্বিতীয়তঃ কদরের রাত যদি ফেরেশতাদের অবতীর্ণ হবার কারণে মর্যাদাসম্পন্ন হয়, তাহলে মওলিদের রাত মহানবী (ﷺ) এ ধরণীতে প্রেরিত হবার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, আর তাই মওলিদের রাতও শ্রেষ্ঠতর।
তৃতীয়তঃ কদরের রাতের বদৌলতে উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশিষ্টতা দেয়া হয়েছে; অথচ মওলিদের রাতের মাধ্যমে সকল সৃষ্টিকে ফযিলাহ দেয়া হয়েছে। কেননা, মহানবী (ﷺ)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে (আল-কুরআন ২১:১০৭)। অতএব, এই রহমত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্যে সার্বিক।”
রেফারেন্স: ইমাম কসতলানী رحمة الله عليه প্রণীত ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা। এ ছাড়াও ইমাম যুরকানী মালেকী স্বরচিত ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা।
ইমাম কসতলানী رحمة الله عليه আরও বলেন: ”যাদের অন্তর রোগ-ব্যাধি দ্বারা পূর্ণ, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর মীলাদের মাস, অর্থাৎ, রবিউল আউয়ালের প্রতিটি রাতকে যাঁরা উদযাপন করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহতা’লা দয়াপরবশ হোন!” [আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া, ১ম খণ্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা]
৩/ - ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী رحمة الله عليه যিনি হিজরী ৯ম শতকের মোজাদ্দেদ (ইসলাম পুনরুজ্জীবনকারী), তিনি লিখেন:
"মীলাদুন্নবী (ﷺ)উদযাপন যা মূলতঃ মানুষদের সমবেত করা, কুরআনের অংশ-বিশেষ তেলাওয়াত, মহানবী (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমন (বেলাদত) সংক্রান্ত ঘটনা ও লক্ষ্মণগুলোর বর্ণনা পেশ, অতঃপর তবাররুক (খাবার) বিতরণ এবং সবশেষে সমাবেশ ত্যাগ, তা উত্তম বেদআত (উদ্ভাবন); আর যে ব্যক্তি এর অনুশীলন করেন তিনি সওয়াব অর্জন করেন, কেননা এতে জড়িত রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মহান মর্যাদার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাঁর সম্মানিত বেলাদতের প্রতি খুশি প্রকাশ।” [ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]
* [হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ ৪১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য]
একই দিনে বেলাদত (শুভাগমন) ও বেসাল (পরলোকে আল্লাহর সাথে মিলিত) হলেও কেন মহানবী (ﷺ)-এর মীলাদ অগ্রাধিকার পাবে তা ইমাম সৈয়ুতী رحمة الله عليه ব্যাখ্যা করে বলেন:
“বিশ্বনবী ﷺ-এর বেলাদত হলো (আল্লাহর) সর্ববৃহৎ নেয়ামত (আশীর্বাদ); আর তাঁর বেসাল মহা দুর্যোগ। ধর্মীয় বিধান আমাদের প্রতি তাকিদ দেয় যেন আমরা আল্লাহর নেয়ামতের শোকরগুজারি (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করি এবং দুর্যোগের মুহূর্তে ধৈর্য ধরি ও শান্ত থাকি। শরীয়তের আইনে আমাদের আদেশ দেয়া হয়েছে কোনো শিশুর জন্মে পশু কোরবানি দিতে (এবং ওর গোস্ত গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে). এটা ওই শিশুর জন্মোপলক্ষে কৃতজ্ঞতা ও খুশি প্রকাশের নিদর্শন। পক্ষান্তরে, মৃত্যুর সময় পশু কোরবানি দিতে শরীয়ত আমাদের আদেশ দেয় নি। উপরন্তু, শোক প্রকাশ বা মাতম করতে শরীয়তে মানা করা হয়েছে। অতএব, মীলাদুন্নবী (ﷺ)-এর পুরো মাসব্যাপী খুশি প্রকাশ করার পক্ষে ইসলামী বিধানের রায় পরিদৃষ্ট হয়; আর তাঁর বেসাল উপলক্ষে শোক প্রকাশ না করার পক্ষে মত দেয়া হয়।” [হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৫৪-৫৫ পৃষ্ঠা]
* [দেখুন - ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ’আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়ী’, ১ম খণ্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-আসরিয়া, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]
নোট: মহানবী (ﷺ)-এর বেসাল ১২ই রবিউল আউয়াল নয় যেমন ধারণা করে থাকে কিছু মানুষ; তাদের এই ধারণার জন্ম ‘অমৃতের সীলমোহর’ জাতীয় বই-পুস্তক। বিভিন্ন সহীহ বর্ণনায় বিবৃত সঠিক দিনটি হলো ২রা রবিউল আউয়াল।
মক্কা মদিনার “ঈদ এ মিলাদুন্নবী ﷺ ১৯৩০ সাল পূর্ব:
--------------------------------------------------
১৯৩০ সালে ওহাবী রাষ্ট সেীদি আরব প্রতিষ্টার পুর্বে মক্কা -মদিনা শরীফে ঈদ ৈএ মিলাদুন্নবী পালিত হতো.........
মক্কা শরিফের পত্রিকা আল ক্বিবলা পত্রিকা মতে ঈদে মিলাদুন্নবি –
ঈদে মিলাদ্দুন্নবি মক্কা এবং এর অধিবাসীরা পালন করতেন যার নাম ছিল ইয়ম আল ঈদ মাওলিদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । মুসলমানেরা উত্তম খাবার রান্না করতেন । মক্কা শরিফের আমির এবং হিজাজের কমান্ডার তাঁর সেনাদের সাথে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওজা শরীফ যিয়ারত করতেন এবং ক্বাছীদা পাঠ করতেন। মক্কা শরীফ থেকে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মস্থান পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হত এবং দোকান পাট সুসজ্জিত করা হত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মস্থানে সকলে মিলে ক্বাছীদা পাঠ করতেন । ১১ রবিউল আউওয়াল শরীফের রাতে বাদ ইশা ঈদে মিলাদুন্নবি পালনের লক্ষে একস্থা হতেন। ১১ রবিউল আউওয়াল শরীফের মাগরীব থেকে ১২ রবিউল আউওয়ালের আছর নামাজ পর্যন্ত প্রতি নামাজের পরে ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হত ।
রেফারেন্স -
মাসিক তরিকত –লাহোরঃ জানুয়ারী ১৯১৭ , পৃ ২/৩
যুগে যুগে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস
---------------------------------------------
ইবনে জুবাইর (৫৪০-৬১৪) তাঁর ’রেহাল’ (ভ্রমণ বৃত্তান্ত)-এর ১১৪-১১৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “রবিউল আউয়াল মাসের প্রতি সোমবার এই বরকতময় স্থান (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের ঘর) (সবার জন্যে) খুলে দেয়া হতো, আর মানুষেরা তাতে প্রবেশ করে বরকত আদায় তথা আশীর্বাদ গ্রহণ করতেন (মোতাবাররিকীন বিহী); কেননা এ রকমই এক সোমবারে এবং রবিউল আউয়াল মাসে মহানবী ﷺ ধরণীর বুকে শুভাগমন করেছিলেন।”
