★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
ফরয নামাজের পর উচ্চস্বরে দোয়া এবং যিকিরঃ - Ja-al-haq Discussions on

ফরয নামাজের পর উচ্চস্বরে দোয়া এবং যিকিরঃ


দোয়া অস্বীকারকারীদের দাবীঃ কী ওয়ার্ড আরবী শব্দ ‘দুবুর’ 
______________________________ 
ফরজ নামাজের পর দোয়া করা এমন এক মাস’আলা যে ব্যাপারে অনেকেই কথা বলেছেন। তাদের কেউ কেউ দাবী করেছেন, এটা বেদ’আহ তথা নতুন আবিস্কার। তারা নামাজের পরের দোয়াগুলোকে তাশাহহুদের পর সালাম ফেরানোর আগের দোয়া বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে তারা দুবুর শব্দটির অর্থ “আগে” করেছেন। অথচ সহীহ মুসলিমে হাদিস নাম্বার ৫৯৫ তে দুবুর শব্দ উল্লেখ করে বলা হয়েছে ৩৩ বার তাসবিহ পাঠ করা। আর মুলতঃ তাসবীহ পাঠ করা হয় সালামের পর, আগে নয়।
ফরজ নামাজের পর দোয়া অস্বীকারকারীদের দলীলঃ
_______________________________ 
তারা বলেন, ফরজ নামাজের পর দোয়া করা সুন্নত নয়। তারা দলীল উপস্থাপন করেন, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাম ফেরাতেন তখন তিনি এই দোয়াটি পড়তে যতক্ষণ লাগতো, ততক্ষণ পর্যন্ত বসতেন, এরচেয়ে বেশী বসতেন না। দোয়াটি এই,
اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والإكرام
সহীহ মুসলিম-৫৯২
তাদের দলীলের জবাবঃ 
_____________ 
অনেক আলেম এই দলীলের জবাব দিয়েছেন এভাবে যে, এই নফী (না বসা) টি মূলত ইলমের সাথে সম্পর্কিত। বাস্তব ঘটনার সাথে এই নফী সম্পর্কিত নয়। অনেক সাহাবা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এর থেকে বেশী পরিমান বসার কথা বর্ণনা করেছেন যা বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
সংযোজন- 
এছাড়াও এই হাদীসটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লা-মাযহাবীদের শায়েখ মুবারকপুরী বলেছেন, এখানে যে বলা হয়েছে, এই দোয়া (আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম-) পড়তে যেসময় লাগে, ততটুকু বসতেন- মূলতঃ এটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মধ্যে করতেন। বরং এটা সহীহ হাদীস দ্বারা সাবিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফেরানোর পর এর থেকে আরোও বেশী সময় বসতেন। 
রেফারেন্সঃ
তুহফাতুল আহওয়াযি-২/২৯৮-২৯৯
ইমাম মানাওয়ী ও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত মুসাল্লায় বসে থাকতেন।
রেফারেন্সঃ
ফায়দুল কাদীর-৫/১৪২-১৪৩
এ দোয়া যে সুন্নত, তার দলীলঃ 
_________________ 
সহিহ মুসলিমে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসের পূর্বের হাদীসটি যা হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, সেই হাদীসে ইসতেগফারের কথা যোগ করা হয়েছে। সাহাবী বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন, তখন তিনবার ইসতেগফার করতেন এবং বলতেন “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম। 
এই হাদিসটি “ফরজ নামাজের পর দোয়া করা সুন্নত” এ ব্যাপারে কোন ঝগড়া না করার জন্য পরিস্কারভাবে নিষেধ করছে। কেননা, ইসতেগফার হচ্ছে ক্ষমা চাওয়া, আর আল্লাহর নিকট কোন কিছু চাওয়াকেই দোয়া বলে। আর সেটা যে কোন শব্দে হোক, যেমন আল্লাহুম্মাগফিরলী অথবা আসতাগফিরুল্লাহ। এই মাস’আলার জন্য অন্য কোন দলীলের প্রয়োজন নেই। সুতরাং এটাকে অস্বীকার করা হচ্ছে বেদ’আত যা সুন্নাহ এর সাথে স্পষ্ট বিরোধিতা করবে। আর বিশেষ করে এটা বেদ’আত হবে তখন যখন এমন অস্বীকার আমভাবে প্রত্যেক দোয়ার ক্ষেত্রে করা হয়, যেমন ওরা করে থাকে। 
আবু দাঊদে ইসতেগফারের অন্য আরেকটি বর্ণনা রয়েছে, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাতে সালাম ফেরাতেন, তখন তিনি বলতেন,
