★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
তওহীদ ও শির্ক : মূল : শাইখুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ আহমেদ সাঈদ কাজমী, অনুবাদ : মুহাম্মদ এ কে আজাদ - Mas'la Masayel Discussions on

তওহীদ ও শির্ক : মূল : শাইখুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ আহমেদ সাঈদ কাজমী, অনুবাদ : মুহাম্মদ এ কে আজাদ

                          তওহীদ ও শির্ক 
মূল : শাইখুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ আহমেদ সাঈদ কাজমী رحمة الله عليه
অনুবাদ : মুহাম্মদ এ কে আজাদ 





অনুবাদকের কথা 




 
    ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক একটি বিশেষ ফির্কা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আউলিয়ায়ে কেরামের সঙ্গে যেন মুসলিম উম্মাহর কোন যোগসূত্র না থাকে সে লক্ষে সুপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে । তারা তওহীদ ও শির্কের নিজস্ব  সংজ্ঞা উদ্ভাবন করেছে এবং নিজেদের মনগড়া সঙ্গার মানদন্ড অনুযায়ী সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে মুশরিক, কবরপূজারী ইত্যাদি বলে বিশেষিত করছে। তওহীদ ও শির্ক সম্পর্কে তাদের ফির্কাপারাস্তি অপপ্রচারের দরুন সরলপ্রান মুসলিমগনের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই বিভ্রান্তি দূর করার লক্ষ্যে এবং ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক সৃস্ট উক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী ফির্কার খপ্পর থেকে মুসলিমগনকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ইসলামের প্রথিতযশা মুবাল্লিগ শাইখ  সৈয়দ আহমেদ সাঈদ কাজমী رحمة الله عليه “তওহীদ আওর শির্ক” শীর্ষক একটি অনন্য পুস্তক রচনা করেন। এই পুস্তকে তওহীদ ও শির্ক বিষয় দুটিকে খুব সরল ও সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলা ভাষাভাষি মুসলিমগন যেন এই অনুপম পুস্তকখানি থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্য এটি বাংলায় অনুবাদ করলাম। আমি নিশ্চিত, সত্যানুসন্ধানী পাঠক-বর্গের নিকট পুস্তকখানি সমাদৃত হবে। তওহীদ ও শির্ক সম্পর্কে খারিজী অপপ্রচারের  মুকাবিলায় এই পুস্তকটিই ইনশাআল্লাহ পর্যাপ্ত। 


            পুস্তকটি অনুবাদ করার ক্ষেত্রে পুস্তকটির ইংরেজী ভাষান্তর “ Tauheed And Shirk” এর সহায়তা গ্রহন করা হয়েছে। “ Tauheed And Shirk”পুস্তকখানি www.nooremadinah.net  এবং  www.alahazratnetwork.org ওয়েবসাইটে অনলাইনে পাঠ করা যাবে । 








                                  তওহীদ ও শির্ক


             আল্লাহ  পাক এক এবং অদ্বিতীয়। কেবল মূর্খরাই এক আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমান দাবি করে। আল্লাহ-ভীরুদের এসম্পর্কে যুক্তি-ব্যখার কোন প্রয়োজন পড়ে না ; তাঁরা নির্দ্বিধায় মেনে নেন। আরবী ভাষায় একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদ চালু আছে যে, “আল আশিয়াউ তুরাফা বি আজদাদিহি” অর্থাৎ কোন বস্তুকে উপলব্ধি করা যায় তার বিপরীত বস্তুর নিরিখে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, শান্তির প্রকৃত মর্ম ঐ ব্যক্তিই আস্বাদন করতে সক্ষম যে অশান্তির স্বাদ পেয়েছে। যে কখনও অশান্তির স্বাদ পায় নি, সে শান্তির স্বাদ উপলব্ধি করতে পারবে না। অনুরুপভাবে,যে ব্যক্তি রাত্রি পর্যবেক্ষন করে নি, সে দিনের মর্ম বুঝতে অক্ষম। তেমনি, যে ব্যক্তি বিপথগামিতা  হৃদয়ঙ্গম করে নি, সে সুপথগামিতার মর্ম বুঝতে অক্ষম। এই মানদন্ডের নিরিখে আমরা বলতে পারি, যে ব্যক্তি শির্ক বা পৌত্তলিকতা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে নি, তার পক্ষে কিভাবে তওহীদ বা একত্ববাদ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব ? সুতরাং, যুক্তির দাবি হল, শির্কের ধারনাকে উপলব্ধি করার পরেই তওহীদ বিষয়টি যথাযথভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব । 

             সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক তওহীদ ও শির্কের সুস্পষ্ট ব্যখা প্রদান করেছেন এবং নাস্তিকতার মতবাদকে নস্যাৎ করেছেন। ইহা বিস্ময়কর যে, তওহীদ ও শির্কের ব্যখায় সুস্পস্ট প্রভেদ থাকা সত্বেও কিছু লোক মুসলিমদের মধ্যে সন্দেহের বীজ বপন করার কাজে লিপ্ত আছে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হল, ইসলামের মৌলিক আকীদাকে ধ্বংস করা। 

