★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হাযির-নাযির এর প্রমাণ - Ja-al-haq Discussions on

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হাযির-নাযির এর প্রমাণ

edited March 2018 in Ja-al-haq

কুরআন শরীফের আলোকে হাযির-নাযির এর প্রমাণ

يَاايُّهَاا لنَّبِىُّ اِنَّا اَرْسَلْنكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا وَّدَاعِيًا اِلَى اللهِ بِاِذْنِه وَسِرَاجًا مُّنِيْرَا



[আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন, ওহে অদৃশ্য বিষয়াদির সংবাদদাতা! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরন করেছি, হাযির-নাযির, সুসংবাদদাতা হিসাবে এবং ভয় প্রদর্শনকারী করেছি আল্লাহর নির্দেশানুশারে তার দিকে আহবানকারী এবং উজ্জল প্রদীপ হিসেবে]
আয়াতে উল্লেখিত- شاهد (শাহীদ) শব্দের অর্থে সাক্ষীও হতে পারে এবং হাযির-নাযির ও হতে পারে। সাক্ষী অর্থে সাহিদ শব্দটি এজন্য ব্যবহৃত হয়েছে সে ঘটনা স্থলেই উপস্থিত ছিল। হুযূর আলাইহিস সালামকে শাহিদ হয়তো এ জন্যই বলা হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম )দুনিয়াতে এসে অদৃশ্য জগতের সাক্ষ্য দিচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরুপে। প্রত্যক্ষদর্শী যদি না হন, তাহলে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কে শাক্ষীরুপে প্রেরণের কোন অর্থই হয়না। কেননা সমস্ত নবীগন (আলাইহিস সালাম) তো সাক্ষী ছিলেন। অথবা তাকে এ জন্যই শাহিদ বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন তিনি (সাল্লাল্লাহ আলাইহিস সালাম) সম্তত নবীগনের অনূকুলে প্রত্যক্ষদর্শীরুপে সাক্ষ্য প্রধান করবেন। এ সক্ষ্য না দেখে প্রদান করা যায় না।
তার শুভ সংবাদদাত, ভীতি প্রদর্শনকারি ও আল্লাহর পথে আহবানকারি হওয়ার বিষয়টিও তথৈবচ। অন্যান্য নবীগনও এ সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু শুধু শুনেই; আর হুযুর আলাইহিস সালাম করেছেন স্বচক্ষে দেখেয়। এ মিরাজ একমাত্র হুযুর আল্লাইহিস সালামের হয়েছিল। উপরোক্ত আয়াতে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আল্লাহিস ওয়াসাল্লাম) কে سِرَاجًامُّنِيْرًا
সিরাজাম মুনীরা ও বলা হয়েছে। সিরাজাম মুনিরা সূর্য্যকেই বলা হয় । সূর্য্য যেমন পৃথিবীর সর্বত্র, ঘরে ঘরে বিদ্যমান, তিনি ও (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক জায়গায় বিরাজমান। এ আয়াতের প্রতিটি শব্দ থেকে হুযুর আলাইহিস সাল্লামের হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত।



(২) وَكَذَالِكَ جَعَلْنَاكُمْاُمَّةًوَّ وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهْدْاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا



[এবং কথা হলো এই যে আমি (আল্লাহর তা’আলা) তোমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মাদী ) সমস্ত উম্মত গনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছি ,যাতে তোমরা অন্যান্য লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করতে পার এবং এ রসুল (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম ) তোমাদের জন্য পর্যবেক্ষনকারী ও সাক্ষীরুপে প্রতিভাত হন ।



(৩) فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هؤُلَاءِ شَهِيْدًا



[তখন কি অবস্তা হবে ,যখন আমি (আল্লাহ তা’আল্লা) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব ,এবং হে মাহবুব ! আপনাকে সে সমস্ত সাক্ষীদের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরুপে আনয়ন করব।
এ আয়াতসমূহে নিম্নোক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গত প্রদান করা হয়েছে। কিয়ামতের দিন অন্যান্য নবীগনের উম্মতগন আরজ করবে; আপনার নবীগন আপনার নির্ধারিত বিধি-বিধান আমাদের নিকট পৌছাননি। পক্ষান্তরে নবীগন আরজ করবেন; আমরা অনুশাসনসমূহ পৌছিয়েছি। নবীগন নিজেদের দাবীর সমর্থনে সাক্ষী হিসাবে উম্মতে মুস্তফা আলাইহিস সালামকে পেশ করবেন। উনাদের সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আপত্তি উত্থাপন করে বলা হবেঃ আপনারা সে সব নবীদের যুগে ছিলেন না। আপনারা না দেখে কিভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন? তাঁরা তখন বলবেন; আমাদেরকে হুযুর আল্লাইহিস সালাম এ ব্যাপারে বলেছিলেন। তখন হুযুর আল্লাইহিস সালামের সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম ) দুটো বিষয় সাক্ষ্য দিবেন। এক নবীগন ( আলাইহে সাল্লাম) শরীয়তের বিধানাবলী প্রচার করেছেন দুই, আমার উম্মতগন সাক্ষ্য প্রদানের উপযুক্ত । সুতরাং মুকদ্দমা এখানেই শেষ। সম্মানীত নবীগনের পক্ষে রায় দেওয়া হবে । লক্ষ্যনীয় যে, যদি হুযুর আলিইহিস সালাম পূর্ববর্তী নবীগনের তবলীগ ও স্বীয় উম্মতগনের ভবিষ্যতের অবস্তা সচক্ষে অবলোকন না করতেন, তাহলে তাঁর সাক্ষ্যের ব্যাপারে কোন আপত্তি উত্থাপিত হল না কেন? যেমনিভাবে তাঁর উম্মতের সাক্ষ্যের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপিত হলো,বোঝা গেল তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সাক্ষ্য হবে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য আর আগেরটা হবে শ্রুত বিষয়ে সাক্ষ্য।এ থেকে তার হাযির -নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলো। এ আয়াতের তাৎপর্য ইতিপূর্বে ইলমে গায়ব এর আলোচনায় ও বিশ্লেষন করেছি।

(৪) لَقَدْجَاَءَ كُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ

[নিশ্চয় তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে সে রসূলই এসেছেন, যাঁর কাছে তোমাদের কষ্টে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারটি বেদনাদায়ক ।
এ আয়াত থেকে তিন রকমে হুযর আলাইহিস সালাম এর হাযির -নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হয়। প্রথমত جَاءَكُمْ আয়াতাংশে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের মুসলমানদেরকে সম্মোধন করা হয়েছে, তোমাদের সকলের কাছে হুযুর আলাইহিস সালাম তশরীফ এনেছেন। এতে বোঝা যায় যে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক মুসলমানদের কাছেই আছেন। মুসলমানতো পৃথিবীর সব জায়গায় আছে, তাই হুযুর আলাইহিস সালামও প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান আছে। দ্বিতীয়ত: আয়াতে বলা হয়েছে- مِنْ اَنْفُسِكُمْ (তোমাদের আত্মাসমূহের মধ্যে থেকে অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে তার (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম) আগমন যেন শরীরের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হওয়া বা শরীরের শিরা-উপশিরা, এমনকি প্রতিটি কেশাগ্রেও বিদ্যমান; যা প্রত্যেক কিছুর ব্যাপারে সজাগ ও সংবেদনশীল। তদ্রূপ হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিটি কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত।
চোখ সমূহের মধ্যে তিনি বিরাজমান, তবে দৃষ্ঠির মত অদৃশ্য। দিলের মধ্যে এমনভাবেই বিদ্যমান আছেন। যেমনি ভাবে শরীরের মধ্যে প্রান বিচরন করে। তিনি অপূর্ব এক শানে বিকশিত। আমার মধ্যে রয়েছেন অথচ আমার দৃষ্টির আড়ালে।

যদি আয়াতের অর্থ কেবল এটাই হতো-তিনি তোমাদের মধ্যেকার একজন মানুষ, তহলে مِنْكُمْ বলায় যতেষ্ট ছিল। مِنْ اَنْفُسِكُمْ কেন বলা হল?তৃতীয়তঃ আয়াতে আরও বলা হয়েছে عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ অর্থাৎ- যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে, তা তাঁর কাছে পীড়াদায়ক। এতে বোঝা গেল যে,আমাদের সুখ-দুঃখ সম্পকেও হুযুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) প্রতি নিয়ত অবগত। এজন্যই তো আমাদের দুঃখ-কষ্টের ফলশ্রূতিতে তাঁর পবিত্র হৃদয়ে কষ্ট অনুভব হয়। যদি আমাদের খবর ও না থাকে। তবে তার কষ্ট অনুভব হয় কিভাবে? শেষের এ আয়াতাংশটিও আসলে পূর্বোল্লিখিত مِنْ اَنْفُسِكُمْ এরই তাৎপর্য-বিশ্লেষন করে। শরীরে কোন অঙ্গে ব্যথা বেদনা হলে ,তা আকা মওলা (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম )এর কাছে পিড়াদায়ক ঠেকে।

(৫) ۳۹وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْظَّلَمُوْ اَنْفُسَهُمْ جَاَءُوْاكَ فَأسْتَغْفَرُوْا اللهَ وَاسْتَغْفَرَلَهُمُالرَّسُوْالُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا

[এবং যখন ওরা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করে, তখন তারা যদি আপনার সমীপে উপস্তিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষামা প্রার্থনা করে আর আপনি ও তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহকে তওবা কবুলকারী, করুণাময় হিসেবে পাবে।]
এ আয়াত থেকে বোঝা গেল যে, পাপীদের মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রাপ্তির একমাত্র পথ হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের মহান দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁর শাফাআত প্রার্থনা করা এবং হুযুর মেহেরবানী করে তাদের জন্য শাফাআত করা। এর অর্থ এ নয় যে, আমাদেরকে মাগফিরাতের জন্য পবিত্র মদীনাতে উপস্থিত হতে হবে। কেননা তাহলে আমাদের মত দরিদ্র বিদেশী পাপীদের ক্ষমাপ্রাপ্তির কি উপায় হবে? ধনাঢ্য ব্যক্তিগনও তো জীবনে একবার কি দু বার সে মহান দরবারে যাবার সামর্থ রাখে। অথচ দিনরাত পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত রয়েছেন। তাই এতে মানুষের সাধ্যাতীত কষ্ঠ হবে। কাজেই আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে-তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কাছেই বিদ্যমান আছেন। তোমরা বরং তার নিকট থেকে দুরে অবস্থান করছো। তোমরা হাযির হয়ে যাও, তিনি তোমাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হবেন।
পরম বন্ধু আমার নিজের চেয়েও কাছে বিদ্যমান। এটাই বিস্ময়কর যে আমি তার নিকট থেকে দুরে রয়েছি।
এতে বোঝা যায় যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সর্বত্র বিদ্যমান।

