কুরআন শরীফের আলোকে হাযির-নাযির এর প্রমাণ
يَاايُّهَاا لنَّبِىُّ اِنَّا اَرْسَلْنكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا وَّدَاعِيًا اِلَى اللهِ بِاِذْنِه وَسِرَاجًا مُّنِيْرَا
[আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন, ওহে অদৃশ্য বিষয়াদির সংবাদদাতা! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরন করেছি, হাযির-নাযির, সুসংবাদদাতা হিসাবে এবং ভয় প্রদর্শনকারী করেছি আল্লাহর নির্দেশানুশারে তার দিকে আহবানকারী এবং উজ্জল প্রদীপ হিসেবে]
আয়াতে উল্লেখিত- شاهد (শাহীদ) শব্দের অর্থে সাক্ষীও হতে পারে এবং হাযির-নাযির ও হতে পারে। সাক্ষী অর্থে সাহিদ শব্দটি এজন্য ব্যবহৃত হয়েছে সে ঘটনা স্থলেই উপস্থিত ছিল। হুযূর আলাইহিস সালামকে শাহিদ হয়তো এ জন্যই বলা হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম )দুনিয়াতে এসে অদৃশ্য জগতের সাক্ষ্য দিচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরুপে। প্রত্যক্ষদর্শী যদি না হন, তাহলে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কে শাক্ষীরুপে প্রেরণের কোন অর্থই হয়না। কেননা সমস্ত নবীগন (আলাইহিস সালাম) তো সাক্ষী ছিলেন। অথবা তাকে এ জন্যই শাহিদ বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন তিনি (সাল্লাল্লাহ আলাইহিস সালাম) সম্তত নবীগনের অনূকুলে প্রত্যক্ষদর্শীরুপে সাক্ষ্য প্রধান করবেন। এ সক্ষ্য না দেখে প্রদান করা যায় না।
তার শুভ সংবাদদাত, ভীতি প্রদর্শনকারি ও আল্লাহর পথে আহবানকারি হওয়ার বিষয়টিও তথৈবচ। অন্যান্য নবীগনও এ সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু শুধু শুনেই; আর হুযুর আলাইহিস সালাম করেছেন স্বচক্ষে দেখেয়। এ মিরাজ একমাত্র হুযুর আল্লাইহিস সালামের হয়েছিল। উপরোক্ত আয়াতে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আল্লাহিস ওয়াসাল্লাম) কে سِرَاجًامُّنِيْرًا
সিরাজাম মুনীরা ও বলা হয়েছে। সিরাজাম মুনিরা সূর্য্যকেই বলা হয় । সূর্য্য যেমন পৃথিবীর সর্বত্র, ঘরে ঘরে বিদ্যমান, তিনি ও (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক জায়গায় বিরাজমান। এ আয়াতের প্রতিটি শব্দ থেকে হুযুর আলাইহিস সাল্লামের হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত।
(২) وَكَذَالِكَ جَعَلْنَاكُمْاُمَّةًوَّ وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهْدْاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
[এবং কথা হলো এই যে আমি (আল্লাহর তা’আলা) তোমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মাদী ) সমস্ত উম্মত গনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছি ,যাতে তোমরা অন্যান্য লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করতে পার এবং এ রসুল (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম ) তোমাদের জন্য পর্যবেক্ষনকারী ও সাক্ষীরুপে প্রতিভাত হন ।
(৩) فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هؤُلَاءِ شَهِيْدًا
[তখন কি অবস্তা হবে ,যখন আমি (আল্লাহ তা’আল্লা) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব ,এবং হে মাহবুব ! আপনাকে সে সমস্ত সাক্ষীদের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরুপে আনয়ন করব।
