★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
ইসলাম দ্বীন ইসলাম হযরত জিবরীল عليه السلام-এর দ্বীন শিক্ষা দান - Ja-al-haq Discussions on

ইসলাম দ্বীন ইসলাম হযরত জিবরীল عليه السلام-এর দ্বীন শিক্ষা দান

edited February 2016 in Ja-al-haq
আরবী ভাষায় দ্বীন শব্দের অনেক অর্থ আছে। যেমনঃ-আলকাহর - আধিক্য হওয়া, আছছুলত্বহ - অটল থাকা, আত্ ত্ব-আত - আনুগত্য স্বীকার করা, আলখুদু - অবনত ও বিনয়ী হওয়া, আল জাঝা - প্রতিফল দেয়া, আননিযাম - রীতি-নীতি, আলকানুন - পদ্ধতি।
প্রচলিত ভাষায় - নির্দ্দিষ্ট রীতি-নীতি ও নিয়ম পদ্ধতিকে দ্বীন বলা হয়। কোরআন মাজীদের পরিভাষায় দ্বীন ঐ সব মূলনীতি ও বিধি বিধানকে বলা হয় যা হজরত আদম আলাইহিছ ছালাম হতে শুরু করে হযরত মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম পর্যন্ত সকল নবী রছূলগণের মধ্যে সমভাবে বিদ্যমান।
এ ব্যাপারে কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেছেন –
তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ব্যাপাওে সে পথই ঠিক করে দিয়েছেন যার আদেশ দিয়েছেন নুহকে। আমি যা আদেশ করেছি তোমার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মুছা ও ঈছাকে এই মর্মে যে “তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করো এবং তার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করো না।”
— ছুরা শুরাঃ আয়াত ১৩
আল্লাহ তাআ’লা আরও এরশাদ করেছেন –
হে রছূল! বলো, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা কিছু নাযিল করা হয়েছে আমার উপর, ইবরাহীম, ইছমাঈল, ইছহাক, ইয়াকুব এবং তাদের সন্তানদের উপর এবং যা কিছু দেয়া হয়েছে মুছা, ঈছা এবং অন্যান্য সকল নবী রছূলকে তাদের রবের নিকট থেকে। আমরা কারো মধ্যে পার্থক্য করিনা, আর আমরা তার অনুগত মুছলীম।
— ছুরা আল-ইমরানঃ আয়াত ৮৪
দ্বীনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন -
আমি জ্বিন এবং মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্যেই সৃষ্টি করেছি।
— ছুরা জারিয়াত, আয়াত ৫৬
ইবাদাতের অর্থ হলো- কারো প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালবাসার দরুন তার নিকট নিজের আন্তরিক কাকুতি মিনতি প্রকাশ করা। [1] তাফছীরবীদগণ “লি ইয়াবুদুন” এর অর্থ “লি ইয়া’রাফুন” অর্থাৎ “আল্লাহ তাআ’লার পরিচয় গ্রহণ” বলে উল্লেখ করেছেন। [2] কোন লোকের পরিচয় না জানলে ও তার সাথে মেলামেশা না করলে যেমন তার ভাল-মন্দ সম্পর্কে জানা যায় না। তেমনি আল্লাহর যাত (মূল স্বত্বা) ও ছেফাত (গুণ স্বত্বা) এর পরিচয় না জানলে তার প্রতি বাস্তব ঈমান আনা সম্ভব হয় না। খোদ রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এরশাদ করেছেন-
তোমরা কাউকে ভাল অথবা মন্দ বলো না যতক্ষণ না তার সাথে কারবার কর।
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, তাকে মুহাব্বত করা, ভালবাসা এবং তার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করাই দ্বীনের মূল লক্ষ্য। এ জন্যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার লক্ষ্যে তাঁর যাত ও ছেফাতের পরিচয় গ্রহণ করা মানবের জন্যে অতি জরুরী কর্তব্য।

মাকতুবাত শরীফ
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম হাদীছে কুদছীতে উল্লেখ করেছেন -
আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেন - আমি গুপ্ত ভান্ডার ছিলাম। আমি আমার নিজের পরিচয় দেয়াকে ভালবাসলাম। এরপর আমি নিজের পরিচয় দেয়ার জন্যে মাখলুকাতকে সৃষ্টি করলাম।
— মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী মুজাদ্দিদ আলফেছানী ৩য় খন্ড ৮৮ ও ১২২ মাকতুব।।