اللهم اغفر لي ما قدمت وما أخرت ، وما أسررت وما أعلنت ، وما أسرفت وما أنت أعلم به مني، أنت المقدم وأنت المؤخر لا إله إلا أنت
-আবু দাঊদ-১৫০৯ 
এভাবে আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। 
সহীহ ইবনু হিব্বানে একটি অধ্যায় রয়েছে,
ذكر ما يستحب للمرء أن يسأل الله جل وعلا في عقيب الصلاة 
অর্থাৎ নামাজের পর কোন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা মুসতাহাব। 
সেখানে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীস রয়েছে যার লফয হচ্ছে এভাবে, كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا فرغ من الصلاة وسلم قال: اللهم اغفر لي অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত থেকে অবসর হতেন, সালাত শেষ করতেন, তখন তিনি বলতেন, হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ক্ষমা কর--। 
-সহীহ ইবনু হিব্বান-২০২৫
এই মাস’আলায় ইমাম বুখারীর মাযহাবঃ
_____________________ 
ইমাম বুখারী এই মাস’আলার জন্য কিতাবুদ দা’আওয়াতের মধ্যে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, বাবুদ দুয়া ই বা’দাস সালাহ অর্থাৎ সালাতের পর দোয়ার অধ্যায়। তিনি এ অধ্যায়ের অধীনে আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস উল্লেখ করেছেন যেখানে প্রত্যেক সালাতের পর ১০বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদু লিল্লাহ, ১০ বার আল্লাহু আকবার এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীস নাম্বার-৫৯৭০। এরপর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেছেন যেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সালাতের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়াটি পড়তেন,
لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك ، وله الحمد ، وهو على كل شيء قدير، اللهم لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما 
منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد
ইমাম বুখারীর এমন দলীল উপস্থাপনের কারণঃ
_________________________ 
ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ তার ফাতহুল বারীতে বলেন, ইমাম বুখারীর এমন অধ্যায় রচনার কারণ হচ্ছে এটা বুঝানো যে, যিকিরকারীকে তার যিকির যখন আল্লাহর নিকট কোন কিছু চাওয়া থেকে বিরত রেখে যিকিরে মাশগুল রাখে তখন যিকিরকারীর জন্যর তাই হাসিল হয় যা দোয়া কারী দোয়ার মাধ্যমে হাসিল করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকঃ
_____________ 
ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ এই অধ্যায় সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
وفي هذه الترجمة رد على من زعم أن الدعاء بعد الصلاة لا يشرع
অর্থাৎ ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এর “নামাজের পর দোয়া” অধ্যায়ে ঐ সকল লোকদের প্রতিবাদ ও তাদের কথা রদ করা হয়েছে যারা দাবী করে নামাজের পর দোয়া শরীয়তসম্মত নয়। 
ফাতহুল বারী/ কিতাবুদ দা’আওয়াত/ হাদীস নাম্বার ৫৯৭০/ পেইজ নাম্বার-১৩৭
উল্লেখ্য, লা-মাযহাবীদের শায়েখ ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ বলেছেন, সালাতের পর কারো জন্য দোয়ার কোন বিধান নেই।
(সংযোজন)
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকঃ 