এ আয়াতসমূহে নিম্নোক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গত প্রদান করা হয়েছে। কিয়ামতের দিন অন্যান্য নবীগনের উম্মতগন আরজ করবে; আপনার নবীগন আপনার নির্ধারিত বিধি-বিধান আমাদের নিকট পৌছাননি। পক্ষান্তরে নবীগন আরজ করবেন; আমরা অনুশাসনসমূহ পৌছিয়েছি। নবীগন নিজেদের দাবীর সমর্থনে সাক্ষী হিসাবে উম্মতে মুস্তফা আলাইহিস সালামকে পেশ করবেন। উনাদের সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আপত্তি উত্থাপন করে বলা হবেঃ আপনারা সে সব নবীদের যুগে ছিলেন না। আপনারা না দেখে কিভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন? তাঁরা তখন বলবেন; আমাদেরকে হুযুর আল্লাইহিস সালাম এ ব্যাপারে বলেছিলেন। তখন হুযুর আল্লাইহিস সালামের সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম ) দুটো বিষয় সাক্ষ্য দিবেন। এক নবীগন ( আলাইহে সাল্লাম) শরীয়তের বিধানাবলী প্রচার করেছেন দুই, আমার উম্মতগন সাক্ষ্য প্রদানের উপযুক্ত । সুতরাং মুকদ্দমা এখানেই শেষ। সম্মানীত নবীগনের পক্ষে রায় দেওয়া হবে । লক্ষ্যনীয় যে, যদি হুযুর আলিইহিস সালাম পূর্ববর্তী নবীগনের তবলীগ ও স্বীয় উম্মতগনের ভবিষ্যতের অবস্তা সচক্ষে অবলোকন না করতেন, তাহলে তাঁর সাক্ষ্যের ব্যাপারে কোন আপত্তি উত্থাপিত হল না কেন? যেমনিভাবে তাঁর উম্মতের সাক্ষ্যের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপিত হলো,বোঝা গেল তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সাক্ষ্য হবে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য আর আগেরটা হবে শ্রুত বিষয়ে সাক্ষ্য।এ থেকে তার হাযির -নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলো। এ আয়াতের তাৎপর্য ইতিপূর্বে ইলমে গায়ব এর আলোচনায় ও বিশ্লেষন করেছি।
(৪) لَقَدْجَاَءَ كُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ
[নিশ্চয় তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে সে রসূলই এসেছেন, যাঁর কাছে তোমাদের কষ্টে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারটি বেদনাদায়ক ।
এ আয়াত থেকে তিন রকমে হুযর আলাইহিস সালাম এর হাযির -নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হয়। প্রথমত جَاءَكُمْ আয়াতাংশে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের মুসলমানদেরকে সম্মোধন করা হয়েছে, তোমাদের সকলের কাছে হুযুর আলাইহিস সালাম তশরীফ এনেছেন। এতে বোঝা যায় যে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক মুসলমানদের কাছেই আছেন। মুসলমানতো পৃথিবীর সব জায়গায় আছে, তাই হুযুর আলাইহিস সালামও প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান আছে। দ্বিতীয়ত: আয়াতে বলা হয়েছে- مِنْ اَنْفُسِكُمْ (তোমাদের আত্মাসমূহের মধ্যে থেকে অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে তার (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম) আগমন যেন শরীরের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হওয়া বা শরীরের শিরা-উপশিরা, এমনকি প্রতিটি কেশাগ্রেও বিদ্যমান; যা প্রত্যেক কিছুর ব্যাপারে সজাগ ও সংবেদনশীল। তদ্রূপ হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিটি কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত।
চোখ সমূহের মধ্যে তিনি বিরাজমান, তবে দৃষ্ঠির মত অদৃশ্য। দিলের মধ্যে এমনভাবেই বিদ্যমান আছেন। যেমনি ভাবে শরীরের মধ্যে প্রান বিচরন করে। তিনি অপূর্ব এক শানে বিকশিত। আমার মধ্যে রয়েছেন অথচ আমার দৃষ্টির আড়ালে।
