★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
হযরত সিদ্দিকে আকবর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর সম্পূর্ণ জীবনি - Tasawuf Discussions on

হযরত সিদ্দিকে আকবর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর সম্পূর্ণ জীবনি

edited April 2016 in Tasawuf

ইসলামের ক্রাণকর্তা ইশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সিদ্দিকে আকবর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর সম্পূর্ণ জীবনি
__________________________
‪#‎বংশ_ও_জন্ম_পরিচয়ঃ‬
পার্থিবজগতে মানুষের নিকট তিনটি বিষয় সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয়। যথাঃ
১.জান ২.মাল ৩.সন্তান

প্রিয় রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমাদের কেহ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার নিকট আমি রাসূল তার সন্তান, পিতা ও সকল মানুষ হতে অধিকতর প্রিয় হব (মিশকাত শরীফ)। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু উল্লেখিত তিনটি প্রিয় বস্তুই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কদমে উত্‍সর্গ করলেন তারাই সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়। ইতিহাস এ কথা সাক্ষ্য দেয় যে, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহবানে তিনিই একমাত্র সাথী যিনি সর্বস্ব ও সর্বাত্মক কোরবাণীকে পুঁজি করে মুসলিম বিশ্বের বিরল নজির স্হাপন করেন। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অবদানের কথা এভাবে স্বীকার করেন- আবূ বকর'র সম্পদ দ্বারা আমার যেরূপ উপকার হয়েছে সেরূপ অন্য কারো সম্পদ দ্বারা হয়নি। (খুতবাতে মুহাররম)। নিম্মে এ মহান মনীষীর পরিচয়, মর্যাদ ও অবদান সম্পর্কে ক্ষুদ্র পরিসরে উপস্হাপন করার প্রয়াস পাচ্ছি।

‪#‎নামঃ‬ আবদুল্লাহ, উপনাম আবু বকর। উপাধি আতিক, সিদ্দিক ও খলীফায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পিতার নামঃ ওসমান, পিতার উপনামঃ আবূ কুহাফা। মাতার নামঃ সালমা। পারিবারিক নামঃ উম্মূল খায়ের।

‪#‎বংশঃ‬ হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহী কুরাইশ বংশের তাইম গোত্রের অন্তভূর্ক্ত। পিতার দিক হতে তার বংশ লতিক-আবদুল্লাহ ইবনে ওসমান ইবনে আমের ইবনে আমর ইবনে কাব ইবনে মালিক ইবনে নচর ইবনে কিনানাহ। আর মাতার দিক বংশ লতিকা- সালমা বিনতে সখর ইবনে আমর বিন কাব।

‪#‎জন্মঃ‬ ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা কর্তৃক হস্তী দ্বার কাবা ঘর আক্রমণের আড়াই বছর পর অর্থাত্‍ হিজরতের পঞ্চাশ বছর ছয় মাস পূর্বে ৫৭৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তিন বছরের ছোট ছিলেন। (তারইখুল খুলাফা)।

‪#‎ইসলাম_গ্রহণঃ‬ সবেমাত্র মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রেসালতের দাওয়াত আরম্ভ করেন। ওই সময় হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু বাণিজ্য উপলক্ষে ইয়েমেনে ছিলেন। তিনি প্রত্যাফর্তন করলে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ তার সাথে দেখা করতে যান। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, কোন নতুন খবর আছে কি? তারা বলেন, হ্যা। এক নতুন খবর আছে। আর তা হলো আবু তালিবের এতিম ভাতিজা নুবুওয়াতের দাবি করেছেন। সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহুর অন্তর এ কথা শুনে দুলে ওঠল। তার নিকট হতে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ চলে যাওয়ার পর সোজা রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর খেদমতে গিয়ে হাজির হন এবং মহানবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে তার নুবুওয়তের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। তিনি রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)র কথায় পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে বিনা সংশয়ে ঐ বৈঠকেই নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। প্রিয় নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন- যখন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নিকট আমাকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন তখন তোমরা সবাই (সর্ব প্রথমে) বলছো কাযাবতা (আপনি মিথ্যা নবুওয়াত দাবী করেছেন) তবে শুধু আবূ বকর আমাকে বলেছেন- ছাদাকতা (আপনি বাস্তবিকই সত্য বলেছেন) এবং তার আত্ম ও সম্পদ দ্বারা সংকট মুহূর্তে আমাকে সাহায্য করেছেন। আজ তোমরা কি আমার এ পরম বন্ধুকে ছেড়ে দেবে? (তারইখূল খূলাপা, পৃঃ ৩৭)

