এখানে কিল্কিকরে পড়ুন
![](http://www.yanabi.in/uploads/editor/pk/rnbqk013hcqd.jpg)
১। 'কিয়াম' মানে নামাযে দাঁড়ানো। আর কিয়ামের নিন্মতম পরিমাণ হচ্ছে, হাত প্রসারিত করলে হাঁটু পর্যন্ত না পৌঁছা আর পুরো কিয়াম হচ্ছে, সোজা হয়ে দাঁড়ানো।" [দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]
২। "কিয়ামের পরিমাণ হচ্ছে ততটুকু সময় পর্যন্ত যতটুকু কিরাত পড়তে সময় লাগে। অর্থাৎ ফরয কিরাত পরিমাণ কিয়ামও ফরয আর ওয়াজিব ও সুন্নাত কিরাত পরিমাণ কিয়ামও ওয়াজিব ও সুন্নাত।" [দুররে মুখতার]
৩। "উপরিউক্ত বিধান প্রথম রাকাত ছাড়া অন্যান্য রাকাতের জন্য প্রযোজ্য। প্রথম রাকাতে ফরয কিয়ামের সাথে 'তাকবীরে তাহরীমা'র পরিমাণও সামিল হবে।" [বাহারে শরীয়ত]
৪। "ফরয, বিতর, দু'ঈদ এবং ফজরের সুন্নাত নামাযে কিয়াম ফরয। বিনা ওযরে শরীর সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও ওইসব নামায বসে আদায় করলে আদায় হবে না।" [দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]
৫। "এক পায়ের উপর দাঁড়ানো অর্থাৎ অন্য পা মাটি থেকে উঠিয়ে রেখে কিয়াম করা 'মাকরুহে তাহরীমী'। হ্যাঁ কোন ওযরবশতঃ এমনটা করলে অসুবিধা নেই।" [আলমগীরী]
৬। "যদি কিছুক্ষণের জন্য হলেও দাঁড়াতে সক্ষম হয়, যদিও ওইটুকু সময় দাঁড়িয়ে 'আল্লাহু আকবর' বলতে পারে, তবে ফরয হচ্ছে দাঁড়িয়ে ওইটুকু বলে বসে যাবে।" [গুনীয়া, ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-১, পৃ. ৫২]
৭। "আজকাল প্রায় দেখা যায় যে, সামান্য নিঃশক্তি অথবা মামুলী ধরনের রোগ বা বয়োবৃদ্ধির কারণে শুরু থেকে ফরয নামায বসে পড়ে। অথচ ওই বসে নামায আদায়কারীদের মধ্যে অনেক এমনও আছেন, যাঁরা সাহস করলে ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতে পারেন আর এতে না তাঁদের রোগ বৃদ্ধি পায়, না নতুন রোগ সৃষ্টি হবে, না দাঁড়ানো থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়, বরং অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, শারীরিক দূর্বলতা এবং রোগের বাহানায় বসে ফরয নামায আদায়কারী অনেকক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই- সেই আলাপ করে থাকেন। ওইসব লোকের জন্য বসে বসে ফরয নামায পড়া জায়েয নেই। বরং তাঁদের জন্য ফরয হচ্ছে দাঁড়িয়ে ফরয নামায আদায় করা।" [ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-৩, পৃ. ৫৩ ও ৪২৪]
৮। "যদি কোন ব্যক্তি দূর্বল বা অসুস্থ হয় কিন্তু লাঠি বা খাদেম বা দেয়ালের সাথে ঠেস লাগিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়, তবে ফরয হচ্ছে- তার জন্য ঠেস লাগিয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়া।" [গুনীয়া, ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-৩, পৃ. ৫৩]
৯। "চলন্ত কিশতীতে বসে নামায পড়া যায়। [গুনীয়া] অর্থাৎ যখন মাথা ঘুরার প্রবল ধারণা হয়। তেমনিভাবে চলন্ত ট্রেন, বাস ও অন্যান্য আরোহীতে যদি দাঁড়ানো সম্ভব না হয় তবে বসে নামায পড়া যায়। কিন্তু ওই নামায পরবর্তীতে পুনরায় পড়তে হবে।" [ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-২, পৃ. ৬২৮]
১০। 'কিয়ামে' (দাঁড়ানো অবস্থায়) দু'পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা সুন্নাত। আর এটা আমাদের ইমাম আ'যম থেকে বর্ণিত।" [ ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-৩, পৃ. ৫১]
১১। "কিয়াম অবস্থায় কিছুক্ষণ এক পায়ের উপর জোর দেওয়া, তারপর কিছুক্ষণ অপর পায়ের উপর জোর দিয়ে দাঁড়ানো সুন্নাত।" [ ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-৩, পৃ. ৪৪৮]