যদি আয়াতের অর্থ কেবল এটাই হতো-তিনি তোমাদের মধ্যেকার একজন মানুষ, তহলে مِنْكُمْ বলায় যতেষ্ট ছিল। مِنْ اَنْفُسِكُمْ কেন বলা হল?তৃতীয়তঃ আয়াতে আরও বলা হয়েছে عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ অর্থাৎ- যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে, তা তাঁর কাছে পীড়াদায়ক। এতে বোঝা গেল যে,আমাদের সুখ-দুঃখ সম্পকেও হুযুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) প্রতি নিয়ত অবগত। এজন্যই তো আমাদের দুঃখ-কষ্টের ফলশ্রূতিতে তাঁর পবিত্র হৃদয়ে কষ্ট অনুভব হয়। যদি আমাদের খবর ও না থাকে। তবে তার কষ্ট অনুভব হয় কিভাবে? শেষের এ আয়াতাংশটিও আসলে পূর্বোল্লিখিত مِنْ اَنْفُسِكُمْ এরই তাৎপর্য-বিশ্লেষন করে। শরীরে কোন অঙ্গে ব্যথা বেদনা হলে ,তা আকা মওলা (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম )এর কাছে পিড়াদায়ক ঠেকে।
(৫) ۳۹وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْظَّلَمُوْ اَنْفُسَهُمْ جَاَءُوْاكَ فَأسْتَغْفَرُوْا اللهَ وَاسْتَغْفَرَلَهُمُالرَّسُوْالُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا
[এবং যখন ওরা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করে, তখন তারা যদি আপনার সমীপে উপস্তিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষামা প্রার্থনা করে আর আপনি ও তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহকে তওবা কবুলকারী, করুণাময় হিসেবে পাবে।]
এ আয়াত থেকে বোঝা গেল যে, পাপীদের মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রাপ্তির একমাত্র পথ হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের মহান দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁর শাফাআত প্রার্থনা করা এবং হুযুর মেহেরবানী করে তাদের জন্য শাফাআত করা। এর অর্থ এ নয় যে, আমাদেরকে মাগফিরাতের জন্য পবিত্র মদীনাতে উপস্থিত হতে হবে। কেননা তাহলে আমাদের মত দরিদ্র বিদেশী পাপীদের ক্ষমাপ্রাপ্তির কি উপায় হবে? ধনাঢ্য ব্যক্তিগনও তো জীবনে একবার কি দু বার সে মহান দরবারে যাবার সামর্থ রাখে। অথচ দিনরাত পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত রয়েছেন। তাই এতে মানুষের সাধ্যাতীত কষ্ঠ হবে। কাজেই আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে-তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কাছেই বিদ্যমান আছেন। তোমরা বরং তার নিকট থেকে দুরে অবস্থান করছো। তোমরা হাযির হয়ে যাও, তিনি তোমাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হবেন।
পরম বন্ধু আমার নিজের চেয়েও কাছে বিদ্যমান। এটাই বিস্ময়কর যে আমি তার নিকট থেকে দুরে রয়েছি।
এতে বোঝা যায় যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সর্বত্র বিদ্যমান।
(৬) وَمَا اَرْسَلْنكَ اِلَّارَ حْمَةً لِّلْعَا لَمِيْنَ
[আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। অন্যত্র বলা হয়েছে-
وَرَحْمَتِىْ وَسِعَتْ كُلَّشَيْئٍ