         তওহীদের অর্থ : তওহীদের অর্থ হল, এই কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সত্ত্বা  ও গুনাবলীর কোন অংশীদার নেই । ইহা এভাবেও বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ পাকের ন্যায় এবং তাঁর সমতুল্য কারও অস্তিত্বে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি না। এরুপ বিশ্বাস শির্ক। আমাদের স্মরণ রাহা উচিত যে, শ্রবন, দর্শন ও জ্ঞান আল্লাহর গুনাবলীর অন্তর্ভূক্ত। যদি কী এই আকীদা পোষণ করে যে, অন্য কোন সত্ত্বাও  আল্লাহর ন্যায় এসকল গুনাবলীর অধিকারী ,তাহলে সে শির্ক-কারী বলে বিবেচিত হবে। 

        একটি প্রশ্ন --- শ্রবন, দর্শন ও জ্ঞান আল্লাহর গুনাবলী, এগুলিকে মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা কি শির্ক ? :  তওহীদের অর্থ জেনে নেওয়ার পর একটি প্রশ্ন জাগে যে, জ্ঞান যেহেতু আল্লাহ পাকের গুনাবলীর অন্তর্ভূক্ত তাহলে কোন মানুষের এই গুন আছে বলে বিশ্বাস করা কি শির্ক হবে ?  অনুরূপ, শ্রবন ও দর্শন  আল্লাহ পাকের  গুনাবলীর অন্তর্ভূক্ত কিন্তু আমরা যদি বলি যে, এই গুনদুটি মানুষেরও আছে তবে কি তা শির্ক হবে? ঠিক একই ভাবে, জীবিত থাকা আল্লাহ পাকের  গুনাবলীর অন্তর্ভূক্ত  কিন্তু যদি আমরা এই গুনটি অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত করি, তাহলে কি তা শির্ক বলে গন্য হবে ? 

        ঊত্তর : প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা ! উত্তর হল, ‘না’। যারা আপনাদেরকে বিপথে চালিত করতে চায়, তাদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না। স্মরণ রাখবেন, আল্লাহ পাক অবশ্যই ‘জীবিত’ এবং তিনি এই শিফাতখানির মালিক। কিন্তু অনুগ্রহপূর্বক  তিনি স্বীয় সৃস্ট জীবকেও এই শিফাতখানি দান করেছেন। তবে, আমাদের ‘জীবিত’ শিফাতখানির অধিকারী থাকা এবং মহান আল্লাহর ‘জীবিত’ শিফাতখানির অধিকারী থাকার মধ্যে দুস্তর প্রভেদ আছে। এই প্রভেদ হল : 
        (ক)  আল্লাহর ‘জীবিত’ শিফাতখানি নিজস্ব এবং আমাদেরটি হল আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত 
        (খ)   আল্লাহর ‘জীবিত’ শিফাতখানি চিরস্থায়ী এবং আমাদেরটি হল সাময়িক 
এই নীতি এবং মাপকাঠি যদি সকল বৈশিস্ট এবং গুনাবলীর ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়, তা হলে শির্কের প্রশ্নই উঠে না।   বিষয়টি ভীষণ সরল । তবু, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সম্প্রীতি ধ্বংসকারী কিছু নামধারি মুসলিম বিষয়টিকে পরিকল্পনা-মাফিক জটিল করছে। 


       
            আর একটি প্রশ্ন --- আল্লাহ মানুষকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন বিশ্বাস করা কি শির্ক ? : এই প্রশ্নের উত্তর খুব সরল। যদি মানুষকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান না করা হোত তাহলে পাথরের সঙ্গে মানুষের কি প্রভেদ থাকত? আমরা জানি যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মালিক আল্লাহ । আমরা এও জানি যে, আল্লাহ মানুষকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দান করেছেন। এখন, আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন যে, উভয়েই যদি ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হয় তাহলে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য কি থাকল? এই প্রশ্নের উত্তর ও খুব সরল। উপরের উল্লেখিত মাপকাঠিটি প্রয়োগ করলেই আপনি নিঃসন্দেহ হয়ে যাবেন যে, উভয়ের মধ্যে নির্নায়ক পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যটি হল যে, আল্লাহ পাকের ক্ষমতা-কর্তৃত্ব হল নিজস্ব  এবং তিনি এর জন্য কারও মুখাপেক্ষি নন । অন্যদিকে মানুষের ক্ষমতা-কর্তৃত্ব হল আল্লাহ-প্রদত্ত এবং সে এক্ষেত্রে আল্লাহ পাকের মুখাপেক্ষি। 


         আল্লাহর জ্ঞান এবং বান্দাহর জ্ঞানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য : উপরের মানদন্ডটি শ্রবন, দর্শন, জ্ঞান ইত্যাদি গুনাবলীর ক্ষেত্রে ও প্রয়োগযোগ্য। আল্লাহ পাকও এই গুনাবলীর অধিকারী এবং তাঁর বান্দারাও এই গুনাবলীর অধিকারী। কিন্তু উভয়ের মধ্যে সুস্পস্ট প্রভেদ হল, উল্লেখিত গুনাবলী আল্লাহ পাকের নিজস্ব অর্থাৎ কারও নিকট থেকে ধার করা নয়। অন্যদিকে, বান্দার উল্লেখিত গুনাবলী আল্লাহ পাক কর্তৃক প্রদত্ত অর্থাৎ নিজস্ব নয়। সুতরাং ইহা পরিস্কার যে, বান্দার কোন গুনকে যদি আল্লাহ প্রদত্ত বলে বিশ্বাস করা হয় তবে এই আকীদার উপর শির্কের ছাপ্পা মারা যায় না। উদহারনস্বরুপ, শ্রবন সিফাতটি বান্দার আছে বলে যদি বিশ্বাস করা হয় তাহলে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এই শ্রবন সিফাতটি আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাকে দান করেছেন। এরুপ বিশ্বাস শির্কের আওতায় আসে না। 


        মুশরিকদের মূর্তিগুলিকে কি আল্লাহ পাক ক্ষমতা প্রদান করেছেন ? : এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। প্রশ্নটি হল, তাহলে আমরা মূর্তি-পূজারীদের নিন্দা করছি কেন? তারাও তো এই আকীদাই পোষণ করে যে, আল্লাহ পাক তাদের মূর্তিগুলিকে বিস্ময়কর ক্ষমতা প্রদান করেছেন ! এক্ষেত্রে উত্তরটা কি হবে? 