_____________ 
ইমাম বুখারীর এমন অধ্যায় রচনার কারণ হচ্ছে, দোয়া হচ্ছে যিকির। অর্থাৎ এটি যিকিরেরই একটি প্রকার যেখানে সকল প্রকার যিকির হচ্ছে শরীয়ত সম্মত আর দোয়া হচ্ছে তারই একটি প্রকার, যেমন ইমাম বুখারীর বর্ণিত যিকিরের হাদীসে (৬০৪৫) রয়েছে, ইয়াস’আলুনাকাল জান্নাতা অর্থাৎ তারা জান্নাতের জন্য প্রার্থনা করছে। এটাই হচ্ছে স্পষ্ট দোয়া। আরেকটি দিক হচ্ছে, যিকিরের মধ্যে সরীহ দোয়া যদি নাও থাকে, তারপরও সেখানে ব্যাপকভাবে তালাব এবং সুয়াল অর্থ প্রদান করে। 
বিশেষ করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি যা প্রদান করে থাক তাতে বাঁধা দানকারী কেউ নেই এবং তুমি যা বাঁধা প্রদান কর কেউ তা দিতে পারেনা। 
এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, لا نرجو غيرك ولكن نرجوك فأعطنا অর্থাৎ আমরা তুমি ছাড়া অন্য কারো কাছে কিছুই প্রত্যাশা করিনা। শুধুমাত্র তোমার নিকটই প্রত্যাশা করি, সুতরাং তুমি আমাদেরকে দান কর। 
আর এটা হচ্ছে আল্লাহর সেই বাণীর ন্যায়- وأيوب إذ نادى ربه أني مسني الضر وأنت أرحم الراحمين فاستجبنا له وكشفنا ما به من ضر [الأنبياء/83ـ84]، এখানে আল্লাহর বানী استجبنا له এর অর্থ হচ্ছে তিনি দোয়া করলেন। যদিও তিনি এখানে স্পস্টভাবে দোয়া করেননি, বরং তিনি ‘দুঃখ কষ্ট তাকে স্পর্শ করেছে’- একথা উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেছেন এই বলে যে তিনি আরহামুর রাহিমীন। 
মূলত আয়াতের অর্থ হচ্ছে হে আল্লাহ, আমাকে রহম কর এবং আমার দুঃখ-কস্ট দূর করে দাও। 
ঠিক এমনিভাবে আরেকটি আয়াত- ونـادى نوح ربه قال ربي إن ابني من أهلي وإن وعدك الحق وأنت أحكم الحـاكمين قـال يانوح إنه ليس من أهلك إنـه عمل غير صـالح فلا تسألن مــــا ليس لك بـه علم)[هود/45ـ46] এই আয়াতে ও স্পস্টভাবে দোয়ার কথা নেই। 
আর ইমাম হাকিম সহীহ সুত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন, أفضل الذكر لا إله إلا الله وأفضل الدعاء الحمد لله অর্থাৎ সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আলহামদু লিল্লাহ।
আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষে ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ বলার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটা হচ্ছে ফরজ সালাতের পর দোয়া করার স্পষ্ট দলীল।
একবার বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ছুফিয়ান বিন উয়াইনাহ রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আরাফার দিনের সর্বোত্তম দোয়া কোনটি? তিনি জবাব দিয়েছিলেন,
لا إله إلا الله وحده لا شريك له ، له الملك وله الحمد ، وهو على كل شيء قدير
তখন তাকে বলা হয়েছিল, এটা তো আল্লাহর প্রশংসা, দোয়া নয়। তখন তিনি জবাব দিয়ে বলেছিলেন, তুমি কি শুন নাই কবির কথা-
أأذكر حاجتي أم قـد كفـاني حياؤك إنّ شيمتـك الحياء 
إذا أثنى عليـك المـرء يومـاً كفـاه مـن تعـرضـه الثناء
অর্থাৎ আমি কি আমার হাজতের কথা উল্লেখ করবো? না আপনার লজ্জা ই আমার জন্য যথেস্ট হবে? কারণ লজ্জাই যে আপনার ভূষণ। যখন কোন ব্যক্তি কোনদিন আপনার উপর প্রশংসা করে, তাহলে তার প্রতি আপনার বিমুখ হওয়া থেকে ঐ প্রশংসাই তার জন্য যথেস্ট হবে।
সংযোজন- 
অর্থাৎ আপনার ‘লজ্জা’ সিফাতের কারণে আমি সরাসরি আপনার নিকট কিছু চাইছিনা, তবে আপনার প্রশংসা করছি। আর এ প্রশংসাই আমার হাজাত পূরণে যথেস্ট হয়ে যাবে। আপনি আমার হাজাত পূরণে এগিয়ে আসবেন।
চলবে-
_____________________________________ 
সম্মানিত পাঠক, 
আলোচনা যতই গড়াবে, ততই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রকাশ পেতে থাকবে,
ইনশা আল্লাহ।
মনযোগ দিয়ে পড়ুন। সাথে থাকুন পরবর্তী পর্বের জন্য। 
আর লেখাটি কপি / শেয়ার করুন।image

Comments

  • দ্বিতীয় পর্বঃ 