অর্থাৎ আমার রহমত প্রত্যেক কিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে। বোঝা গেল যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম) বিশ্ব চরাচরের জন্য রহমত স্বরূপ এবং রহমত সমগ্র বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে আছে। সুতরাং সমগ্র বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন হুযুর আলাইহিস সালাম। স্বরন রাখা দরকার যে, মহা প্রভু আল্লাহর শান হচ্ছে তিনি’ রাব্বুল আলামিন’ (বিশ্বব্রহহ্মন্ডের প্রতিপালক) আর প্রিয় হাবীবের শান হচ্ছে তিনি’ রাহমাতুল্লিল আলামিন’ (বিশ্বব্রক্ষান্ডের প্রতি রহমত স্বরূপ)। স্পষ্টই প্রতীয়মান হল যে, আল্লাহ যার প্রতিপালক, হুযুর আলাইহিস সালাম হচ্ছেন তার প্রতি রহমত স্বরূপ।
(৭) مَاكَانَ اللهُ لِيُعَذِّ بَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْ
[হে মাহবুব! এটা আল্লাহর অভিপ্রেত নয় যে আপনি তাদের মধ্যে থাকাকালে আল্লাহ তাদের কে শাস্তি প্রদান করবেন।]
অথাৎ খোদার মর্মন্তুদ শাস্তি তারা পাচ্ছে না- এজন্য যে আপনি তাদের মধ্যে রয়েছেন আর সাধারন ও সর্বব্যাপী আযাব তো কিয়ামত র্পযন্ত কোন জায়গায় হবে না। এ থেকে জানা যায় যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান থাকবেন। এ সম্পর্কে সুপ্রসিদ্ধ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে বলা হয়েছে, হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক পুণ্যত্মা ও প্রত্যেক পাপীর সাথে বিদ্যামান আছেন। এর বিশদ বিবরণ এ অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
وَاعْلَمُوْا اَنَّ فِيْكُمْ رَسُوْلُ اللهِ
[তোমরা জেনে রেখ, তোমাদের মধ্যে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরাজমান)। এখানে সমস্ত সাহাবায়ে কিরামকে সম্বোধন করা হয়েছে অথচ তারা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতেন সুতরাং স্পষ্টই বোঝা যায় যে হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব জায়গায় ও তাদের কাছে আছেন।
(৮) وَكَذَا لِكَ نُرِىَ اِبْرَ اهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّموَاتِ وَالْاَرْضِ
এবং এভাবেই হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত আসমান ওযমীনে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহি অবলোকন করাই ।
এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামাকে তার চর্মরোগ সমগ্র জগত দেখার বন্দোবস্ত করেছিলেন। হুজুর আলাইহিস সালামের মরতবা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হতে উর্দ্ধে। অতএব একথা স্বীকার করতেই হবে যে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সমগ্র জগত অবলোকন করেছেন । এ আয়াত এর তাৎপর্য ‘ইলমে গায়েব শীর্ষক আলোচনা পুর্ণ বিশ্লেষন করা হয়েছে।
৯) اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ
হে মাহবুব আপনি কি দেখেননি প্রভু হস্তী বাহিনীর কি অবস্থা করছেন?
১০) اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ
হে মাহবুব আপনি কি দেখেননী আপনার প্রতিপালক আদ নামক জাতির সংগে কিরূপ আচরন করেছেন ?
আদ জাতি ও হস্তীবাহিনীর ঘটনাবলী হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবির্ভাবের পুর্বেই সংঘটিত হয়েছে অথচ বলা হচ্ছে اَلَمْ تَرَ (আপনি কি দেখেননি?) অর্থাৎ আপনি দেখেছেন। এতে কেউ আপত্তি উত্থাপন করে বলতে পারে য়ে, কুরআন করীমে কাফিরদের প্রসঙ্গেও তো বলা হয়েছে اَلَمْ يَرَوْ اكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنْ قَرْنٍ তারা কি দেখেনি, আমি তাদের আগে কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি), এখানে