        উত্তর : এই প্রশ্নের উত্তর খুব স্বছ এবং সরল। যখন মূর্তি-পূজারীরা বিশ্বাস করে যে, মূর্তিগুলি আল্লাহর সৃস্ট, তাদের ইহাও বিশ্বাস করা উচিত ছিল যে, দাস তার স্রস্টার কৃতজ্ঞতাপাশে এবং দাসত্বে আবদ্ধ। স্রস্টা  ছাড়া তো সৃস্টির অস্তিত্ব অসম্ভব ! তাদের আরও বিশ্বাস করা এবং মেনে নেওয়া উচিত ছিল যে, জীবন ও মৃত্যু উভয় ক্ষেত্রেই দাস তার স্রস্টার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু তারা এই মানদন্ডটিকে অর্থাৎ আল্লাহর কর্তৃত্বকে মেনে নিতে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের আকীদা হল এই যে, যদিও আল্লাহ তাদের মূর্তিগুলির স্রস্টা , কিন্তু আল্লাহ ঐ মূর্তিগুলিকে দেবত্ব অর্পণ করেছেন এবং সেগুলিকে উপাস্য দেবদেবীতে রুপান্তরিত করেছেন ( নাউজু বিল্লাহ মিন যালিক – মুশরিকদের ন্যায় খারিজী বিদআতীরাও এই বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ  হয়েছে এবং খারিজী বিদআতীরা বিশ্বাস করে যে মুসলিমরা আল্লাহর নবী ও ওলীগনকে উপাস্য বলে পূজা করে) । সুতরাং, সৃস্ট হয়ে যাওয়ার পরে মূর্তিগুলি সার্বভৌম এবং  কর্ম-সম্পাদনের বিষয়ে তাদের আল্লাহর দাসত্ব করার আর প্রয়োজন নেই কারন মূর্তিগুলি যা ইচ্ছা তা-ই করতে সক্ষম এমনকি সর্বশক্তিমান আল্লাহ কোন বিশেষ কাজের তাদেরকে নির্দেশ বা অনুমতি না প্রদান করেন, তবুও ( নাউজু বিল্লাহ মিন যালিক )। মূর্তি-পূজারীরা এই সরল বিষয়টিও বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে, সৃস্ট বস্তু কখনও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিয়ন্ত্রন থেকে স্বাধীন থাকতে পারে না। 


         উলুহিয়াত বা দেবত্ব প্রদান অসম্ভব : আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর বান্দাকে অনুগ্রহপূর্বক যা ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেন কিন্তু তিনি কখনই উলুহিয়াত বা দেবত্ব প্রদান করেন না। কারন হল যে, উলুহিয়াত বা দেবত্ব হচ্ছে স্থায়ী এবং স্বাধীন জিনিস ; অনুদিকে, আল্লাহ তাঁর বান্দাগনকে যে ক্ষমতা প্রদান করেন তা হচ্ছে অস্থায়ী এবং অধীন। মূর্তি-পূজারীরা বিশ্বাস করত যে, তাদের ঠাকুরগুলি বা ‘লাত’, ‘মানাত’ প্রভৃতিদের প্রবল উপাসনায় তুস্ট হয়ে আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বাধীন-সার্বভৌমভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। এই আকীদার উর ভিত্তি করে মূর্তি-পূজারীরা একথাও বিশ্বাস করত যে, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ঐ মূর্তিগুলিকে দেবত্ব অর্পন করেছেন এবং উপাস্য বিগ্রহে রুপান্তরিত করেছেন। যদি কেউ এই আকীদা পোষন করে যে, আল্লাহ পাক তাঁর কোনও বান্দাকে উপাস্য সত্বায় রুপান্তরিত করেছেন এবং তাকে দেবত্ব প্রদান করেছেন, তাহলে তা সুস্পস্ট শির্ক। প্রশ্নাতীতভাবে শির্ক । একজন মুসলিম এবং একজন মূর্তি-পূজারীর মধ্যে ইহা আরেকটি প্রভেদ। মুসলিমদের আকীদা হল যে, আল্লাহর বান্দা সর্বদা বান্দাই থাকেন, কখনও উপাস্যে পরিনত হন না বা দেবত্বও প্রাপ্ত হন না। 