হযরত মায়মুন বিন মেহরান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, শফথ আল্লাহ তায়ালার! নিশ্চই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু পুরোহিত বুহাইরার সময়ে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)র উপর ঈমান এনেছিলেন। (তারইখূল খুলাফ, পৃঃ ২৩)

‪#‎সর্বপ্রথম_ইসলামে_দীক্ষিতঃ‬
ইমাম শাবী রাহঃ বলেন, আমি হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, সর্বপ্রথম ইসলামে দীক্ষিত ব্যক্তি কে? তিনি আমাকে উত্তর দিলেন- হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। ইবনে আসাকের হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে সর্বপ্রথম মুসলিম কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন- পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলিম হলেন হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তবে কারো মতে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আবার কোন কোন বর্ণনায় হযরত উম্মূল মুমিনীন হযরত খদিজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার নামও রয়েছে। এ সকল বর্ণনার মধ্যে ইমামকুল শিরোমণি হযরত আবু হানিফা রাহঃ একটি সমন্বয় সাধন করেছেন। পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলিম হলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়াল আনহু, মহিলাদের মধ্যে হযরত খদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু তায়াল আনহা, আর বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আলি বিন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা।

‪#‎নবী‬ রাসূলদের সাথে সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুঃ

প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত জোবাইর বিন মাতাআম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র রেসালত প্রচার-প্রসার করতে গিয়ে মক্কাবাসী কর্তৃক হুযুর সাল্লল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম'র উপর নির্যাতন ও অত্যাচার আমার খুব অপছন্দ হল। তাই মক্কাভুমি ত্যাগ করে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে কোন এক গির্জায় পৌছলে তথাকার ধর্মযাজক আমাকে তিন দিন যাবত অবস্হান করার জন্য অনুরুধ করলেন। আমি তথায় তিন দিন অবস্হান করলাম। তিন দিন মাথায় তাদের পুরোহিত নেতা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আহলে হেরেম তথা মক্কার অধিবাসি? আমি হ্যা সূচক উত্তর দিলে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি নবুয়তের দাবিদার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনেন? আমি বললাম হ্যা অবশ্যই। এ বলে তিনি আমার হাত ধরে গির্জার অভ্যান্তরে নিয়ে যান। তাতে রয়েছে সহস্রাধিক ছবি। এ ছবিসমূহের মধ্যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বের করতে বলেন, কিন্তু আমি খুঁজে পেলাম না। তারপর যান আরেকটি বৃহাদাকার গির্জায়। এতে নবি রাসূলদের অনেক ছবি। গভীর ওতীক্ষ্ন দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেলাম প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পবিত্র ছবি এবং তারই পার্শ্বে রয়েছে ইসালামের প্রথম খলিফা হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ছবি, এমতাবস্হায় যে, তিনি প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গলা জড়ানো ছিলেন। পুরোহিত নেতা আমাকে বললেন- আপনি কি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ছবি দেখতে পাচ্ছেন? আমি উত্তরে বললাম , হ্যাঁ অতঃপর তিনি বললেন আমি শফত করে বলছি যে, তিনিই তোমাদের এই রাসূলের পরেই মুসলিম বিশ্বের খলিফা হবেন। তখন প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পার্শে হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ছবি খুবই চমত্‍কার দেখাচ্ছিল। পরিশেষে পুরোহিত নেতা বলেন, শিগগিরই মক্কাবাসির উপর তোমাদের রাসূল বিজয়ী হবেন। (শাওয়াহিদুন নুবুওয়াত)

