রোযা,শবে,বরাত এবং শবে,কদরের খবর দিলে নাকি জাহান্নামের আগুন হারাম!হয়েযাবে রাসূল ﷺ এর নামে এ কেমন মিথ্যাচার? পড়ুন।
![](http://www.yanabi.in/uploads/editor/ms/bcbbcj9zsb6e.jpg)
Visit করুন
www.YaNabi.in এ
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
আমি বেশ কিছু দিন থেকে লক্ষ করতেছি যে, কিছু ভাইয়েরা ফেসবুক, হোয়াটসাপ এবং টুইটার সহ অনেক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটা কথা প্রচার করতেছে। আর তা হলো, এত তারিখে শবে বরাত , এত তারিখে শবে কদর, এত তারিখে রমযান, এত তারিখে ঈদুল ফিতর এবং এত তারিখে ঈদুল আজহা। এর পরে তারা লিখে, মহা নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি এখবরটা কোন মুসলমানকে দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম।হয়েযাবে (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার জানার বিষয় হলো যে, এধরনের কথা কতটুকু সত্য? হাদীসে কি এধরনের কথা আছে?
উত্তরঃ
ওয়ালাকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
প্রশ্নে বর্ণিত কথাগুলো আমাদের নজরে এর আগেও অনেক বার
পড়েছে। আমি অনেক আগ থেকে চিন্তা করতেছি এই বিষয়ে কিছু লিখব। আপনার প্রশ্ন পাওয়ার পর ইচ্ছেটা আরো শক্ত হয়ে গেলো।
যাই হোক এবার মূল কথায় আসা যাক। প্রশ্নে বর্ণিত রাসূল ﷺ নামে যে কথা বলা হয়েছে যে, রাসূল ﷺ বলেছেন যে ব্যক্তি উল্লিখিত খবরটা কোন মুসলমানকে দিবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম।হয়েযাবে একথা রাসূল ﷺ এর নামে মিথ্যা অপবাদ। রাসূল ﷺ এধরনের কোন কথা বলেছেন এ মর্মে কোন কিতাবে পাওয়া যায় না। এটা একটা জাল হাদীস বর্ণনা।
আসুন এবার জেনে নেই
জাল হাদীস কাকে বলে?
জাল হাদীস, যাকে আরবী ভাষা এবং মুহাদ্দিসীনদের পরিভাষায় মওজু বলা হয়। সহজ কথায় যেটি রাসূল ﷺ এর হাদীস নয়, তাকে রাসূল ﷺ এর হাদীস বলার নামই জাল বা বানোয়াট হাদীস।
রাসূল ﷺ থেকে প্রমানিত নয়, এমন কোন কথাকে রাসূল ﷺ এর হাদীস বলার নাম জাল হাদীস। আসলে এসবকে হাদীস বলাই উচিত নয়। কিন্তু যেহেতু এসবের নিসবত জাল বর্ণনাকারীরা রাসূল ﷺ এর দিকে করেছে রাসূল ﷺ এর হাদীস বলে, তাই শুধু নিসবতের কারণে ওসব বাতিল বর্ণনার সাথেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীস শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর মানে এটা নয় যে, ওসব বর্ণনা আসলে হাদীস।
আমরা যখন জাল হাদীস বা মাউযু হাদীসের পরিচয় জেনে গেছি আসুন এবার আমরা জাল হাদীসের হুকুম জেনে নেই।
জাল হাদীসের হুকুমঃ
যেহেতু আমরা উপরে জেনে আসলাম জাল হাদীস আসলেই হাদীস নয়। তাই সুনিশ্চিতভাবে জাল ও বানোয়াট জানার পরও উক্ত বক্তব্যটিকে রাসূল ﷺ এর হাদীস বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। হারাম।
জাল হাদীসকে রাসূল ﷺ এর হাদীস বলে প্রচার করা মানে হল রাসূল ﷺ এর নামে মিথ্যা কথা বলা। আর রাসূল ﷺ এর নামে মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী এসেছে হাদীসে।
রাসূল ﷺ বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
অর্থ, হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে,সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩ , মুসনাদুল হুমায়দী,হাদীস নং-১২০০,মুসনাদে ইবনুল জিদ,হাদীস নং-১৪৮০,মুসনাদে দারেমী,হাদীস নং-৬১৩,)
অন্য হাদীসে আছে রাসূল ﷺ বলেন,
عَنِ المُغِيرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ، مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
অর্থ, হযরত মুগীরা রাদিয়াল্লাহুআনহুঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল ইরশাদ করেছেন,আমার উপর মিথ্যারোপ করা অন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে,সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল।
(সহীহ বুখারী,হাদীস নং-১২৯১,১২২৯,সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-৪,মুসনাদুল বাজ্জার,হাদীস নং-১২৭৬)
তবে এটি জাল হাদীস এ কথাটা সবাইকে জানানোর জন্য বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন কুফরী কথা বলা জায়েজ নয়। কিন্তু কথাটি কুফরী সেটি বুঝানোর জন্য কুফরী কথা উল্লেখ করা জায়েজ আছে।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে জানতে পারলেন যে, রাসূল ﷺ এর নামে মিথ্যা কথা বলা তথা জাল হাদীস বলা কবীরা গুনা। এবং তার স্থান হলো জাহান্নাম।
এখন কেউ যদি বলে আমি তো না জেনে না বুঝে শুধু মাত্র অন্য কারো থেকে শুনে প্রচার করেছি। আমি জাল হাদীস হিসাবে প্রচার করি নাই। এখন কি আমার গুনাহ হবে?
আমরা তার উত্তরে বলব, জি, আপনি এটা জাল হাদীস হিসাবে প্রচার না করলেও আপনার গুনাহ হবে। কারন আপনি একটা মিথ্যা কথা শুনা মাত্রই যাচাই বাচাই করা ছাড়া প্রচার করতেছেন। এতাবস্থায় আপনার মিথ্যা কথা বলার মত মারাত্বক কবীরা গুনা হবে। যাহা রাসূল ﷺ এর হাদীস থেকে জানা যায়।
হাদীসে আছে রাসূল ﷺ বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
অর্থ, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহু বলেন। রাসূল ﷺ বলেছেন, কোন মানুষ গুনাহ গার হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তাহাই প্রচার করে যাহা সে শুনে ( যাচাই না করে কথাটা কি সত্য না মিথ্যা)।
(আল আদাব লিল বাইহাকীঃ ১/১৭৬, আবু দাউদঃ ৪/৪৯৩)
অন্য হাদীসে আছে রাসূল ﷺ বলেন।
عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
অর্থ, হযরত হাফস ইবনে আসেম রাদিয়াল্লাহুতায়ালাআনহুঃ বলেন। রাসূল ﷺ বলেছেন, কোন মানুষ মিথ্যাবাদি হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে ( যাচাই না করে কথাটা কি সত্য না মিথ্যা) তাহাই প্রচার করে যাহা সে শুনেছে ।
(সহীহ মুসলিমঃ ১/৮ হাদীস নং ৭)
তাই প্রশ্নে বর্ণিত কথাটা বলা বা প্রচার করা মারাত্বক ধরনের কবীরা গুনাহের কাজ। কারন তা হয় তো জাল হদীস হিসাবে প্রচার করার মত মারাত্বক গুনাহ হবে। অথবা মিথ্যাবাদিদের মত ক্ববীরা গুনাহ হবে।
তাই এ সব প্রচার করা থেকে বিরত থাকা এবং অন্য সবাইকে সতর্ক করা আমাদের জন্য অত্যান্ত জরুরী।
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন
আমীন।
Comments