              আল্লাহর অনুমতি-ক্রমে বান্দাহ-কর্তৃক সম্পাদিত কর্ম শির্ক নয় : আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন , “ মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহু ইল্লা- বিইযনিহি” [ আল কুরআন – সুরাহ নং ২ – আয়াত নং ২৫৫ ] অর্থাৎ “তাঁর ( আল্লাহর ) অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফায়াত কে করতে পারে”? আল কুরআনের এই আয়াতানুসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান আমাদের সামনে সুস্পস্ট হয়ে উঠে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সুস্পস্ট ঘোষনা হল, সকলে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারবে না ; কেবল আল্লাহ-কর্তৃক অনুমতি প্রাপ্তগনই সুপারিশ করতে পারেন। ইহা প্রতিমা-পূজারীদের জন্য সতর্কবার্তা যে, তারা যেন তাদের মূর্তিগুলি সম্পর্কে উঁচু ধারনা পোষণ না করে কারণ ঐ মূর্তিগুলিকে তাদের উপাসকদের জন্য সুপারিশের অনুমতি প্রদান করা হয় নি। সুতরাং মূর্তিগুলি তর্কাতীতভাবে মূল্যহীন।

             অপরদিকে, আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দাগনকে সুপারিশের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। অসংখ্য সহীহ হাদীসে বর্নিত আছে যে, প্রথম সুপারিশকারী হলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । পরবর্তিতে অন্যান্য নবীগন, শহীদগন এবং আউলিয়ায়ে কেরাম সুপারিশ করবেন । এখানে এই গুরুত্বপূর্ন কথাটি অতি-স্মরণীয় যে, যদি কেউ বিশ্বাস করেন যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি ব্যতীতই কর্ম-সম্পাদনে সক্ষম, তবে তা শির্ক । আর কেউ যদি বিশ্বাস করেন যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতিক্রমে কর্ম-সম্পাদনে সক্ষম, তবে তা শির্ক নয়। 

             
             হজরত ঈসা (عليه السلام) আল্লাহ-প্রদত্ত ক্ষমতায় মৃতকে জীবিত এবং জন্মান্ধকে সুস্থ করেছেন : আল কুরআন সাক্ষ্য প্রদান করে যে, হজরত ঈসা (عليه السلام) স্বীয় জাতির নিকট বহু বিস্ময়কর মোজেজা প্রদর্শন করেছিলেন। ইহা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর বান্দাগনকে বিপুল ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন। হজরত ঈসা (عليه السلام) বলেন, “ যারা জন্মান্ধ এবং কুষ্ঠ-রোগী আমি তাদেরকে আরোগ্য দান করি এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবিত করে তুলি” [ আল কুরআন- সুরা আলে ইমরান- সুরা নং ৩- আয়াত নং ৪৯]। আমরা জানি,  হজরত ঈসা (عليه السلام) কর্তৃক সম্পাদিত বিস্ময়কর কার্যাবলী মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে সংঘটিত হয়েছিল কিন্তু এই মহান নবী বলেছেন যে, তিনি স্বয়ং এই কার্যাবলী সংঘটিত করতে সক্ষম। তা বলে তিনি কি শির্ক করেছেন ( নাউজুবিল্লাহ) ? না ! তিনি একটি আয়াতের দ্বারা তওহীদ ও শির্কের মধ্যে বিভাজন নিরুপন করে দিয়েছেন । যখনই তিনি ঘোষনা করলেন যে এই কাজগুলি আল্লাহ পাকের অনুমতিক্রমে সম্পাদিত হয়, তৎক্ষনাৎ শির্কের প্রশ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং সমগ্র ধারনাটি বিশুদ্ধ তওহীদ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই মাপকাঠি মাথায় রেখে মুসলিমগন যখন বলেন যে মহান নবী-রসুল এবং আউলিয়ায়ে কেরাম আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অনুমতিক্রমে অলৌকিক ক্রিয়াদি সম্পাদনে সক্ষম, তখন একজন বিচারবুদ্ধি-সম্পন্ন  মানুষ কোন যুক্তিতে এই আকীদাকে শির্ক বলে বিশেষিত করতে পারেন ? ইহাই বিশুদ্ধ তওহীদ।


              আল্লাহর প্রিয় বান্দাগনের ক্ষমতাকে অস্বীকার করা কুরআন-হাদীসকে অস্বীকার করার নামান্তর : যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দাগনের ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন এবং বলেন যে, কোন মুসলিমের পক্ষে বিস্ময়কর কার্যাবলী ( অলৌকিক কর্মাদি এবং সুপারিশ) সম্পাদন করা অসম্ভব তাহলে তিনি আল কুরআনের ঐ-সমস্ত  আয়াত এবং ঐ-সমস্ত পবিত্র হাদীসের বিরুদ্ধাচারণ করছেন যে আয়াতসমুহ এবং হাদীস পাক গুলিতে  আল্লাহ পাকের মাহবুব বান্দাবর্গের বিস্ময়কর ক্ষমতা এবং গুনাবলী উল্লেখিত হয়েছে। 

         
               মানুষকে  সৃস্টি করা হয়েছে আল্লাহর উপাসনার জন্য : আল্লাহ পাক প্রতিটি জিনিস যেমন সূর্য, গাছপালা, জল, বাতাস ইত্যাদিকে বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃস্টি  করেছেন। মানুষ সৃস্টির উদ্দেশ্য ব্যখা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, “ওয়া মা খালাক্বতুল জিন্‌না ওয়াল ইন্‌সা ইল্লা লিইয়াবুদূন” অর্থাৎ “আমি জিন এবং মানুষকে সৃস্টি করেছি কেবল আমার উপাসনার জন্যই’ [ আল কুরআন – সুরা আদ দারিয়াত – আয়াত নং ৫৬] । উপাসনা তখনই সম্ভব যখন উপাসক উপাস্যকে পূর্ব-পরিচিত বলে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এই আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, মনুষ্য জাতি সৃস্ট হয়েছে মহান আল্লাহকে চিনবার জন্য। এই চেনার মাধ্যমেই মানষ আল্লাহর নিকটতর হয়। অন্য কথায়, আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তিই মনুষ্য জীবনের গর্ব। ইহা বঝে নেওয়ার পর আমাদের উচিত ইসলামী আইনের আলোকে বিষয়টির অর্ন্তনিহিত তাৎপর্য, ফলাফল এবং অর্থ পরীক্ষা করা। 