‪#‎সিদ্দিকে‬ আকবর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)র শ্রেষ্ঠত্বঃ

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র অসংখ্য হাদীস দ্বারা হযরত সিদ্দিকে আকবর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)র শেষ্ঠত্ব স্বীকৃতি পায়। আহলে সুন্নাতের ওয়াল জামায়াতে এ কথার উপর ঐকমত্য যে, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র সাহাবীদের মধ্যে তার স্হান ও মর্যাদা সবার শীর্ষে। তার পরে রয়েছে হযরত ফারুকে আজম (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)র স্হান, অতঃপর তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে যথাক্রমে উসমান বিন আফফান (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ও মাওলা আলি শেরে খোদা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)। তার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি প্রদান করেন আমীরুল মু'মীনিন হযর ওমর ইবনে খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) নিজেই। তিনি বলেন হযরত আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) আমাদের সর্দার আমাদের সেরা এবং প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র সকাশে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়। (মিশকাত শরীফ)।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন কোন গোত্রের মধ্যে যদি আবু বকর বিদ্যমান থাকে তখন কারো পক্ষে সমীচীন নয় যে, তিনি ছাড়া অন্য কেহ ইমামতি করা। (তিরমিযী) ।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন- হে খলিফায়ে রাসূল যখন প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে দ্বীনের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য করেছেন, তাই কারো সাহস নেই যে, আমাদের পার্থিব জগতে আপনাকে পশ্চাতে নিয়ে যাওয়া। (আশিতুল লোমআত)

‪#‎খলিফা_মনোনীতঃ‬
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হলেন এমন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব যাকে মহান আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পক্ষ হতে সর্বপ্রথম খলিফাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জীবন থেকে পর্দা গ্রহণের পর আনসার ও মুহাজিরগণের সর্বসম্মতিক্রমে আল্লাহর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র স্হলাভিষিক্ত হন সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সততা, নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতাসহ সার্বিক যোগ্যতা বিবেচনা করে সাহাবীগণ তাকে খলিফ ও আমিরুল মুসলেমীন নির্বাচন করেন নির্দ্বিধায়। তাছাড়া তিনি খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পেছনে রাসাল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র ওহীই শক্তিশালী প্রমাণ। অর্থাত প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামী সাম্রাজ্য পরিচালনা করার জন্যে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে খলিফা নিযুক্ত করে গেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে (তিনি বলেন) আমি নিদ্রামগ্ন ছিলাম। (স্বপ্নে) আমি নিজেকে একটি কূপের কাছে দেখতে পেলাম। তথায় একটি বালতিও ছিল। আমি এ বালতির দ্বারা আল্লাহর যতটা ইচ্ছা পানি টেনে তুললাম। তারপর ইবনে আবূ কূহাফা (আবূ বকর) ঐ বালতিটি হাতে নিলেন এবং এক বা দুবালতি পানি টেনে তুললেন। তার ঐ বালতি টানার মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আর আল্লাহ ঐ দুর্বলতা ক্ষমা করবেন। তারপর ঐ বালতিটা বৃহদাকার ধারণ করল এবং ইবনে খাত্তাব (ওমর ফারুকে আজম) তা হাতে নিলেন। আমি কোন সবল শক্তিশালী বাহাদূরকেও ওমরের মতো ঐভাবে পানি টেনে তুলতে দেখি নাই। সে এত পানি তুলল যে, লোকগণ তাদের উষ্ট্রগুলোকে তৃপ্তি সহকারে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল। (বূখারী শরীফ) (অথবা পানির প্রাচুর্যের কারণে লোকগণ ঐ স্হানকে উটশালা বানিয়ে নিল) হাদিস বিশারদবিদদের মতে, হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বালতির দুর্বলতা দ্বারা তার খিলাফতের স্বল্প মেয়াদ এবং ফারুকে আজম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বালতির বৃহদাকার আকৃতির দ্বারা তার খিলাফতের দীর্ঘ মেয়াদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