(৬) وَمَا اَرْسَلْنكَ اِلَّارَ حْمَةً لِّلْعَا لَمِيْنَ



[আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। অন্যত্র বলা হয়েছে-

وَرَحْمَتِىْ وَسِعَتْ كُلَّشَيْئٍ

অর্থাৎ আমার রহমত প্রত্যেক কিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে। বোঝা গেল যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম) বিশ্ব চরাচরের জন্য রহমত স্বরূপ এবং রহমত সমগ্র বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে আছে। সুতরাং সমগ্র বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন হুযুর আলাইহিস সালাম। স্বরন রাখা দরকার যে, মহা প্রভু আল্লাহর শান হচ্ছে তিনি’ রাব্বুল আলামিন’ (বিশ্বব্রহহ্মন্ডের প্রতিপালক) আর প্রিয় হাবীবের শান হচ্ছে তিনি’ রাহমাতুল্লিল আলামিন’ (বিশ্বব্রক্ষান্ডের প্রতি রহমত স্বরূপ)। স্পষ্টই প্রতীয়মান হল যে, আল্লাহ যার প্রতিপালক, হুযুর আলাইহিস সালাম হচ্ছেন তার প্রতি রহমত স্বরূপ।
(৭) مَاكَانَ اللهُ لِيُعَذِّ بَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْ
[হে মাহবুব! এটা আল্লাহর অভিপ্রেত নয় যে আপনি তাদের মধ্যে থাকাকালে আল্লাহ তাদের কে শাস্তি প্রদান করবেন।]
অথাৎ খোদার মর্মন্তুদ শাস্তি তারা পাচ্ছে না- এজন্য যে আপনি তাদের মধ্যে রয়েছেন আর সাধারন ও সর্বব্যাপী আযাব তো কিয়ামত র্পযন্ত কোন জায়গায় হবে না। এ থেকে জানা যায় যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান থাকবেন। এ সম্পর্কে সুপ্রসিদ্ধ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে বলা হয়েছে, হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক পুণ্যত্মা ও প্রত্যেক পাপীর সাথে বিদ্যামান আছেন। এর বিশদ বিবরণ এ অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-

وَاعْلَمُوْا اَنَّ فِيْكُمْ رَسُوْلُ اللهِ

[তোমরা জেনে রেখ, তোমাদের মধ্যে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরাজমান)। এখানে সমস্ত সাহাবায়ে কিরামকে সম্বোধন করা হয়েছে অথচ তারা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতেন সুতরাং স্পষ্টই বোঝা যায় যে হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব জায়গায় ও তাদের কাছে আছেন।

(৮) وَكَذَا لِكَ نُرِىَ اِبْرَ اهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّموَاتِ وَالْاَرْضِ

এবং এভাবেই হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত আসমান ওযমীনে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহি অবলোকন করাই ।
এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামাকে তার চর্মরোগ সমগ্র জগত দেখার বন্দোবস্ত করেছিলেন। হুজুর আলাইহিস সালামের মরতবা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হতে উর্দ্ধে। অতএব একথা স্বীকার করতেই হবে যে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সমগ্র জগত অবলোকন করেছেন । এ আয়াত এর তাৎপর্য ‘ইলমে গায়েব শীর্ষক আলোচনা পুর্ণ বিশ্লেষন করা হয়েছে।

৯) اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ

হে মাহবুব আপনি কি দেখেননি প্রভু হস্তী বাহিনীর কি অবস্থা করছেন?

১০) اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ

হে মাহবুব আপনি কি দেখেননী আপনার প্রতিপালক আদ নামক জাতির সংগে কিরূপ আচরন করেছেন ?
আদ জাতি ও হস্তীবাহিনীর ঘটনাবলী হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবির্ভাবের পুর্বেই সংঘটিত হয়েছে অথচ বলা হচ্ছে اَلَمْ تَرَ (আপনি কি দেখেননি?) অর্থাৎ আপনি দেখেছেন। এতে কেউ আপত্তি উত্থাপন করে বলতে পারে য়ে, কুরআন করীমে কাফিরদের প্রসঙ্গেও তো বলা হয়েছে اَلَمْ يَرَوْ اكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنْ قَرْنٍ তারা কি দেখেনি, আমি তাদের আগে কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি), এখানে লক্ষ্যণীয় যে, কাফিরগণ; তাদের আগেকার কাফিরদের ধ্বংস হতে দেখেনি; তবু আয়াতে বলা হয়েছে-তারা কি দেখেনি? সুতরাং, আপনি কি দেখেননি? এ উক্তি থেকে সচক্ষে দেখার ব্যাপারটি প্রমাণিত হয় না। এর উত্তর হচ্ছে- এখানে আয়াতে আগেকার কাফিরদের ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ, বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ী ও ধ্বংসাবশেষ দেখার কথাই বলা হয়েছে। মক্কার কাফিরগণ যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভ্রমন করার সময় সেসব স্থান সমূহের পার্শ্ব দিয়া যাতায়াত করতো, সেজন্য বলা হয়েছে এসব ধ্বংসাবশেষ দেখে কেন শিক্ষাগ্রহন করে না? হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃশ্যতঃ না পৃথিবী পরিভ্রমন করেছেন না আদ' জাতিও অন্যান্য বিধ্বস্ত দেশ সমূহ বাহ্যিকভাবে দেখেছেন। তাই তার ক্ষেত্রে স্বীকার করতেই হবে যে, এখানে তাঁর নূরে নবুয়াতের মাধ্যমে দেখার কথাই বলা হয়েছে ।
(১১) কুরআন শরীফের অনেক জায়গায় اِذْ উক্ত হয়েছে, যেমন

وَاِذْقَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَئِكَةِ

(যখন আপনার প্রতিপালক ফিরিশতাদের উদ্দেশ্যে বললেন وَاِذْقَالَ مُوْسى لِقَوْمِه (যখন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম স্বজাতির উদ্দেশ্যে বললেন ----) ইত্যাদি। তাফসীরকারকগণ এসব জায়গায় اُذْكُرْ (ঐ ঘটনাটি স্মরণ করুন।) শব্দটি উহ্য আছে বলে মত পোষণ করেন। লক্ষণীয় যে স্মরণ করুন- একথা দ্বারা সেসব বিষয় বা ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, যা সংঘটিত হতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু কালক্রমে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ নেই । এত্থেকে প্রতীয়মান হয় যে ওই সমস্ত বিগত ঘটনাবলী হুযুর আলাইহিস সালাম অবলোকন করেছেন। তাফসীরে রূহুল বয়ানে উল্লেখিত আছে যে হযরত আদম আলাইহিস সালামের সমস্ত ঘটনাবলী হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যক্ষ করেছেন। সামনে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে। কেউ আরও একটি আপত্তি উত্থাপন পূর্বক বলতে পারে যে কুরআন কারীমে বনী ইসরাইলকেও তো وَاِذْنَجَّيْنَا كُمْ مِنْ الِ فِرْعَوْنَ (সে সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমাদেরকে ফিরাউনের বংশধরদের অত্যাচার -উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করেছিলাম) । আয়াতের মধ্যে সম্বোধন করা হয়েছে । হুযুর আলাইহিস সালামের যুগের ইহুদীগণ কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় বিদ্যমান ছিল? কিন্তু তাফসীরকারকগণ এখানেও اُذْكُرْ (স্মরণ কর) শব্দ উহ্য আছে বলে স্বীকার করেন। এ উত্তর হবে যে সমস্ত বনী ইসরাইলের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী জানা ছিল, তারা ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করেছিল। সেজন্য তাদের জানা ঘটনাবলী দিকেই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হুযুর আলাইহিস সালাম না কোন ইতিহাসবেত্তার সান্নিধ্যে ছিলেন না শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত কোন গোত্রের মধ্যে লালিত-পালিত হয়েছেন। এমতাবস্থায় তাঁর পক্ষে একমাত্র নূরে নবুওয়াতের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন ভাবে জ্ঞানার্জনের কোন উপায় ছিল কি?

(১২) اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْ فُسِهِمْ

[নবী মুসলমানদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর।] দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব তার রচিত তাহযীরুন নাস গ্রন্থের ১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ এ আয়াতের اَوْلى শব্দের অর্থ হচ্ছে নিকটতর। তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় নবী মুসলমানদের কাছে তাঁদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর। আমাদের নিকটতম হচ্ছে আমাদের প্রাণ; এ প্রাণ থেকেও নিকটতর হচ্ছেন নবী আলাইহিস সালাম। বলা বাহুল্য যে, অতি নিকটে অবস্থিত বস্তু দৃষ্টিগোচর হয় না।
অত্যধিক নৈকট্যের কারনে আমরা তাকে (প্রয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখে দেখতেপাই না।
বিঃদ্রঃ এখানে কিছু সংখ্যক লোক আপত্তি উত্থাপন করে থাকেন যে আপনারা যেহেতু মু্ক্কাল্লিদ আপনারদের জন্য কুরআনের আয়াত ও হাদিছ সমূহ থেকে দলীল প্রমাণ উপস্থাপন করাতো জায়েয নয়।
একজন মুকাল্লিদের উচিত তার বক্তব্যের সমর্থনে (মুজাহিদ ইমাম) এর উক্তি পেশ করা। সুতরাং আপনার কেবল আবু হানিফা (রহঃ) এর উক্তিই পেশ করতে পারেন। এর উত্তর কয়েকভাবে দেয়া যায়। (ক)আপনারা নিজেরাই যেহেতু হাযির ও নাজির না হওয়ার আকীদা পোষন করেন,সেহেতু আপনাদের উচিত ছিল আপন আকীদা এর সমর্থনে ইমাম সাহেব (রহঃ) এর উক্তি উপস্থাপন করা।
(খ) আমি তকলীদের আলোচনায় পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে আকীদা সম্পর্কিত কোন মাসআলায় তাকলিদ হয় না কেবলমাএ ফকীহগণের গবেষণালব্ধ মাসায়েলের ক্ষেত্রে তকলীদ প্রযোজ্য হয়। আলোচ্য বিষয়টি হচ্ছে আকীদা এর একটি মাসআলা।
(গ) মুকাল্লিদ সুস্পষ্ট আয়াত ও হাদিছ সমূহ থেকে দলিল প্রমান উস্থাপন করতে পারে। তবে হ্যা এসব দলীলের ভিত্তিতে নিজে মাসায়েল বরং করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে তহাবী শরীফে উল্লেখিত আছেঃ

وَمَا وُهِمَ الْاَحْكَامُ مِنْ تَّحْوِ الظَّاهِرِ وَالنَّصِّ وَالْمُفَسَّرِ فَلَيْسَ مُخْتَصًّا بِه ( اَىْ بِالْمُجْتَهِدِ) بَلْ يَقْدِرُ عَلَيْهِ الْعُلَمَاءُ الْاَعَمُّ

যে সমস্ত আহকাম বা শরীয়ত বিধি কুরআনের যাহির নাস ওমুফাসসার ইত্যাদি প্রকৃতির আয়াত থেকে সরাসরি সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য হয় না। এমন কথা বলা যায় না। এসব মাসায়েল বরং সাধারণ আলিমগণও বের করার সামর্থ রাখেন সুবিখ্যাত মুসাল্লামুছ ছবুত নামক উসুলে ফিকহ এর গ্রন্থে উল্লেখিত আছে-
وَاَيْضًا شَاعَوَذَاعَ اِحْتِجَاجُهُمْ سَلْفًا وَخَلْفًا بِالْعُمُوْ مَاتِ مِنْ غَيْرٍ نكير
অথাৎ অধিকন্তু ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত আয়াত থেকে দলীল গ্রহন করার রীতি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ধর্মীয় মনীষীদের মধ্যে কোনরূপ ওজর আপত্তি ছাড়াই প্রচলিত হয়ে আসছে।
কুরআনে করীমেও ইরশাদ

فَاسْئَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَاتَعْلَمُوْن

অর্থাৎ যদি তোমরা না জান তবে জ্ঞানীদের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করো। ইজতিহাদী মাসায়েল যেহেতু আমরা জানি না সেজন্য ইমামদের অনুসরণ করি। আর সুস্পষ্ট অর্থবোধক আয়াতসূমহের অর্থ আমরা বুঝি সেজন্য এসব ব্যপারে তকলীদ নিষ্প্রয়োজন।
(ঘ) হাযির-নাযির এর মাসআলা সম্পর্কে সুবিখ্যাত ফকীহ মুহাদ্দিস ও তাফসীরকারকদের উক্তি সমূহের বিশাদ বর্ণনা পরবর্তী পরিচ্ছেদ সমূহেও করা হবে। গভীর ভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন যে হাজির-নাজির এর এ আকিদা সমস্ত মুসলমানই পোষণ করে। -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-