       আল্লাহর ওলীগনের সঙ্গে শত্রুতাকারীর বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর যুদ্ধ ঘোষনা : সহীহ বুখারীতে বর্নিত হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ পাক বলেন, “যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষনা করি। যে সকল কর্মাদির দ্বারা আমার বান্দাহ আমার নৈকট্য অর্জন করে, তার মধ্যে সর্বাধিক পছন্দনীয় হল ফরজ ক্রিয়াদি। আমার বান্দাহ আমার  নৈকট্য অর্জন করে ধারাবাহিক নফল আমলের দ্বারা ; এতটাই যে, সে আমার প্রিয় হয়ে যায় । যখন  সে আমার প্রিয় হয়ে যায়, আমি তার কান হয়ে যাই যার দ্বারা সে শ্রবন করে। আমি তার চোখ হয়ে যাই যার দ্বারা সে দর্শন করে । আমি তার হাত হয়ে যাই যার দ্বারা সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই যার দ্বারা সে হাঁটে। যখন সে  আমার নিকটে কিছু প্রার্থনা করে আমি অবশ্যই তাকে দান করি। যখন সে মন্দ কর্ম থেকে আমার নিকট আশ্রয় চায়, আমি তা থেকে তাকে রক্ষা করি” [ তথ্যসূত্র : সহীহ বুখারী – খন্ড নং ০২ – পৃ নং ৯৬৩ ] ।


         একটি ভ্রান্ত ধারণার নিরসন : কেউ কেউ বলেন যে এই স্ট্যাটাস অর্জন করার পর বান্দাহ মন্দ কর্মাদি থেকে বিরত হন। ইহা হাদীসের অপব্যাখ্যা  কারণ স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে সক্ষম যে, মন্দ কর্মাদি থেকে বিরত থাকার পরেই বান্দাহ এই মর্যাদাই উন্নীত হতে সক্ষম হন। কুরআন পাকের একটি আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর নৈকট্য অর্জনের পন্থা নির্দেশ করেছেন। আয়াতটি হল , “ হে রসূল ! আপনি তাঁদেরকে বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো , তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন” [ আল কুরআন – সুরাহ নং ৩ – আয়াত নং ৩১] অর্থাৎ  রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমেই কারও পক্ষে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হওয়া সম্ভব। বান্দাহ সর্বপ্রথম মন্দ কর্মাদি থেকে বিরত হয় এবং অতঃপর সে ফরজ ও নফল এবাদতসমূহ অবিরামভাবে সম্পাদন করতে থাকে। এভাবেই সে আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করে। কেউ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে মন্দ কর্মও সম্পাদন করবে, আবার নিজেকে নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ বিবেচনা করবে, ইহা হতে পারে না। ইমাম ফাখরুদ্দিন রাযী (رضي الله عنه) স্বীয় তাফসীরে উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে লিখেছেন যে , “ অনুরূপ ভাবে যদি বান্দাহ ধারাবাহিক ভাবে ভাল কর্মাদি সম্পাদন করেন, তাহলে প্রকৃতই তিনি এমন স্তরে উন্নীত হয়ে যান যে আল্লাহ বলেন যে তিনি তাঁর চোখ ও কান হয়ে যান। যখন আল্লাহর অনুপম নুর বান্দার চোখ হয়ে যায় তখন বান্দাহ নিকটের আর দূরের সকল বস্তুই দেখতে পান। এই নূর যখন বান্দার হাত হয়ে যায় তখন বান্দাহ নিকটের আর দূরের , সহজ এবং কঠিন,  সব ধরণের কর্মই সম্পাদন করতে সক্ষম হন” [ তফসীরে কাবীর – ইমাম ফাখরুদ্দিন  রাযী ]। 
            আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাগনকে সাহায্য-প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেছেন : উপরের আলোচনা থেকে পরিস্কার হয়ে গেল যে, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তাঁর মাহবুব বান্দাগনকে সাহায্য-প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেছেন। এই বিষয়টি যখন সুপ্রতিষ্ঠিত, তখন ঐ মাহবুব বান্দা গনকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করা শির্ক কিভাবে হতে পারে ? ইহা কখ্‌খন শির্ক হতে পারে না। একটি বিষয় আমাদেরকে সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, যদিও আল্লাহ এবং বান্দাহ উভয়েই সহায়তা প্রদানে সক্ষম কিন্তু উভয়ের সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। পার্থক্যটি হল এই যে, আল্লাহ পাকের এই ক্ষমতা নিজস্ব কিন্তু বান্দার সকল ক্ষমতা আল্লা-কর্তৃক প্রদত্ত এবং বান্দাহ হল আল্লাহর ইয়পাসক এবং তাঁর অধীন। তওহীদ ও শির্কের মধ্যে এই সুস্পষ্ট বিভাজন সত্ত্বেও দুর্ভাগ্য-জনক ভাবে কিছু লোক বলে বেড়ান যে আল্লাহ পাকের নেক বান্দাগনের নিকট থেকে সহায়তা প্রার্থনা করা শির্ক। এই যদি তাদের আকীদা হয় তাহলে, প্রিয় পাঠকবর্গ, ভেবে দেখুন, কুফর কাকে বলে ! 


