![](https://yanabi.in/uploads/editor/jz/ut63aqcnrhbs.jpg)
রোযার কাফ্ফারার পদ্ধতি
রোযা ভাঙ্গার কারণে কাফ্ফারা হচ্ছে-সম্ভব হলে একটা বাঁদী (ক্রীতদাস) কিংবা
গোলাম (ক্রীতদাস) আযাদ করবে। তা করতে না পারলে, যেমন-তার নিকট না
ক্রীতদাসী বা ক্রীতদাস আছে, না এত সম্পদ আছে যে, ক্রয় করতে পারবে,
অথবা অর্থকড়ি তো আছে, কিন্তু দাস-দাসী পাওয়া যাচ্ছে না, যেমন-আজকাল
দাস-দাসী পাওয়া যায় না, তাহলে ধারাবাহিকভাবে দু’মাস অর্থাৎ ষাটটি রোযারাখে
ব। তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে ষাটজন মিসকীনকে দু'বেলা পেট ভরে খানা
খাওয়াবে। এক্ষেত্রে এটা জরুরী যে, যাকে এক বেলা খাবার খাওয়েছে, তাকেই
দ্বিতীয় বেলা খাবার খাওয়াবে।
এটাও হতে পারে যে, ষাটজন মিসকীনকে একেকটা সাদকাই ফিতর,
অর্থাৎ প্রায় ২ কিলো ৫০ গ্রাম পরিমাণ গম অথবা এর মূল্য প্রদান করবে। একজন
মিসকীনকে একত্রে ষাট সদকা-ই-ফিতর দিতে পারবে না। হাঁ, এটা হতে পারে
যে, একজন মিসকীনকে ষাট দিন যাবত প্রতিদিন একেকটা সদকা-ই-ফিতর
দেবে। রোযাগুলো পালন কালে (কাফ্ফারা আদায়কালীন সময়ে) যদি মাঝখানে
একটি রোযাও ছুটে যায়, তবে পুনরায় শুরু থেকে ষাটটা রোযা রাখতে হবে;
পূর্বেকার রোযাগুলো হিসাবে ধরা হবে না, যদিও উনষাটটা রেখে থাকে; চাই রোগ
ইত্যাদি কোন ওযরের কারণেই ছুটে যাক না কেন? হাঁ, অবশ্য নারীর যদি হায়য
এসে যায়, তবে হায়যের কারণে রোযা ছুটে গেলে, সেটাকে বিরতি হিসেবে গণ্য
করা হবে না। অর্থাৎ হায়যের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রোযাগুলো মিলে ষাটটি পূর্ণ হয়ে
গেলে কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯০)
কেউ রাত থেকে রোযার নিয়্যত করেছে, তারপর সকালে কিংবা দিনের কোন
সময় বরং ইফতারের এক মুহুর্ত পূর্বে কোন বিশুদ্ধ অপারগতা ব্যতিরেকেই এমন
কোন বস্তু দ্বারা, যাকে মানুষ ঘৃণা করে না। (যেমন-খাদ্য, পানি, চা, ফলমূল,
বিস্কুট, শরবত, মধু, মিষ্টি ইত্যাদি) ইচ্ছাকৃতভাবে খেয়ে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে,
তবে রমযান শরীফের পর ওই রোযার কাযার নিয়্যতে একটা রোযাও রাখতে
হবে। এবং সাথে কাফ্ফারাও দিতে হবে, যার পদ্ধতি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
কাফ্ফারা সম্পর্কে ১১ টি নিয়মাবলী
১. রমযানুল মুবারকে কোন বিবেকবান, বালেগ, মুকীম (অর্থাৎ মুসাফির নয় এমন
লোক) রমযানের রোযা আদায় করার নিয়্যতে রোযা রাখলো। আর কোন বিশুদ্ধ
অপারগতা ব্যতিরেকে (জেনেবুঝে) স্ত্রী সঙ্গম করলে কিংবা করালে। অথবা অন্য
কোন স্বাদের কারণে কিংবা ঔষধ হিসেবে খেলো বা পান করলো। এমতাবস্থায়
রোযা ভেঙ্গে যাবে। তার উপর কাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই অপরিহার্য হবে। (রদ্দুল
মুহতার, খন্ড-০৩, পৃ-৩৮৮)
২. যেখানে রোযা ভাঙ্গলে কাফ্ফারা অপরিহার্য হয়, সেখানে পূর্ব শর্ত হচ্ছে-রাত
থেকেই রমযানের রোযার নিয়্যত করে নেয়া। যদি দিনে নিয়্যত করে এবং ভেঙ্গে
ফেলে, তাহলে কাফ্ফারা অপরিহার্য নয়, শুধু কাযা যথেষ্ট।
(আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম, পৃ-১৮০)
৩. মুখ ভরে বমি হলে কিংবা ভুলবশতঃ আহার করলে কিংবা স্ত্রী সহবাস করলে।
এসব অবস্থায় তার জানা ছিলো যে, রোযা ভাঙ্গে নি, তবুও সে আহার করে
নিয়েছে, এমতাবস্থায় কাফ্ফারা অপরিহার্য নয়। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-০৩, পৃ-৩৭৫)