* সপ্তম শতকের ইতিহাসবিদ আবুল আব্বাস আল-’আযাফী ও তাঁর ছেলে আবুল কাসেম আল-’আযাফী তাঁদের অপ্রকাশিত ‘কিতাব আদ্ দুরর আল-মোনাযযম’ শীর্ষক গ্রন্থে লিখেন, “পুণ্যবান হাজ্বী ও খ্যাতনামা পর্যটকবৃন্দ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, মীলাদুন্নবী ﷺ দিবসে মক্কা নগরীতে (দুনিয়াদারীর) কাজ-কর্ম বন্ধ থাকে; কোনো কিছু বেচা-কেনা হয় না; শুধু মানুষেরা মহানবী ﷺ-এর পবিত্র জন্মস্থানের ঘরটিতে ছুটে যান এবং যেয়ারতে ব্যস্ত থাকেন। এই দিন কা’বা ঘর খুলে দেয়া হয় এবং এরও যেয়ারত চলে।”
* প্রখ্যাত অষ্টম শতকের ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা তাঁর ‘রিহলা’ (১:৩০৯ এবং ১:৩৪৭)-এ বর্ণনা করেন যে প্রতি শুক্রবার জুমু’আ নামাযের বাদে এবং মীলাদুন্নবী ﷺ-এর দিবসে কা’বা গৃহের দ্বার-রক্ষী বণু শায়বা গোত্র-প্রধান আল্লাহর ঘরের দরজা খুলে দেন; আর মীলাদুন্নবী ﷺ দিবসে মক্কার শাফেয়ী কাজী (প্রধান বিচারক) নাজমুদ্দীন মোহাম্মদ ইবনে আল-ইমাম মুহিউদ্দীন আত্ তাবারী মক্কা নগরীর সকল শুরাফা’ (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের বংশধর) ও মানুষের মাঝে তবাররূক (খাদ্য) বিতরণ করেন।
* ইতিহাসবিদ ইবনে যাহেরা আল-হানাফী নিজ ‘আল-জামেউ’ আল-লাতীফ ফী ফদলে মক্কা ওয়া আহলিহা’ পুস্তকের ৩২৬ পৃষ্ঠায়, ইমাম ইবনে হাজর আল-হায়তামী মক্কী স্বরচিত ’কেতাব আল-মাওলিদ আশ্ শরীফ আল-মো’য়াযযম’ গ্রন্থে, এবং ইতিহাসবিদ আন্ নাহরাওয়ালী তাঁর ‘আল-এ’লাম বি আ’লম বায়ত আল্লাহ আল-হারাম’ বইয়ের ২০৫ পৃষ্ঠায় বলেন যে প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মাগরেবের নামাযের পরে মক্কাবাসী চারজন কাজী (বিচারক) যাঁরা চার মযহাবের প্রতিনিধি, তাঁরা এবং মক্কার ফুকাহা (ফকীহবৃন্দ), ফুদালা’ (সমাজের গণ্যমান্য), মাশায়েখ আল-কেরাম (পীর সাহেবান), যাউইয়্যা শিক্ষকবৃন্দ ও তাঁদের ছাত্রবর্গ, রু’আসা’ (ম্যাজিস্ট্রেটগণ) এবং মুতা’আম্মামীন (ইসলামী জ্ঞান বিশারদবৃন্দ)-সহ সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ একযোগে মহানবী ﷺ-এর জন্মস্থানের (ঘর) যেয়ারতের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়েন; এই সময় তাঁরা উচ্চস্বরে যিকর ও তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পড়তে থাকেন। যাত্রাপথের ওপর যে সব বাড়ি-ঘর পড়ে, সেগুলো অসংখ্য চেরাগ ও মোমবাতি দ্বারা আলোকসজ্জা করা হয় এবং মানুষেরা সবাই বাসার বাইরে চলে আসেন। তাঁরা তাঁদের সবচেয়ে সুন্দর সুন্দর জামাকাপড়গুলো পরেন এবং নিজেদের বাচ্চাদেরও সাথে নিয়ে আসেন। ওই পবিত্র স্থানে পৌঁছার পর (ঘরের) অভ্যন্তরে মীলাদুন্নবী ﷺ-বিষয়ক এক বিশেষ বয়ান দেয়া হয়, যার মধ্যে উল্লেখিত হয় মহানবী ﷺ-এর ধরণীতে আবির্ভাবের সময়কার মো’জেযা তথা অলৌকিক ঘটনাবলী। অতঃপর সুলতান (অর্থাৎ, খলীফা), মক্কা মোকাররমার আমীর ও শাফেয়ী কাজীর জন্যে দোয়া করা হয় যার মধ্যে সবাই একাগ্রচিত্তে প্রার্থনা করেন। ‘এশার নামাযের কিছুক্ষণ আগে পুরো দলটাই মহানবী ﷺ-এর জন্মস্থান থেকে মসজিদে (কা’বায়) ফিরে আসেন। এই সময় তাতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। সবাই কাতারবদ্ধ হয়ে মাকাম-এ-ইবরাহীমের পাদদেশে বসে পড়েন। মসজিদের ভেতরে ওয়াযকারী প্রথমে ’তাহমিদ’ (আল-হামদু লিল্লাহ) পাঠ করেন এবং তাহলিল-ও, অতঃপর আবারও খলীফা, মক্কার আমীর ও শাফেয়ী কাজীর জন্যে দোয়া করা হয়। এগুলো শেষ হলে ‘এশার নামাযের আযান দেয়া হয়। নামাযশেষে সবাই বাড়ি ফিরে যান।
* ওপরের অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন আদ্ দিয়ারবকরী নিজ সীরাহ-বিষয়ক ‘তারিখ আল-খামিস ফী খবর আনফাসি নাফিস্’ শীর্ষক গ্রন্থে।
হাদীসের আলোকে মীলাদুন্নবী ﷺ উদযাপনের শরয়ী বৈধতা
১/ - চলুন, এ বিষয়ে মহানবী ﷺ-এর মতামত জানতে চেষ্টা করি, যিনি স্বয়ং নিজের মীলাদ পালন করতেন। হাদীসগ্রন্থ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে: হযরত অাবূ কাতাদা আনসারী رضي الله عنه রেওয়ায়াত করেন যে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হয় কেন তিনি প্রতি সোমবার (নফল) রোযা রাখেন। জবাবে তিনি বলেন, “এই দিনে আমার বেলাদত (তথা ধরাধামে শুভাগমন) হয়েছে এবং আমার প্রতি ওহী (ঐশী বাণী)-ও অবতীর্ণ হয়েছে এই দিনে।”
দলিল:
১/ সহীহ মুসলিম, ৬ষ্ঠ বই, হাদীস নং ২৬০৬; ২৬০৩ হাদীসেও বিদ্যমান।
২/ আসাদ আল-গাবা ফী মা’আরফাতেস্ সাহাবা, ১ম খণ্ড, ২১-২২ পৃষ্ঠা; ১৯৮৭ সালে লাহোর, পাকিস্তানে প্রকাশিত
৩/ ইমাম বায়হাকী কৃত সুনানে কুবরা, ৪র্থ খণ্ড, ৩০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৮১৮২ ও ৮২৫৯
৪/ মোসান্নাফে আবদ্ আল-রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৮৬৫
৫/ সুনানে আবি দাউদ, ৭ম খণ্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৪২৮
৬/ মুসনাদে আহমদ, ৪৯তম খণ্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৩২০০
৭/ সুনানে ইমাম নাসাঈ
*মহানবী ﷺ কি নিজের মীলাদ পালন করেছিলেন?*
----------------+-------------------+-----+------------+----
রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং মসজিদের মিম্বরে উঠে দাঁড়িয়ে সাহাবা-এ-কেরাম رضي الله عنه-এর সমাবেশে নিজের পবিত্র বেলাদত ও (অনুপম) বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা ও তাযকেরা (স্মরণ) করেছিলেন। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে মীলাদ পাঠ করা খোদ রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাত। এতদসংক্রান্ত কতিপয় হাদীস এখানে পেশ করা হলো:
২/ - একবার হযরত আব্বাস رضي الله عنه মহানবী ﷺ-এর দরবারে হাজির হন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি (হুযূর পাক সম্পর্কে মন্দ) কিছু শুনেছিলেন। অতঃপর নবী করীম ﷺ মিম্বরে উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, “আমি কে?” সাহাবা رضي الله عنه বল্লেন, “আপনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম।” তিনি বল্লেন, “আমি মোহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্দিল মোত্তালিব। আল্লাহতা’লা মানুষ সৃষ্টি করে আমাকে তাদের মধ্য হতে প্রেরণ করেছেন; অতঃপর তিনি তাদেরকে দুটো দলে বিভক্ত করেছেন এব

