★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
তরীক্বতের গুরুত্ব - Ibadat amal Discussions on

তরীক্বতের গুরুত্ব

তরীক্বত..........
তরীক্বতের গুরুত্ব
طريقت (তরীক্বত) শব্দটি طرق (ত্বুরুক) থেকে গৃহীত। এর আধিভানিক অর্থ পথ, রাস্তা, নির্দেশনা। আর পারিভাষিক অর্থ- পথ চলার নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান, আইন-কানূন, নিয়মাবলী, পদ্ধতি-প্রণালী, নির্দেশনা, নির্দেশিকা, দিশা-দিশারী প্রভৃতি। ইলমে মা’রিফাতপন্থীদের একটি পরিভাষা তরীক্বত। মা’রিফতের পরিভাষায় চারটি মূলনীতি সহকারে খোদাপ্রাপ্তির সাধনা করতে হয়। যথা-
১. শরীয়ত, ২. তরীক্বত, ৩. হাক্বীক্বত ও ৪. মা’রিফাত। খোলাফা-ই রাশেদীনের পরবর্তী যুগে সূফীবাদের বিস্তার ঘটলে আউলিয়া-ই কেরাম ও সূফীসাধকগণের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার প্রসারে বিভিন্ন তরীক্বার উদ্ভব ঘটে। হানাফী, শাফে‘ঈ, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবগুলো যেমনি ইলমে শরীয়তকে পরিপূর্ণতা দান করেছে, তরীক্বতগুলোও তেমনি ইলমে মা’রিফাতকে পূর্ণাঙ্গতা দান করেছে।
ক্বোরআন মজীদে ত্বরীক্বতের নির্দেশনা
আল্লাহর নির্দেশিত, প্রিয়নবীর প্রদর্শিত এবং সাহাবা-ই কেরামের অনুসৃত বিধিমালার যথার্থ অনুসরণের নাম তরীক্বত। যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা ক্বোরআন, সুন্নাহর আলোকে সৎপথের নির্দেশ দিয়ে মুক্তিকামী মানুষের পরিত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে পৌঁছার যে নিয়ম-পদ্ধতি ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সেটাই তরীক্বত বা তরীক্বাহ্। 
তরীক্বতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তরীক্বত অবলম্বণের অপরিহার্যতা প্রমাণে ক্বোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাই মূলভিত্তি। নি¤েœ এ প্রসঙ্গে কয়েকটি ক্বোরআনিক দলীল পেশ করা হলোঃ
তরীক্বতের মূলনীতি প্রসঙ্গে সূরা ফাতিহায় এরশাদ হয়েছে,
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْم ـ صِرَاطَ الَّذِىْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
তরজমা: (হে আল্লাহ!) আমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করো, তাদেরই পথে, যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ করেছো। 
উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর বা বিশদ বর্ণনায় নি¤েœাক্ত আয়াতে চার শ্রেণীর নি’মাত প্রাপ্ত বান্দাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার শিক্ষা দিয়েছেন। 
এরশাদ হয়েছে,
وَمَن يُّطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ 
عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ
তরজমা: যারা আল্লাহ্ রসূলের আনুগত্য করে তারা ওইসব লোকের সাথে থাকবে, যাদের উপর আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ সত্যনিষ্ঠগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ। 
আল্লাহর মনোনীত বুযুর্গনে দ্বীন সালেহীন পুণ্যাত্মাবান্দাদের অনুসরণের কথা ক্বোরআনুল করীমের বহু স্থানে নির্দেশ করা হয়েছে। 
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন, 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ﴿١١٩﴾
তরজমা: হে মু’মিনগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গ অবলম্বন করো। 
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জীবনাদর্শ বিশ্বমানবজাতির জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে এ শ্রেণীর প্রিয় বান্দাদের পদাঙ্ক অনুসরণের কথা পবিত্র ক্বোরআনে বহু স্থানে বিঘোষিত হয়েছে। 
এরশাদ হয়েছে-
وَابْتَغِ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ
তরজমা: যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু’ করেছে, তার পথকে অনুসরণ করো। 
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে, 
اَلْوَصُوْلُ لاَ يَحْصِلُ اِلاَّ بِالْوَسِيْلَةِ وَهِىَ عُلَمَآءُ الْحَقِيْقَةِ وَمَشَائِخُ الطَّرِيْقَةِ
