★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
ইসলামে পর্দার গুরুত্ব কি?? - Mas'la Masayel Discussions on

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব কি??

edited September 2016 in Mas'la Masayel
بسم الله الرحمن الرحيم 
.
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল পর্দা বা হিজাব করা।এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।পর্দা নারী-পুরুষ উভয়ের মর্যাদার প্রতীক।অনেকে মনে করেন,পর্দা-বিধান শুধু নারীর জন্য,এ ধারণা ঠিক নয়।পুরুষের জন্যও পর্দা অপরিহার্য। তবে উভয়ের পর্দার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।পর্দা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।পর্দাহীনতা মানেই যেকোনো একটি ফিতনার কারণ।পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, দাম্পত্য-কলহ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিবাহ-বিচ্ছেদ, নারী-নির্যাতন ইত্যাদি সবকিছুর পেছনেই একটি প্রধান কারণ হলো পর্দাহীনতা এবং নর-নারীর অবাধ মেলা-মেশা।ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা বা ক্ষেত্র-বিশেষে নারী-পুরুষের পৃথকীকরণ নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে তাঁকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ-ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন- ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব:৫৩)
সাধারণত মানুষ পর্দা নিয়ে আলোচনা করে নারীদের ক্ষেত্রে। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন নারীর পর্দার আগে পুরুষের পর্দার কথা বলেছেন।সূরা নূরে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন - 
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ 
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।(সূরা নূর :৩০)
যে মুহুর্তে কোনো পুরুষ একজন নারীর দিকে তাকাবে- লজ্জাকর অশ্লীল চিন্তা তার মনে এসে যেতে পারে। কাজেই তার দৃষ্টি অবনত রাখাই তার জন্য কল্যাণকর।
❋ আসুন দেখি পর্দার উদ্দেশ্য কি ?
পর্দার উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়ের উন্মুক্ত সৌন্দর্যে আসক্ত হয়ে কোন পুরুষ বা নারী যেন তাঁর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে।আর এভাবে যেন সমাজ কলুষিত না হয় ।পর্দার ক্ষেত্রে পোশাক-পরিচ্ছদ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পোশাক যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ও সৌন্দর্যের উপকরণ, তেমনি শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে তা ব্যবহার করে আল্লাহ এবং রাসূলের নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।যেমন═❋ আমার আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন-
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْءَاتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَىَ ذَلِكَ خَيْرٌ
হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।(সূরা আ’রাফ :২৬)
ইসলামে নারীদের পর্দা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।সূরা নূরে নারীদের পর্দার জন্য আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন -
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ 
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ,ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(সূরা নূর :৩১)
═❋ পর্দাহীন নারীর বিষয়ে আমার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘তারা জাহান্নামি।’ হাদিসে আছে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ‘এক শ্রেণির নারী আছে, যারা কাপড় পরিহিতা, অথচ নগ্ন,তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করে থাকে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় । তাদের মাথা হবে উটের চুটের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।এমনকি জান্নাতের সুবাসও তারা পাবে না।(মুসলিম)
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রাদিআল্লাহু আনহা ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন।এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা।তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম,তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না? (আবু দাউদ /জামে তিরমিযী ৫/১০২,হাদীস:২৭৭৯)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন,আমরা যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত।তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম।তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।(মুসনদে আহমাদ৬/৩০ইবনে মাজাহ ২৯৩৫)
হযরত আবু মুসা আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মহিলা সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয় এবং লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার খুশবু গ্রহণ করে, তবে সে ব্যভিচারিণী।(মুসনাদে আহমদ ১৯৩৬/ জামে তিরমিযী ২৭৮৭/ সুনানে আবু দাউদ)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেল যে,কুরআনে পাকে ও হাদীস শরীফে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে।এই বিধান মেনে চলা সকল ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য অপরিহার্য।প্রকৃতপক্ষে পর্দা সম্পর্কীয় বিধানের সমষ্টি হলো তাকওয়ার পোশাকের অন্তর্ভুক্ত।নারী দেহের সৌন্দর্য প্রকাশ না করা,শালীনতা বজায় রাখা, অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে থাকা, দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং মনের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনই পোশাকের উদ্দেশ্য।নারীকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে এই জন্য যে, তারা যেন রুচিশীলা পরিচ্ছন্ন নারী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।এবং এটা তাদেরকে লজ্জাকর উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করবে।‘হিজাব’ নারীকে অপদস্ত করেনি বরং উপরে তুলে সম্মানের আসন দিয়েছে।আর সংরক্ষণ করেছে তার শালীনতা ও পবিত্রতা।পর্দা মুসলিম নারীকে প্রশান্তি দান করেছে।আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবো যে, পর্দা বা হিজাব পালনকারী একজন নারী অধিকতর নিরুদ্বেগ ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন যাপন করে থাকেন।মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা সবাইকে পর্দার প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করে তা পালন করার শক্তি দান করুন, আমীন।
(ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুক)
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|