    ফরয নামাজের পর উচ্চস্বরে দোয়া এবং যিকিরঃ
    _________________________ 
    যেভাবে নামাজের পর যিকিরের হাদীস ফরজ নামাজের পর দোয়াকে শরীয়তসম্মত করার উপর দালালত করে, ঠিক তেমনি উচ্চস্বরে দোয়া করাকে শরীয়তসম্মত করার উপর ও দালালত করে। কেননা দোয়া হচ্ছে যিকির। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, হযরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, ফরজ নামাজ থেকে ফারেগ হবার পর মুসল্লীদের উচ্চস্বরে যিকির রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে বিদ্যমান ছিল।
    -সহীহ আল বুখারী- হাদীস নাম্বার ৮০৫
    ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, 
    এটা ইমাম এবং বাকীদের জন্য মুবাহ, বৈধ। তিনি বলেন, ইমামের উচ্চস্বরে এবং অনুচ্চস্বরে যিকির করা উত্তম কাজ। তিনি এটাও বলেছেন, এ ক্ষেত্রে ইমাম এবং মুক্তাদীর এখতিয়ার রয়েছে। 
    কিতাবুল উম্ম-২/২৮৮ 
    মূল কথা হচ্ছে, ইবাদত হয় ফরজ হয় নতুবা মুস্তাহাব হয়, মুবাহ হয় না। কিন্তু ইমাম শাফেয়ী এখানে বুঝাতে চেয়েছেন, এতে নিষেধ নেই আর সেজন্য পরে তিনি বলেছেন, এটা হাসান তথা উত্তম কাজ। মোট কথা হচ্ছে, ফরজ নামাজের পর উচ্চস্বরে জিকির করা বিদ’আত নয়। 
    তিনি আরো বলেছেন,
    وأستحب للمصلي منفرداً وللمأموم أن يطيل الذكر بعد الصلاة، ويكثر الدعاء رجاء الإجابة بعد المكتوبة অর্থাৎ মুসাল্লী একাকী হোক কিংবা মুক্তাদী হোক তার জন্য ফরজ নামাজের পর দীর্ঘক্ষণ যিকির করা এবং ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয় এই আশায় বেশী বেশী দোয়া করাকে আমি মুস্তাহাব মনে করি।
    কিতাবুল উম্ম-২/২৮৯
    নামাজের পর দোয়া সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীস সমূহঃ 
    _____________________________________ 
    ইমাম ইবনু হাজার অন্যান্য হাদীস সমূহ উল্লেখ করেছেন, তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, নামাজ থেকে ফারেগ হবার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, اللهم أصلح لي ديني অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি আমার জন্য আমার দ্বীনকে ইসলাহ (সংশোধন) কর--। 
    হাদীসটি ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনু হিব্বান এটাকে সহীহ বলেছেন।
    -ফাতহুল বারী-১১/১৩৪
    সম্পূর্ণ দোয়াটি রয়েছে সহিহ ইবনু হিব্বানে, কিতাবুল ইহসানে, হাদীস নাম্বার- ২০২৬
    اللهم أصلح لي ديني الذي جعلته لي عصمة أمري وأصلح لي دنياي التي جعلت فيها معاشي ، اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك ، وبعفوك من نقمتك وأعوذ بك منك ، اللهم لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد
    -নাতাইজুল আফকার-২/৩১৮
    দীনের উলামায়ে কেরাম ফরজ নামাজের পর হাদীসে রাসুল থেকে বিভিন্ন দোয়া উল্লেখ করেছেন এবং এর মাধ্যমে দলীল উল্লেখ করে বলেছেন, ফরজ নামাজের পর যে কোন ধরণের দোয়া করা জায়েয। শুধু ঐ দোয়া করা যাবেনা যাতে শরীয়তে নিষেধ রয়েছে। 
    তারা আমভাবে কোর’আনের এই আয়াতকেও দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন, وقال ربكم ادعوني أستجب لكم [غافر/60] অর্থাৎ ‘এবং তোমাদের প্রতিপালক বললেন, তোমরা আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়াতে সাড়া দেব। সূরা গাফির-৬০ 
    উলামায়ে কেরাম কোর’আনে কারীমের এই আয়াতকেও আমভাবে দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন, إن ربي لسميع الدعاء [إبراهيم/39] অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক দোয়া কবুলকারী। সূরা ইবরাহীম-৩৯