লক্ষ্যণীয় যে, কাফিরগণ; তাদের আগেকার কাফিরদের ধ্বংস হতে দেখেনি; তবু আয়াতে বলা হয়েছে-তারা কি দেখেনি? সুতরাং, আপনি কি দেখেননি? এ উক্তি থেকে সচক্ষে দেখার ব্যাপারটি প্রমাণিত হয় না। এর উত্তর হচ্ছে- এখানে আয়াতে আগেকার কাফিরদের ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ, বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ী ও ধ্বংসাবশেষ দেখার কথাই বলা হয়েছে। মক্কার কাফিরগণ যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভ্রমন করার সময় সেসব স্থান সমূহের পার্শ্ব দিয়া যাতায়াত করতো, সেজন্য বলা হয়েছে এসব ধ্বংসাবশেষ দেখে কেন শিক্ষাগ্রহন করে না? হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃশ্যতঃ না পৃথিবী পরিভ্রমন করেছেন না আদ' জাতিও অন্যান্য বিধ্বস্ত দেশ সমূহ বাহ্যিকভাবে দেখেছেন। তাই তার ক্ষেত্রে স্বীকার করতেই হবে যে, এখানে তাঁর নূরে নবুয়াতের মাধ্যমে দেখার কথাই বলা হয়েছে ।
(১১) কুরআন শরীফের অনেক জায়গায় اِذْ উক্ত হয়েছে, যেমন
وَاِذْقَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَئِكَةِ
(যখন আপনার প্রতিপালক ফিরিশতাদের উদ্দেশ্যে বললেন وَاِذْقَالَ مُوْسى لِقَوْمِه (যখন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম স্বজাতির উদ্দেশ্যে বললেন ----) ইত্যাদি। তাফসীরকারকগণ এসব জায়গায় اُذْكُرْ (ঐ ঘটনাটি স্মরণ করুন।) শব্দটি উহ্য আছে বলে মত পোষণ করেন। লক্ষণীয় যে স্মরণ করুন- একথা দ্বারা সেসব বিষয় বা ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, যা সংঘটিত হতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু কালক্রমে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ নেই । এত্থেকে প্রতীয়মান হয় যে ওই সমস্ত বিগত ঘটনাবলী হুযুর আলাইহিস সালাম অবলোকন করেছেন। তাফসীরে রূহুল বয়ানে উল্লেখিত আছে যে হযরত আদম আলাইহিস সালামের সমস্ত ঘটনাবলী হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যক্ষ করেছেন। সামনে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে। কেউ আরও একটি আপত্তি উত্থাপন পূর্বক বলতে পারে যে কুরআন কারীমে বনী ইসরাইলকেও তো وَاِذْنَجَّيْنَا كُمْ مِنْ الِ فِرْعَوْنَ (সে সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমাদেরকে ফিরাউনের বংশধরদের অত্যাচার -উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করেছিলাম) । আয়াতের মধ্যে সম্বোধন করা হয়েছে । হুযুর আলাইহিস সালামের যুগের ইহুদীগণ কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় বিদ্যমান ছিল? কিন্তু তাফসীরকারকগণ এখানেও اُذْكُرْ (স্মরণ কর) শব্দ উহ্য আছে বলে স্বীকার করেন। এ উত্তর হবে যে সমস্ত বনী ইসরাইলের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী জানা ছিল, তারা ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করেছিল। সেজন্য তাদের জানা ঘটনাবলী দিকেই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হুযুর আলাইহিস সালাম না কোন ইতিহাসবেত্তার সান্নিধ্যে ছিলেন না শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত কোন গোত্রের মধ্যে লালিত-পালিত হয়েছেন। এমতাবস্থায় তাঁর পক্ষে একমাত্র নূরে নবুওয়াতের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন ভাবে জ্ঞানার্জনের কোন উপায় ছিল কি?
