পঈদের নামাজের পদ্ধতি এবং কিছু মাসআলা
মুসলমানদের ঈদ দুটি: একটি হলো রমজানের পর ঈদুল ফিতর । অপরটি হলো আরাফা দিবসের পর ঈদুল আযহা। জাহিলীযুগের উৎসব-পার্বন ও নব আবিষ্কৃত উৎসব-পার্বনের জায়গায় আল্লাহ তাআলা এ দুই ঈদ বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালিক রাযি. বলেন, জাহিলীযুগে বছরে দুটি দিবস ছিল যেখানে তারা খেল-তামাশা করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় এলেন, তিনি বললেন, «তোমাদের দুটি দিবস ছিল, যাতে তোমরা খেলতে। আল্লাহ তাআলা ওই দুটি পরিবর্তন করে তোমাদের জন্য উত্তম দিবস দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর দিবস ও ঈদুল আযহা দিবস।»(বর্ণনায় নাসায়ী) অতএব কাফিরদের ঈদে অংশ নেয়া বৈধ নয়; কেননা তা কোনো ধর্ম, বিধান বা জীবন পদ্ধতির স্পষ্টতম আলামত। আল্লাহ তাআলা বলেন:
(وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّۚ لِكُلّٖ جَعَلۡنَا مِنكُمۡ شِرۡعَةٗ وَمِنۡهَاجٗاۚ )
ঈদের কিছু বাহ্যদৃশ্য
ঈদ, ইবাদত ও খুশি-আনন্দ প্রকাশ এবং বৈধ খাদ্য গ্রহণের মাঝে সমন্বয় ঘটিয়েছে। এ কারণেই ঈদ খুশি-আনন্দ ও খাওয়া দাওয়ার পর্ব। তবে ঈদের দিন এমন কোনো গর্হিত কাজ করা যাবে না, যা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের সাথে মিলে না। যেমন নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ। নামাজ থেকে গাফেল হওয়া। হারাম পানীয় গ্রহণ করা। হারাম খেলায় মেতে উঠা এবং এ জাতীয় অন্যান্য কাজ যা হারামের আওতাভুক্ত।
আলহামদুলিল্লাহ আবার বছর ঘুরে আমাদের মাঝে হাজির হলো পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য দুটি দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারিত করেছেন। এই দিনগুলোতে ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ
অতএব তোমার রবের উদ্দেশেই নামাজ পড়ো এবং নহর করো।’ (সুরা আল কাউসার, আয়াত : ২)
ঈদের নামাজের পদ্ধতি স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়।
নিম্নে সেই নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো :
👉👉 যেমন—ঈদের দুই রাকাত নামাজের কোনো আজান, ইকামত নেই। এতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির রয়েছে। সেগুলো আদায়ের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
👉👉 ঈদুল আযহার সমস্ত নিয়ম ঈদুল ফিতর এর নিয়ম এর মতন কিন্তু কিছু কথা তে পার্থক্য আছে যেমন ঈদুল ফিতর এ কিছু খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া এবং ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে। যদি ও বা সে ক্বোরবানি না দেই এবং কিছু খেয়ে নেই তো কোনো ব্যাপার নাই। এবং রাস্তা তে উচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করতে করতে যাবে। এবং ঈদুল আযহা তে কোনো কারণের জন্য যদি ১২ তারিখ পর্যন্ত বিনা করাহাতের সঙ্গে দেরি করতে পারে ১২ তারিখ এর পরে আর হতে পারেনা এবং বিনা কারণে এ ১০ তারিখের পরে মাকরূহ।
👉👉নামাজের পরে ইমাম দুই খুদবা পড়বে এবং জুম্মার খুদবাতে যেটা সুন্নাত ঈদের খুদবাতেও সেটা সুন্নাত জুম্মার খুদবাতে যে সব জিনিষ মাকরূহ সেটা ঈদের খুদবাতেও মাকরূহ। শুধু ২ টা জিনিসে পার্থক্য
১ জুম্মার খুতবার পূর্বে ইমাম কে মেহেরাবে বসা সুন্নাত আর ঈদের খুতবার পূর্বে ইমাম কে মিহেরাবে না বসা সুন্নাত।
২ ঈদের নামাজের খুতবার পূর্বে প্রথমে ৯ বার দ্বিতীয় খুতবার পূর্বে ৭ বার আর মেম্বার থেকে নামার সময় ১৪ বার আল্লাহ আকবর বলা সুন্নাত
কিন্তু জুম্মার খুদবাতে সুন্নাত নয়।
👉👉 যদি কোন ব্যাক্তি ক্বোরবানি করে তো মুস্তাহাব এ টাই যে ১ জিল হিজ্জা থেকে ১০ জিল হীজ্জা পর্যন্ত নখ চুল কিছু না কাটা
ঈদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
১। 👉 👉 প্রথমত, স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধবেন। তারপর ছানা পাঠ করবেন।
২। 👉👉 তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন।
৩। 👉👉 তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ে এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন।
৪। 👉👉 তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।
৫। 👉👉 দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত উঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন।
৬। 👉👉 তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করবেন।
৭। 👉👉 নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। কোনো ধরনের কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না।
৮। 👉👉 খুতবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।
👉👉 সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করার পর ইমাম মিম্বারে উঠবে। দুটি খুতবা দেবে। এ দুটির মাঝে সামান্য সময়ের জন্য বসবে। প্রথম খুতবা নয় তাকবীরের সাথে শুরু করবে। আর দ্বিতীয় খুতবা সাত তাকবীরের সাথে শুরু করবে।
👉👉 ঈদুল ফিতরে মুস্তাহাব হলো মানুষদেরকে সদকায়ে ফিতর সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া। আর ঈদুল আযহায় কুরবানীর হুকুম আহকাম বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া।
👉👉 ঈদের নামাজ আদায়ের জায়গা
ঈদের নামাজ মসজিদে নয় বরং মাঠে পড়া সুন্নত। প্রয়োজনে যদি মসজিদে পড়া হয় তবে কোনো সমস্যা হবে না।
👉👉 যদি সম্ভব হয় তাহলে পায়ে হেঁটে এক পথে যাবে এবং অন্য পথে ফিরে আসবে। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন «ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাওয়া-আসার রাস্তায় পার্থক্য করতেন।» [বর্ণনায় বুখারী]
👉👉 ঈদুল ফিতরের নামাজের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া (তিনটি অথবা পাঁচটি)। আর ঈদুল আযহায় নামাজ থেকে ফিরে আসার পূর্বে কিছু না খাওয়া|
👉👉 ঈদুল ফিতরের নামাজ দেরিতে আদায় করা মুস্তাহাব; যাতে মানুষ সদকায়ে ফিতর আদায় করতে ও হকদারদের কাছে তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার নামাজ সকাল-সকাল আদায় করা মুস্তাহাব|
👉👉 দুই ঈদের আহকাম
ঈদগাহে, ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে, নফল নামাজ পড়া মাকরুহ।