★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
ঈদুল ফিতর : করণীয় ও বর্জনীয় প্রতিবছর দুই ঈদ মুসলমানদের জীব - Mas'la Masayel Discussions on

ঈদুল ফিতর : করণীয় ও বর্জনীয় প্রতিবছর দুই ঈদ মুসলমানদের জীব

edited June 2017 in Mas'la Masayel
ঈদুল ফিতর : করণীয় ও বর্জনীয়
প্রতিবছর দুই ঈদ মুসলমানদের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দের ফল্গুধারা। এ দু’টি ঈদের মধ্যে ঈদুল ফিতরের ব্যাপ্তি ও প্রভাব বহুদূর বিস্তৃত। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ মুসলিম জাতির প্রতি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বড় নিয়ামত ও পুরস্কার। মুসলিম উম্মার প্রত্যেক সদস্যের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা, মমতা ঈদের এ পবিত্র ও অনাবিল আনন্দ-উৎসবে একাকার হয়ে যায়। ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধুমাত্র আনন্দই নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদতও বটে। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়, ধনী-গরিব, কলো-সাদা, ছোট-বড়, দেশি-বিদেশি সকল ভেদাভেদ ভুলে যায় এবং সবশ্রেণী ও সব বয়সের মানুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান প্রভুর শোকর আদায়ে নুয়ে পড়ে। ঈদ শব্দের অর্থ : ঈদ আরবী শব্দ। যার অর্থ ফিরে আসা। অনেকে বলেন, এটা আরবী আদত বা অভ্যাস শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। কেননা, ঈদ উদযাপন করা মানুষের একটি অভ্যাস। সে যাই হোক, যেহেতু এ দিনটি বার বার ফিরে আসে তাই এর নাম ঈদ। এ শব্দ দ্বারা এ দিবসের নাম রাখার তাৎপর্য হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দিবসে তার বান্দাদেরকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বার বার ধন্য করেন ও বার বার তার এহসানের দৃষ্টি দান করেন। যেমন রমজানে পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। সাদকায়ে ফিতর, হজ-যিয়ারত, কোরবানির গোশত ইত্যাদি নেয়ামত তিনি বার বার ফিরিয়ে দেন। আর এসব নেয়ামত ফিরে পেয়ে ভোগ করার জন্য অভ্যাসগতভাবেই মানুষ আনন্দ-ফুর্তি করে থাকে। তাই ঈদের দিন খুশির দিন, আনন্দের দিন।ঈদুল ফিতর কি : ঈদুল ফিতর মুসলমানদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। ঈদুল ফিতর শব্দটি হচ্ছে আরবি। হাদিসের ভাষায় তার অর্থ হচ্ছেÑ রোজা ভাঙার দিবস অথবা ইয়াউমুল ঈদ বা আনন্দের দিন, খুশির দিন। ঈদুল ফিতরের আরও এক নাম হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর বা সিয়াম ভঙ্গের জন্য দান। যেহেতু এ দিনে রোজার ভুল-ত্রুটির জন্য সাদাকাতুল ফিতরা দেয়া হয় তাই এ দিনকে সাদাকাতুল ফিতরও বলা হয়।ঈদ আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। কিন্তু আমরা এ দিনকে নেয়ামত হিসেবে গ্রহণ না করে অহেতুক উল্লাসে মেতে উঠি। এ দিনে অনেক কাজ আছে যা করলে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। ঈদের দিনে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার করা হলো।ঈদের দিনের করণীয় ১. ফজরের সালাত আদায় করা : ঈদ আমাদেরকে এতোই মশগুল করে যে, আমরা অনেকে ঈদের দিনে ফজরের সালাতটুকু আদায় করতে পারি না। অথচ ফজরের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম). বলেছেন, “যদি তারা ইশা ও ফজর নামাজের মধ্যে কি আছে তা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুটি নামাজের জামাতে শামিল হতো”। (সহীহ বুখারী)২. রোজা না রাখা: ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। তাই ঈদুল ফিতরের দিনে রোজা রাখা আমাদের জন্য মোটেও ঠিক হবে না। আবু সাঈদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ঈদের দিন (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায়) রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।” (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)৩. গোসল করা : ঈদের সালাতের পূর্বে গোসল করা সুন্নাত। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক]। অনুরূপ সাঈদ ইবনে যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, ঈদুল ফিতরের তিনটি সুন্নাত রয়েছে : পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, গোসল করা ও ঈদগাহে যাবার পূর্বে কিছু খাওয়া।৪. সকালবেলা কিছু খাওয়া : ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। হজরত আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। অন্য হাদিসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (সহীহ আল বুখারী)৫. সুগন্ধি ব্যবহার করা : ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত।৬. সুন্দর পোশাক পরিধান করা : ঈদের আরেকটি করণীয় হলো, এ দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা। জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্দর জুব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে ও জুম’আর দিনে পরিধান করতেন। (মুসনাদ বায়হাকী)৭. সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা : ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যা একদিকে অশ্লীল-অনর্থক কথা ও কাজ দ্বারা কলুষিত রোজাকে পবিত্র করে, অন্যদিকে অসহায়-নিঃস্বকে খাদ্যদানে সহায়তা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি সাদাকাতুল ফিতর ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করে, তা কবুল করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পরে আদায় করবে, তা সাধারণ সাদাকাহ হিসেবে পরিগণিত হবে।৮. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : হজরত সাঈদ ইবনু যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। তবে হেঁটে যাওয়া সম্ভব না হলে বাহনে চড়ে ঈদগাহে যাওয়া দোষণীয় নয়।৯. ঈদের জামাতে যাওয়া আসার পথ ভিন্ন হওয়া : ঈদের আরেকটি সুন্নাত হলো ঈদের জামাতে যাওয়া-আসার পথ ভিন্ন হওয়া। এতে দীর্ঘ হাঁটা এবং বেশি মানুষের সাথে মিশার উপকারিতা রয়েছে। ইবনু যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাস্তা দিয়ে ঈদের নামাজে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (সহীহ আল বুখারী) ১০. তাকবীর বলা : তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। রমজান সংক্রান্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : “তোমরা (রমজানের) রোজা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর বড়ত্ব¡ ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো।” (সূরা আল বাকারা : ১৮৫)১১. ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় : ঈদের দিনে পারস্পরিক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা ঈদের আরেকটি সুন্নাত। সাহাবায়ে কেরাম এই দিনে একে অপরকে বলতেন “তাকাব্বালুল্লাহা মিন্না ওয়া মিনকুম”। ১২. ঈদের সালাত আদায় করা : ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কোন সালাত আদায় করা ঠিক নয়। ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন বের হয়ে শুধুমাত্র ঈদের দু’রাকা’আত সালাত আদায় করতেন। ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে নফল বা অতিরিক্ত কোন সালাত আদায় করতেন না। (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম ও তিরমিযী)। ১৩. খুতবাহ শুনা ও দু’আ করা : ঈদের সালাতের পরে ইমাম সাহেব খুতবাহ প্রদান করবেন এবং মুসল্লিগণ তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবেন। এটি পালন করা ওয়াজিব। খুতবাহতে মুসলিম উম্মাহর দিক-নির্দেশনামূলক বাণী ও সকলের কল্যাণের জন্য দু’আ থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত বস্তু হলো দু’আ।” আল্লাহ স্বয়ং মানুষকে দু’আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যারা দু’আ করে না তাদেরকে তিনি অহংকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন : “আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করবো। যারা অহঙ্কারাবশে আমার ইবাদত হতে বিমুখ, তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সূরা মু’মিন : ৬০)।১৪. কবর যিয়ারত করা : কবর যিয়ারত করা একটি নেক আমল। হজরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম.) বলেন, তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (আবু দাউদ)ঈদের দিনের বর্জনীয় দিকসমূহ১. জামাতের সাথে ফরজ সালাত আদায়ে অলসতা করা ২. ঈদের দিন সিয়াম পালন করা ৩. বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন করা ৪. নারী-পুরুষ একে অপরের বেশ ধারণ করা ৫. নারীদের খোলামেলা অবস্থায় রাস্তাঘাটে বের হওয়া ৬. গান-বাজনা করা, অশ্লীল সিনেমা ও নাটক দেখা ৭. অযথা কাজে সময় ব্যয় করা ৮. অপচয় ও অপব্যয় করা ৯. আতশবাজি করা ১০. ঈদের সালাত আদায় না করে কেবল আনন্দ-ফুর্তি করা ইত্যাদি।পরিশেষে বলতে চাই, ঈদের দিনের শরীয়তসম্মত করণীয়গুলো পালন করার মাধ্যমে নিজেকে ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা এবং সমাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রে শান্তি, শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার নজির স্থাপন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
ATTACHMENTS
received_97-picsayjpg

Comments

Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|