Comments

  • Share কুরআন শরীফের আলোকে হাযির-নাযির এর প্রমাণ http://yanabi.in/u/5
  • হাযির-নাযির বিষয়ক হাদীছ সমূহের বর্ণনা

    এখানে সে সমস্ত হাদীছের উল্লেখ করা হবে যেগুলি ইলমে-গায়েব এর মাসআলায় পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। সে সব হাদীছের মধ্যে হাদীছ নং ৬, ৭, ৮, ও ৯ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সেগুলোর মূল কথা হল সমস্ত জগতকে আমি হাতের তালুর মত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আমার উম্মতকে তাদের নিজ নিজ আকৃতিতে আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল, আমি তাদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম, এমন কি তাদের ঘোড়াসমূহের বর্ণ সম্পর্কেও জ্ঞাত ইত্যাদি। এভাবে ওসব হাদীছের ব্যাখ্যায় হদীছবেত্তাগণের যে সব উক্তি পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলো বিশেষ করে মিরকাত যুরকানী ইত্যাদি গ্রন্থের ইবারতসমূহও এখানে বর্ণিত হবে। এ ছাড়া নিম্নে বর্ণিত হাদীছ সমূহও এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
    সুবিখ্যাত হদিছ গ্রন্থ মিশকাত শরীফের ইছবাতু আযাবিল কবর শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে
    (১) فَيَقُوْ لَانِ مَاكُنْتَ تَقَوْلُ فِىْ هذَا الرَّجُلِ  لِمُحَمَّدٍ
    মুনকার নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শাযিত  মৃত ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন ওনার (মুহা্ম্মদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি ধারনা পোষন করতে?
    হাদিছের সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ আশআতুল  লমআত-এ উক্ত হাদীছ
    ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- هذَا الرَّجُلِ দ্বারা হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিএ গুণাবলী সও্বার প্রতীই নিদের্শ হয়ে থাকে ।
    উক্ত ব্যাখ্যায় গ্রন্থে এ হদীছের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছেঃ কিংবা কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সত্ত্বাকে দৃশ্যতঃ উদ্ভাসিত করা হয়। এটা এভাবেই হয় যে কবরে তার জিসমে মিছালীকে  উপস্থাপন করা হয়। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এর দিদারে প্রত্যাশী চিন্তীত ব্যাক্তিবর্গের জন্য এটাই শুভ সংবাদ যে তারা যদি এ প্রত্যাশিত সাক্ষাতের আশায় প্রাণ বির্সজন দিয়ে কবরে চলে যান তাহলে তাদেরও এ সুযোগ রয়েছে ।
    মিশকাত শরীফের হাশিয়ায় সে একই হাদিছের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে-

    قِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرَى النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهِىَ بُشْرَى عَظِيْمَةٌ

    বলা হয়েছে মৃত ব্যাক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ ।
    সুপ্রসিদ্ধ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় গ্রন্থ কুসতলানীর ৩য় খন্ডে ৩৯০ পৃষ্টায় কিতাবুল জানায়েযে বর্নিত আছেঃ

    فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ

    অর্থাৎ এও বলা হয়েছে যে মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয় যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয় যদি সে সঠিক পথে থাকে।
    কেউ কেউ উক্ত হাদীছে উল্লেখিত هذَا الرَّجُلِ (এ ব্যক্তি) বলে হৃদয় ফলকে অংকিত হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানসিক প্রতিচ্ছবির প্রতি ইঙ্গিত করা হয় বলে মত পোষন করেন। অথাৎ মৃত ব্যাক্তিকে ফিরিশতাগন জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমরা অন্তরে যে মহান সও্বার প্রতিচ্ছবির বিদ্যমান রয়েছে, তার সর্ম্পকে তুমি কি ধারনা পোষন করতে? কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কেননা সেক্ষেত্রে মৃত কাফীর ব্যাক্তিকে এ প্রশ্ন করান যৌক্তিকতা কোনরূপ থাকেনা। কারণ, কাফিরের অন্তরে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কোনরূপ ধারনা থাকার কথা নয়। অধিকন্তু, তা যদি হত মৃত কাফিরের সে  প্রশ্নরে উত্তরে বলত না আমি জানি না বরং বলত আপনারা কার কথা  জিজ্ঞাসা করছেন? উওরে তার لَااَدْرِىْ আমি জনি না (বলার ব্যাপারে)  থেকে জানা যায় যে সেও হুজুর আলাইহিস সালাম  স্বচক্ষে দেখে তবে চিনতে বা পরিচয় করতে পারে না। সুতরাং উক্ত প্রশ্নে মানসিক কোন প্রতিচ্ছবির কথা   জিজ্ঞাসা করা হয় না বরং প্রকাশ্যে বিরাজমান সেই মহান সও্বার প্রতি ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন করা হয়।
    এ হাদিছও সংশ্লিষ্ট উদ্বৃতিসমূহ থেকে জানা যায় যে কবরের মধ্যে হুযুর আলাইহিস সালামের দিদার লাভের সু-বন্দোবস্ত করেই আলোচ্য প্রশ্নের অবতারনা করা হয়। এ শামসুদ্দোহা বদরুদ্দুজা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি তোমার সামনেই দৃশ্যমান আছেন তার সম্পর্কে তোমার কি মত? هذَا (এই) সর্বনাম দ্বারা নিকটবর্তী ব্যাক্তি বা বস্তুর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে । এতে বোঝা যায় হুজুর আলাইহিস সালামকে দেখিয়ে ও নিকটে উপস্থাপন করেই উক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। এজন্য  সুফিয়ানে কিরামও আশেকানগন মৃত্যুর প্রত্যাশা করে থাকেন ও কবরের প্রথম রজনীকে বরের সঙ্গে প্রত্যাশিত সাক্ষাতের রাত রূপে গণ্য করেন। যেমন   আলা হযরত رحمة الله عليه বলেন- প্রানতো চলে যাবেই। এ প্রান  যাবার ব্যাপারটি হচ্ছে কিয়ামত। তবুও সুখের বিষয় যে এরপর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাক্ষাত লাভের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করার সুবন্দোস্ত  রয়েছে । মৌলানা আসী  বলেন- কবরে গমনের প্রথম রাতে কাফন পরিহিত অবস্থায় এজন্য গর্ববোধ করব যে, যে ফুলের (প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্নিধ্য লাভের সারাজীবন প্রত্যাশী হয়ে আসছি আজ রাতই হচ্ছে সে মহান সে ফুলের সংস্পর্শ আমার প্রকৃষ্ট সময়।
    আমি আমার রচিত দিওয়ানে সালেক  কাব্য গ্রন্থে লিখেছি-
    কবরে প্রথম রাত হচ্ছে মহান রবের (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দর্শন লাভের সৌভাগ্য রজনী। একজন আশেক এর জন্য ঈদের আনন্দও এ রাত্রির অপুর্র আনন্দের কাছে মূল্যহীন। এ রাতেই প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের অনাস্বাদিত  সুখানুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না।
    এজন্যই বুযুর্গানে দ্বীনের পরলোক গমনের দিনকে বলা হয় উরসের দিন। উরস শব্দের অর্থ শাদী বা আনন্দ। ঐ দিনই হচ্ছে দু’জাহানের দুলহা উরস হুযুর আলাইহিস সালামের দর্শন লাভের দিন।
    লক্ষ্যণীয় যে  একই সময় হাজার  হাজার মৃত ব্যাক্তির লাশ দফন করা হয়ে থাকে । হুজুর আলাইহিস সালাম যদি হাযির-নাযির না হন তাহলে, তিনি প্রতিটি কবরে উপস্থীত থাকেন কি রূপে? অতএব প্রমানিত হল যে, আমাদের দৃষ্টির উপরই আবরন বা পর্দা রয়েছে ফিরিশতাগন এ পর্দা অপসারন করে দেন। যেমন কেউ দিনে তাবুর মধ্যে অবস্থান  করেছে বিধায় সূর্য তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না, এমন সময়  কেউ এসে উপর থেকে তাবু হটিয়ে তাকে সূর্য দেখিয়ে দিল।
    ২) মিশকমাত শরীফের التحريص على قيام الليل শীর্ষক অধ্যায়ে বর্নিত আছেঃ

    اِسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً فَزِعًا يَقُوْلُ سُبْحَنَ اللهِ مَاذَا اُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْخَزَ ائِنِ وَمَا ذَااُنْزِلَ مِنَ الْفِينِ

    [এক রাতে হুযুর আলাইহিস সালাম ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ঘুম থেকে জাগরিত বিস্ময়াবিভূত হয়ে বলতে লাগলেন সুবহানাল্লাহ আজ রাত কতই না ঐশ্বর্য সম্ভার ও ফিতনা (বালা মুসিবত ইত্যাদি) অবতীর্ণ করো হলো!] এ থেকে জানা যায় যে ভবিষ্যতে যে সব ফিতনা আত্নপ্রকাশ করবে সেগুলো তিনি স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলেন।
    ৩) মিশকাত শরীফের المعجزات শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস رحمة الله عليه থেকে বর্নিত আছেঃ

    نَعَى الَّنَبِىُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ زَيْدًاوَجَعْفَرَ وَاِبْنَ رَوَاحَةَ لِنَّاسِ قَبْلَ اَنْ يَّا تِبَهُمْ خَبْرُ هُمْ فَقَالَ اَخَذُ الرَّايَةَ زَيْدٌفَاُصِيْبُ ( اِلَى) حَتَّى اَخَذَ الرّايَةَ سَيْقٌ مِنْ سُيُوْ اللهِ يَعْنِىْ خَالِدَابْنَ الْوَلِيْدِ حَتَّى فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِمْ

    হযরত যায়েদ জাফর ও ইবন রওয়াহা (রিদওয়ানুল্লাহে আলাহীম আজমায়ীন) প্রমুখ সাহাবীগনের শাহাদত বরনের সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্র  থেকে আসার আগেই হুযুর আলইহিস সালাম মদীসার লোকদেরকে উক্ত সাহাবীগণের শহীদ হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেনঃ পতাকা এখন হযরত যায়দের رضي الله عنه হাতে, তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর তলোয়ার উপাধিতে ভূষিত সাহাবী হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ رضي الله عنه ঝান্ডা হাতে নিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে জয় যুক্ত করলেন ।
    এতে বোঝা গেল মদীনা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত যুদ্ধ ক্ষেত্র বে’রে মাউনা’য় যা কিছু হচ্ছিল, হুযুর আলাইহিস সালাম তা সুদূর মদীনা থেকে অবলোকন করছিলেন।
    (৪) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডের  الكرامات অধ্যায়ের পরে  وفاة النبى عليه السلام শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে- তোমাদের সঙ্গে আমার পুনরায় সাক্ষাতকারের জায়গা হল হাউজে কাউছারের যা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি ।
    (৫) মিশকাত শরীফের تسوية الصف শিরোনামের অধ্যায়ে বর্নিত আছেঃ

    اَقِيْمُوْا صُفُوْ فَكُمْ فَاِنِّىْ اَرَاكُمْ مِنْ وَّرَاِئْ

    নামাযে তোমাদের কাতার সোজা রাখ; জেনে রাখ, আমি তোমাদেরকে পিছনের দিক থেকেও দেখতে পাই ।
    (৬) সুপ্রসিদ্ধ হাদীছের গ্রন্থ তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ডে ‘বাবুল ইলম‘ এর অন্তর্ভুক্ত مَاجَاءَ فِىْ ذَهَابِ الْعِلْمِ  শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে।

    كُنَّا مَعَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَشَخَصَ ببَصَرِه اِلى سَّمَاءِ ثُمَّ قَالَ هذَا اَوَانٌ يُخْتَلَسُ الْعِلْمُ مِنَ النَّاسِ حَتَّى لَاَ يَقْدِرُوْا مِنْهُ عَلى شَيْئٍ