Comments

  • এবং আমাকে সেরা দল হতে আবির্ভূত করেছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে পরিণত করেছেন এবং আমাকে সেরা গোত্রে আবির্ভূত করেছেন; আর তিনি তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারে পরিণত করে আমাকে সেরা পরিবারে প্রেরণ এবং সেরা বৈশিষ্ট্য দ্বারা বিভূষিত করেছেন” (আবূ হাসান এই হাদীসকে হাসান বলেছেন)। [তিরমিযী শরীফ: কিতাবুল মানাকিব (গুণাবলীর বই), মহানবী ﷺ-এর বৈশিষ্ট্যসম্পর্কিত অধ্যায়, হাদীস নং ৩৬১৬]
    ৩/ - ওয়াসেলা ইবনে আল-আসকা’ বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ ফরমান: “সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর বংশধরদের মাঝে কানানা গোত্রকে বেছে নিয়েছেন; কানানা গোত্রের মাঝ হতে কোরাইশ গোত্রকে বেছে নিয়েছেন; কুরাইশের মাঝ হতে হাশেম পরিবারকে, আর আমাকে হাশেম পরিবারের মাঝ হতে বেছে নিয়েছেন” (আবূ ঈসা বলেন যে এ হাদীসখানি হাসান সহীহ গরীব শ্রেণীভুক্ত)। [তিরমিযী শরীফ: কিতাবুল মানাকিব, মহানবী ﷺ-এর বৈশিষ্ট্যসম্পর্কিত অধ্যায়, হাদীস নং ৩৬১৭]
    ভালোভাবে লক্ষ্য করুন যে ওপরের দুটি হাদীসে মহানবী ﷺ তাঁর সাহাবীদের মাঝে নিজের মওলিদ (ধরাধামে শুভাগমন) এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবার ও গোত্রে জন্মগ্রহণ সম্পর্কে ভাষণ দিয়েছেন। অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত (সুন্নী মুসলিম সমাজ) যখন মহানবী ﷺ-এর মতো একই বর্ণনা পেশ করতে মসজিদে সমবেত হন, তখন তাঁদেরকে বেদআতী বলে আখ্যা দেয়া হয়। এই প্রশংসনীয় আমল পালনকারী এবং রাসূল ﷺ-এর সুন্নাতের অনুসরণকারী মুসলমানদের প্রতি মিথ্যে দোষারোপকারী লোকদের লজ্জা করা উচিত!
    ৪/ - হুযূর পাক ﷺ এরশাদ ফরমান: “আমার মা আমাকে জন্ম দেয়ার সময় তিনি তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছুরিত এক নূর (জ্যোতি) দেখতে পান, যা দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদগুলোও তাঁর সামনে দৃশ্যমান হয়।”
    দলিল:
    ১/ ইবনে হাশিম; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪:৩৬০
    ২/ বায়হাকী, দালাইল আন্ নুবুওয়্যা, ১:১১০
    ৩/ হায়তামী, যাওয়াঈদ, ৮:২২১
    ৪/ ইবনুল জাওযী, আল-ওয়াফা’
    ৫/ কাজী আয়াজ, আল-শিফা
    ৬/ মুসনাদে আহমদ, ৪:১২৭
    ৫/ - প্রিয়নবী ﷺ বলেন, “আল্লাহতা’লা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেন, তা হচ্ছে আমার নূর (জ্যোতি)।”
    দলিল:
    ১/ তাফসীরে নিশাপুরী, ৫৫ পৃ্ঠা, ৮ম খণ্ড
    ২/ তাফসীরে আরাই’সুল বয়ান, ২৩৮ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
    ৩/ তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৫৪৮ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
    ৪/ যুরকানী আলাল মাওয়াহিব, ৩৭ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
    ৫/ মাদারিজুন্ নবুওয়্যাত, ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠা, ২য় খণ্ড
    ৬/ বয়ান আল-মীলাদ আন্ নবী লি ইবনে জাওযী, ২৪ পৃষ্ঠা
    ৬/ - আল-বোখারী হাদীসগ্রন্থের ব্যাখ্যাকারী ইমাম কসতলানী رحمة الله عليه তাঁর বিখ্যাত “আল-মাওয়াহিব আল-লাদু্ন্নিয়্যা” গ্রন্থে বলেন যে হযরত ইমাম যাইনুল আবেদীন رضي الله عنه তাঁর পিতা হযরত ইমাম হুসাইন رضي الله عنه হতে, তিনি তাঁর পিতা হযরত আলী মোশকিল কোশা (ক:) হতে বর্ণনা করেন মহানবী ﷺ-এর বাণী, যিনি বলেন: “আমি আল্লাহর কাছে নূর ছিলাম হযরত আদম (আ:)-এর সৃষ্টিরও ১৪০০০ বছর আগে।”
    দলিল:
    ১/ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১০ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
    ২/ যুরকানী আলাল মাওয়াহিব, ৪৯ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
    ৩/ জওয়াহিরুল বিহার, ৭৭৪ পৃষ্ঠা
    ৪/ আনওয়ারুল মোহাম্মদীয়া, ৯ পৃষ্ঠা
    ৫/ তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৩৭০ পৃষ্ঠা, ২য় খণ্ড
    ৬/ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন
    ✏হাদিস হতে প্রমাণিত "স্বয়ং হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের জন্মের খুশির উদ্দেশ্যে ছাগল যবাহ করেছিলেন"
    ইমাম সুয়ুতী আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম খন্ড ১৯৬ পৃঃ,
    হুস্নুল মাকাসিদ ফি আমালিল মোলিদ ৬৫ পৃঃ,
    ইমাম নাব হানী হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭ পৃঃ
    প্রথম মিলাদুন্নবীর বিরোধীতাকারী
    --------------------------------+----------
    মিলাদশরীফ, কিয়াম ও ফাতেহা সংক্রান্ত বিষয়ে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর মুরিদ ও খলিফাগণের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। কেহ মিলাদ কিয়ামের পক্ষে কেহ মিলাদশরীফ কিয়ামের বিপক্ষে। তবে ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তিনি মিলাদ এবং কিয়ামের পক্ষে ছিলেন। তাঁর লিখিত ফয়ছালায়ে হাফতে মাসায়েল বা সাতটি মাসআলার সমাধান গ্রন্থটি এর স্পষ্ট প্রমান। এতে তিনি মিলাদ এবং কিয়ামকে মোস্তাহাব সাব্যস্থ করেছেন। হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)’র সুযোগ্য খলিফা হযরতুল আল্লামা আব্দুছ ছামী রামপুরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) স্বীয় মুর্শিদের তাহকিক ও নীতির উপর অটল ছিলেন। পান্তরে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর অন্য মুরিদ ও খলিফা দেওবন্দীদের নেতা, মাও: রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, ও তার শাগরিদ মাও: খলিল আহমদ আমবেটবী স্বীয় মুর্শিদের তাহকিক ও নীতি সম্পুর্ণ বর্জন করে মিলাদ এবং কিয়ামকে নাজায়েজ হারাম বলে ফতোয়া অপপ্রচার চালান। এতে দেশের মুসলিম সমাজে এক নতুন ফিতনার জন্ম নেয়। ফলে মুসলমানদের মধ্যে কোন্দল ও বিভাজন সৃষ্টি হওয়ার দরুন তৎকালীন বিজাতীয় বৃটিশ সরকার লাভবান হয় এবং দীর্ঘদিন ভারত বর্ষ শাসন করা ত্রে তৈরী করে নেয়।
    প্রকাশ থাকে যে, ইতিপূর্বে যে সমস্ত প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম তথা মোহাদ্দেসীন, মোফাচ্ছেরীনগণ উপমহাদেশে ইসলামের খেদমত করেছিলেন যেমন- হযরত শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা কাজী ছানা উল্লাহ পানিপথী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), হযরত শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা সৈয়দ আলে রাছুল মার হরবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা ফজলে রাসুল বাদায়ুনী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা এরশাদ হোসাইন মোজাদ্দেদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), মুফতি ছদরুদ্দীন দেহলভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), ও হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), শাহ আব্দুল গনী মোজাদ্দেদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা আব্দুল হালিম লাখনভী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমূখ উলামায়ে কেরাম। তাঁরা সবাই মিলাদ ও কিয়ামকে মোস্তাহাব ও মোস্তাহছান বলে ফতোয়া প্রদান করেছেন, কিন্তু তৎকালীন সময়ে উপমহাদেশে একমাত্র দিল্লীর লা’মাজহাবী কিছু সংখ্যক লোকই মিলাদ কিয়ামের বিরোধীতা করত। মাজহাব পন্থীদের মধ্যে সর্বপ্রথম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী ও তার শাগরিদগণই মিলাদশরীফ কিয়ামের বিপক্ষে ওহাবী ও লা মাজহাবীদের মত ও পথ অবলম্বন করেন। এসম্পর্কে সবিস্তার আলোচনা রয়েছে আলোচ্য পুস্তক- আনওয়ারে ছাতেয়া দর বায়ানে মওলুদ ও ফাতেহা নামক গ্রন্থে।

  • নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌সালামগণের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের দৃষ্টিতে সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্ব ও ফযীলত।

    (১)
    খলীফাতু রসুলিল্লাহ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -
    “যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ (মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষ্যে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)
    (২)
    আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -
    “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বিলাদত দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলতঃ ইসলামকেই পূনরুজ্জীবিত করল।“ (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)
    (৩)
    আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -
    “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনায়েন যুদ্ধে শরীক থাকল।” (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)
    (৪)
    আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন -
    “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করল সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)

    জগৎখ্যাত, সর্বজনমান্য, সকলের নিকট অনুসরণীয় হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের দৃষ্টিতে সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্ব ও ফযীলত

    (৫)
    হযরত ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
    “আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ণ থাকত তাহলে তা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে ব্যয় করতাম। (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নেয়ামাতুল কুবরা)
    (৬)
    হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
    “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষ্যে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরি করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং মীলাদ পাঠের জন্য উত্তম ভাবে (তথা সুন্নাহ ভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন সিদ্দীক শহীদ, সালেহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতে নাঈমে।” (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নেয়ামাতুল কুবরা)
    (৭)
    হযরত মারুফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
    “যে ব্যক্তি ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিশে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন লেবাস পরিধান করে,মীলাদুন্নবীর তাজিমার্থে সু-ঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে। আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস্‌ সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে অধিষ্ঠিত হবে।“ (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নেয়ামাতুল কুবরা)
    (৮)
    হযরত ইমাম সাররী সাক্বত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
    “যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করল সে যেন তার জন্য জান্নাতে রওজা বা বাগান নিদিষ্ট করলো। কেননা সে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর আল্লাহ্‌ পাক-এর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” (তিরমিযি, মিশকাত, আন নেয়ামাতুল কুবরা)
    (৯)
    সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
    “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে উপস্থিত হল এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলো। সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশ্‌তি হবে।” (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)
    (১০)
    হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
    “যে ব্যক্তি মিলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে, লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন। (তাতে বরকত হবেই)”। (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)
    (১১)
    হযরত ইমাম রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন -
    উক্ত মোবারক খাদ্য মীলাদ পাঠকারীর বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয়না। (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)
    (১২)
    হযরত ইমাম রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন -
    যদি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে কোন পানিতে ফুঁক দেয়, অতঃপর উক্ত পানি কেউ পান করে তাহলে তার অন্তরে এক হাজার নূর ও রহমত প্রবেশ করবে। আর তার থেকে হাজারটি বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ রোগ দূর হবে। যে দিন সমস্ত ক্বলব (মানুষ) মৃত্যুবরণ করবে সেদিনও ঐ মীলাদুন্নবীর পানি পানকারী ব্যক্তির অন্তর ম”ত্যু বরণ করবে না। (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা) (চলবে)
    (১৩)
    হযরত ইমাম রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন -
    যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ করে বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্‌্‌যাপন করে রৌপ্যের অথবা স্বর্ণের দেরহামসমূহের উপর ফুঁক দেয় অতঃপর তা অন্য জাতীয় মুদ্রার সাথে মিশায় তাহলে তাতে অবশ্যই বরকত হবে। এবং এর পাঠক কখনই ফকীর হবে না।
    আর উক্ত পাঠকের হাত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (মীলাদ পাঠের) বরকতে কখনও খালি হবে না। (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’য়ামাতুল কুবরা)
    (১৪)
    হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন -
    যে স্থানে বা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্‌্‌যাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেস্তাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসী গণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেস্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাইল, মীকাইল, ইসরাফিল ও আযরাইল আলাইহিমুস্‌্‌ সালামগণ মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর বা মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর উপর সালাত-সালাম পাঠ করেন। (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নি’মাতুল কুবরা)
    (১৫)
    ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন -
    “যখন কোন মুসলমান নিজ বাড়ীতে মীলাদ শরীফ পাঠ করে তখন সেই বাড়ীর অধিবাসীগণের উপর থেকে আল্লাহ্‌ পাক অবশ্যই খাদ্যাভাব, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, ডুবে মরা, বালা মুসিবত, হিংসা-বিদ্বেষ, কু-দৃষ্টি, চুরি ইত্যাদি উঠিয়ে নেন। যখন উক্ত ব্যক্তি মারা যান তখন আল্লাহ পাক তাঁর জন্য মুনকীর-নকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাঁর অবস্থান হয় আল্লাহ্‌ পাক-এর সন্নিধানে সিদকের মাকামে। (সুবহানাল্লাহ্‌) (আন্‌ নেয়ামাতুল কুবরা) যে ব্যক্তি ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাযীম করতে চাইবে তার জন্য উপরোক্ত বর্ণনা যথেষ্ট।
    আর যে ব্যক্তির নিকট ঈদে মীলাদুন্নবীর তা’যীম নাই (সম্মান করে না) সারা দুনিয়া পূর্ণ করেও যদি তাঁর প্রশংসা করা হয় তথাপিও তার অন্তর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহব্বতে প্রকম্পিত হবে না।
    আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে তাদের দলভুক্ত করুন যারা ঈদে মীলাদুন্নবীর মর্যাদা দান করেন এবং এর মর্যাদা উপলব্ধি করেন। তিনি আমাদেরকে তাঁর হাবীব, নবী গনের নবী, রসূল গনের রসূল, নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আখাস্‌সুল খাস মুহিব্বীন ও অনুসারী বানিয়ে দিন। আমীন। ইয়া রব্বুল আলামীন, আয় আল্লাহ পাক, সালাত ও সালাম বর্ষিত করুন সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের প্রতি কেয়ামত পযর্ন্ত।