উক্ত হাদীছে কুদছীতে খোদ আল্লাহ তাআ’লা সৃষ্টির মূল লক্ষ্য আল্লাহ তাআ’লার পরিচয় গ্রহণ করা বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন -

আমি আছমান-জমিন ও পাহাড়সমুহের কাছে আমার আমানাত পেশ করেছিলাম। এরপর তারা একে গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো এবং এতে ভীত হলো। কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করলো।
— ছুরা আহযাব, আয়াত ৭২
হযরত ইবনু আব্বাছ রাদি আল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত আছে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন -

আল্লাহ তাআ’লা হযরত আদম আলাইহিছ ছালামকে লক্ষ্য করে বললেন - আমি আমার আমানাতকে আছমান ও জমীনের সামনে পেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা এ আমানাত গ্রহণ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছে। এখন তুমি কি এ আমানাত গ্রহণ করতে রাজী আছো? হযরত আদম জিজ্ঞেস করলেন - এর বিনিময়ে কি প্রতিদান পাওয়া যাবে? আল্লাহ তাআ’লা জবাবে বললেন - আল্লাহর দীদার, নৈকট্য ও সন্তষ্টি । এ কথায় হযরত আদম আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি ও দীদার লাভের আশায় এ আমানাত গ্রহণ করলেন।
— তাফছীরে খাজেন, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা-২১৩
কোরআন ও হাদীছের উক্ত বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, দ্বীনের মূল লক্ষ্য হল- আল্লাহ তাআ’লার পরিচয় গ্রহণ করে তাঁর প্রতি ঈমান আনা, আল্লাহকে মুহাব্বত করা ও তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি ও দীদার অর্থাৎ মিলন লাভ করা। আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন -
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ। এরপর তারা এ কথার উপর অটল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা আসেন এবং বলেন - তোমরা ভয় করো না, তোমরা চিন্তিত হয়ো না এবং তোমরা বেহেশতের সুসংবাদ গ্রহণ করো যা তোমাদের জন্যে ওয়াদা করা হয়েছে। (আল্লাহ তাআ’লা বলেন) আমি তোমাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের অভিভাবক। তোমাদের মন যা কিছু আকাংখা করবে এবং যা কিছু তোমরা দাবী করবে তার সবই দেয়া হবে। এটা তোমাদের ক্ষমাশীল দয়াময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন।
— ছুরা হা-মীম-ছিজদাহ, আয়াত ৩০-৩২
যারা আল্লাহ তাআ’লার পরিচয় গ্রহণ করে তাঁর সাথে মুহাব্বত করবে, তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে শরীয়াতের নিয়ম বিধান পালন করবে, আল্লাহ তাআ’লা তাদের ভিতরের খারাপ গুণ সকল দূর করে দিয়ে আল্লাহ তাআ’লার গুণাবলীর নূর প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেছেন -
আল্লাহ তাআ’লা যার ছদর অর্থাৎ ক্বলবের প্রথম স্তরকে ইছলামের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছেন সে আল্লাহ তাআ’লার নূরের মধ্যে প্রবেশ করলো।
— ছুরা জুমার, আয়াত ২২
যেমন কোন বাদশা কোন নিচু বংশের মেয়েকে বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলো। স্ত্রীর সাথে মেলামেশার সময় যদি বাদশা তাকে নিচু বংশের মেয়ে হিসেবে মনে করে, তাহলে কখনো ঐ স্ত্রীর সঙ্গে মন খুলে মিশতে পারবে না।
মন খুলে মেশার জন্যে প্রথম শর্ত হলো - “নিচু বংশের” এ কথা বাদশাকে ভুলে যেতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ বাদশা তাঁর রুচি অনুযায়ী নিচু বংশের মেয়েকে পোষাক পরিচ্ছদ পরাবেন। যাতে তাকে দেখলে নিচু বংশের মেয়ে বলে মনে না হয়।
তৃতীয়তঃ বাদশা যে সমস্ত কথাবার্তা চালচলন ও গুনাবলী পছন্দ করেন তা শিখিয়ে তাকে নিজের মনের মত করে গড়ে তুলবেন।