‪#‎ইসলাম‬ প্রচারে সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু

ইসলাম প্রচার-প্রসারে হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর অবদান বর্ণনাতীত। ইসলামের দূরবস্হায় মক্কার কাফিরদের অত্যাচার ও বিদ্রোহীদের দাবানল ইত্যাদি সংকটাবস্হায় হযরত প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে দাঁড়িয়ে যে অবদান রেখেছেন তার নজির ইসলামের ইতিহাসে আর খুজে পাওয়া যায়না। ইসলামি চিন্তাবীদগণ তার এ অবদানকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন।

(ক) আত্মোত্‍সর্গঃ

হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সর্বদা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত ও সেবায় উদ্যেগী ছিলেন। তিনি মনে করেন আল্লাহর প্রিয় রাসূল সৃষ্টির সেরা ও কুল কায়েনাতের মূল। তার খেদমতে যে জীবন উত্‍সর্গিত হবে সে জীবনই সার্থক ও সাফল্যময়। মক্কা ভূমিতে ইসলাম প্রচারে প্রতিকূল অবস্হা দেখা দিলে আল্লাহরই নির্দেশে মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করতে প্রস্তুতি নিলেন। একমাত্র সফরসঙ্গী হিসেবে নির্দেশ প্রাপ্ত হলেন অকুতোভয় সাথী ও নিষ্ঠাবান প্রেমিক সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাথে রাখার। শত্রুদল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর হিজরতের কথা অবগত হলে তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে গুহার পার্শে গিয়ে পৌছল। কাফের দল প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে ফেলবে, আঘাত করতে উদ্যত হবে এ ভয়ে শংকিত হলেন সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আশ্বস্ত বাণী নিয়ে হাজীর ঐশী বাহক হযরত জিব্রাঈল আমীন আলাইহিস সালাম। বিষন্ন হয়োনা, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি সান্ত্বনা নাযিল করলেন এবং তার সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখনি। এ বিষন্নতা সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নিজের জন্যে ছিলো না বরং ইমামুল আম্বিয়ার পবিত্র দেহে শত্রুদল কোন আঘাত হানতে পারে এটাই তার বিষন্নতা ও শংকার মূল কারণ।