      মুসলমানগনের উপর শির্কের ফতোয়া আরোপকারীদের সম্পর্কে সহীহ বুখারীতে কঠোর হুঁশিয়ারি : যে লোকগুলি মুসলমানদের উপর শির্কের ফতোয়া আরোপ করে তাদের আর একটি বৈশিষ্ট  হল যে , তারা কাফেরদের সম্পর্কে অবতীর্ণ আয়াত সমুহ মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করে। এবিষয়ে তাঁরা নিজেদের পূর্ব-পুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। বুখারী শরীফে বর্নিত আছে যে, সাহাবী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) খারিজীগনকে সর্বাধিক ঘৃনা করতেন। প্রিয় পাঠক , জানেন কি যে সাহাবী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) খারিজীগনকে কেন সর্বাধিক ঘৃনা করতেন ? সহীহ বুখারীতে এর কারন হিসেবে বর্ণিত আছে যে , খারিজীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল যে তাঁরা মূর্তি-পূজারীদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ  আয়াতসমুহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করত [সহীহ বুখারী] । 


          মৃত্যুর পরে কি আল্লাহর ওলীগন সহায়তা করতে পারেন না ? : কিছু লোক একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন তার উত্তর প্রদান করা জরুরী। এই প্রশ্ন-কারীরা বলেন যে, আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর নেক বান্দাগন সহায়তা প্রদানে সক্ষম। কিন্তু তাঁর এই সক্ষমতা তো কেবল তাঁর জীবিত-কালীন সময়কালের জন্য। মৃত্যুর পরে কি তাঁর শরীর ধুলার স্তুপে পরিণত হয়ে যায় না ? যেহেতু সে ধুলার স্তুপে পরিণত হয়েই যায় , তখন কি তাঁর সকল ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে যায় না ? 

          উত্তর : এই সন্দেহের উদ্ভব হয়েছে এই ভ্রম থেকে যে, মানুষ হল মাংস এবং হাড়ের সমস্টি। ইহা মারাত্মক ভ্রম। মানুষের মূল সত্বা হল আত্মা ; মাংস বা হাড় নয়। মাংস এবং হাড়ের তো মৃত্যু হয় কিন্তু আত্মার মৃত্যু হয় না। আত্মার মৃত্যু হলে কবরে শাস্তি আর পুরস্কার কার জন্য? কবর সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, কবর কখনও কখনও জান্নাতের বাগান এবং কখনও কখনও নরকের গহ্বর। এখন অতি-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, কবর কাদের জন্য জান্নাতের বাগান এবং কাদের জন্য নরকের গহ্বর ? উত্তর হল, আত্মার জন্য কারণ আত্মা তখনও অস্তিত্বশীল থাকে । আত্মার সঙ্গে শরীর সর্বদা সেরুপ সম্পৃক্ত থাকে যেরুপ সূর্যালোকের সঙ্গে সূর্য সর্বদা সম্পৃক্ত থাকে যদিও সূর্যালোক সুদুরতম বালিকাভূমিতে বা বৃক্ষ-চূড়ায় বা গৃহছাদে প্রতিফলিত হয়। ফলে স্বীকার করতেই হবে যে মানুষের মূল সত্বা হল আত্মা। আত্মাই আমাদেরকে প্রয়োজন ও বিপদের সময় সহায়তা করে। 
 
                 
      কবরের শাস্তি বা পুরস্কার আমরা দেখতে পাই না কেন ? : আরও একটি প্রশ্ন সাধারণ লোককে বিব্রত করে তা হল এই যে, শরীর বা আত্মা যে শাস্তি বা পুরস্কার কবরে লাভ করে তা আমরা দেখতে পাই না কেন ? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। কবরের ঘটনা-প্রবাহ সংঘটিত হয়  আলামে বারযাখে যা সম্পূর্ণ এক স্বতন্ত্র জগত। আলামে বারযাখের অর্থই হল পর্দার অন্তরালের জগত। এর লজিকাল ব্যাখ্যা প্রদান করা যেতে পারে এভাবে যে, একজন লোকের মাথাব্যথা অসুখ হয়েছে। সে যে মাথার যন্ত্রনায় তীব্র কস্ট পাচ্ছে তা ধ্রুব সত্য কিন্তু আমরা এই যন্ত্রনা না তো দেখতে পাই না তো উপলব্ধি করতে পারি। এর একমাত্র  কারণ হলে এই যে, মাথার এই যন্ত্রনার অস্তিত্ব আমাদের চোখের অন্তরালে। অনুরূপ ভাবে , কবরের শাস্তি ও পুরস্কার লাভও অন্তরালের জগতের ব্যাপার। এই প্রসঙ্গে আর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এটি হল স্বপ্ন দর্শনের উদাহরণ । স্বপ্ন-দর্শন-কারী যদিও বা নিজেকে জ্বলতে দেখে , আমরা তাকে জ্বলতে দেখি না । এর সরল ব্যাখ্যা হল যে, এটি আমাদের দৃষ্টির অন্তরালের জগত। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, যখন কোন ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় তখন কবর তাকে চাপ দেয় , ঐ ব্যক্তি মুসমানই হোক বা অমুসলমান । একটি দৃষ্টিকোন থেকে  মাটিকে মা বলে অভিহিত করা যেতে পারে কারণ মানুষ মাটি থেকে সৃষ্ট এবং মানুষকে মাটিতেই ফিরে যেতে হবে। ধর্ম-ভীরুগনকে মাটি সাদরে অভ্যর্থনা জানাবে কিন্তু উদ্ধতদেরকে সে সাদরে অভ্যর্থনা জানাবে না বরং সে তাদেরকে শাস্তি-প্রদানের জন্য গ্রহণ করবে। শিশুর প্রতি স্নেহশীলা মাতার ন্যায় সে মুসলিমগনকে স্বাগত জানায় কিন্তু কাফেরগনকে সে এমনভাবে পীড়ন করে যে দু দিকের পাঁজর পরস্পরকে অতিক্রম করে যায়। সুতরাং, প্রমাণিত হল যে, আত্মা মৃত্যুবরণ করে না এবং কবরে পুরস্কার ও শাস্তি সত্য।  
          