    [একদা আমরা হুজুর আলাইহিস সালামের সাথেই ছিলাম। তিনি আসমানের দিকে দৃষ্টি করে বললেনঃ ইহাই সে সময়, যখন জনগণ থেকে জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তারা এ জ্ঞানের কিছুই ধারনা করতে পারবে না।]
    এ হাদিছের ব্যাখ্যায় হদীছের সুবিখ্যাত ভাষ্যকার মোল্লা আলী কারী رحمة الله عليه  তাঁর বিরচিত মিরকাত এর কিতাবুল ইলম এ বলেছেনঃ

    فَكَاَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَّا نَظَرَ اِلَى السَّمَءِ كُوْشِفَ بِاِقْتِرَابِ اَجَلِه فَاَخْبَرَ بِذَالِكَ

    হুযুর আলাইহিস সালাম যখন আসমানের দিকে  তাকালেন, তখন তার নিকট প্রকাশ পায় যে তাঁর পরলোক গমনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তখনই তিনি সে সংবাদ দিয়েদিলেন।
    (৭) মিশকাত শরীফের বাবুল ফিতান এর প্রারম্ভে প্রথম পরিচ্ছেদে বর্নিত আছেঃ হুযুর আলাইহিস সালাম একদা মদীনা মুনাওয়ারার এক পাহাড়ের  উপর দাঁড়িয়ে সাহবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি যা দেখতে পাচ্ছি তোমরা ও কি দেখতে। করলেনঃ জি‘না। তখন তিনি  ইরশাদ করেন-

    فَاِنِّيْ اَرَى الْفِتنَ تَقَعُ خِلَالَ بُيُوْ تِكُمْ كَوَ قْعِ الْمَطَرِ

    [অর্থাৎ আমি তোমাদের বাড়িতে ফিতনাসমূহ একটির পর একটি বৃষ্টিরমত পতিত হতে দেখতে পাচ্ছি।]
    বোঝা গেল যে, কুখ্যাত ইয়াজিদ ও হাজ্জাজের শাসনামলে তথা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম এর অফাত এর পরে যে সব ফিতনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হবার ছিল সেগুলো তিনি অবলোকন করছিলেন। এগুলিই একটির পর একটি আত্নপ্রকাশ করতে দেখতে পাচ্ছিলেন।
    উল্লেখিত হাদিছ সমূহ এর আলোকেই এ কথাই জানা গেল যে হুযুর আলাইহিস সালাম তার সত্যদর্শী দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের ঘটনাবলী দূরের ও নিকটের যাবতীয় অবস্থা, হাউজে কাউছার, বেহেশত-দোযখ,  অবলোকন করেন। তারই বদৌলতে তার ভক্ত ও অনুরক্ত খাদিমগণকেও আল্লাহ তআলা এ শক্তি ও জ্ঞান দান করে থাকেন ।
    (৮) মিশকাত শরীফের ২য় খন্ডের باب الكرامات শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছেঃ হযরত উমর رضي الله عنه হযরত সারিয়া رضي الله عنه কে এক সেনা বাহিনীর অধীনায়ক নিযুক্ত করে নেহাওয়ানন্দ নামক স্থানে পাঠিয়েছিলেন। এর পর একদিন হযরত উমর ফারুক رضي الله عنه মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় চিৎকার করে উঠলেন ।  হাদীছের শব্দগুলো হলঃ

    فَبَيْنَمَا عُمَرَيَخْبُطُ فَجَعَلَ يَصِيْخُ يَا سَارِيَةُ الْجَبَلَ

    অর্থাৎ হযরত উমর رضي الله عنه মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় চীৎকার করে বলে উঠলেন ওহে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও ।
    বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে বার্তা বাহক এসে জানানঃ আমাদিগকে শত্রুরা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল । এমন সময় কোন এক আহবানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আহবানকারী বলছিলেনঃ সারিয়া! পাহাড়ের শরণাপন্ন হও। তখন আমরা পাহাড়কে পিঠের পেছনে রেখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। এরপর আল্লাহ আমাদের সহায় হলেন, ওদেরকে পর্যুদস্ত করে দিলেন ।
    (৯) ইমাম আবু হানীফা رحمة الله عليه তাঁর রচিত ফিকহে আকবর গ্রন্থে ও আল্লামা জালালুদ্দীন সয়ুতী رحمة الله عليه জামেউল কবীর গ্রন্থে হযরত হারিছ ইবনে নুমান رحمة الله عليه থেকে বর্ণনা করেছেন একবার  আমি (হারিছ) হুযুর আলাইহিস সালামের খিদমতে উপস্থিত হই। সরকারে দুজাহান আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে হারিছ! তুমি কোন অবস্থায় আজকের এ দিনটিকে  পেয়েছ? আরয করলামঃ খাটি মুমিন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার ঈমানেব স্বরূপ কি? আরয করলাম-

    وَكَاَنِّىْ اَنْظُلُرُ اِلَى عَرْشِ رَبِّىْ بَارِزًا وَكَاَ نِّىْ اَنْظُرُ اِلَى اَهْلِ الْجَنَّةِ يَتَظَاوَرُوْنَ فِيْهَا وَكَاَنِّىْ اَنْظُرُ اِلَى اَهْلِ النَّرِ يَتَضَا عَوْ نَ فِيْهَا

    অথাৎ আমি যেন খোদার আরশকে প্রকাশ্যে দেখছিলাম। জান্নাতাবাসীদেরকে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এবং দোযখবাসীদেরকে অসহনীয় যন্ত্রণা হট্টগোল করতে দেখতে পাচ্ছিলাম।
    এ কাহিনীটি প্রসিদ্ধ মছবী শরীফেও সুন্দর ভাবে বিধৃত হয়েছেঃ- হযরত হারিছ رضي الله عنه বলছিলেন- আমার দৃষ্টির সামনে আটটি বেহেশত ও সাতটি  দোযখ এমন ভাবে উদ্ভাসিত যেমন- হিন্দুদের সামনে তাদের প্রতিমা বিদ্যমান রয়েছে। সৃষ্টির প্রত্যেক  ব্যক্তিও প্রত্যেকটি বস্তুকে  এমন ভাবে চিনতে পারছিলাম যেমন- গম চুর্ণ করার সনাতন চাক্কীর মধ্যে গম ও যবকে স্পষ্টরূপে চিনা যায় । জান্নাতবাসী দোযখবাসী মাছ ও পিঁপড়ার মত  স্পষ্ট রূপে আমার সামনে উদ্ভাসিত ছিল ইয়া রসুলুল্লাহ! এখানে ক্ষান্ত হব না আরো কিছু বলব? হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) তার মুখ চেপে ধরে বললেন, আর কিছু বলার দরকার নেই।
    এখান লক্ষ্যনীয় যে, সূর্যের পরমানু সদৃশ সাহাবীগনের দৃষ্টি শক্তির এ অবস্থা যে, বেহেশত-দোযখ, আরশ-পাতালপুরী, জান্নতবাসী ও দোযখবাসীকে স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন, তাহলে দু-জাহানের সূর্য সদৃশ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে কোন আপত্তি তোলার অবকাশ আছে কি? -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-
  • ফকীহ ও উলামায়ে উম্মতের উক্তিসমূহ থেকে হাজির-নাজির এর প্রমান

    ১) সুবিখ্যাত দুররুল মুখতার ৩য় খন্ডের المرتد অধ্যায়ে কারামাতে আওলিয়া শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছেঃ
    يَاحَاضِرُ يَا نَاظِرُ لَيْسَ بِكُفْرٍ অর্থাৎ হে হাযির, হে নাযির, বলে সম্বোধন করা কুফর হিসেবে গণ্য নয়। উপরোক্ত উক্তির ব্যাখ্যায় ফতোয়ায়ে শামীতে  উল্লেখিত আছেঃ

    فَاِنِّ الْحُضُوْرَ بِمَعْنَى الْعِلْمِ شَائِعٌ مَا يَكُوْنُ مِنْ نَّجْوى ثَلَثَةٍ اِلَّهُوَرَابِعُهُمْ وَالنَّاظِرُ بِمَعْنَى الرُّوْيَةِ اَلَمْ يَعْلَمْ بِاَنَّ اللهَ يَرَى فَالْمَعْنى يَاعَالِمُ مَنْيَّرى

    অর্থাৎ এর কারণ হলো হুযুর (حضور) শব্দটি জ্ঞান অর্থে বহুল প্রচলিত। কুরআন শরীফে আছেঃ তিন জনের মধ্যে গোপনীয়ভাবে যা কিছু পরামর্শ হয়ে থাকে আল্লাহ তাআলা ওদেরই চতুর্থজন হিসেবে বিদ্যমান থাকেন । আর نظر নযর শব্দের অর্থ হচ্ছে দেখা। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, কেন, সে জানে না যে, আল্লাহ দেখেন? সুতরাং, ইয়া হাযিরু! ইয়া নাযিরু! শব্দ দুইটির অর্থ হলো হে জ্ঞানী! হে দ্রষ্টা! অতএব, এ উক্তি কুফর হতে পারে না।
    দুররুল মুখতার গ্রন্থে, প্রথম খন্ডের  كيفية الصلوة  শীর্ষক অধ্যায়ে আছেঃ

    وَيَقْصِدَ بِاَلْفَاظِ التَّشَهُّدِ الْاِنْشَاءَ كَاَنَّهُ يُحىِّ عَلَى اللهِ وَيُسَلِّمُ عَلَى نَبِيِّه نَفْسِه

    অর্থাৎ নামাযে আত্তাহিয়াত বা তাশাহুদ এর শব্দগুলি উচ্চারণ করার সময় নামাযীর এ নিয়ত থাকা চাই যে, কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলছেন, তিনি নিজেই যেন আপন প্রতিপালকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছেন ও স্বয়ং নবী আলাইহিস সালামের প্রতি সালাম আরয করছেন।
    এ ইবারতের তাৎপর্য বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে ফতওয়ায়ে শামীতে বলা হয়েছেঃ

    اَىْ لَايَقْصِدُ الْاَخْبَارَ وَالْحِكَايَةَ عَمَّا وَقَعَ فِى الْمِعْرَاجِ مِنْهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَمِنْ رَّبِّه وَمِنَ الْمَلَئِكَةِ

    অর্থাৎ তাশাহুদ পাঠের সময় নামাযীর যেন এ নিয়ত না হয় যে, তিনি শুধু মাত্র মিরাজের অলৌকিক ঘটনাটি স্মরণ করে, সে সময় মহাপ্রভু আল্লাহ, হুযুর আলাইহিস সালাম ও ফিরিশতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত কথোপকথন এর বাক্য গুলোই আওড়িয়ে যাচ্ছেন। বরং তার নিয়ত হবে কথাগুলো যেন তিনি নিজেই বলছেন ।
    স্বনামখ্যাত  ফকীহগণের উপরোল্লিখিত ইবারতসমূহ থেকে জানা যায় যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে হাযির-নাযির জ্ঞান করা বা বলা কুফর নয়, আর তাশাহুদ পাঠের সময় হুযুর আলাইহিস সালামকে হাযির-নাযির জেনেই সালাম আরয করা চাই। এ তাশাহুদ প্রসঙ্গে ফকীহগণের আরও অনেক বক্তব্য পেশ করা হবে।
    সু-প্রসিদ্ধ মজমাউন বরকাত গ্রন্থে শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী رحمة الله عليه বলেছেন- হুযুর আলাইহিস সালাম নিজ উম্মতের যাবতীয় অবস্থা ও
    আমল সম্পর্কে আবগত এবং তার মহান দরবারে উপস্থিত সকলেই ফয়েয প্রদানকারী ও হাযির-নাযির।
    শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী رحمة الله عليه سلوك اقرب السبل بالتوجه الى سيد الرسل নামক পুস্তিকায় বলেন- উলামায়ে উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, হুযুর আলাইহিস সালাম প্রকৃত জীবনেই (কোনরূপ রূপক ও ব্যবহারিক অর্থে যে জীবন, তা নয়) স্থায়ীভাবি বিরাজমান ও বহাল তবীয়তে আছেন । তিনি উম্মতের বিশিষ্ট কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞাত ও সেগুলোর প্রত্যক্ষদর্শীরূপে বিদ্যমান তথা হাযির-নাযির। তিনি হকীকত অন্বেষনকারী ও মহান দরবারে নবুয়াতির শরণাপন্নদের ফয়েযদাতা ও মুরুব্বীরূপে বিদ্যমান আছেন।
    শাইখ মুহাদ্দিছ দেহলবী رحمة الله عليه শরহে ফুতুহুল গায়ব গ্রন্থের ৩৩৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- নবীগণ (আলাইহিস সালামকে) পার্থিব প্রকৃত জীবনেই জীবিত শাশ্বত জীবন সহকারে বিদ্যমান ও কর্মতৎপর আছেন । এ ব্যপারে কারো দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ নেই ।
    মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাত এর باب مَايُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَبُ الْمَوْتَ  শীর্ষক অধ্যায়ের  শেষে উল্লেখিত আছেঃ