অর্থাৎ ওসীলা ব্যতীত আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়না। ওসীলা হচ্ছেন হক্কানী ওলামা-ই কেরাম ও ত্বরীক্বতপন্থী মাশায়েখ বা কামিল পীর মুর্শিদগণ। সত্যিকার তরীক্বতপন্থী দ্বীনের অনুসারী মুত্তাক্বী পরহেযগার বান্দারা হচ্ছেন হিদায়তপ্রাপ্ত। তরীক্বতের আদর্শ শিক্ষাচ্যুত বান্দা গোমরাহ্ বা পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। 
আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন,
مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدُ وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِىًّا مُّرْشِدًا
তরজমা: আল্লাহ্ পাক যাকে হিদায়ত করেন, সে হিদায়ত পায় এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন ওলী (কামিল), মুর্শিদ পাবেনা।
ঈমান আক্বীদার হিফাযতের জন্য সকল মুজতাহিদ ইমাম কামিল পীর মুর্শিদের পদাঙ্ক অনুসরণকে অপরিহার্য মনে করেছেন। হুযূর গাউসুল আ’যম শায়খ আবদুল ক্বাদির জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রণীত ‘সিররুল আসরার’ কিতাবে উল্লেখ করেন,
وَلِذَالِكَ طَلَبُ اَهْلِ التَّلْقِيْنِ لِحَيَاةِ الْقُلُوْبِ فَرْضٌ
অর্থাৎ অন্তরাত্মাকে যিন্দা করার জন্য আহলে তালক্বীন তথা কামিল মুর্শিদের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যক। 
ইমামুল আইম্মাহ্, কাশফুল গুম্মাহ্ হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম-ই আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন,
لَوْلاَ ثِِنْتَانِ لَهَلَكَ نُعْمَانُ
অর্থাৎ আমি (আবূ হানীফা) যদি আমার পীর-মুর্শিদ ইমাম জা’ফর সাদেক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর নিকট বায়আত গ্রহণপূর্বক তাঁর সান্নিধ্যে দু’বছর না থাকতাম, তবে আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম। 
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গায্যালী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণীত ‘কীমিয়া-ই সা‘আদাত’ গ্রন্থে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণীত ‘মাকতূবাত শরীফ’-এ সৈয়্যদুল আউলিয়া হযরত ইমাম আহমদ কবীর রেফা‘ঈ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণীত ‘আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ’ গ্রন্থে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রণিত ‘নাক্বাউস সুলাক্বাহ্ ফী আহকামিল বায়‘আত ওয়াল খিলাফাহ’ (১৩১৯হি.) গ্রন্থে ইলমে তাসাওফ অর্জন তথা পীর-মুর্শিদের বায়‘আত গ্রহণ করাকে অপরিহার্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত সুফী সাধক আল্লামা জালালুদ্দিন রুমী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ও তাঁর পীর মুর্শিদ হযরত শামসুদ্দীন তাবরীযির ঘটনা প্রণিধানযোগ্য। মাওলানা রুমী বলেন,
مولانا هرگزنشد ملائےروم ـ تاغلام شمس تبريز نشد
অর্থাৎ আমি মাওলানা রুম মাওলানা রুমী হতে পারতাম না, যদি না আমার পীর শামসে তাবরীযের গোলামী করতাম। 
এ কারণে যতবড় জ্ঞানী হোক না কেন, শর‘ঈ জ্ঞানের পাশাপাশি তরীক্বত তথা তাসাওফের জ্ঞান না থাকলে গোমরাহ্ তথা পথভ্রষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। 
হযরত ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রনীত ‘মু‘আত্তা’য় এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন,
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ وَمَنْ تَصَوَّفَ 
وَلَمْ يَتَفَقَّهُ فَقَدْ تَزَنْدَقَ وَمَنْ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَقَدْ تَحَقَّقَ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বহ তথা শর‘ঈ জ্ঞান অর্জন করলো এবং ইলমে তাসাওফ তথা তরীক্বতের জ্ঞান অর্জন করলো না, সে ফাসিক্ব হলো, যে ব্যক্তি ইলমে তাসাওফ অর্জন করল অথচ ইলমে ফিক্বহ অর্জন করলো না সে যিন্দীক্ব হলো। আর যে ব্যক্তি উভয় প্রকার ইল্ম অর্জন করল, সে প্রকৃত সত্যের সন্ধান লাভ করলো।
[সূত্র. আদ্-দাওয়াত, পৃ. ১৬৯-১৭০]
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|