              আল্লাহর ওলীগনের  কবরে জীবিত থাকার প্রমাণ :  প্রিয় পাঠক! আসুন, আমরা পুনরায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাগনের আল্লাহ-প্রদত্ত বিস্ময়কর বৈশিস্টাবলী সংক্রান্ত আলোচনায় প্রত্যাবর্তন করি। আল্লাহর প্রিয় বান্দাগনের শরীর ও আত্মা যেহেতু তাঁদের গুণাবলীর  সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাই ঐ বান্দাগন ইনতেকালের পরেও আমাদেরকে সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম। তাঁরা মাইলের পর মাইল বিচরণ করতে পারেন এবং তাঁরা দূরের ও নিকটের জিনিস শুনতে পান ও দেখতে পান। আল্লাহর অনুমতিক্রমে যেখানে আল্লাহর প্রিয় বান্দাগন ঐ কাজগুলি করতে পারেন, সেখানে তাঁদের নিকট সাহায্য চাওয়াকে কোন সুস্থ ও বিবেক-সম্পন্ন মানুষ কিভাবে শির্ক বলতে পারে ? তিরমিজি শরীফে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা একজন সাহাবি এক জায়গায় তাবু স্থাপন করলেন । তিনি জানতেন না যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে তাবুটি স্থাপন করেছেন একটি কবরের উপরে।  কিছুক্ষণ পরে তিনি ইহা উপলব্ধি করতে পারলেন কারণ তিনি কবর থেকে সুরা মুলক তেলাওয়াতের শব্দ শুনতে পেলেন। সমগ্র ঘটনাটি তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, সুরাহ মুলকের তেলাওয়াত কবরে সাহায্য করে এবং শাস্তি থেকে রক্ষা করে [তিরমিজি শরীফ ] । এই হাদীস থেকে আমরা প্রমান পেলাম যে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাগন কবরে জীবিত আছেন। যদি তা না হোত তাহলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করতেন। কিন্তু তিনি বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করেন নি, বরং সুরাহ মুলকের ফাজিলাত ব্যাখ্যা করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে, আল্লাহর নেক বান্দাগন কবরে জীবিত আছেন।
 
     আল্লাহর ওলীগনের  কবরে জীবিত থাকার হাদীস থেকে আরও প্রমাণ :  প্রিয় পাঠক! আসুন, সাহাবায়ে কেরামের আমলে সংঘটিত আর একটি ঘটনার প্রতি দৃষ্টিপাত করে নিই। ইহা ছিল হজরত আমীর মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সময়কাল। মক্কা ও মদিনার মধ্যে একটি ক্যানাল খনন করা হচ্ছিল। ঘটনাক্রমে,  ক্যানালটি খনন করা হচ্ছিল ঐ স্থানের উপর দিয়ে যেখানে ওহুদের শহীদগণ  কবরস্থ ছিলেন। খনন কার্য চলাকালীন  অকস্মাৎ একজন লোকের কোদালের আঘাতে একজন শহীদের পা কেটে যায় এবং ঐ পবিত্র পা থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করে। এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হল, কেবল আত্মায় নয়, আল্লাহ পাকের নেক বান্দাগণের শরীরও জীবিত থাকে। এই ঘটনাটি শায়খ মুহাদ্দিস দেহলভী (رضي الله عنه) এর ‘জাজাবুল কুলুব’ এবং ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (رضي الله عنه) এর ‘শারহুস সুদূর’ গ্রন্থে বর্ণিত  আছে।


       আল্লাহর ওলীগনের  কবরে জীবিত থাকার সহীহ বুখারী থেকে  প্রমাণ : সহীহ বুখারীতে ওরওয়া ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, ওলীদ ইবনে আবদুল মালেকের আধিপত্য কালে রওজা শরীফের চার-পার্শ্বের দেওয়ালের পুনঃনির্মান করা হচ্ছিল। তখন ( দেওয়ালের  গর্ত খুঁড়ার সময় মাটি ধসে  ) শব-দেহের একটি পা খুলে যায়। এতে সকলেই আতংকিত ও বিহ্বল হয়ে পড়ল ( এমনকি ঘটনা স্থলে উপস্থিত মদিনার তদানীন্তন গভর্নর ওমর ইবনে আবদুল আযীয (رضي الله عنه) স্বয়ং অচৈতন্য হয়ে পড়েন) । সকলেই ভাবতে লাগলেন যে, ইহা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পা নয় তো ! এবিষয়ে সঠিক তথ্য অবগত হওয়ার জন্য তাঁরা কাউকে পেলেন না। অতঃপর ওরওয়া (رضي الله عنه) তাঁদেরকে সুনিশ্চিত করে বললেন যে, আমি শপথ করে বলছি, ইহা ইহা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পা নয় ; বরং ইহা হজরত উমর (رضي الله عنه) এর পা [ সহীহ বুখারি ] ।   