  • মাওলানা মুহাম্মদ আশেক জুনাঈদ সাহেব

    শিক্ষক কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদ্রাসা

    পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বিশ্বের ঈমানি প্রেরনার জয় ধ্বনী নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে রবিউল আওয়াল মাসে। পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম উৎসব। যুগে যুগে বাতিলদের শনাক্ত করার কিছু নিদর্শন ছিল। তেমনিভাবে তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সমাজে ও বাতিলদের চিনার নিদর্শন হল পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরোধিতা করা। বাতিলদের বেড়াজাল থেকে মুসলিম মিল্লাতকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

    পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি?
    ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উৎযাপন করা ইত্যাদি। আর মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমরা নবীজীর আগমনকে বুঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়। সুতরাং অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আধারের বুক চিড়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তি নিয়ে এসে মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন। নবীজীর পবিত্র শুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

    কুরআনুল কারীমের দৃষ্টিতে পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ
    আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন-

    অর্থাৎ- আল্লাহ বলেন, হে প্রিয় রাসূল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের ঘটনা”- (রোজে আজলের সময়ের) যখন আমি (আল্লাহ) আম্বিয়ায়ে কেরামগণের নিকট থেকে এইভাবে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, যখন ‘আমি তোমাদেরকে কিতাব এবং হিকমত’ অর্থাৎ নবুয়ত দান করবো, অতঃপর তোমাদের কাছে এক মহান রাসূলের শুভাগমন হবে- যিনি তোমাদের প্রত্যেকের নবুয়তের সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা সকলে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনযন করবে এবং সর্বোত্তমভাবে তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। তোমরা কি এ কথার অঙ্গীকার করছো এবং অঙ্গীকারে কি অটল থাকবে? সমস্ত নবীগণ বললেন- হাঁ, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ তায়ালা বললেন- তোমরা পরস্পর স্বাক্ষী থেকো এবং আমি ও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী রইলাম। এর পরেও যে কেউ পিছপা হয়ে যাবে- তারা হবে ফাসেক। সূত্রঃ তৃতীয় পারা, সূরা আল-ইমরান ৮১-৮২ নং আয়াত।

    এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো (১) আয়াতের ইবারাতুন নস-এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অন্যান্য নবীগণ থেকে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গীকার আদায় করেছিলেন। (২) দালালাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত নবীগণ সেদিন মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। (৩) ইশারাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মূলত ঐ মাহফিলটি নবীজীর আগমনী বা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর মাহফিল ছিল। (৪) ইক্বতেজাউন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ঐ সময় সমস্ত নবীগণ কি্বয়াম অবস্থায় ছিলেন। কারণ ঐ দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই এবং পরিবেশটিও ছিল আদবের।

    আরো লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে- এই আয়াতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ নবীজীর আগমন সম্পর্কে রোজ আজলের মধ্যে সমস্ত নবীগণকে উপস্থিত রেখে আলোচনা করেছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন প্রিয় আল্লাহর রাসূল, তাঁর সাথে মানুষের তুলনা হবেতো দূরের কথা, অন্য কোনো নবীর ও তুলনা হয়না। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীদের নিকট দুটি হুশিয়ারী বাণী প্রদান করেছেন। যথা- (১) আমার বন্ধুর উপর ঈমান আনতে হবে। (২) আমার বন্ধুকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।

    মানুষ যখন কোনো নেয়ামত ও রহমত প্রাপ্ত হয় তখন তার জন্য আনন্দ উৎসব করা তার স্বভাবগত কাজ, আর আল্লাহর নির্দেশও তাই। যেমন- পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-

    অর্থাৎ- হে মানবকুল তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং অন্তর সমূহের বিশুদ্ধতা, হেদায়াত এবং রহমত ঈমানদারদের জন্য। হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত ধন দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা ইউনুছ, আয়াত নং- ৫৭-৫৮)।
    এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ আদ দুররুল মুনছুর এ উল্লেখ করেন-

    অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন বুঝানো হয়েছে আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দু’আলম নূরে মোজাচ্ছম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন, (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতালি্লল আলামীন) অর্থাৎ হে হাবীব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি।
    সূত্রঃ সূরা আম্বিয়া আয়াত নং- ১০৭, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী (রহঃ) কৃত তাফসীরই আদ দুররুল মুনছুর, ৪র্থ খন্ড- ৩৬ পৃষ্ঠায় ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

    সামান্য জাগতিক নিয়ামত লাভ করলে তজ্জন্য ঈদ উৎসব করার সরাসরি উদাহরণ আমরা পবিত্র কুরআন মাজীদে দেখতে পাই। যেমন-

    অর্থাৎ- মরিয়ম তনয ঈসা (আঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের রব, আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা খাদ্য খাঞ্চা অবতরণ করুন যা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী সকলের জন্য ঈদ হবে এবং আপনারই নিদর্শন হবে, সুতরাং আমাদেরকে রিযিক দান করুন। আর আপনিইতো হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিক দাতা। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং- ১১৪)।
    এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে খাঞ্চাভরা খাদ্য আসলে তা যদি হযরত ঈসা (আঃ)-এর ভাষায় পূর্ব ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ, উৎসবের কারণ ও আল্লাহর নিদর্শন হয়, তাহলে সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম সত্ত্বা, রহমতের ভান্ডার, প্রিয় নবী আকাও মাওলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার মত মহান নিয়ামতের শুভাগমনের দিন কতইনা মর্যাদাবান, গুরুত্বপূর্ণও আনন্দের দিন বা মাস তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

    খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিল কি-না?
    আল্লামা শাহাবুদ্দীন ইবনে হাজর হায়তামী (রহঃ) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করার নীতি প্রচলন ছিল। যেমন-

    অর্থাৎ- হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করবে, সে ব্যক্তি বেহেশ্তে আমার সাথী হবে”। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাজীম ও সম্মান করলো, সে যেন ইসলামকেই জীবিত রাখলো”। হযরত ওসমান (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করলো, সে যেন বদর ও হোনাইনের যুদ্ধে শরীক হলো”। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করবে এবং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার উদ্যোক্তা হবে, সে দুনিয়া থেকে (তওবার মাধ্যমে) ঈমানের সাথে বিদায় হবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। সূত্রঃ আন নে’মাতুল কোবরা আলাল ফি মাওলিদি সাইয়্যেদ ওলদে আদম ৭-৮ পৃষ্ঠা।

    পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করার উপকারিতা ঃ
    ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝার জন্য উপরোক্ত হাদীসই যথেষ্ট। এর জন্য সামান্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- বেহেস্তে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর সাথী হওয়া, ইসলামকে জীবিত রাখা, বদর ও হোনাইনের মত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সমতুল্য নেকী অর্জন করা এবং পৃথিবী থেকে ঈমানের সাথে বিদায়ের নিশ্চয়তা ও বিনা হিসাবে বেহেস্তে প্রবেশ করার মত সৌভাগ্য লাভ হয় এই ‘মিলাদুন্নবীর মাহফিলে’। খোলফায়ে রাশেদীনের অভিমত ও আমল আমাদের জন্য একটি শক্ত দলীল।
    ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপকারিতা সম্পর্কে জুরকানী শরীফে রয়েছে, যা আবু লাহাব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

    অর্থাৎ- হযরত ছুয়ায়লি (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্বাস (রাঃ) এরশাদ করেন যে, যখন আবু লাহাব মারা যায় তার এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে বড়ই খারাপ অবস্থায় আছে এবং সে বলছিল, তোমাদের কাছ থেকে আসার পর আমার কোনো শান্তি নসীব হয়নি। হঁ্যা এতটুকু অবশ্যই যে, প্রত্যেক সোমবার আমার আযাব হালকা করে দেয়া হয়। তা শুনে হযরত আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটি এ জন্যই যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার দিন দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন। আর ছোয়াইবা নামী জনৈকা ক্রীতদাসী তাকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আগমনের শুভ সংবাদ দিয়েছিল বিধায় সন্তুষ্টি চিত্তে আবু লাহাব তাকে আজাদ করে দিয়েছিল।
    সূত্রঃ (ফাতহুল বারি ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা, জুরকানী শরীফ ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা) হাদীসখানা আল্লামা বদরুদ্দিন আঈনি ও তার ওমদাতুল কারী শরহে ছহীহ বুখারীতে ২য় খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন।

    উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা আবুল খায়ের শামসুদ্দীন ইবনে জাজরী (রহঃ) বলেছেন- রাসূলে মক্ববুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বেলাদাতের রাত্রে তাঁর আগমনের সু_সংবাদ শুনে খুশী হওয়ার কারনে যদি এমন জগন্য কাফের যার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে পবিত্র কুরআনে সূরা-লাহাব নাযিল করা হয়েছে, এমন কাফেরের শাস্তিক যদি হালকা করা হয়, তাহলে একজন তাওহীদবাদী মুসলমান যদি তাঁর আগমণের তারিখে খুশী হয়ে সাধ্যমত সম্পদ ব্যয় করে, তাহলে প্রতিদানের অবস্থা কেমন হতে পারে? উনি বলেন- আমার জীবনের শপথ, নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিদান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই হবে যে, আল্লাহ পাক তাঁকে বিশেষ অনুগ্রহে জান্নতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।

    আল্লামা শামসুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে নাছির উপরোক্ত হাদিসের আলোকে নিজের ভাষ্য দিতে গিয়ে ছন্দ গাঁথা ভাষায় বলেছেন-

    অর্থ- এমন জঘন্য কাফের যার দোষ বর্ণনায় এসেছে যে, তার হাত ধ্বংস হয়েছে, তার স্থায়ী নিবাস চির জাহান্নাম। আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আবির্ভাবে খুশী হয়ে সর্বদা সোমবার আসলে তার থেকে আজাব হালকা করা হয়, তবে কিরূপ ধারণা হতে পারে সে ব্যক্তির ব্যাপারে, যার জীবন আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বিষয়ে আনন্দিত ছিল এবং তাওহীদবাদী হয়ে ইন্তেকাল করেছে?
    শেষকথাঃ উপরোক্ত কুরআন এবং হাদিস থেকে বুঝা যায় ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন হচ্ছে জান্নাত পাওয়ার মাধ্যম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল। তাই সাহাবায়ে কেরামের সাথে একমত পোষন করে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাহফিল করা ঈমানদারদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন যেন মোনাফিকদের খপ্পর থেকে আমাদের ঈমানকে হেফাজত করেন। “আমীন” বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