শত্রুদল শতভাগ পরাভূত হয়ে ফিরে আসলে দ্বিতীয় পরীক্ষা অবতীর্ণ হল এ রাসূল প্রেমিকের উপর। সুদীর্ঘ ছয় শত বত্‍সর যাবত্‍ রাহমাতুল্লিল আলামিন এর সংস্পর্শ লাভের প্রতীক্ষায় ছিল ঐ পাহাড়ের একটি সাপ। মানবতার মুক্তির দূত সৃষ্টির রাহমাতের আধার ও গুহার অভ্যন্তরে বিশ্রাম নিচ্ছেন, একথা জ্ঞাত হয়ে প্রেমের টানে গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশের আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পোকা, মাকড় ও কীট পতঙ্গের আঘাত হতে রক্ষার মানসে সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পূর্ব হতেই ছোট খাট ছিদ্র বন্ধ করে দিলেন তবে একটি ছিদ্র অবশিষ্ট ছিল। সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর পা দিয়ে ঢ়েকে দেন এ ছিদ্রটি। প্রতীক্ষারত সাফটি ঐ পাহাড়ের চতুর্দিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হন্য হয়ে খুজছে, পরিষেষে ইমামুল আম্বিয়ার সুঘ্রাণ পেল গুহার আশপাশে। গুহার অন্তর্ভাগ ও বর্হিভাগে মুস্তাফা সুবাসে মূখরিত হয়ে উঠল। অভ্যন্তরে প্রবেশের একমাত্র বাঁধা হয়ে দাঁড়াল তাঁরই অকুতোভয় প্রেমিক সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সে মনে মনে ভাবল, নবীজি সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামর সংস্পর্শ লাভ করা সিদ্দিকে আকবরের পদতলে নিহিত। তাই সজোরে দংশন করছিল সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর পবিত্র চরণে। মুহুর্তেই বিষ ছড়িয়ে পড়ল তার গোটা শরীফে । তখন তাকে বিবেক ও ইশক দুদিকে নাড়া দিল। বিবেক বলে, হে সিদ্দিক তোমার পায়ের নিচে রয়েছে বিষাক্ত সাপ। অন্যদিকে ইশক তাডা দেয় যে, তোমার ঝুলিতে রয়েছে ইয়ারে রাব্বুল আলামীন। বিবেক বলে, তোমার পায়ে রয়েছে ব্যাথা-বেদনা , আর ইশক বলে, তোমারই দামনে রয়েছে মহান রহমত। বিবেক বলে, পায়ের তালুতো অপেক্ষা করছে মৃত্যু আর ইশক নাড়া দেয়, তোমার ললাটে রয়েছে প্রকৃত জীবন, বিবেক আহবান করে যে, তোমার পা সরিয়ে পৃথিবীর জীবনকে বুকে ধারণ করার আর ইশক তাড়া দেয় যে দংশনের পর দংশন খেয়ে রাসূলের নিমিত্তে অমূল্য জান বিলীন করে অনায়াসে জান্নাতে প্রবেশ করার। পরিশেষে রাহমাতাল্লিল আলামীনের বিশ্রাম ভাঙ্গলে তাঁর অশ্রুজল পতিত হল নূর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মোবারকে। নূর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্রন্দনের কথা জিজ্ঞেস করলে, তিনি উত্তরে বলেন, সাপের কামড়ে দংশিত হয়েছি তখনই নূর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায় ক্ষত স্হানে থুথু মোবারক মালিশ করে দেন। মুহূর্তের ভীষণ ব্যথা লাগব হয়ে যায়।

হযরত আলি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একটা কাফের দল প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চতুর্দিকে পরিবেষ্টন করে রাখল। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আক্রমণ করতে উদ্যত হল। আমাদের কারো সাহস ছিলনা যে এ মুহুর্তে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয় তাদের প্রতিরোধ করা। কিন্তু হযরত আবূ বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রাসূলের প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বুক ভরা সাহস নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন। এবং তিনি একাই কাফের দলকে প্রতিরোধ করলেন। তার এমন সাহস সত্যিই আমাদেরকে বিস্মিত করে তুলল।

(খ) সন্তান উত্‍সর্গ

নবীজি সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে ইসলামের সেবা ও দ্বীনের বিকাশে তিনি নিজের সন্তান-সন্ততি উত্‍সর্গ করতে প্রস্তুত। বদর যুদ্ধে তার প্রিয় সন্তান হযরত আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণের পূর্বে বদর যুদ্ধে কাফের দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর পিতা সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে, বদর যুদ্ধে কয়েকবার আমি আপনার সামনে মূখোমূখি হয়েছিলাম। কিন্তু পিতৃত্বের
খাতিরে আমি আমার তলোয়ার থেকে রক্ষা করেছি। তখন সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হে আমার বত্‍স! তুমি যুদ্ধ ক্ষেত্রে আমার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিপক্ষ। যদি তুমি তখন আমার মূখোমূখি হতে তাহলে আমি তোমাকে ছাড়তামনা।