১২। "কিয়াম অবস্থায় ডানে-বামে হেলা-দোলা 'মাকরুহে তানযিহী'।" [বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ১৭৩]
১৩। "কিয়াম অবস্থায় নামাযীর দৃষ্টি সাজদার স্থানে রাখা মুস্তাহাব।" [বাহারে শরীয়ত]
১৪। "কিয়াম অবস্থায় পুরুষ হাত এভাবে বাঁধবে যে, নাভীর নীচে ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির জোড়ার উপর রাখবে এবং কনিষ্ট ও বৃদ্ধাঙ্গুলি কব্জির চতুষ্পার্শ্বকে গোলাকৃতি রাখবে আর মাঝখানের তিন আঙ্গুলকে বাম হাতের পিঠের উপর বিছিয়ে রাখবে। আর মহিলা বাম হাতের তালু বুকের উপর স্তনের নীচে রেখে তার পিঠের উপর ডান হাতের তালু রাখবে।" [গুনীয়া, ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-৩, পৃ. ৪৬]
১৫। "দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নফল নামায বসে পড়া যায়। কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। হাদীস শরীফে আছে, বসে আদায়কারী নামায দাঁড়িয়ে আদায়কারীর চেয়ে অর্ধেক সওয়াব পাবে। হ্যাঁ যদি কোন ওযরের কারণে বসে পড়ে তবে সওয়াবের মধ্যে কম হবে না। বর্তমানে সাধারণ লোকদের মধ্যে এ কথা প্রচলন আছে যে, নফল নামায বসে পড়তে হয়। হয়তো নফল নামায বসে পড়াকে উত্তম মনে করেও থাকে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম। আর দাঁড়িয়ে পড়ার মধ্যে দু'গুণ সওয়াব রয়েছে। অবশ্য কোন ওযর ছাড়াও বসে নফল নামায পড়লে ওই নামায মাকরুহ ছাড়াই আদায় হয়ে যাবে- তবে সাওয়াব মিলবে অর্ধেক।" [দুররে মুখতার, রাদ্দুল মুহতার, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৪, পৃ.১৭]
১৬। "হুযূর আকদাস ছরওয়ারে আলম [ﷺ] নফল নামায বসে আদায় করেছেন কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন যে, 'আমি তোমাদের মত নই। দাঁড়ানো বা বসে উভয় আমার জন্য সাওয়াব সমান'। তাই উম্মতের জন্য নফল নামায দাঁড়িয়ে উত্তম ও দু'গুণ সাওয়াব আর বসে পড়লেও কোন আপত্তি নেই।" [ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-৩, পৃ.৪৬১]
১৭। "বসে নফল আদায় করার সময় রুকূ এমনভাবে করবে যে, কপাল হাঁটু বরাবর ঝুঁকাবে আর রুকূ'তে পাছা (নিতম্ভ) উঠানোর প্রয়োজন নেই। বসে নফল নামায পড়ার সময় রুকূ করতে পাছা উঠিয়ে রাখা 'মাকরুহে তানযিহী'।" [ফাত্ওয়া-এ রযভীয়্যাহ্, খন্ড-৩, পৃ. ১৫১, ৬৯]
১৮। "কিয়াম বা দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু সাজদা করতে অসুবিধা আছে অথবা সাজদা করা যায় কিন্তু সাজদা করার দরুন শরীরের কোন আঘাত বা জখম থেকে কিছু প্রবাহিত হওয়ার আশংকা আছে তখন উত্তম হচ্ছে বসে ইশারায় নামায পড়া। আর দাঁড়িয়ে ইশারায়ও পড়া যায়।" [দুররে মুখতার, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ৬৮]
১৯। "যদি কোন ব্যক্তি এতো দূর্বল যে, মসজিদে জামা'আত আদায়ের জন্য যাওয়ার পর দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, আর যদি ঘরে পড়ে, দাঁড়িয়ে পড়তে পারে তাহলে ঘরেই পড়বে। যদি ঘরে জামা'আত পড়া সম্ভব হয় তবে তো ভাল, অন্যথায় একাকী দাঁড়িয়ে ঘরেই পড়ে নেবে।" [দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার ও বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ৬৯]
২০। "যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায পড়ার দরুন প্রস্রাবের ফোটা টপকে পড়ে কিন্তু বসে পড়লে ফোটা টপকায় না, তখন তার জন্য ফরয হচ্ছে বসে নামায পড়া। তবে শর্ত হচ্ছে- প্রস্রাবের ফোটা টপকানোর রোগ অন্য কোন পদ্ধতিতে যদি বন্ধ করা না যায়।" [দররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ৬৯]