  • আলোচনায়,হযরতুল আল্লামা,ওস্তাজুল আসাতিজা,মুফাস্‌সিরে কুরআন,আলহাজ্ব মাওলানা হাফেয অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল(রহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
    নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা যখন ভূমিষ্ঠ হন-তখন এমন কতিপয় আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিল-যা সচরাচর দেখা যায় না।প্রথম ঘটনাটি স্বয়ং বিবি আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন এভাবে-
    “যখন আমার প্রসব ব্যাথা শুরু হয়-তখন ঘরে আমি প্রায় একা ছিলাম এবং আমার শশুর আব্দুল মোত্তালিব ছিলেন কা’বা ঘরে তাওয়াফরত।আমি দেখতে পেলাম,একটি সাদা পাখির ডানা আমার কলিজায় কি যেন মালিশ করে দিচ্ছে।” এতে আমার ভয়ভীতি ও ব্যাথা বেদনা দূরিভূত হয়ে গেল।এরপর দেখেতে পেলাম এক গ্লাস শ্বেতশুভ্র শরবত আমার সামনে।আমি ঐ শরবতটুকু পান করে ফেললাম।অতঃপর একটি উর্দ্ধগামী নূর আমাকে আচ্ছাদিত করে ফেললো।এ অবস্থায় দেখতে পেলাম-আবদে মানাফ(কোরাইশ) বংশের মহিলাদের চেহারা বিশিষ্ট এবং খেজুর বৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘাঙ্গিনী অনেক মহিলা আমাকে বেষ্টন করে বসে আছে।আমি সাহাজ্যের জন্য ‘ওয়া গাওয়াসা’ বলে তাদের উদ্দেশ্যে বললাম-আপনারা কোথা হতে আমার বিষয়ে অবগত হলেন?
    উত্তরে ,তাঁদের একজন বললেন-আমি ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া।আরেকজন বলেন,আমি ইমরান তনয়া বিবি মরিয়ম।এবং আমাদের সঙ্গীনীগণ হচ্ছেন বেহেস্তি হুর। আমি আরো দেখতে পেলাম-অনেক পুরুষবেশীলোক শূন্যে দন্ডায়মান রয়েছেন।তাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে রুপার পাত্র।আরো দেখতে পেলাম-একদল পাখি আমার ঘরের কোঠা ঢেকে ফেলেছে।আল্লাহ তায়ালা আমার চোখের সামনের সকল পর্দা অপসারণ করে দিলেন এবং আমি পৃথিবীর পূ্র্ব থেকে পশ্চিম সব দেখতে পেলাম।আরো দেখতে পেলাম-তিনটি পতাকা।একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে স্থাপিত,অন্যটি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কাবা ঘরের ছাদে।এমতাবস্থায় প্রসব বেদনার চূরান্ত পর্যায় আমার প্রিয় সন্তান হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ভূমিষ্ঠ হলেন”- (হযরত ইবনে আব্বাস সূত্রে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া)খাছায়েছুল ক্বুবরা ও তারিখুল খামিছ গ্রন্থে যথাক্রমে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আবু বকর দিয়ারবিকরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি-বিবি আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর একটি বর্ণনা এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেনঃ
    বিবি আমেনা বলেন- “যখন আমার প্রিয় পূত্র ভূমিষ্ঠ হলেন,তখন আমি দেখতে পেলাম-তিনি সিজদায় পড়ে আছেন।তারপর মাথা উর্দ্ধগামী করে শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে বিশুদ্ধ আরবী ভাষা পাঠ করছেন আশহাদু আললা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নি রাসূলুল্লাহ”(যিকরে জামীল সূত্রে)
    উপরোক্ত বর্ণনায় কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হলোঃ
    (১) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর পবিত্র বেলাদত উপলক্ষে বেহেস্ত ও আকাশ হতে পবিত্র নারী ও হুর-ফিরিস্তাগন জুলুস করে বিবি আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর কুটিরে আগমন করেছিলেন এবং নবীজির সম্মানা্র্থে দন্ডায়মান হয়ে ক্বিয়াম করেছিলেন।আর ফিরিস্তাদের হয়ে এই জুলুস ছিল আকাশ ছোয়া জুলুস।তাই আমরাও নবীজির সম্মানে ক্বিয়াম করি ও জুলুস করি।
    (২) নবী করীম সাল্লালালহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর-নূরের আলোতে বিবি আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অবলোকন করেছিলেন।যাদের অন্তরে নবীজীর নূর মুবারক বিদ্যমান,সেসব অলীগনের দিব্যদৃষ্টি খুলে যায়।তাঁরা লাওহে মাহফুযও দেখতে পান(মসনবী শরীফ)
    (৩) নবী করীম সাল্লালালহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর জন্ম উপলক্ষে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থান আলো ও পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা উত্তম।ইহা আল্লাহ ও ফিরিস্তাদের সুন্নাত।
    (৪) কোরআন নাযিলের ৪০ বৎসর পূর্বেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আদর্শ-‘কলেমা ও নামাজ’ বাস্তবায়ন করেছিলেন।মূলতঃথিউরিটিক্যাল কোরআন নাজিলের পূর্বেই প্রাকটিক্যাল কোরআন(নবী)নাযিল হয়েছিলেন।কোরআন হলো হাদিয়া-আর নবী হলেন সেই হাদিয়ার মালিক।হাদিয়া ও তাঁর মালিকের মধ্যে যে সম্পর্ক তা সর্বজন বিদিত।
    (৫)পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা উপলক্ষে জুলুস এবং শুকরিয়ার আনন্দ মিছিল বের করা ফিরিস্তাদেরই অনুকরণ(আনোয়ারে আফতাবে সাদাকাত)।
    মাওয়াহেব গ্রন্থের বর্ণনায় আকাশ হতে জমীন পর্যন্ত ফেরেস্তাদের জুলুস বা মিছিল পরিস্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে।আল্লাহপাক বলেন-“তোমরা আল্লাহর ফযল ও রহমতস্বরুপ(নবীকে)পেয়ে আনন্দ উল্লাস করো।”(সূরা ইউনূস৫৮ আয়াতের তাফসীর তাফসীরে রুহুল মায়ানী দেখুন।)জালালুদ্দীন সুয়ূতী তাঁর আল হাভী লিল ফাতাওয়া গ্রন্থে ঈদে মিলাদুন্নাবীর সাল্লালালহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা দিনে সব রকমের আনন্দ-উল্লাসকে বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন।(অর্থাৎ,হারাম ব্যতিত সকল ধরনের উল্লাস)
    পূর্ব যুগের জুলুস
    প্রাচীনকালে ১০৯৫-১১২১ খৃষ্টাব্দের মিশরে ঈদে মিলাদুনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা উপলক্ষে ধর্মীয় জুলুস বের করা হতো।গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এতে অংশগ্রহন করতেন।উযির আফযলের যুগে এ আনন্দ মিছিল বের করা হতো।এ সময় রাজপথসমূহ লোকে লোকারণ্য হয়ে যেত।পরবর্তীতে এ উৎসবের প্রসার ঘটে আফ্রিকার অন্যান্য শহরে,ইউরোপের স্পেনে ও ভারতবর্ষে।(মাকরিজী,ইবনে খাল্লেকান)।
    সুতরাং যারা জশনে জুলুসকে নূতন প্রথা,শিরক ও বিদয়াত বলে-তারা অতীত ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে মূর্খ।নবীবিদ্বেষ তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছে।(বিস্তারিত জানার জন্য দৈনিক জনকন্ঠ ৩০শে আগস্ট’৯৬ ‘মিলাদের ইতিকথা’ পড়ুন)।জশনে জুলুস বের করা কোরআনী আয়াত দ্বারাই প্রমাণিত।

  • সকল ঈদের সেরা ঈদ ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা
    ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা
    এমন ঈদ;যা ইসলামের অন্যান্য ঈদের মূল।
    এটার শ্রেষ্ঠত্বের কারণসমূহ


    আলোচনায়ঃ- হযরতুল আল্লামা,মুফতীয়ে আযম বাংলাদেশ,আলহাজ্ব মাওলানা কাজী মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ সাহেব।
    অধ্যাপক,ফিক্‌হ বিভাগ,জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়া,চট্টগ্রাম।
    প্রথমত
    হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর আগমন না হলে ইসলামের আবির্ভাবও হত না,লায়লাতুল ক্বদরও আসত না।এমনকি ঈদে মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর রাত্রি ‘লায়লাতুল ক্বদর’ থেকে উত্তম।
    দ্বিতীয়ত
    ‘লাইলাতুল মৌলেদ’ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর শুভাগমনের রাত্রি।আর ‘লায়লাতুল ক্বদর’ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কে দেয়া হয়েছে।সুতরাং যার জন্য দেয়া হয়েছে,তাঁর গুরুত্ব এ দানকৃত বস্তু হতে উত্তম।
    তৃতীয়ত
    এ ছাড়া ‘লায়লাতুল ক্বদর’ এর মর্তবা ফেরেশতা নাযিল হবার মাধ্যমে হয়েছে।আর মৌলুদ শরীফ রাত্রির মর্যাদা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা শুভাগমনের মাধ্যমেই হয়েছে।
    চতূর্থত
    ‘লায়লাতু ক্বদর’ কোরআন শরীফ অবতীর্ণ হবার কারনে মর্যাদাময় হয়েছে।আর মিলাদুন্নাবী আমন ঈদ যাঁর প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে,সেই নবীর শুভাগমনে দামী।কেননা,যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা যদি না আস্তেন,তাহলে কোরআন নাযিলের রাত্রির মর্যাদাও হত না;সে জন্যই মিলাদুন্নাবী-ই শ্রেষ্ঠ।
    পঞ্চমত
    ‘লায়লাতুল ক্বদর’ এর দ্বারা উম্মতে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।আর ‘মৌলুদ শরীফের’দ্বারা সমগ্র সৃষ্টি জগত ধন্য হয়েছে;যাদের নিকট হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কে রাহমআতুল্লিল আলামীন করে প্রেরণ করা হয়েছে,সেই নবীর শুভাগমন তো সেটা থেকেও শ্রেষ্ঠ।
    সহায়ক গ্রন্থঃ-
    মাওয়াহেবে লাদুনীয়া কৃত ইমাম কস্তুলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি

  • পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

    পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

    মাওলানা মোহাম্মদ আশেক জুনাঈদ

    শিক্ষক কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা





    পবিত্র কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

    এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম । আল্লাহর এ নেয়ামত ও আনুগ্রহকে কেন্দ্র করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ করার নির্দিশ স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজে দিয়েছেন ।

    যেমন এরশাল হচ্ছেঃ-

    قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَ
    আর্থাৎ হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তরা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট। সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮

    উল্লেখ্য যে, নবীজীর শুভাগমনের চাইতে শ্রেষ্ট নেয়ামত এবং দয়া বিশ্ববাসীর জন্য আর কি হতে পারে ? যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে-

    وما ارسلنك إلا رحمة للعالمين
    হে রাসূল, নিশ্চই আমি আপনাকে জগতসমুহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)

    দ্বিতীয় দলীলঃ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমানঃ-

    قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اَللَّهُمَّ رَبَّنَا اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَاءِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا الِّاَوَّلِنَا وَاَخِرِنَا وَ اَيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ-
    আর্থাৎ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) দুয়া করলেন, হে আল্লাহ ! হে আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ন করুন যেন সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে ( বর্তমানে আছে ) এবং যারা পরে, সকলের জন্য আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয়। আর আপনি আমাদেরকে রিযিক প্রদান করুন বস্তুত আপনিই সর্বোত্তম রিযিক প্রদানকারী। (সূরা মায়েদা আয়াত ১১৪)
    মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা পেলে তা যদি ঈসা (আঃ) এর ভাষায় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আনন্দোৎসবের কারণ হয় তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত মহান নেয়ামতে আগমন দিবস কতই না মর্যাদাবান , গুরুত্ববহ, ও আনন্দের তা সহজেই আনুমেয়।



    পবিত্র হাদিস শরীফের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)



    পবিত্র হাদিসের মধ্যে ও ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতার প্রমান পাওয়া যায় । তম্নধ্য হতে কয়েকটি হাদীস হতে একটি হাদীস শরীফ হচ্ছে-

    عن ابن عباس رضي الله عنه ،كان يحدث ذات يوم في بيته وقائع و لاد ته بقوم فيبشرون ويحمدون إذا جاء النبي صلي الله عليه و سلم و قال حلت لكم شفاعتي

    ͏ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদিন হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসাবলী আলোচনা করে দুরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয়নবী হাজির হয়ে এ আবস্তা দেখে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল ।
    ( ইবনে দাহইয়ার আত-তানবীর )
    সুতরাং প্রমানিত হল, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন দ্বারা রাসূলে পাকের শাফায়াত নসীব হয় ।
    ͏ মিলাদ পালন করেছেন নবীজি নিজেই -

    عَنْ اَبِى قَتَدَةَ الاَنْصاَرِى رَضِى الله عَنهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سءل عَنْ صَوْمِ يَوْم الاِ ثْنَيْنِ قَلَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ بُعِثْتُ اَوْاُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ-

    অর্থাৎ হযরত আবু কাতাদা (রা:) হতে বর্নিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লামার দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জম্মন গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয় ।
    (সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ: মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ: হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:)
    ͏ আরো মজার ব্যপার হল আবুলাহাব একজন কাফের হওয়ার পরও নবীজীর জন্মেরর দিন খুশি হয়ে সে তার সংবাদ দাতা দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করে দেওয়ার কারনে পরকালে কঠিন আযাবের ভিতরে ও প্রতি সোমবার তার আযাব হালকা করে দেওয়া হয়।
    (উল্লেখ্য যে আবু লাহাবের ঘটনা সম্পর্ক হাদিসটি আল্লামা ইবনে জাওযী, আল্লামা কুস্তালানী, আল্লামা জালালুদ্দিন মুয়ূতী সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন। )



    সাহাবায়ে কেরামের মতে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)



    বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজর মক্কি হায়তমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রনীত কিতাব ‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‍‍আন ইন মাতুল কুবরা আলাল আলম ফী মাওলিদি উলদে আদম”
    এর মধ্যে কতিপয় হদিস শরীফ রিলক্ষিত হয়।

    - সর্বশ্রেষ্ট সাহবী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:)বলেন-

    مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قِرا ةَ مَوْ لِدِ النَّبىُ مَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَنَرَفِيْقِى فىِ الجَنّةِ
    অর্থাৎ ইমলাদুন্নবী উপলেক্ষে যে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে বেহেশতের শধ্যে আমার বান্ধু হবে।

    দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন -

    مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَخْيَا الاسْالاَمُ
    যে মিলাদুন্নবীকে সম্মান করল সে যেন ইসলামকেই জিন্দা করল

    তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফফান (রাঃ) বলেন -

    مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قرأة مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكَا نَّمَا ثَهِيد غَزُوَةِ بَدَر رَوحُنَيْنُ
    যে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে যেন বদর এবং হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করল

    চুতর্থ খলিফা হযরত আলি মুরতাদ্বার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

    مَنْ عَظَّمَ مَوْ لِدِ النَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَكَانَ سَبَبَا لِقرا ته لا يَحْرُمُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا َّبِالاِ يْمَانِ وَيَدْخُلُ الجَنَّهَ بِغَيْرِ حِسَاب

    অর্থাৎ যে ব্যিক্ত মিলাদুন্নাবী সম্মান করবে তার বদৌলেত সে ঈমান ব্যতিরেকে দুনিয়া হতে বিদায় নেবেনা এবং কোন হিসাব নিকাশ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করবে।

    বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

    وَدَوتْ لَوْكَانَ لِى مِثل جَبَلٍ اُحٍد زَهْبًا فَا نْفَقُتُهُ عَلَ قِراَ ة مَوْلِدِالنّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ

    অর্থাৎ আমার মন চায়, যদি আমার কাছে উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ন থাকত, তাহলে সব গুলো মিলাদুন্নবী পালনে খরচ করতাম।

    হযরত জুনাঈদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাহি বলেন-

    مَنْ حَضَرَ مَوْلِدِالنَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمُ وَعَظّمَ قدره فَقَد فَازَ با لاِ يْما ن
    অর্থাৎ যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী মাহফিলে উপস্থিত হয় এবং তার যথাযথ সম্মান করে তাহলে তার ঈমআন সফল হয়েছে।
  • সুবহান আল্লাহ
  • সুবহানাল্লাহ 
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|