(গ) সম্পদ উংসর্গঃ

প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহবানে ইসলামের জন্য সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পদ উত্‍সর্গ করে অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে সম্পদ ব্যয়ের আহবানের দিকে অপেক্ষমান থাকতেন। দান-দক্ষিণা ও সম্পদ ব্যয়ের মধ্যে তার দ্বিতীয় কোন সাহাবীদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়না। সাহাবীদের মধ্যে ইসলামের জন্য সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। তিরিমিযী ও আবূ দাউদ শরীফে হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ দান করতে নির্দেশ দিলেন। তখন আমি আমার সম্পদের অর্ধেক রেখে বাকী অর্ধেক দরবারে রেসালতে নিয়ে গেলাম। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আমার সন্তান-সন্ততির জন্য কি রাখলাম জিজ্ঞেস করলে, আমি বললাম, আমি আমার পরিবারের জন্য সম্পদের অর্ধেক রেখে আসলাম। আর সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার সম্পদ নিয়ে পূর্বেই উপস্হিত ছিলেন। নবীজি তাকে পরিবারের জন্য সম্পদের কতটুকু রেখে আসলেন জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন- আমি আমার পরিবার পরিজনের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেখে আসলাম। সুবাহানাল্লাহ! অর্থাত্‍ তিনি স্পষ্টই বলে দিয়েছেন আমার পরিবারের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলই যথেষ্ট। তার এ কোরবানী দেখে হযরত ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলে উঠলেন আমি কখনও তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবনা।

জনৈক কবি সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ইশকে রাসূল চিত্র এভাবে অংকিত করেছেন।

পরওয়ানে কু ছোরাগে হ্যায়, বুলবুল কু ফুল বছ+
সিদ্দিক কে লিয়ে হ্যায় খোদা কা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বছ।

অর্থাতঃ কীট-পতঙ্গের জন্য মোম ও বুলবুল পাখির ফুলই যথেষ্ট আর সিদ্দিকে আকবরের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলই যথেষ্ট।

হযরত ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম কবূল করার সময় তার কাছে সঞ্চিত ছিল চল্লিশ হাজার দেরহাম। মদিনা তাইয়্যেবায় হিজরতের পর তার কাছে অবশিষ্ট ছিল পাঁচ হাজার। অবশিষ্ট সম্পদও আল্লাহর রাস্তায় তিনি ব্য করেন। মক্কা মুকাররামায় পয়ত্রিশ হাজার দিরহাম মুসলিম গোলামদের মুক্তির জন্য ব্যয় করেন। সদরুল আফাযেল আল্লামা নঈমুদ্দিন মুরাবাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামের সেবায় চল্লিশ হাজার দিনার ব্যয় করেন। দশ হাজার দিনে দশ হাজার রাতে। দশ হাজার গোপনে এবং দশ হাজার প্রকাশ্যে খরচ করেন। এ প্রসঙ্গেই নিম্মোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়, যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে রাত্রে ও দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্য তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোন আশংকা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।

‪#‎পবিত্র_কুরআন_সংকলনঃ‬

হযরত যায়েদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাঁএ ইয়ামামার যুদ্ধে প্রেরণ করেন, তখন তাকর পাশে ছিলেন ফারুক এ আজম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এ দিন উমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে আমাকে বলেন, যুদ্ধ ভয়াবহতার রূপ নিল। আমি শংকা করছি যে, ইয়ামামার যুদ্ধে অধিক সংখ্যক কুরআনে হাফিযের শাহাদাতের কারণে পবিত্র কুরআন মুছে যাবে। তাই পবিত্র কুরআনের সংকলনের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। তখন হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত ফারুকে আজম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেন প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করেননি আমি কি তা করতে পারি? হযরত ফারুক এ আজম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহর শফথ! এতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। পরিশেষে আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তরে সত্য উম্মেষ করে দিয়েছেন এবং আমার চিন্তাধারা ফারুকে এ আজমের চিন্তাধারার সাথে সামঞ্জস্য হয়েছে। অতঃপর তিনি হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে বলেন, হে যায়েদ! তুমিই যোগ্য ও দক্ষ যুবক, তুমি প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর ওহী লেখক। তাই পবিত্র কুরআনের সংকলনের দায়িত্ব তোমাকেই দিলাম। অতঃপর আমি এ দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট ত্যাগ ও সাধনা ব্যয় করি। তার এ প্রচেষ্টার অনুভূতি এভাবে ব্যক্ত করেন যদি তিনি সিদ্দিক এ আকবর পাহাড় স্হানান্তর করতে বলতেন তা অধিক সহজ হত কুরআন সংকলনের চেয়ে। প্রস্তর খণ্ড়, গাছের ছাল, চামড়া ও হাফেযদের অন্তর থেকে পূর্ণ কুরআন সংকলন করি। পরিশেষে সূরা তাওবার দুটি আয়াত হযরত খুয়ায়মা বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে থেকে সংগ্রহ করলাম। (অর্থাত্‍ লাকাদ জাআকুম রাসুলুম মিন আনফুছিকুম....শেষ পযর্ন্ত)।

