কোরান মাজীদের কয়েকটি সূরায় পর্দা সংক্রান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে। পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা সকল শ্রেণীর ঈমানদার নারী পরুষকে সম্বোধন করেছেন। এটি শরীয়তের একটি ফরয বিধান। এই বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবী।
পর্দা বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ ব্যবস্থার এবং বিষেশভাবে উম্মতের মায়েদের জন্য অনেক বড় ইহসান। এই বিধানটি ইসলামের শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাংগতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল। পর্দা নারীর মর্যাদার প্রতীক এবং পবিত্রার একমাত্র উপায়।
পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয় মনের পবিত্রা অর্জন করা সম্ভব।
পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে।
এই বিধান তোমাদের তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। ( সূরা আহযাব ( ৩৩) : ৫৩)।
--------------------------------------------------------
হে নবী! (সাল্লাল্লাহুআলায়হিওয়াসাল্লাম) আপন বিবিগণ, সাহেবযাদীগণ ও মুসলমানদের নারীগণকে বলে দিন যেন তারা নিজেদের চাদরগুলোর একাংশ স্বীয় মুখের উপর ঝুলিয়ে রাখে, এটা এ কথার অধিকতর নিকটবর্তী যে, তাদের পরিচয় পাওয়া যাবে ; ফলে, যেন তাদেরকে উত্যক্ত করা না হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান।
( সূরা আযহাব ৫৯)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহুতায়াল্লাআনহু) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বাহির হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে আর ( চলা ফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।
ফাতহুল বারী ( ৮/৫৪,৭৬, ১১৪ )।
----------------------------------------------------------------
মুসলমান নারীদেরকে নির্দেশ দিন তারা যেন নিজদের দৃষ্টিগুলোকে কিচুটা নিচে রাখে এবং নিজদের স্বতীত্বকে হেফাযত করে আর নিজদের সাজ সজ্জাকে প্রদর্শন না করে, কিন্তু যতটুকু স্বাভাবীক ভাবেই প্রকাশ পায় এবং মাথার কাপড় যেন আপন গ্রীবা ও বক্ষেদেশের প্রতি ঝুলানো থাকে আর আপন সাজ সজ্জাকে যেন প্রকাশ না করে। ( সূরা নূর: ৩১)।
-------------------------------------------------------//--------------------//-----------------------------------------------
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহুআলায়হিওয়াসাল্লাম) আরও ইরশাদ ফরমান
নারী হলো গোপনীয় সত্ত্বা । যখন সে ঘর
থেকে বের হয়, তখন শয়তান তার দিকে
দৃষ্টি উঁচু করে তাকাতে থাকে ।
— তিরমিযি শরীফ, ১/২২২
অর্থাৎ, পরপুরুষদের নজরে তাকে
আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন করে । উক্ত
হাদিসের ষ্পষ্ট ভাষ্য হলোঃ পর্দার ভিতর
থাকাটাই নারীর জন্য শোভনীয় ।
---------------------------------------------------
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে
হযরত বুরাইদা (রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু) থেকে বর্নিত,
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলায়হিওয়াসাল্লাম) বলেন, হে আলী ! তুমি
হঠাত্ কোন মহিলার উপর দৃষ্টি পড়ার পর
দ্বিতীয়বার ইচ্ছা করে তাকাবে না ।
কারন প্রথমবার অনিচ্ছাকৃত তাকানো
তোমার জন্য মাফ হলেও দ্বিতীয়বার
ইচ্ছাকৃত তাকানো মাফ নয় । (আবু দাউদ
শরীফ-১/২৯২) চিন্তা করুন ৪র্থ খলিফা
এবং চার তরিকা তথা চিশ্তিয়া,
কাদেরিয়া, নকশাবন্দিয়া ও
সোহরাওয়ার্দিয়া সকল পীরের পীর হযরত
আলী (রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু) । তার জন্য হাদীসে পাকে এ
নির্দেশ, তাহলে উম্মতের অন্যান্য পুরুষের
জন্য পর্দার হুকুমে যে কত কঠিন হবে, তা
তো সহজেই অনুমেয় ।
----------------------------//-------------------------
হযরতে আয়েশা (রাদিয়াল্লাহুতায়াআনহা) বলেন, হজের সফরে
আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ
এর সাথে ছিলাম
পথিমধ্যে কোন কাফেলার মুখোমুখি হলে
আমরা আমাদের চেহারার উপর নেকাব
ফেলে দিতাম । অতঃপর তারা অতিক্রম
করে গেলে আবার নেকাব তুলে দিতাম ।
(আবু দাউদ শরীফ)
---------------------------------//--------------------
হযরত কায়স ইবনে শামমাস (রাদিয়াআল্লাহুতায়ালাআনহু) বর্ননা
করেন, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলায়হিওয়াসাল্লাম) এর
দরবারে এল । তাকে উম্মে খাল্লাদ বলে
ডাকা হত । তার মুখ ছিল নেকাবে ঢাকা ।
সে আল্লাহর পথে তার শহীদ পুত্র সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলায়হিওয়াসাল্লাম) এর নিকট জানতে
এসেছিল । তখন তাকে এক সাহাবী
জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পুত্র
সম্পর্কে জানতে এসেছ, আর মুখে নেকাব ।
হযরতে উম্মে খাল্লাদ (রাদিয়াল্লাহুতায়াআনহা) তাকে উত্তরে
বললেন, আমি আমার ছেলেকে হারিয়ে
এক বিপদে পড়েছি, এখন লজ্জা হারিয়ে
তথা মুখমন্ডলসহ গোটা শরীর পর্দা না
করে কি আরেক বিপদে পড়ব ?
— আবু দাউদ - ১/৩৩৭
উপরোক্ত হাদীস থেকে এটাই প্রতীয়মান
হয় যে, মেয়েদের পর্দা তথা মোটা ও
ঢিলাঢালা কাপড় দ্বারা চেহারাসহ
সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা জরুরী ।
পরপুরুষকে শরীরের কোন অংশ্য তারা
দেখাতে পারবে না ।