অন্য দিকে নিচু বংশের মেয়েরও কর্তব্য হবে, এর আগে সে যে নিচু বংশের মেয়ে ছিল একথা ভুলে যেতে হবে। বর্তমানে সে বাদশাহের স্ত্রী হওয়ার কারনে দেশের রানী ও প্রজাদের মা হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ ও রাণী একথা মনে করতে হবে।
নিচু বংশের মেয়ের দ্বিতীয় কর্তব্য হবে - নিচু শ্রেণীর পরিবারে বসবাসের ফলে তার মধ্যে যে সব দোষত্রুটি ছিল সেগুলি দূর করে ফেলবে, যেন বাদশা তাকে ঘৃণা করে দুরে সরিয়ে না দেয়।
তৃতীয়তঃ বাদশার স্ত্রী ও সঙ্গিনী হওয়ার কারণে বাদশা যে সকল কথাবার্তা, কাজ-কাম ও চাল-চলন পছন্দ করেন, সে সকল
অভ্যাস করে নিজেকে বাদশার চোখে সুন্দরী ও মোহনীয় করে তুলবে যেন বাদশা তার প্রেমে আবদ্ধ হয়ে পূর্বের সকল দোষ ত্রুটি ভুলে গিয়ে তার অকপট ও অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে তার সঙ্গে মেলা-মেশা করতে পারে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন অনন্ত অসীম। প্রথম থেকে আছেন অনন্তকাল থাকবেন। তিনি সকল প্রকার সৎ ও ভাল গুনে গুণান্নিত। কোন প্রকার অসৎ ও দোষ-ত্রুটি তার মধ্যে নেই। তিনি সকল খারাবী হতে পবিত্র। অপর দিকে ইনছান বা মানবের মধ্যে ভাল, মন্দ, সৎ- অসৎ ও খারাপ গুণ আছে। সৎগুণ সুগন্ধযুক্ত ও মিষ্ট। অসৎগুন দুগন্ধময়। যেমন রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন-

মিথ্যা কথার দুগন্ধে ফেরেশতাগণ মিথ্যাবাদী হতে এক মাইল দূরে সরে যায়।
— আত্ তারগীব ৩য় খন্ড; ৬২৫ পৃষ্ঠা; হাদীছ নং- ৩০
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন -
নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত অন্য কিছু কবুল করেন না। আল্লাহ তাআ’লা মোমেনদের জন্য ঐ সব আমলের হুকুম দিয়েছেন, যে সব আমলের হুকুম নবী রছূলগণকে দিয়েছিলেন।
— আত-তারগীব-২য় খন্ড, ৬০০ পৃষ্ঠা
আল্লাহ তাআ’লার উৎকৃষ্ট গুণাবলীর তুলনায় মানুষ তার দোষ ত্রুটি ও অসৎ গুণাবলীর জন্য নিকৃষ্ট মেয়ে হতেও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআ’লা যখন উক্ত মানুষকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন তখন তাঁর দোষ-ত্রুটি ও গোনাহ সমুহ তার আমলনামা থেকে মুছে ফেলে দেন যেন তার দোষ-ত্রুটি দেখে তার প্রতি আল্লাহ তাআ’লার ঘৃণা না আসে আর তার অসৎ গুণাবলী সকল দূর করে দিয়ে আল্লাহ তাআ’লার গুণাবলীর নূর প্রবেশ করিয়ে আল্লাহ তাআ’লার গুণে গুণান্বিত করেন।

আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন -
যে নিজে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ না হয়ে নিজেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে সমর্পন করে, আল্লাহ তাআ’লা তার সকল পাপকে (আমলনামা থেকে) মুছে দেন এবং তাকে উত্তম প্রতিদান দেন।
— ছুরা তালাক, আয়াত ৫

আল্লাহ ঈমানদারদের অভিভাবক। তিনি তাদের মধ্যের অন্ধকার (অসৎ গুণাবলী) কে দূর করে দিয়ে নিজ চরিত্রের গুণাবলীর নূর তাদের মধ্যে প্রবেশ করান।
— ছুরা বাকারাহ, আয়াত ২৫৭