(১২) اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْ فُسِهِمْ
[নবী মুসলমানদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর।] দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব তার রচিত তাহযীরুন নাস গ্রন্থের ১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ এ আয়াতের اَوْلى শব্দের অর্থ হচ্ছে নিকটতর। তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় নবী মুসলমানদের কাছে তাঁদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর। আমাদের নিকটতম হচ্ছে আমাদের প্রাণ; এ প্রাণ থেকেও নিকটতর হচ্ছেন নবী আলাইহিস সালাম। বলা বাহুল্য যে, অতি নিকটে অবস্থিত বস্তু দৃষ্টিগোচর হয় না।
অত্যধিক নৈকট্যের কারনে আমরা তাকে (প্রয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখে দেখতেপাই না।
বিঃদ্রঃ এখানে কিছু সংখ্যক লোক আপত্তি উত্থাপন করে থাকেন যে আপনারা যেহেতু মু্ক্কাল্লিদ আপনারদের জন্য কুরআনের আয়াত ও হাদিছ সমূহ থেকে দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করাতো জায়েয নয়।
একজন মুকাল্লিদের উচিত তার বক্তব্যের সমর্থনে (মুজাহিদ ইমাম) এর উক্তি পেশ করা। সুতরাং আপনার কেবল আবু হানিফা (রহঃ) এর উক্তিই পেশ করতে পারেন। এর উত্তর কয়েকভাবে দেয়া যায়। (ক)আপনারা নিজেরাই যেহেতু হাযির ও নাজির না হওয়ার আকীদা পোষন করেন,সেহেতু আপনাদের উচিত ছিল আপন আকীদা এর সমর্থনে ইমাম সাহেব (রহঃ) এর উক্তি উপস্থাপন করা।
(খ) আমি তকলীদের আলোচনায় পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে আকীদা সম্পর্কিত কোন মাসআলায় তাকলিদ হয় না কেবলমাএ ফকীহগণের গবেষণালব্ধ মাসায়েলের ক্ষেত্রে তকলীদ প্রযোজ্য হয়। আলোচ্য বিষয়টি হচ্ছে আকীদা এর একটি মাসআলা।
(গ) মুকাল্লিদ সুস্পষ্ট আয়াত ও হাদিছ সমূহ থেকে দলিল প্রমান উস্থাপন করতে পারে। তবে হ্যা এসব দলীলের ভিত্তিতে নিজে মাসায়েল বরং করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে তহাবী শরীফে উল্লেখিত আছেঃ
وَمَا وُهِمَ الْاَحْكَامُ مِنْ تَّحْوِ الظَّاهِرِ وَالنَّصِّ وَالْمُفَسَّرِ فَلَيْسَ مُخْتَصًّا بِه ( اَىْ بِالْمُجْتَهِدِ) بَلْ يَقْدِرُ عَلَيْهِ الْعُلَمَاءُ الْاَعَمُّ
যে সমস্ত আহকাম বা শরীয়ত বিধি কুরআনের যাহির নাস ওমুফাসসার ইত্যাদি প্রকৃতির আয়াত থেকে সরাসরি সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য হয় না। এমন কথা বলা যায় না। এসব মাসায়েল বরং সাধারণ আলিমগণও বের করার সামর্থ রাখেন সুবিখ্যাত মুসাল্লামুছ ছবুত নামক উসুলে ফিকহ এর গ্রন্থে উল্লেখিত আছে-
وَاَيْضًا شَاعَوَذَاعَ اِحْتِجَاجُهُمْ سَلْفًا وَخَلْفًا بِالْعُمُوْ مَاتِ مِنْ غَيْرٍ نكير
অথাৎ অধিকন্তু ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত আয়াত থেকে দলীল গ্রহন করার রীতি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ধর্মীয় মনীষীদের মধ্যে কোনরূপ ওজর আপত্তি ছাড়াই প্রচলিত হয়ে আসছে।
কুরআনে করীমেও ইরশাদ
فَاسْئَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَاتَعْلَمُوْن
অর্থাৎ যদি তোমরা না জান তবে জ্ঞানীদের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করো। ইজতিহাদী মাসায়েল যেহেতু আমরা জানি না সেজন্য ইমামদের অনুসরণ করি। আর সুস্পষ্ট অর্থবোধক আয়াতসূমহের অর্থ আমরা বুঝি সেজন্য এসব ব্যপারে তকলীদ নিষ্প্রয়োজন।