    দলীল দেয়ার ক্ষেত্রে দোয়া বিরোধীদের মানহাজ:
    _________________________ 
    দোয়া বিরোধীরা কোন আমলের বেদ’আত হবার দলীল দিতে গিয়ে বলেন, 
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা করেন নাই। 
    তারা কেমন যেন এটা বলতে চান, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুধুমাত্র কথা, শুধুমাত্র মৌন সম্মতি অথবা কোর’আনে কারীমের কোন আয়াত দলীলের জন্য যথেস্ট নয়। নিঃসন্দেহে এমন ধরণের কথা বলা সম্পূর্ণ ভুল। সকল ইমাম একমত পোষণ করে বলেছেন, রাসুল সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, কাজ, মৌন সম্মতি, কোর’আনের আয়াত এগুলোর প্রত্যেকটি দলীলের জন্য একাই যথেস্ট। যে কোন একটি পেলেই তা শরীয়তে অনুমোদিত হবে। 
    যারা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের করেন নাই বিধায় তা বেদ’আত, তাদের নিকট প্রশ্ন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৌন সম্মতি কি বেদ’আত? মৌন সম্মতি হচ্ছে কেউ কোন কাজ করলেন আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব থাকলেন। তাহলে এটা কি বেদ’আত হবে? কারণ এটা তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নাই?

    বরং এখানে অনেক আমলের দৃষ্টান্ত রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ রয়েছে কিন্তু এগুলো যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন, তার কোন প্রমাণ নেই। যেমন সহীহ বুখারীতে রয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
    صلوا قبل المغرب ركعتين অর্থাৎ তোমরা মাগরিবের আগে দু রাকাত সালাত আদায় কর। 
    এখন এটাকে কী বলবেন? 
    আপনি কি বলতে পারবেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা ছেড়ে দিলেন, করলেন না, সে ব্যাপারে কী করে তিনি নির্দেশ প্রদান করলেন?
    এভাবে আমরা দেখি যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদতের কোন কোন বিষয়ের আমল করেন নাই, আর আমরা তার আমলের প্রমাণ না পাওয়া সত্ত্বেও অন্য দলীলের ভিত্তিতে সেসব আমল করে থাকি। অন্য দলীল আমাদেরকে তা করতে উৎসাহিত করে, হোক সে দলীল কোর’আনে কারীমের কোন আয়াত, অথবা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা অথবা তাঁর কোন মৌন সম্মতি অথবা অন্য কোন শরয়ী দলীল। আর যখন এসবের কোন একটি দলীল না পাই, তখন আমরা এমন দলীল বিহীন আমলকে বেদ’আত বলি।
    ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ফতোয়াঃ
    _______________________
    ইবনু তাইমিয়্যাহ (দোয়া বিরোধীদের অন্যতম প্রধান শায়েখ) তাঁর ফতোয়াতে বলেন,
    عدم الفعل إنما هو دليل واحد من الأدلة الشرعية، وهو أضعف من القول باتفاق العلماء، وسائر الأدلة من أقواله ـ كأمره ونهيه وإذنه ـ ومن قول الله تعالى هي أقوى وأكبر
    অর্থাৎ কোন কিছু না করা বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নাই এমন কথা শরীয়তের দলীল সমূহের একটি। তবে সকল উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করে বলেছেন, এটা অন্যান্য দলীল সমুহ যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, নির্দেশ, নিষেধ এবং অনুমতি থেকে অত্যন্ত দুর্বল দলীল। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বাণী হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল। 
    -মাজমু উ ফাতাওয়া-২১/৩১৪
  • edited February 2016
    \m/ :-bdShare post Link  ফরয নামাজের পর উচ্চস্বরে দোয়া এবং যিকিরঃ http://yanabi.in/u/c 
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|