অতএব আমার সংকলিত কুরআনের কপিসমূহ সিদ্দিক এ আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নিকট পর্যায়ক্রমে হলত ফারুক এ আজম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হাফসা বিন ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমার কাছে সংরক্ষিত ছিল। তিনি (হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ইসলামের ইতিহাসে প্রথম কুরআন সংকলক।

#যাকাত বিরোধী ও ভণ্ড নবীদের মূলোচ্ছেদঃ

খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বহুবিধ সমস্যার সম্মূখীন হন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভণ্ড নবীর আবির্ভাব, স্বধর্ম ত্যাগীদের বিদ্রোহ ও যাকাত অস্বীকারকারীদের গোলযোগ। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন- আমার পিতার উপর রাসূলুল্ল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর এমন সব আকস্মিক বিপদ আপতিত হয় যে, তা যদি কোন বিরাটাকার পাহাড়ের উপর নাযিল হতো তাহলে সে পাহাড়াও টুকরো টুকরো হয়ে যেত। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে সেই সমস্যার সাফল্যজনক মোকাবিলা করেছিলেন।

প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের শেষ ভাগে ইয়েমেনে "আসওয়াদ আনাসী" ইয়ামামায় "মুসায়লামা কাযযাব" নবুয়াতের দাবি করেছিল। তার ওফাত শরীফের পর নজদে "তুলাইহা আসাদী" এবং ইরাকে " সাজাহ নাম্নী" মহিলা নুবুওয়াতের দাবি করে। বিরাট দল সমস্ত ভণ্ড নবীর পেছনে জোট বেঁধেছিল। তাদের দমন করার জন্য সিদ্দিক ই আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজে খোদা প্রদত্ত সংকল্প ও দৃঢ় মনোবল সহকারে মুহাজির ও আনসারদের সমন্বয়ে গঠিত এক বিরাট ইসলামী বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন। সর্বপ্রথম হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ তুলাইহার দলবলের উপর আক্রমন করে তার অনুচরগণকে হত্যা করে দল নেতা আইনিয়া ইবনে হাসানকে গ্রেফতার করে মদিনায় পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু তুলাইহা সিরিয়ায় পলায়ন করতে সক্ষম হয়। পরবর্তী আইনিয়া ও তুলাইহা উভয়ই তাওবা করে মুসলমান হয়ে যান। হযরত ইকরামা ইবনে আবি জাহল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মুসায়লামার নির্মূলের জন্য পাঠানো হল। সেখানে খালিদ ইবনে ইয়ালিদও তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে উপস্হিথ হলেন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হলো, কুরআনে হাফেজের একটি বড় দল সহ অনেক মুসলমান এ যুদ্ধ শহিদ হলেন। পরিশেষে মুসলমানদের জয় হলো, মুসাইলামা কাযযাবকে হত্যা করা হলো। মুসায়লামাকে সাজাহ বিবাহ করেছিল। স্বামীর মূত্যুর পর সে বসরায় পলায়ন করল এবং কয়েকদিন পর মারা গেল। কায়েস ইবনে মাসুক এবং পিরোজ দেলোমী নেশাগ্রস্ত আস ওয়াদুল আনাসিকে হত্যা করলেন। তার খেলাফত কালে জুবাইয়ান আবস গোত্র যাকাত দিদে অস্বীকৃতি জানিয়ে মদিনায় দূত পাঠায়, যাকাত হতে তাদেরকে যেন অব্যাহতি দেয়া হয়। হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘোষনা করেন-একটি ছাগীর বাচ্ছা, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় যাকাত হিসেবে পাঠানো হতো কেও যদি তা দিতে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধেও আমি যুদ্ধ করব।