(ঘ) হাযির-নাযির এর মাসআলা সম্পর্কে সুবিখ্যাত ফকীহ মুহাদ্দিস ও তাফসীরকারকদের উক্তি সমূহের বিশাদ বর্ণনা পরবর্তী পরিচ্ছেদ সমূহেও করা হবে। গভীর ভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন যে হাজির-নাজির এর এ আকিদা সমস্ত মুসলমানই পোষণ করে। -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-
Comments
কুরআন শরীফের আলোকে হাযির-নাযির এর প্রমাণ http://yanabi.in/u/5
হাযির-নাযির বিষয়ক হাদীছ সমূহের বর্ণনা
ফকীহ ও উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ থেকে হাজির-নাজির এর প্রমান
যুক্তি নির্ভর দলীলাদির সাহায্যে হাযির-নাযির এর প্রমাণ
ভিন্নমতাবলম্বীদের রচিত পুস্তকসমূহ থেকে হাযির নাযির এ প্রমাণ
তাহযিরুন্নাস কিতাবের ১০ পৃষ্ঠায় দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব বলেন আয়াত اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْ مِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ্বাসী লোকদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়ে নিকটত]এর مِنْ اَنْفُسِهِمْ অংশটুকুর শব্দ বিন্যাস ও ব্যবহৃত অন্বিত অব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে এ কথাটি প্রমাণিত হয় যে, উম্মতের সাথে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এমন নৈকট্যের সম্পর্ক আছে যে, তাদের প্রাণের সাথেও সেরূপ নৈকট্য নেই। কেননা উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত اَوْلَى শব্দটির অর্থ হচ্ছে নিকটতর। মওলবী ইসমাইল দেহলবী রচিত সিরাতে মুস্তাকীম গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠার তরজুমার চতুর্থ হিদায়েত ইশকের বর্ণনায় আগুন ও কয়লার দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে এভাবে, যখন খোদা অন্বেষী সাধকের পূর্ণতাপ্রাপ্ত আত্মাসত্ত্বাকে রহমানী আকর্ষণ ও ভাবাবেশের তরঙ্গমালা আহাদিয়াত এর সমুদ্র সমূহের গভীরে টেনে নিয়ে যায় তখন আনাল হক ও আমার জুবানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু নেই প্রভৃতি বাক্য সে সাধকের মুখ থেকে নির্গত হতে থাকে। সাধকের এ অবস্থার কথাই বর্ণিত হয়েছে হাদীছে কুদসীতে যেখানে বলা হয়েছে-
كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِه وَبَصَرَهُ الَّذِىْ يَبْصُرُ بِه
(আমি সে প্রিয় বান্দার কান হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি শুনেন, তার চোখ হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি দেখেন। এ ইবারতে একথা স্পষ্টই স্বীকৃত হয়েছে যে, মানুষ যখনিই ফানাফিল্লাহ এর স্তরে উপনীত হয় তখন সে খোদার শক্তিতেই দেখে, শুনে, ধরে ও কথা বলে। অর্থাৎ জগতের প্রত্যেক কিছুই দেখে, দূরের ও নিকটের যাবতীয় কিছু স্পর্শ করে। এটিই হচ্ছে হাযির-নাযির এর অর্থ। যখন সাধারণ মানুষ ফানাফিল্লাহ এর স্তরে গিয়ে মর্যাদার এরূপ আসনে অধিষ্ঠিত হয়, তাহলে জীন ও মানব জাতির সর্দার আলাইহিস সালাত ওয়াসাল্লাম যার ফনাফিল্লাহের স্তরে অন্য কেউ উপনীত হতে পারে না, সর্বোচ্চ স্তরের হাযির-নাযির হবেন বৈকি।