ঐ আল্লাহ তোমাদের -উপর ছলাত (নামাজ) পড়েন এবং তার ফেরেশতাগণও আর তোমাদের মধ্যের জুলমাত ও গোনাহ সমুহকে দূর করে দিয়ে তার নূর প্রবেশ করান। তিনি মোমেনদের প্রতি অত্যন্ত দয়াময়।
— ছুরা আহযাব, আয়াত ৪৩
বান্দা যখন নামাজে দাড়িয়ে নিজের গোনাহ মাফের জন্যে কাকুতি মিনতি করতে থাকে, আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি রহমত বর্ষন করে তার গোনাহ ও ভুল ত্রুটি সমুহ মাফ করে দেন এবং আল্লাহর গুনাবলীর নূর নামাজীর মধ্যে প্রবেশ করান। ফলে তার মধ্য হতে অসৎ স্বভাব ও ঘৃনীত কাজ কর্ম দুর হয়ে যায়। অসৎ গুনাবলী হতে মুক্ত হয়ে বান্দা যখন আল্লাহর গুণাবলী গ্রহণ করে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হয়ে আল্লাহর বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে তখন আল্লাহ তাআ’লা তাকে সুসংবাদ দান করেন -
আমি তোমাদের দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জগতের অবিভাবক।
— ছুরা হামীম ছেজদাহ, আয়াত ৩১
আল্লাহ তাআ’লা এ দুনিয়ায় বান্দাকে দৈনিক পাঁচবার নামাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য ও দীদার দান করেন এবং আখেরাতের অনন্তকাল ধরে দীদার বা সাক্ষাৎ, প্রেম ও নৈকট্য দান করবেন। খোলা চোখে যেমন চাঁদ দেখা যায় তেমন মোমেনগণ বেহেশতের মধ্যে আল্লাহকে পূর্ণ চাঁদের মত পরিস্কার দেখতে থাকবে। দুনিয়ার জগতে মানুষ সাধারণতঃ ৬০-৭০ বছর বেঁচে থাকে। আর আখেরাতের হিসাব শেষে বেহশতীগণ বেহেশতে এবং দোযখীরা দোযখে প্রবেশ করার পর মৃত্যুকে যবাই করে দেয়া হবে। তাদের আর কোনদিন মৃত্যু হবে না। অনন্তকাল আল্লাহর নৈকট্যধারী মোমেনগণ আল্লাহ তাআ’লার দর্শন ও নৈকট্য লাভ করে চরম শান্তি লাভ করবে। সুতরাং দ্বীনের মূল লক্ষ্য হলো আখেরাতের অনন্ত কালের জন্য আল্লাহ তাআ’লার দীদার, নৈকট্য ও সন্তষ্টি লাভ করা। আর এ পাথেয় সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দুনিয়ায় জীবন যাপন কালে নফছের অসৎ স্বভাব ও দোষ-ত্রুটি দূর করে আল্লাহর পরিচয় লাভের মাধ্যমে তাঁর মুহাব্বত, ভালবাসা ও ক্সনকট্য লাভ করা, তার বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এ দুনিয়া থেকে অনন্ত কালের প্রেমময় জীবনে প্রবেশ করা।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেছেন -
হে প্রশান্ত নফছ তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে এসো, এমন ভাবে যে, তুমি তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার রবও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট সুতরাং তুমি আমার আবদ শ্রেনীভূক্ত হয়ে যাও, আর আমার দীদারের জন্যে (চিরস্থায়ী বাসস্থান) জান্নাতে প্রবেশ কর।
— ছুরা ফাজর, আয়াত ২৭-৩০
[3]
তথ্যসূত্র
Jump up ↑ তাফছীরে মাআ'রেফুল কোরআন-১ম, পৃষ্ঠা- ৭৯
Jump up ↑ তাফছীরে মাজহারী - ৯ম খন্ড, ৯১ পৃষ্ঠা
Jump up ↑ আদ্‌ দ্বীন (লেখকঃ মুহাম্মাদ মাহ্‌বুবুর রহমান)
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥



ইসলাম
 শব্দটি سلم ধাতু থেকে উৎপন্ন । سلم অর্থ শান্তি, সন্ধি স্থাপন । السلام শব্দটি باب افعال এর ক্রিয়ামূল । এর আভিধানিক অর্থ আত্মসমর্পন করা, অনুগত হওয়া ও শরীয়াতের হুকুম-আহ্‌কাম মেনে চলা ।
শারীয়াতের পরিভাষায় ইসলামের সংজ্ঞা কি ? এ প্রসঙ্গে হাদিসে জিবরীলে ইঙ্গিত করা হয়েছে । রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ইসলাম হলো, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহ্‌র রাসূল বলে সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, রামাযানের সাওম পালন করা এবং যাতায়াতের সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহ্‌ শরীফের হজ্জ আদায় করা ।
— বুখারী
এর বাহ্যিক আমলগুলো তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা ঈমানী বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত হবে । কুরআন ও হাদিসের দ্বারা এও প্রমাণিত হয় যে, ঈমান পরিপূর্ন হবে তখন, যখন তাঁর সাথে বাহ্যিক আমলও থাকবে । এই প্রেক্ষিতে ঈমান ও ইসলাম অভিন্ন ।
এ অর্থেই আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
সেথায় যেসব মু’মিন ছিল আমি তাঁদেরকে উদ্ধার করেছিলাম । এবং সেথায় একটি পরিবার ব্যতীত কোন মুসলমান আমি পাইনি ।
— ৫১:৩৫-৩৬
উক্ত আয়াতে যাদেরকে মু’মিন বলা হয়েছ, তাদেরকেও মুসলিমও বলা হয়েছে । এতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, ঈমান ও ইসলাম এক ও অভিন্ন । অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে ‘ইসলাম’ তাঁর আভিধানিক অর্থে শুধু বাহ্যিক আমল এবং ‘ঈমান’ শুধু অন্তরের বিশ্বাস এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । তখন ঈমান ও ইসলামের মধ্যে ভিন্নতা প্রকাশ পায় । এ অর্থে কারো ইসলাম (ঈমানহীন আমল) আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
আরব মরুবাসীগণ বলে, আমরা ঈমান এনেছি, বলো, তোমরা ঈমান আন নি । বরং তোমরা বলো, আমরা মুসলমান হয়েছি । কারণ ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করে নি ।
— ৪৯:১৪
ইছলাম-ই একমাত্র দ্বীন
হযরত মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামের আগে আল্লাহ তাআ’লা অন্যান্য রছূলগণের নিকট কিতাব ও ছহিফা নাযিল করেন। রছূলগণের ইন্তেকালের পর তাঁর অনুসারীগণ নিজেদের খেয়াল খুশিমত উক্ত কিতাব ও ছহিফার মধ্যে নিজেদের কথাবার্তা ও মতবাদ ঢুকিয়ে দিয়ে কিতাবকে বিকৃত করার ফলে পরবর্তী অনুসারীগণ উক্ত বিকৃত কিতাবের অনুসরণ করে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন হতে বহু দূরে সরে যায়। সব শেষে আল্লাহ রব্বুল আলামীন হযরত মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামের উপর কোরআন নাজিল করেছেন এবং এ কুরআনকে সকল প্রকার পরিবর্তন - পরিবর্ধন ও বিকৃতি থেকে হেফাজাত করেছেন। উল্লিখিত আয়াতে বনি ইছরাইলদের পরস্পর বিদ্বেষ ও মতভেদের কারনে তাদের দ্বীন বিকৃতি করার কথা বলে হযরত মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে দ্বীনের এক বিশেষ শরীয়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন যা অন্য সকল বিকৃত দ্বীন ও শরীয়াত হতে সম্পূর্ণভাবে আলাদা। আল্লাহ তাআ’লা রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম কে একমাত্র এ শরীয়াতের অনুসরণ করতে হুকুম করেছেন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামের উপর নাযিলকৃত ইছলাম-ই একমাত্র আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। এ ব্যাপারে কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেছেন -
(১৯) নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন-ই একমাত্র ইসলাম।
— ছুরা আল ইমরান
আল্লাহ তাআ’লা আরও এরশাদ করেছেন -
(৩) ..... আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম আর ইছলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
— ছুরা মায়েদাহ
উপরের দু’আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা ইছলামকে তার একমাত্র মনোনীত দ্বীন বলে উল্লেখ করেছেন।

#####৩###
হযরত জিবরীল عليه السلام-এর দ্বীন শিক্ষা দান;::::::

হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু বলেন-একদিন রছূলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় সাদা ধবধবে পোষাক ও মিশমিশে কাল চুলওয়ালা একজন লোক আমাদের নিকট আসলেন। তার মধ্যে ভ্রমণের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না অথচ আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না। তিনি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর কাছে এসে তাঁর দু’হাটুর সংগে দু’হাটু মিলিয়ে বসলেন এবং নিজের দু’হাত রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর দু’উরুর উপর রেখে বললেন - “হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইছলাম সম্পর্কে বলুন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন- সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রছূল, নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্ব করবে, যদি ছহি ছালামতে সেখানে পৌঁছিতে সক্ষম হয় - এ হলো ইছলাম। তিনি বললেন - ঠিক বলেছেন। তার কথায় আমরা এ কারনে আশ্চর্য বোধ করলাম যে, তিনি নিজে প্রশ্ন করছেন, আবার নিজেই তার উত্তরের সত্যতা সমর্থন করছেন। এরপর তিনি বললেন - ঈমান কাকে বলে, এ সম্পর্কে আমাকে বলুন! রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন - তুমি ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতা, কেতাব সমূহ, নবী-রছূলগণ, কেয়ামতের হিসাব-নিকাশের উপর এবং ঈমান আনবে তকদীরের ভাল মন্দের উপর। তিনি বললেন - আপনি সত্য বলেছেন। এরপর তিনি বললেন - আমাকে ইহছান সম্পর্কে বলুন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন - তুমি আল্লাহর ইবাদাত এমন ভাবে করবে, যেন তুমি তাকে দেখছো। যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও তাহলে মনে রেখো নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে দেখছেন। এরপর লোকটি চলে গেল। বেশ কিছু পর রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম আমাকে বললেন - ওমর! তুমি লোকটিকে চিনতে পারলে? আমি বললাম - আল্লাহ এবং তার রছূল ভালই জানেন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বললেন - তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্যে তিনি তোমাদের কাছে এসে ছিলেন।
— মুছলিম, হাদীছ নং-১
বোখারী শরীফে হযরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু হতে হাদীছে জিবরীল বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীছে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু বলেছেন-
ইনি জিবরীল, লোকদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্যে তিনি এসেছিলেন।
— বুখারী, হাদীছ নং-৪৮। মেশকাত, হাদীছ নং-২

হাদীছে ১। ইছলাম ২। ঈমান ৩। ইহছান এই তিনটি বিষয়কে দ্বীন বলা হয়েছে। সুতরাং এ তিনটির সমষ্টিই হলো দ্বীন। এগুলি একে অপরের সংগে ওতপ্রোতভাবে মিলিত। যেমন ভাত রান্না করতে হাড়ি-পাতিল, চাল, পানি, আগুণ ও জ্বালানী অর্থাৎ কাঠ বা গ্যাস এ পাচটি জিনিষের যে কোন একটির অভাব হলে কোন অবস্থাতেই ভাত রান্না করা সম্ভব হয় না। তেমন ঈমান, ইসলাম ও ইহছান এ তিনটির যে কোন একটির অভাবে দ্বীন কায়েম করা সম্ভব হয় না।
আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন -
(২০৮) হে মুমিনগণ! তোমরা ইছলামে পুরাপুরিভাবে প্রবেশ করো। আর তোমরা শয়তানের পথে চলো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।
— ছুরা বাকারাহ
এ আয়াতে আল্লাহ ঈমানদারদের ইছলামের আমলগুলি পুরাপুরিভাবে পালন করার জন্যে আদেশ করেছেন।
(৯৩) যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তারা এর পূর্বে (অর্থাৎ মদ হারাম হওয়ার পূর্বে যে মদ খেয়েছে সে জন্যে তাদের কোন গোনাহ হবে না, যদি তারা (অন্যান্য হারাম হতে) সংযত থাকে, ঈমান আনে এবং নেক আমল করে। এরপরও তারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ঈমান আনে এরপরও তারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও ইহছান করে। নিশ্চয় আল্লাহ ইহছান কারীদের ভালবাসেন।
— ছুরা মায়েদাহ
এ আয়াতে আল্লাহ্‌ তাআ’লা ঈমান ও ইহছান অবলম্বনকারীগণের পূর্বের সকল গোনাহ মাফ করার জন্যে ঈমান ও ইহছান অবলম্বন করাকে দ্বীনের অঙ্গ করেছেন।


\m/ Like & Share :-bd Bellow Text for This Post নিচের বক্সের লেখাটি শেয়ার করেন এটা এই পোস্টের লিঙ্ক
ইসলাম দ্বীন ইসলাম হযরত জিবরীল عليه السلام-এর দ্বীন শিক্ষা দান http://yanabi.in/u/19
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|