    وَلَاتُبَاعِدُ عَنِ الْاَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِ يَتُ لَهُمُ الْاَرْضُ وَحَصَلَ لَهُمْ اَبْدَ ان ٌمُكْتَسِبَةَ مُتَعَدِّدَةٌ وَجَدُوْ هَا فِىْ اَمَا كِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِىْ اَنٍ وَاحِدٍ

    অর্থাৎ ওলীগণ একই মুহূর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারে। একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারী হতে পারেন।
    শিফা শরীফে আছেঃ
    اِنْ لَّمْ يَكُنْ فِىِ الْبَيْتِ اَحَدٌ فَقُلِ السَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةَ اللهِ وَبَرْكَاتُهُ
    যে ঘরে কেউ থাকে না সে ঘরে (প্রবেশ করার সময়) বলবেন হে নবী! আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক!
    এ উক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বনামখ্যাত মোল্লা আলী কারী رحمة الله عليه শরহে শিফা গ্রন্থে বলেছেনঃ

    لِاَنَّ رُوْحَ النَّبِىِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَاضِرٌ فِىْ بُيُوْتِ اَهْلِ الْاِسْلَامِ

    কেননা নবী আলাইহিস সালাম এর পবিত্র রূহ মোবারক মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন ।
    শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী رحمة الله عليه স্ব-রচিত মদারেজুন নবুয়াত গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন- হুযুর আলাইহিস সালামকে স্মরণ করুন, তার প্রতি দরুদ পেশ করুন, তার যিকর করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন যেন তিনি আপনার সামনে স্ব-শরীরে জীবিতাবস্থায় উপস্থিত আছেন, আর আপনি তাকে দেখছেন। আদব মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ ধারণা পোষণ করবেন যে, নিশ্চয় হুযুর পুর নুর আলাইহিস সালাম আপনার কথাবার্তা শুনছেন। কেননা তিনি খোদার গুণাবলীতে গুণান্বিত। আল্লাহর একটি গুণ হচ্ছে আমি (আল্লহ) আমার স্মরণকারীর সঙ্গে সহাবস্থান করি ।
    ইমাম ইবনুল হাজ্জ مدخل গ্রন্থে ও ইমাম কুসতালানী رحمة الله عليه مواهب গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদে زيارة قبره شريف শীর্ষক বর্ণনায় লিখেছেনঃ

    وَقَدْ قَالَ عُلَمَاءُ نَالَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِه وَحَيو تِه عَلَيْهِ السَّلَامُ فِىْ مُشَاهِدَ تِه لِاُمَّتِهِ وَمَعرِ فَتِه بِاَحْوَ الِهِمْ وَنِيَّا تِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِ هِمْ وَذلِكَ جَلِىٌّ عِنْدَهُ لَاخَفَاءَبِه

    আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে।
    মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে মোল্লা আলী কারী رحمة الله عليه বলেনঃ-

    وَقَالَ الْغَزَ الِىْ سَلِّمْ عَلَيْهِ اِذَا دَخَلْتَ فِى الْمَسْجِدِ
    فَاِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَحْضُرُ فِى الْمَسَجِدِ

    ইমাম গাযযালী رحمة الله عليه বলেছেন, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন, তখন হুযুর আলাইহিস সালামকে সশ্রদ্ধ সালাম দিবেন। কারণ তিনি মসজিদসমূহে বিদ্যমান আছেন।
    কাযী আরায رحمة الله عليه প্রণীত শিফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ নসীমুর রিয়ায এর ৩য় খণ্ডের শেষে উল্লেখিত আছে- আম্বিয়ায়ে কিরাম (আলাইহিস সালাম)শারীরিক ও বাহ্যিক দিক থেকে মানবীয় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন তবে, আভ্যন্তরীণ ও রূহানী শক্তির দিক থেকে ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এ কারণেই তাঁরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তসমূহ দেখতে পান, আসমানের চিড়চিড় আওয়াজ শোনেন এবং হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) তাদের নিকট অবতরণের ইচ্ছা পোষণ করতেই তার সুঘ্রাণ পেয়ে যান।
    সুপ্রসিদ্ধ দালায়েলুল খায়রাত নামক গ্রন্থের ভূমিকায় উল্লেখিত আছেঃ
    হুযুর আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলঃ আপনার থেকে দূরে অবস্থানকারী ও পরবর্তীকালে ধারাদামে আগমনকররীদের দরূদ পাঠ আপনার দৃষ্টিতে কি রকম হবে? ইরশাদ করেনঃ আন্তরিক অকৃত্রিম ভালবাসা সহকারে দরূদ পাঠকারীদের দরূদ আমি নিজেই শুনি এবং তাদেরকেও চিনি । আর যাদের অন্তরে আমার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা নেই তাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয় ।
    কাযী আরায رحمة الله عليه এ শিফা শরীফের ২য় খণ্ডে আছঃ-

    عَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ اِذَ ادَخَلْتُ الْمَسْجِدَ اَقُولُ السَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَاالنَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرْ كَاتُهُ

    হযরত আলকামা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, যখন আমি মসজিদে প্রবেশ করি তখন বলি হে নবী । (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আপনার প্রতি সালাম এবং আপনার উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। এ হাদীছটির সমর্থন পাওয়া যায় সুবিখ্যাত আবু দাউদ ইবনে মাজা হাদীছ গ্রন্থদ্বয়ের بات الدعاء عند دخول المسجد শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছ থেকেও।
    মদারেজুন নবুওয়াত গ্রন্থের ৪৫০ পৃষ্ঠায় ২য় খণ্ডের ৪র্থ ভাগের حيات انبياء  শীর্ষক পরিচ্ছেদে উল্লেখিত আছে- এরপর যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালাম এর পবিত্র শরীরে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন ও এমন এক শক্তি দান করেছেন, যে তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেখানে ইচ্ছা করেন সেখানে স্ব-শরীরে বা অনুরূপ কোন শরীর ধারণ করে অনায়াসে গমন করতে পারেন, কবরের মধ্যে হোক বা আসমানের উপর হোক এ ধরনের কথা সঠিক ও বাস্তবসম্মত। তবে সর্বাবস্থায় কবরের সাথে বিশেষ সম্পর্কে বজায় থাকে।
    শাইখ শিহাবুদ্দিন সুহরওয়ার্দী رحمة الله عليه রচিত সুপ্রসিদ্ধ আওয়ারিফুর মা আরিফ গ্রন্থের অনুবাদ গ্রন্থ মিসবাহুল হিদায়েত এর ১৬৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- অতএব বান্দা যেমন আল্লাহ তাআলাকে সর্বাবস্থায় গুপ্ত ও ব্যক্ত যাবতীয় বিষয়ে অবহিত জ্ঞান করে থাকে, হুযুর আলাইহিস সালামকেও তদ্রূপ জাহিরী ও বাতিনী উভয় দিক থেকে হাযির জ্ঞান করা বাঞ্ছনীয়; যাতে তাঁর আকৃতি বা সুরত দেখার ধারনা, হার-হামিশা তাঁর প্রতি  শ্রদ্ধাবোধ ও তার দরবারের আদব রক্ষার দলীলরূপে পরিগনিত হয়,  বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন দিক থেকে তার বিরুদ্ধাচরনে লজ্জাবোধ হয় এবং তার পবিত্র সহচর্যের আদব রক্ষা করার গৌরব লাভের সুবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।
    সু-প্রসিদ্ধ ফিকহ শাস্ত্র বিশারদ ও উলামায়ে উম্মত এর উপরোক্ত উক্তি সমূহ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হল। এখন আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই, একজন নামাজীর নামাজ পড়ার সময় হুজুর আলাইহিস সালাম এর সম্পর্কে অন্তরে কি ধারনা পোষন কর উচিত। এ প্রসঙ্গে আমি অত্র পরিচ্ছেদের প্রারম্ভে সুবিখ্যাত গ্রন্থ  দুররুল মুখতার ও শামী থেকে উদ্ধৃত পেশ করছি। অন্যান্য বুজুর্গানের দ্বীনের আরও কিছু বক্তব্য শুনুন এবং নিজ নিজ ঈমানকে তাজা করুন।
    আশআতুল লমআত গ্রন্থের কিতাবুস সালাত এর তাশাহুদ অধ্যায়ে ও মাদারেজুন নবুয়াত গ্রন্থ ১ম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্টায় ৫ম অধ্যায়ে হুযুর আলাইহিস সালাম এর ফযায়েল এর বর্ণনা প্রসঙ্গে শাইখ আবদুর হক মুহাদ্দিছ দেহলবী رحمة الله عليه বলেছেন-
    কোন কোন আরিফ ব্যাক্তি বলেছেন- তাশাহুদে আসসালামু আলাইকুম আইয়ুহাননবী বলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের) কে সম্বোধন করার রীতির এ জন্যই প্রচলন করা হয়েছে যে, হাকীকতে মুহাম্মদ্দীয় (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম এর মৌল সও্বা) সৃষ্টিকুলের অনু-পরমানুতে এমনকি সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুতেই ব্যাপৃত। সুতরাং হুজুর আলাইহিস সালাম নামাযীগনের সও্বার মধ্যে বিদ্যমান ও হাযির আছেন। নামাযীর এ বিষয়ে সচেতন হওয়া বা এ বিষয়ের প্রতি অমনোযোগী না হওয়াই বাঞ্চনীয়, যাতে নামাযী নৈকটের নূর লাভে ও মারেফতের গুপ্ত রহস্যাবলী উন্মোচনে সফলকাম হতে পারে।
    সুবিখ্যাত ইহয়াউল উলুম গ্রন্থ ১ম খন্ডের ৪র্থ অধ্যায়ে ৩য় পরিচ্ছেদে নামাযের বাতেনী শর্তাবলীর বর্ননা প্রসঙ্গে ইমাম গাযযালী رحمة الله عليه বলেন-

    وَلَحْضِرْ فِىْ قَلْبِكَ النَّبِىُّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَشَخْصَهُ الْكَرِيْمُوَقُلْ اَسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَاا لنَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرْكَاتُهُ

    নবী আলাইহিস সালাম তথা তার পবিত্র সও্বাকে নিজ অন্তরে হাযির জ্ঞান  করবেন ও বলবেন আসসালামু আলাইকা আইয়ুহাননাবীউ ওয়া রহমতুল্লাহি ওায়া বারাকাতুহু। (হে নবী আপনার উপর শান্তি রহমত ও বরকতের অমৃতধারা বর্ষিত হোক। (মিরকাত গ্রন্থের তাশাহুদ শীর্ষক অধ্যায়েও এ রকম উক্তি বর্ণিত আছে-  مسك الختام  নামক গ্রন্থের ২৪৩ পৃষ্ঠায়ও ওহাবীমতাবলী নবাব সিদ্দিক হুসেন খান ভূপালী সে একই কথা লিখেছেন যা আমি ইতোপূর্বে আশআতুল লমআত এর বরাত দিয়ে তাশাহুদ প্রসঙ্গে লিখেছি যে, নামাযীর তাশাহুদ পাঠের সময় হুযুর আলাইহিস সলামকে হাযির-নাযির জেনেই সালাম করা চাই। তিনি উক্ত গ্রন্থে নিম্নোল্লিখিত দুটি পংক্তি সংযোজন করেছেনঃ-
    প্রেমের রাস্তায় দূরের বা কাছের কোন ঠিকানা নেই। আমি তোমাকে দেখি ও দোয়া করি।
    আল্লামা শাইখ মুজাদ্দিদ رحمة الله عليه বলেনঃ-
    নামাযে হুযুর আলাইহিস সালামকে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা যেন এ কথারই ইঙ্গিত বহ যে, আল্লাহ তার হাবীবের উম্মতদের মধ্যে নামাযীদের অবস্থা তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম) এর কাছে এমনভাবে উদ্ভাসিত করেছেন, যেন তিনি তাদের মধ্যে উপস্থিত থেকেই সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন, তাদের আমল সমূহ অনুধাবন করছেন। এ সম্বোধনের আরও একটি কারণ হচ্ছে তার এই উপস্থিতির ধারনা অন্তরে অতিমাত্রায় বিনয় ও নম্রভাব সৃষ্টি করে।
    হাযির-নাযির এর এ মাসআলার সহিত ফিকাহ শাস্ত্রের কয়েকটি মাসায়েলের সমাধানও সম্পৃক্ত। যেমন ফকীহগণ বলেন স্বামী যদি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে থাকে আর স্ত্রী রয়েছে পশ্চিম প্রান্তে। এমতাবস্থায় স্ত্রী একটি স্ন্তান প্রসব করল এবং স্বামী সেই শিশুটি তার বলে দাবী করল। তাহলে শিশুটি তারই সাব্যস্ত হবে। কারণ স্বামী আল্লাহ ওলী হতে পারেন এবং কেরামতের বদৌলতে স্ত্রীর কাছে পৌছতে পারেন। ফতওয়ায়ে শামী ২য় খণ্ডের ثبوت النسب অধ্যায় দ্রষ্টব্য ।
    ফতওয়ায়ে শামী ৩য় খণ্ডের অধ্যায়ে কারামাতে আওলিয়া বিষয়ক র্ব্ণনায় উল্লেখিত আছেঃ
    এ দূরত্ব অতিক্রম করাটা সে একই কেরামতের অন্তর্ভুক্ত। এটা এজন্য সম্ভবপর যে হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেছেন, আমার জন্য পৃথিবীকে সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়েছিল। এতে ফকহিগণের নিম্নোক্ত মাসআলাটিরও সমাধান হয়ে যায়। মাসআলাটি হলঃ পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত অবস্থানকারী কোন ব্যাক্তি যদি পশ্চিম প্রান্তে অবস্থানকারী কোন মহিলাকে বিবাহ করেন এবং সে স্ত্রীর সন্তান ভূমিষ্ট হয় তাহলে শিশুটি উক্ত স্বামীর বলে গণ্য হবে। তাতারখানিয়া নামক গ্রন্থে আছে যে, এ মাসআলাটিও কেরামত এর বৈধতাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
    সে একই জায়গায় শামীতে আরও  উল্লেখিত আছেঃ
    সেটাই যা ইমাম নাসাফী رحمة الله عليه একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কথিত আছে যে কাবা শরীফ কোন এক ওলীর সহিত সাক্ষাত করার জন্য গমনাগমন করে-এ কথ বলাটা জায়েয হবে কিনা? এর উত্তরে তিনি বলেছেন আওলিয়া কিরামের দ্বারা কেরামত হিসেবে   অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমধর্মী কার্যাবলী সম্পাদন আহলে সুন্নাতের  মতে জায়েয।
    এ উদ্ধৃতি থেকে জানা গেল যে, পবিত্র কাবা মুয়াজ্জমাও আওলিয়া কিরামের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে ঘুরাঘুরি করে থাকে ।
    তাফসীরে রুহুল বয়ানে সুরা মুলক এর শেষে উল্লেখিত আছেঃ

    قَالَ الْاِمَامُ الْغَزَالِىُّ وَالرَّسُوْلُ عَلَيْهِ السَّلَامَ لَهُ الْخِيَارُ فِيْ طَوَ افِ الْعَالَمِ مَعَ اَرْوَاحِ الصَّحَابَةِ لَقَدْرَاَهُ كَثِيْرٌ مِنَ الْاَوْلِياءِ

    ইমাম গাযযালী বলেছেন সাহাবায়ে কিরামের রূহসমেত হুযুর আলাইহিস সালামের জগতে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে, বিধায় অনেক আওলিয়া কিরাম তাকে দেখেছেন।
    انتباه الاذكياء فى حياة الاولياء নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় আল্লামা জালালুদ্দিন সয়ুতী رحمة الله عليه বলেন-
    উম্মতের বিবিধ কর্ম-কাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা তাদের পাপরাশির ক্ষমা প্রার্থনা করা তাদেরকে বালা মাসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশ গ্রহণ এগুলোই হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালাম এর সখের কাজ। কোন  কোন হাদীছ থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।
    ইমাম গাযযালী رحمة الله عليه المنقذمن الضلال নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ-
    ঐশী নূরে আলোকিত অন্তর বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ জাগ্রত অবস্থায় নবী ও ফিরিশতাগণকে দেখতে পান, তাদের সাথে কথাবার্তাও বলেন। সয়ুতী رحمة الله عليه বলেন,

    اِنِ اعْتَقَدَالنَّاسُ اَنَّ رُوْحَهُ وَمِثَالَهُ فِىْ وَقْتِ قْتِ قِرَاءَةِ الْمَوْلِدِ وَخَتْمِ رَمْضَانَ وَقِرَ اءَةِ الْقِصَائِدِ يَحْضُرُ جَازَ

    যদি কেউ বিশ্বাস পোষণ করে যে, হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র রূহ মোবারক ও তার জিসমে মিছাল মীলাদ পাঠের সময়, রমযানে খতমে কুরআনের সময় এবং নাত পাঠ করার সময় উপস্থিত হন, তবে এ বিশ্বাস পোষণ করা জায়েয।
    মওলবী আবদুল হাই সাহেব তার রচিত  تر اويح الجنان بتشر يح حكم شرب الدخان নমক রিসালায় লিখেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি নাত পাঠ করতো এবং হুক্কাও পান করতো। সে একদিন স্বপ্নে দেখল যে নবী করীম আলাইহিস সালাম তাকে বলছেন যখন তুমি মীলাদ শরীফ পাঠ কর তখন আমি মাহফিলে উপস্থিত হই। কিন্তু যখনই হুক্কা আনা হয় তখন কালবিলম্ব না করে মাহফিল থেকে ফিরে যাই।
    এসব উদ্ধৃতি থেকে  প্রতীয়মান হল যে, জগতের অণু-পরমাণুর প্রতিও হুযুর আলাইহিস সালাম ও সার্বক্ষণিক দৃষ্টি নিবন্ধ রয়েছে। আর, নামায, তিলাওয়াত কুরআন, মাহফিলে মীলাদ শরীফ ও নাত পাঠের মাহফিলে বিশেষ করে পুণ্যাত্মাদের নামাযে জানাযায় স্ব-শরীরে তিনি তাশরীফ আনয়ন করে থাকেন।
    তাফসীরে রূহুল বয়ান ২৬ পারা সুরা ফতহ এর اِنَّا اَرْ سَلْنكَ شَاهِدًا আয়াত এ  ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ- যেহেতু হুযুর আলাইহিস সালাম আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, সেহেতু তিনিই আল্লাহর একত্বের সাক্ষী, সে সব বস্তুরও অবলোকনকারী, যেগুলি অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বের সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে এসেছে। যেমন মানবাত্মা, জীবাত্মা শারীরিক কাঠামো, খনিজ পদার্থ, বৃক্ষরাজি, পশু-পক্ষী, ফিরিশতা, মানুষ ইত্যিাদি। সুতরাং খোদা তাআলার সেসব গুপ্ত ভেদ ও বিস্ময়কর ব্যাপারগুলোও যেগুলির রহস্য উন্মোচন অন্য কোন মাখলুকের জন্য সম্ভবপর নয়, তার কাছে রহস্যাবৃত ও অনুদঘাটিত থাকার কোন অবকাশ থাকে না। সে একই জায়গায় আরও কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বলা হয়েছেঃ-
    তিনি দেখেছেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর সৃষ্টি তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ভুলের কারণে বেহেশত থেকে তার অপসারণ এবং পরে তার তওবা গৃহীত হওয়ার যাবতীয় ঘটনাবলী। শেষ পর্যন্ত সেই আদম আলাইহিস সালামকে কেন্দ্র করে যা কিছু আবর্তিত হয়েছে সবই তিনি  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখেছেন। তিনি আরো দেখেছেন শয়তানের সৃষ্টি ও যা কিছু তাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। এ থেকে বোঝা গেল যে দৃশ্যমান জগতে তার (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) অভিব্যক্তির পূর্বেই প্রত্যেক ব্যক্তি ও বস্তুর যাবতীয় অবস্থা তিনি অবলোকন করেছেন।
    আরও কিছু দূর অগ্রসর হয়ে উক্ত রূহুল বয়ানের স্বনামধন্য লেখক সে একই বর্ণনায় আরও বলেছেনঃ-
    কোন কোন বুযুর্গানে দ্বীন বলেন প্রত্যেক পুণ্যাত্মার সাথে হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র রূহ মোবারক অবস্থান করে। رقيب عنيد শব্দদ্বয় দ্বার ইহাই বোঝানো হয়েছে, যে সময় রূহে মুহাম্মাদীর স্থায়ী তাওজ্জুহ হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে অন্যত্র সরে গেল তখনই তিনি ভুল করে বসলেন এবং তার ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হয়েছে। একটি হাদীছে উল্লেখিত আছে যে,  যখন কোন ব্যভিচারকারী অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, তখন তার নিকট থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। উক্ত তাফসীরে রূহুল বয়ানে এজায়গায় বলা হয়েছে, এখানে ঈমান বলতে হুযুর পাকের দৃষ্টিকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যে মুমিনবান্দা কোন ভাল কাজ করেন তা হুযুর আলাইহিস সালাম এর কৃপা দৃষ্টির বরকতেই সম্পন্ন করেন। যে পাপ কাজ করে হুযুরের দৃষ্টি অপসারণের ফলশ্রুতিতে সেই পাপ কর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে।
    এ থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়াটি  সুন্দনভাবে প্রতিভাত হল।
    ইমাম আবু হানীফা رحمة الله عليه স্বরচিত কসিদায়ে নুমান নামক  প্রশংসা মূলক কাব্যগ্রন্থে বলেছেনঃ

    وَاِذَاسَمِعْتُ فَعَنْكَ قَوْ لًا طَيِّبًا – وَاِذَانَظَرْتُ فَلَااَرَى اشلَّاكَ

    অর্থাৎ প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) কে সম্বোধন করে বলছেন হে নবী! যখনই আমি কিছু শুনি শুধু আপনার প্রশংসাই শুনি আর যখন কোনদিকে তাকাই তখন আপনি ছাড়া আর কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয় না।
    ইমাম সাহেব رحمة الله عليه কুফাতে অবস্থান করে চারিদিকে হুযুর আলাইহিস সালামকে দেখতে পান । -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-
  • যুক্তি নির্ভর দলীলাদির সাহায্যে হাযির-নাযির এর প্রমাণ