৪. স্বপড়বদোষ হয়েছে আর জানা ছিলো যে, তার রোযা ভাঙ্গেনি, তারপরেও আহার
করে নিয়েছে, তবে কাফ্ফারা অপরিহার্য। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-০৩, পৃ-৩৭৫)
৫. নিজের থুু ফেলে পুনরায় তা চেঁটে নিলো। কিংবা অপরের থুু গিলে ফেললে।
কিংবা দ্বীনি কোন সম্মানিত (বুযুর্গ) ব্যক্তির থুু তাবাররুক হিসেবে গিলে ফেললে
কাফ্ফারা অপরিহার্য। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩) তরমুজের ছিলকা খেয়েছে। তা
শুষ্ক হোক কিংবা এমন হয় যে, লোকজন তা খেতে ঘৃণা করে, তাহলে কাফ্ফারা
দিতে হবে না, অন্যথায় জরুরী। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০২)
৬. চাউল, কাঁচা ভুট্টা, মশুর কিংবা মুগ ডাল খেয়ে নিয়েছে। এমতাবস্থায় কাফ্ফারা
অপরিহার্য নয়। এ বিধান কাঁচা যবেরও। কিন্তু ভুনা হলে কাফ্ফারা অপরিহার্য।
(আলমগীরী, খণ্ড-১ম, পৃ-২০২)
৭. সাহারীর লোকমা মুখে ছিলো। সোবহে সাদিকের সময় হয়ে গেছে কিংবা
ভুলবশতঃ খাচ্ছিলো, লোকমা মুখে ছিলো, হঠাৎ স্মরণ হয়ে গেলো, তারপরেও
গিলে ফেলেছে, এ দুটি অবস্থায় কাফ্ফারা ওয়াজিব। আর যদি লোকমা মুখ থেকে
বের করে পুনরায় খেয়ে ফেললো, তাহলে শুধু কাযা ওয়াজিব, কাফ্ফারা নয়।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩)
৮. পালাৎমে জ্বর আসতো। আজ পালার দিন ছিলো। তাই জ্বর আসবে ধারণা
করে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভেঙ্গে ফেললো। তাহলে এমতাবস্থায় কাফ্ফারা থেকে
অব্যাহতি মিলবে। (অর্থাৎ ঃ কাফ্ফারার প্রয়োজন নেই।) অনুরূপভাবে, নারীর
নির্ধারিত তারিখে হায়য (ঋতুস্রাব) হতো। আজ ঋতুস্রাবের দিন ছিলো। সুতরাং
স্বেচ্ছায় রোযা ভেঙ্গে ফেললো; কিন্তু হায়য আসেনি। তাহলে, কাফ্ফারা থেকে
মুক্তি পাওয়া যাবে। (অর্থাৎ কাফ্ফারার প্রয়োজন নেই।)
(দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯১)
৯. যদি দুটি রোযা ভাঙ্গে তবে দুটির জন্য দুটি কাফ্ফারা দেবে, যদিও প্রমটির
কাফ্ফারা এখনো আদায় করেনি। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-০৩, পৃ-৩৯১) যখন দুইটি দুই
রমযানের হয়। আর যদি উভয় রোযা এক রমযানের হয়, প্রমটার কাফ্ফারা
আদায় করা না হয়, তবে একটি কাফ্ফারা উভয় রোযার জন্য যথেষ্ট।
(আল-জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-০১, পৃ-১৮২)
১০. কাফ্ফারা অপরিহার্য হবার জন্য এটাও জরুরী যে, রোযা ভাঙ্গার পর এমন
কোন কাজ সম্পনড়ব হয়নি, যা রোযার পরিপন্থি (রোযা ভঙ্গকারী), কিংবা বিনা
ইচ্ছায় এমন কোন কাজ পাওয়া যায়নি, যার কারণে রোযা ভাঙ্গার অনুমতি পাওয়া
যেতো, উদাহরণস্বরূপ, ওই দিন নারীর হায়য কিংবা নিফাস এসে গেছে, কিংবা
রোযা ভাঙ্গার পর ওই দিনই এমন রোগ হয়েছে, যাতে রোযা না রাখার অনুমতি
রয়েছে, তাহলে কাফ্ফারা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং সফরের কারণে অব্যাহতি
পাওয়া যাবে না, যেহেতু এটা ইচ্ছাকৃত কাজ।
(আল-জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম, পৃ-১৮১)
১১. যে অবস্থায় রোযা ভাঙ্গলে কাফ্ফারা দেয়া আবশ্যক হয়না, এতে শর্ত যে,
একবার এই রকম হয়েছে এবং নাফরমানীর ইচ্ছা করে না, যদি নাফরমানীর ইচ্ছা
থাকে তবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৪৪০)
Comments