#ইবাদতে_শীর্ষস্হানঃ
হযরত আবূ বকর সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেমনি অনুপম চরিত্র ও আদর্শের অধিকারী। তেমনি ইবাদত, যিকর ও আধ্যাত্মিকতায় অর্জন করেছেন শীর্ষ স্হান। সাহাবীদের মধ্যে তার ইবাদত ও যিকর আযকারের তুলনা হতে পারেনা না। এ প্রসঙ্গে সৈয়্যদুনা হযরত আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি। হযযত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ রোযা রেখেছ? হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ জানাজায় শরিক হয়েছ? সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উত্তরে বলেন, আমি। এবার প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ মিসকিনদের খাবার দিয়েছ? এবারও তিনি বলেন আমি। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে রোগীর সেবা করেছ? এবারও সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তির মধ্যে এ সকল গুণাগুণ একত্রিত হবে, অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসলিম শরীফ, কৃতঃ ইমাম মুসলিম (রহঃ), পৃষ্টা নং ২৭৪]

#জান্নাতের_দরজা_সমূহ_উন্মুক্তঃ
আল্লাহ তাআলা প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাথী, ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মর্যাদা ও সম্মানের পবিত্র প্রমাণ মেলবে পরজগতে। নিজের জান, মাল ও সন্তান প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চরণে উত্‍সর্গের প্রতিফলের জন্য মহান রাব্বুল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত ও চিরশান্তির ও আরামের বাবাস বেহেশতে তাকেই পাওয়ার জন্য হাতছানি দিয়ে আহবান করবে। ইমামুল মুহাদ্দিসীন হযরত মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন- আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন বস্তুর এক জোড়া অর্থাত্‍ একই ধরনের দুটি জিনিস আল্লাহর পথে দান করে, তাকে বেহেশতের দরজাসমূহ হতে এরূপ বলে আহবান করা হবে। হে আল্লাহর বান্দা! এখানেই কল্যাণ। এটাই উত্তম স্হান। যে ব্যক্তি নামাযী তাকে নামাজের দরজা হতে আহবান করা হবে। যে ব্যক্তি মুজাহিদ তাকে জিহাদের দরজা হতে আহবান করা হবে। যে ব্যক্তি ছদকারী হবে তাকে ছদকার দরজা হতে আহবান করা হবে। আর যে ব্যক্তি রোজাদার তাকে রোজার দরজা হতে আহবান করা হবে। তখন আবূ বখর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আনহু বলেন- ঐ ব্যক্তির জন্যও কোন ক্ষতি বা অসুবিধার কারণ হবে না? যাকে সবগুলো দরজা হতে একত্রে আহবান জানানো হবে। সে তখন যে কোন দরজা দিয়ে তার ইচ্ছানুযায়ী প্রবেশ করতে পারবে। তারপর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে সমূহ দরজা হতে একত্রে আহবান করা হবে কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন হ্যা, হে আবু বকর আমি আশা করি তুমিও তাদের অর্ন্তভুক্ত হবে।
[বূখারী শরীফ- ৩৩৯৭]

#সিদ্দিক ই আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর আওয়্যালিয়্যাত (প্রথম হওয়ার দিকসমূহ)

মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ হযরত সিদ্দিক ই আকবর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পৃথিবীতে যে সকল বিষয়ে প্রথম স্হান অর্জন করার গৌরব লাভ করেছেন তার একটি সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছেন। নিন্মে এ সংক্রান্ত পর্যালোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।

১. তিনি সর্বপ্রথম পুরুষদের মধ্যে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।

২. তিনিই সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআন সংকলন করেন।


Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|