    ইসলাম ধর্মের অনুসারীগণ এ বিষয়ে একমত যে, হুযুর সাইয়্যিদ আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পবিত্র সত্ত্বা যাবতীয় গুণাবলীতে ভূষিত। অর্থাৎ যে সব গুণাবলী অন্যান্য সম্মানিত নবী কিংবা ভবিষ্যতে আগমনকারী উচ্চ পর্যায়ের ওলীগণ বা কোন সৃষ্টজীব লাভ করেছেন বা করবেন, সে সমস্ত গুণাবলী বরং তার চেয়েও বেশী গুণাবলীতে হুযুর আলাইহিস সলামকে ভূষিত করা হয়েছে। বরং অন্যান্য সকলেই যা কিছু অর্জন করেছেন, তা সব হুযুর আলাইহিস সালামের বদৌলতে। কুরআন কারীম ইরশাদ করেছেন- (আপনি পূর্ববর্তী নবীগণের পথে চলুন।) তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ কথার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- فَجَمَعَ اللهُ كُلَّ خَصْلَةٍ فِىْ حَبِيْبِه عَلَيْهِ السَّلَامُ  অর্থাৎ আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামকে প্রত্যেক নবীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মণ্ডিত করেছেন। এ কথাটুকু মওলানা জামী رحمة الله عليه এ কবিতার নিম্নোক্ত পংক্তিদ্বয়েও বিধৃত হয়েছে-
    [স্বনামধন্য কবি হুযুর আলাইহিস সালামকে সম্বোধন করে বলেছেন হে নবী! আপনি হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর অপূর্ব সৌন্দর্য রাশিতে ভূষিত, হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এ ফুঁক দিয়ে জীবন দানের ক্ষমতা সম্পন্ন ও হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) (এর য়াদে বায়যার) একটি হাত বগলেন নিচে এনে বের করলে উজ্জ্বলরূপে ভাস্বর হওয়ার মুজিযা) অধিকারী। যে সব গুণাবলী পূর্ববর্তী নবীগণ পৃথক পৃথকভাবে লাভ করেছিলেন সব গুণাবলী আপনার মধ্যে সামগ্রিকরূপে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।]
    মওলভী কাসেম সাহেব তার রচিত তাহযীরুন্নাস গ্রন্থের ৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- অন্যান্য নবীগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসালাম থেকে গ্রহণ করেই তাদের নিজ নিজ উম্মতকে ফয়েয দান করেছেন। মোট কথা অন্যান্য নবীগণের মধ্যে যেসব গুণাবলী নিহিত আছে সেগুলি হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলীর ছায়া বা প্রতিফলিত রুপ। এ প্রসঙ্গে কুরআন হাদীছ ও সুপ্রসিদ্ধ আলেমগণের উক্তি থেকে অনেক প্রমাণ উপস্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু ভিন্ন মতাবলম্বীগণও এ কথাটি স্বীকার করেন বিধায় সে কথার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ নিষ্প্রয়োজন। এখন স্বীকৃত সিদ্ধান্ত হলো, কেউ যদি পূর্ণতা জ্ঞাপক কোন গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন, তাহলে সে গুণে পুর্ণরূপে ভূষিত হয়েছেন হুযুর আলাইহিস সালাম। এ নিয়মানুযায়ী সব জায়গায় হাযির-নাযির হওয়ার ক্ষমতা যেহেতু অনেক মাখলুককে দান করা হয়েছে, সেহেতু স্বীকার করতেই হয় যে, এ গুণও হুযুর আলাইহিস সালামকে দান করা হয়েছে।
    হাযির-নাযির হওয়ার ক্ষমতা কোন কোন সৃষ্ট জীবকে দান করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে এখন আলোকপাত করার প্রয়াস পাচ্ছি। আমি হাযির-নাযির শীর্ষিক আলোচনার ভূমিকায় বলেছি যে, হাযির-নাযির হওয়ার তিনটি মানে আছেঃ এক জায়গায় থেকে সমস্ত জগতকে হাতের তালুর মত দেকতে পাওয়া নিমেষেই সমগ্র জগত পরিভ্রমণ করা ও শত শত ক্রোশ দূরে অবস্থানকারী কাউকে সাহায্য করা এবং পার্থিব শরীর কিংবা অনুরূপ শরীর নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যমান হওয়া। এসব গুণাবলী অনেক সৃষ্টজীবের মধ্যেও নিহিত আছে।
    ১) রূহুল বয়ান খাযেন; তাফসীরে কবীর ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থ সমূহ ৭ম পারার সুরা আনআম এর আয়াত حَتَّى اِذَا جَاءَ اَحَدَ كُمُالْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছেঃ

    جُعِلَتِ الْاَرْضُ لملَكَ الْمَوْتِ مِثْلَ الطَّشْتِ يَتَنَاوَلُ مِنْ حَيْثُ شَاء

    অর্থাৎ মলকুল মওত এর জন্য সমগ্র ভূ-খণ্ডকে এমন একটি থালার মত করে দেওয়া হয়েছে যে, তার ইচ্ছানুযায়ী সেই থালা থেকে তিনি নিতে পারেন।
    তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ জায়গায় আরও বলা হয়েছে-

    لَيْسَ عَلَى مَلَكِ الْمَوْتِ صَعُوْبَةٌ فِىْ قَبْضِ الْاَرْوَاحِ وَاِنْ كَثُرَتْ وَكَانَتْ فِىْ اَمْكِنَةٍ مُتَعَدِّدَةٍ

    অর্থাৎ মলকুল মওতের রূহসমূহ কবজ করতে কোন বেগ পেতে হয় না যদিও রূহ সংখ্যায় বেশী হয় ও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে থাকে। তাফসীরে খাযেনে সে একই আয়াতের নিচে লিখা হয়েছে-

    مَامِنْ اَهْلِ بَيْتِ شَعْرٍ وَّلَامَدَرٍ اِلَّامَلَكُ الْمَوْتِ يُطِيْفُ بِهِمْ يَوْمًا مَرَّتَيْنِ

    অর্থাৎ প্রতিটি তাবু বা ঘরে বসবাসকারী এমন কোন জীব নেই যার কাছে মলকুল মওত দিনে দুবার না যান।
    মিশকাত শরীফের باب فضل الاذان শীর্ষক অধ্যায়ে আছেঃ যখন আযান ও তকবীর বলা হয়, তখন শয়তান ৩৬ মাইল দুরে পালিয়ে যায়; আবার যখন আযান-তকবীরের পালা শেষ হয়ে যায় সে পুনরায় উপস্থিত হয়। আগুন হতে সৃষ্ট জীবের গতির এ অবস্থা!
    আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের একটি রূহ শরীর থেকে বের হয়ে জগতের এদিক সেদিক বিচরণ করে এ রূহকে বলা হয় রূহে সাইরানী (বিচরণকারী রূহ) যার প্রমাণ কুরআন পাকেও রয়েছে وَيُمْسِلُ اُخْرى  আল্লাহ অপর রুহকে আবদ্ধ রাখেন। (যে মাত্র কেউ ঘুমন্ত ব্যক্তির শরীরের পার্শ্বে দাড়িয়ে তাকে ঘুম থেকে উঠাল, তখনই সে রূহ, যা মক্কায় কিংবা পবিত্র মদীনায় বিচরণ করছিল, তৎক্ষণাৎ শরীরে পুনঃ প্রবেশ করল, ঘুমন্ত ব্যাক্তি জেগে উঠল।
    তাফসীরে রূহুল বয়ানে وَهُوَ الَّذِيْ يَتَوَفَّكُمْ بِاللَّيْلِ الح  আয়াতে ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছেঃ

    فَاِذَااِنْتَبَهَ مِنَ النَّوْمِ عَادَتِ الرُّوْحُ اِلَى جَسَدٍ بِاَسْرَعَ مِنْ لَّخْظَةٍ

    অর্থাৎ মানুষ যখন ঘুম থেকে জেগে উঠে, এক মুহূর্তের চেয়েও কম সময়ে  সে রূহ শরীরে ফিরে এসে যায়।
    আমাদের দৃষ্টির নুর মুহূর্তেই সমস্ত জগত পরিভ্রমণ করে বিদ্যুৎ, তার, টেলিফোন ও লাউড স্পীকারের গতিশক্তির অবস্থা হচ্ছে আধা সেকেন্ডে ভূ- খন্ডের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অতিক্রম করে ফেলে। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর গতির অবস্থা হলো, হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) যখন কূপের অর্ধেক অংশ থেকে নিচের দিকে পতিত হচ্ছিলেন, সে মুহুর্তেই হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) সিদরাতুল মুনতাহা থেকে যাত্রা করলেন, আর নিমেষেই হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর কূপের তলায় পতিত হওয়ার পূর্বেই তাঁর নিকট পৌঁছে গেলেন। এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রুহুল বয়ানে আয়াত اَنْ يَّجْعَلُوْاهُ فِىْ غَيَابّةِ الْجُبِّ এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য। হযরত ইব্রাহীম খলীল (আলাইহিস সালাম) হযরত ঈসমাইল (আলাইহিস সালাম) এর গলায় ছুরি চালালেন, ছুরি চলার আগেই জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) সিদরা হতে দম্বা সমেত হযরত খলিলুল্লাহর (আলাইহিস সালাম) খিদমতে হাযির হয়ে গেলেন। হযরত সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) এর উযীর আসিফ বিন বরখিয়া এক পলকেই রাণী বিলকিসের সিংহাসন ইয়ামন থেকে সিরিয়ায় হযরত সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) এর নিকট নিয়ে এলন, যার প্রমাণ কুরআন করীমেই রয়েছে।
    বলা হয়েছেঃ-