ইমদাদুস সুলুক নামক গন্থের ১০ পৃষ্ঠায় মওলবী রশীদ আহমদ সাহেব গাঙ্গুহী লিখেছেনঃ- মুরীদের এও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে পীরের রূহ মোবারক এক জায়গায় আবদ্ধ নয়। মুরীদ দূরে বা নিকটে যেখানে হোক না কেন, এমনকি পীরের পবিত্র শরীর মোবারক থেকে দূরে হলেও পীরের রূহানিয়ত কিন্তু দূরে নয়। যখন এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেলে তখন পীরকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখতে হবে যাতে তার সাথে আন্তরিক সম্পর্ক প্রকট হয়ে উঠে এবং মুরীদ এ উপকারিতা লাভে ধন্য হতে থাকে। মুরীদ যে অবস্থার সম্মুখীন হয় সে অবস্থায় পীরের মুখাপেক্ষী থাকে। পীরকে আপন অন্তরে হাযির করে স্বীয় অবস্থার মাধ্যমে পীরের নিকট লক্ষ্য বস্তুর প্রার্থী হতে হবে। আল্লাহর হুকুমে পীরের রূহ মোবারক পার্থিব বিষয়টি মুরীদের অন্তরে অবশ্যই ইলকা করবেন। কিন্তু এর জন্য শর্ত হচ্ছে পীরের সাথে পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। পীরের সহিত সম্পর্কের কারণেই অন্তর বাক্যময় উঠে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পথ উদঘাটিত হয়। আল্লাহ তাকে ইলহাম প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন করে।
এ ইবারতে নিম্ন লিখিত কথা কয়টি স্পষ্টরূপে পাচ্ছেঃ
১) মুরীদের কাছে পীরের হাযির-নাযির হওয়।
২) পীরের ধ্যানে মুরীদের রত থাকা।
৩) পীরের হাজত পূরণের ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া
৪) খোদাকে বাদ দিয়ে মুরীদের প্রার্থিত বিষয়ে পীরের কাছে প্রার্থী হওয়া।
৫) মুরীদের অন্তরে প্রর্থিত বিষয়ে পীরের সুস্পষ্ট ধারণা সৃষ্টি করা। ও
৬) পীর মুরীদের দিল জারী করে দেওয়া।
পীরের মধ্যে যখন এসব শক্তি নিহিত রয়েছে, তখন মানবজাতি ও ফিরিশতাদের মুর্শিদদেরও যিনি মুর্শিদ, তাঁর মধ্যে এসব গুনাবলী স্বীকার করা শিরক হয় কি করে? উল্লেখিত ইবারতটুকু ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্পূর্ণ মতাদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। আল্লাহর শুকরিয়া যে সম্পূর্ণ তকবীয়াতুল ঈমান এখানেই খতম হয়ে গেল।
হিফযুল ঈমান নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় মওলবী আশরাফ আলী সাহেব লিখেছিনঃ
অতি অল্প সময়ে পৃথিবী পরিভ্রমণ সম্পর্কে আবু ইয়াযিদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছেন এটি কোন পূর্ণতা জ্ঞাপক বৈশিষ্ট্য নয়। দেখুন ইবলীস পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত নিমেষেই অতিক্রম করে।
এ ইবাদতে এ কথাটুকুই স্পষ্টরূপে স্বীকার করা হয়েছে যে, কোন কোন সময় পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্তে পৌছে যাওয়া শুধুমাত্র আল্লাহওয়ালাদের জন্য সম্ভব পর নয় বরং কাফির ও শয়তানদের পক্ষে ও এরূপ দুরূহ কাজ সম্ভবপর এবং হতেই আছে। হাযির-নাযির শব্দদ্বয় দ্বারা এ কথাটুকুই বোঝানো হয়। তকবীয়াতুল ঈমান এ দৃষ্টিকোণ থেকে তা শিরক বটে।
নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁ ভূপালী ওহাবী রচিত মিসকুল খেতাম গ্রন্থের উদ্ধৃতি হাযির-নাযির এর প্রমাণেও (অত্র অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ) পেশ করেছি। তিনি বলেছেন- তাশাহুদে আসসালামু আলাইকা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ জন্যই সম্বোধন করা হয় যে, তিনি জগতের কনায় কনায় বিদ্যমান। নামাযীর সত্ত্বার মাঝে হাযির ও বিরাজমান।
উপরোল্লিখিত ইবারতসমূহ থেকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি সুচারুরূপে প্রতিপন্ন হল।