         আল্লাহর ওলীগনের  কবরে জীবিত থাকার আর একটি  প্রমাণ :  আমরা পাঠক বর্গের সমীপে আর একটি ঘটনা উপস্থাপন করছি। ইহা ঘটেছিল তাবেঈগনের যুগে। ঈমাম আবু নঈম (رضي الله عنه) তাঁর “ হিলইয়াতুল আওলিয়া” গ্রন্থে হজরত সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে এই ঘটনা রেওয়ায়েত  করেছেন। তিনি বলেন : “ আল্লাহ পাকের শপথ ! হজরত হামিদ তাবিল (رضي الله عنه) এবং আমি হজরত সাবিত নাবহানী (رضي الله عنه) কে সমাধিস্থ করছিলাম।যখন আমাদের কাঁচা ইটগুলি সমান করা হয়ে গেল, তখন একটা ইট ঘটনাক্রমে কবরের মধ্যে পড়ে যায়। আমি কবরে দেখলাম যে তেনি কবরে নামাজ পাঠ করছেন এবং এই দোয়া করছেন, ‘ হে আল্লাহ ! আপনি আপনার কিছু  মাখলুককে কবরে নামাজ পাঠ করার অনুমতি প্রদান করেছেন। আমাকেও এই অনুমতি দান করুন। ইহা আল্লাহ পাকের শানের পরিপন্থী যে তিনি এই দোয়া রদ করবেন [হিলইয়াতুল আওলিয়া - আবু নঈম ]। হজরত সাবিত বিন আসলাম নাবহানী বাসরি (رضي الله عنه) ছিলেন বিশিষ্ট তাবেঈ। তিনি হজরত আনাস (رضي الله عنه) সহ বহু সাহাবায়ে কেরামের নিকট থেকে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন । হজরত সুবা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে , তিনি এক দিন ও এক রাত্রে সমগ্র কুরআন  তেলাওয়াত সম্পূর্ণ করতেন।তিনিন দিনের বেলায় রোজা রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন।  হজরত আবু বকর আল মাজনী বলেন যে, তিনি হজরত সাবিত বিন আসলাম নাবহানী বাসরি (رضي الله عنه) এর চেয়ে কোন অধিক ধর্মভীরু ব্যক্তিকে দেখেন নি [ কাশফুন নূর – ইমাম আবদুল গনি নাবলুসি – পৃ নং ৯] । 


           ইমাম বাইহাকী (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত আর একটি প্রমান : ইমাম বাইহাকী (رضي الله عنه) কাজী নিশাপুরি ইব্রাহীম (رضي الله عنه) থেকে রেওয়ায়েত করেছেন যে, একজন ধর্মভীরু নারী ইনতেকাল করলেন। তাঁর জানাজায় অংশগ্রহন কারীদের মধ্যে একজন কাফন চোরও ছিল। সে জানাজায় অংশগ্রহন করেছিল কেবল এটা দেখার জন্য যে, কোথায় কবর দেওয়া হচ্ছে। যখন অন্ধকার নেমে এল, সে কবর খুঁড়ল এবং কাফন চুরি করতে উদ্যত হল। তখনই ঐ নেক মহিলা বলে উঠলেন, ‘ ইয়া আল্লাহ ! ইহা কি অদ্ভুত যে, একজন জান্নাতী লোক অপর জান্নাতীর কাপড় চুরি করছে’! তিনি বুঝালেন যে, তাঁর জানাজায় অংশগ্রহন কারী সকল ব্যক্তিকেই আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিয়েছেন। যেহেতু কাফন চোরও ঐ জানাজায় অংশগ্রহন করেছিল, তাই আল্লাহ পাক তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। ঐ চোর তৎক্ষনাৎ কবরটি  ঢেকে দিল এবং আন্তরিক ভাবে তওবা করল। 
              এই হল আল্লাহর ওলীগনের মাহাত্ম। একজন এল চোর হিসেবে আর ফিরে গেল ওলী-আল্লাহ হিসেবে। 


         মুসলিমগন আল্লাহর ওলীগনের মাজার শরীফ জিয়ারত কেন করতে যান ? : একটি হাদীসে-কুদসিতে পরিলক্ষিত হয় যে, যখন কোন বান্দাহ আল্লাহর মাহবুব হয় , তখন তার কথা ও গুণাবলী আল্লাহর কথা ও গুণাবলীর আয়না হয়ে যায়। সে যা চায়, আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন এবং যখন সে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে তখন আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন [সহীহ বুখারী ] । আল্লাহর মাহবুব বান্দাগনের উপর আল্লাহর এই রাহমাত তাঁদের ইনতেকাল্র পরেও পরিলক্ষিত হয়। মূলতঃ এই কারনেই  মুসলিমগন আল্লাহর ওলীগনের মাজার শরীফ জিয়ারত করেন। মুসলিমগন জানেন যে, আল্লাহর ওলীগন আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও সহায়তা লাভের প্রতিশ্রুতি-প্রাপ
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|