    اِنَّا اَتِيْكَ بِه قَبْلَ اَنْ يَّرْ تَدَّ اِلَيْكَ طَرْفُكَ

    অর্থাৎ আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই সেটি নিয়ে আসছি। এ থেকে জানা গেল যে, হযরত আসিফের এ খবরও ছিল যে সিংহাসনটি কোথায় ছিল। লক্ষ্য করুন নিমিষেই তিনি ইয়মন গেলেন আর এত ভারী একটি সিংহাসন নিয়ে ফিরে এলেন। এখন প্রশ্ন হলো হযরত সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) এর সিংহাসন আনার এ ক্ষমতা ছিল কিনা? এ প্রসঙ্গে অত্র আলোচনার ২য় অধ্যায়ে ইনশাআল্লাহ আলোকপাত করব।
    মিরাজের সময় সমস্ত নবী (আলাইহিস সালাম) বায়তুল মুকাদ্দাসে হুযুর আলাইহিস সলাম এ পিছনে নামায আদায় করেছেন। নামাযের পর হুযুর আলাইহিস সালাম বুরাকে আরোহন পূর্বক অগ্রসর হচ্ছিলেন। বুরাকের গতির অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করুন। তার দৃষ্টি সীমার শেষ প্রান্তে তার এক পা পড়তো। অন্য দিকে নবীগণের দ্রুত গতির প্রতি লক্ষ্য করুন এখনই বায়তুল মুকাদ্দাসে তাঁরা ছিলেন মুক্তাদী, এখনই তারা বিভিন্ন আসমানে পৌঁছে গেলেন। হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন, আমি অমুক আসমানে অমুক পয়গাম্বরের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। এ থেকে জানা যায় যে,  বিদ্যুতের গতি সম্পন্ন বুরাক অপেক্ষাকৃত মন্থর গতিতেই অগ্রসর হচ্ছিল। কারণ দুলহা বা বর ঘোড়ায় চড়ে একটু ধীর গতিতেই  অগ্রসর হয়ে থাকে।
    পক্ষান্তরে মিরাজ উপলক্ষে অন্যান্য নবীগণের করণীয় কাজের সময় সুনির্দিষ্ট ছিল বিদায় তারা এখন ছিলেন বায়তুল মুকাদ্দাসে আবার মুহুর্তেই পৌঁছে গেলেন বিভিন্ন আসমানে।
    প্রখ্যাত শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী رحمة الله عليه আশ আতুল লম আত গ্রন্থে যিয়ারাতুল কুবুর শিরোনামের অধ্যায়ের শেষে লিখেছেন- প্রতি বৃহস্পতিবার মৃত ব্যাক্তিবর্গের রূহ সমূহ নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে গিয়ে তাদের ইসালে ছওয়াব এর প্রত্যাশী হয়। তাহলে যদি কোন মৃতিব্যক্তির পরিবারবর্গ বা আত্মীয়-স্বজন বিদেশে থাকে সেখানেও তার রুহ পৌঁছবে।
    আমার এসব বক্তব্য দ্বিধাহীনভাবে জানা গেল যে, সমস্ত জগতের উপর নজর রাখা, মাঝে মাঝে প্রত্যেক জায়গায় পরিভ্রমণ করা, একই সময়ে কয়েক জায়গায় বিদ্যমান থাকা ইত্যাদি এমন কতগুলো গুণ বা শক্তি যা মাহাপ্রভু বান্দাদেরকে দান করেছেন।
    এ বক্তব্য থেকে নিম্নোক্ত দুটি বিষয় অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রতীয়মান হয়ঃ
    ক) কোন বান্দাকে প্রত্যেক জায়গায় হাযির-নাযির জ্ঞান করা শিরক নয়। শিরক হচ্ছে খোদার সত্ত্বা ও গুণাবলীতে অন্য কাউকে অংশীদার জ্ঞান করা। এখানে তা হচ্ছে না।
    খ) হুযুর আলাইহিস সালামের খাদিমগণের মধ্যে প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান থাকার শক্তি নিহিত আছে তাই হুযুর আলাইহিস সালাম এর মধ্যে এ গুণটি যে সর্বাধিক পরিমাণে আছে তা বলাই বাহুল্য।
    ২) পথিবীতে প্রত্যেক জায়গায় দানাপানি নেই বরং বিশেষ বিশেষ স্থানে তা বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো রয়েছে।  পানিতো কূপ, পুকুর, নদী ইত্যাদিতে রয়েছে আর খাদ্য শস্য আছে ক্ষেতে খামারে বা ঘরবাড়ী ইত্যাদিতে। কিন্তু বায়ু ও রোদ জগতের প্রত্যেক জায়গায় রয়েছে। দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকদের নিকট বায়ু শূন্য স্থানের অস্তিত্বই অসম্ভব। তাই স্বীকার করতে হবে যে প্রত্যেক জায়গায় বায়ু রয়েছে। কারণ প্রত্যেক বস্তুর জন্য সবসময় আলো বাতাসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অনুরূপ, খোদার প্রত্যেক মাখলুকের জন্য সদা-সর্বদা হাবীবে খোদা আলাইহিস সালাম এর প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি, যা তাফসীরে রূহুল বয়ান ইত্যাদি গ্রন্থের বরাত দিয়ে প্রমাণ করেছি। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালাম যে সব জায়গায় বিরাজমান, তা অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রতীয়মান হয়।
    ৩) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টিজগতের মূল। তিনি ইরশাদ করেছেন- وَكُلُّالْخَلْقِ مِنْ نُوْرِىْ (সমস্ত সৃষ্টি আমার নূর থেকে সৃষ্ট।) শাখা প্রশাখায় মূলের অস্তিত্ব, শব্দাবলীর বিবিধ রূপের মধ্যে শব্দ-মূলের অস্তিত্ব এবং সমস্ত সংখ্যার মধ্যে মৌলিক এক সংখ্যার অস্তিত্ব একান্ত জরুরী। এ প্রসঙ্গে জনৈক কবি খুব সুন্দর কথাই বলেছেন-
    সৃষ্টি মাত্রই তার থেকে তিনি প্রত্যেক কিছুতেই বিদ্যমান। তিনি যেন অংক শাস্ত্রের মৌল সংখ্যা ১ (এক) তিনিই দুজাহানের ভিত্তি মূল। এমন কিছু নেই যা তাঁর থেকে সৃষ্ট হয়নি। -সুত্রঃ জাআল হক ১ম খন্ড-
  • ভিন্নমতাবলম্বীদের রচিত পুস্তকসমূহ থেকে হাযির নাযির এ প্রমাণ

    তাহযিরুন্নাস কিতাবের ১০ পৃষ্ঠায় দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব বলেন আয়াত اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْ مِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ [নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ্বাসী লোকদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়ে নিকটত]এর مِنْ اَنْفُسِهِمْ অংশটুকুর শব্দ বিন্যাস ও ব্যবহৃত অন্বিত অব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে এ কথাটি প্রমাণিত হয় যে, উম্মতের সাথে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এমন নৈকট্যের সম্পর্ক আছে যে, তাদের প্রাণের সাথেও সেরূপ নৈকট্য নেই। কেননা উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত اَوْلَى শব্দটির অর্থ হচ্ছে নিকটতর। মওলবী ইসমাইল দেহলবী রচিত সিরাতে মুস্তাকীম গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠার তরজুমার চতুর্থ হিদায়েত ইশকের বর্ণনায় আগুন ও কয়লার দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে এভাবে, যখন খোদা অন্বেষী সাধকের পূর্ণতাপ্রাপ্ত আত্মাসত্ত্বাকে রহমানী আকর্ষণ ও ভাবাবেশের তরঙ্গমালা আহাদিয়াত এর সমুদ্র সমূহের গভীরে টেনে নিয়ে যায় তখন আনাল হক ও আমার জুবানে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু নেই প্রভৃতি বাক্য  সে সাধকের মুখ থেকে নির্গত হতে থাকে। সাধকের এ অবস্থার কথাই বর্ণিত হয়েছে হাদীছে কুদসীতে যেখানে বলা হয়েছে-

    كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِه وَبَصَرَهُ الَّذِىْ يَبْصُرُ بِه

    (আমি সে প্রিয় বান্দার কান হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি শুনেন, তার চোখ হয়ে যাই, যদ্দারা তিনি দেখেন। এ  ইবারতে একথা স্পষ্টই স্বীকৃত হয়েছে যে, মানুষ যখনিই ফানাফিল্লাহ এর স্তরে উপনীত হয় তখন সে খোদার শক্তিতেই দেখে, শুনে, ধরে ও কথা বলে। অর্থাৎ জগতের প্রত্যেক কিছুই দেখে, দূরের ও নিকটের যাবতীয় কিছু স্পর্শ করে। এটিই হচ্ছে হাযির-নাযির এর অর্থ। যখন সাধারণ মানুষ ফানাফিল্লাহ এর স্তরে গিয়ে মর্যাদার এরূপ আসনে অধিষ্ঠিত হয়, তাহলে জীন ও মানব জাতির সর্দার আলাইহিস সালাত ওয়াসাল্লাম যার ফনাফিল্লাহের স্তরে অন্য কেউ উপনীত হতে পারে না, সর্বোচ্চ  স্তরের হাযির-নাযির হবেন বৈকি।
    ইমদাদুস সুলুক নামক গন্থের ১০ পৃষ্ঠায় মওলবী রশীদ আহমদ সাহেব গাঙ্গুহী লিখেছেনঃ- মুরীদের এও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে পীরের রূহ মোবারক এক জায়গায় আবদ্ধ নয়। মুরীদ দূরে বা নিকটে যেখানে হোক না কেন, এমনকি পীরের পবিত্র শরীর মোবারক থেকে দূরে হলেও পীরের রূহানিয়ত কিন্তু দূরে নয়। যখন এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেলে তখন পীরকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখতে হবে যাতে তার সাথে আন্তরিক সম্পর্ক প্রকট হয়ে উঠে এবং মুরীদ এ উপকারিতা লাভে ধন্য হতে থাকে। মুরীদ যে অবস্থার সম্মুখীন হয় সে অবস্থায় পীরের মুখাপেক্ষী থাকে। পীরকে আপন অন্তরে হাযির করে স্বীয় অবস্থার মাধ্যমে পীরের নিকট লক্ষ্য বস্তুর প্রার্থী হতে হবে। আল্লাহর হুকুমে পীরের রূহ মোবারক পার্থিব বিষয়টি মুরীদের অন্তরে অবশ্যই ইলকা করবেন। কিন্তু এর জন্য শর্ত হচ্ছে পীরের সাথে পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। পীরের সহিত সম্পর্কের কারণেই অন্তর বাক্যময় উঠে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পথ উদঘাটিত হয়। আল্লাহ তাকে ইলহাম প্রাপ্তির যোগ্যতা সম্পন্ন করে।
    এ ইবারতে নিম্ন লিখিত কথা কয়টি স্পষ্টরূপে পাচ্ছেঃ
    ১) মুরীদের কাছে পীরের হাযির-নাযির হওয়।
    ২) পীরের ধ্যানে মুরীদের রত থাকা।
    ৩) পীরের হাজত পূরণের ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া
    ৪) খোদাকে বাদ দিয়ে মুরীদের প্রার্থিত বিষয়ে পীরের কাছে প্রার্থী হওয়া।
    ৫) মুরীদের অন্তরে প্রর্থিত বিষয়ে পীরের সুস্পষ্ট ধারণা সৃষ্টি করা।  ও
    ৬) পীর মুরীদের দিল জারী করে দেওয়া।
    পীরের মধ্যে যখন এসব শক্তি নিহিত রয়েছে, তখন মানবজাতি ও ফিরিশতাদের মুর্শিদদেরও যিনি মুর্শিদ, তাঁর মধ্যে এসব গুনাবলী স্বীকার করা শিরক হয় কি করে? উল্লেখিত ইবারতটুকু ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্পূর্ণ মতাদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। আল্লাহর শুকরিয়া যে সম্পূর্ণ তকবীয়াতুল ঈমান এখানেই খতম হয়ে গেল।
    হিফযুল ঈমান নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় মওলবী আশরাফ আলী সাহেব লিখেছিনঃ
    অতি অল্প সময়ে  পৃথিবী পরিভ্রমণ সম্পর্কে আবু ইয়াযিদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছেন এটি কোন পূর্ণতা জ্ঞাপক বৈশিষ্ট্য নয়। দেখুন ইবলীস পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত নিমেষেই অতিক্রম করে।
    এ ইবাদতে এ কথাটুকুই স্পষ্টরূপে স্বীকার করা হয়েছে যে, কোন কোন সময় পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্তে পৌছে যাওয়া শুধুমাত্র আল্লাহওয়ালাদের জন্য সম্ভব পর নয় বরং কাফির ও শয়তানদের পক্ষে ও এরূপ দুরূহ কাজ সম্ভবপর এবং হতেই আছে। হাযির-নাযির শব্দদ্বয় দ্বারা এ কথাটুকুই বোঝানো হয়। তকবীয়াতুল ঈমান এ দৃষ্টিকোণ থেকে তা শিরক বটে।

    নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁ ভূপালী ওহাবী রচিত মিসকুল খেতাম গ্রন্থের উদ্ধৃতি হাযির-নাযির এর প্রমাণেও (অত্র অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ) পেশ করেছি। তিনি বলেছেন- তাশাহুদে আসসালামু আলাইকা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ জন্যই সম্বোধন করা হয় যে, তিনি জগতের কনায় কনায় বিদ্যমান। নামাযীর সত্ত্বার মাঝে হাযির ও বিরাজমান।
    উপরোল্লিখিত ইবারতসমূহ থেকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি সুচারুরূপে প্রতিপন্ন হল।

Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|