নং ৫২৩১)
মুখে দুর্গন্ধ হলে নামায মাকরূহ হয়
ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যার ৭ম খন্ডের ৩৮৪ নং পৃষ্ঠায় উলে−খ আছে যে, মুখে
দুর্গন্ধ থাকা অবস্থায় (ঘরে আদায়কৃত) নামাযও মাকরূহ। আর এমতাবস্থায়
মসজিদে যাওয়া হারাম। যতক্ষণ না মুখের দুর্গন্ধ দূর না হয়।
আর অপর নামাযীকেও কষ্ট দেয়া হারাম। আর অন্য নামাযী না থাকলে
তখনও দুর্গন্ধের কারণে ফিরিশতাদের কষ্ট হয়। হাদীস শরীফে আছে, যেই সব
জিনিষ দ্বারা মানুষ কষ্ট পায় এতে ফিরিস্তারাও কষ্ট পায়।
(সহীহ মুসলিম, পৃ-২৮২, হাদীস নং-৫৬৪)
দুর্গন্ধ মুক্ত মলম লাগিয়ে মসজিদে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
আমার আকা আলা হযরত
رضي الله عنه বর্ণনা করেন, যার শরীরে
দুর্গন্ধ হয় যাতে (অপরাপর) নামাযীদের কষ্ট হয় যেমন, “মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের
হওয়া) বগল থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো, ঘা, খশ পাচড়ার কারণে গন্ধক মালিশ করা বা
অন্য কোন দুর্গন্ধ যুক্ত মলম বা লোশন লাগায় তাকেও মসজিদে আসতে নিষেধ
করেছেন। (সংশোধিত ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, খণ্ড-৮ম, পৃ-৭২)
কাঁচা মূলা, কাঁচা পিয়াজ, কাঁচা রসুন, ও ঐ সমস্ত জিনিষ যার গন্ধ
অপছন্দ হয়, সেগুলো খেয়ে মসজিদে ততক্ষণ পর্যন্ত যাওয়া জায়েজ নেই যতক্ষণ
পর্যন্ত হাত, মুখ ইত্যাদিতে গন্ধ থাকে। যাতে করে ফিরিশতাদের কষ্ট হয়।
হাদিস শরীফে আছে, আল্লাহর মাহবুব, অদৃশ্যের সংবাদদাতা, হযরত
মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পিঁয়াজ, রসুন,
গিনদানা নামক তরকারী খেয়েছে অবশ্যই সে যেন আমাদের মসজিদের
নিকটবর্তীও না আসে, আরো বলেছেন, যদি খেতেই চাও তবে রানড়বা করে তার গন্ধ
দূর করে নাও। (সহীহ মুসলিম শরীফ, পৃ-২৮২, হাদীস নং-৫৬৪, দারু ইবনে হাযাম, বৈরুত)
সাদরুশ শরীআ, বদরুত তরীকা, আল্লামা মওলানা মুফতী মুহাম্মদ
আমজাদ আলী
رحمة الله عليه
বর্ণনা করেন, মসজিদে কাঁচা রসুন ও পিঁয়াজ
খাওয়া বা খেয়ে যাওয়া জায়িজ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্গন্ধ অবশিষ্ট থাকে এবং এই
একই হুকুম ঐ সমস্ত জিনিসের ব্যাপারে যেগুলোতে গন্ধ হয় যেমন- “গিন্দানা”
(এটা রসূনের তৈরী তরকারী), মূলা, কাঁচা মাংস, কেরোসিন। ঐ দিয়াশলাই যাতে
ঘষা দিলে গন্ধ ছড়ায়, বায়ু বের করা ইত্যাদি।
যার গান্ধা দেহনীর (তথা মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার রোগ আছে বা
দুর্গন্ধযুক্ত অন্য কোন আঘাত থেকে বা দুর্গন্ধযুক্ত কোন ঔষধ লাগালে তাহলে
যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্গন্ধ চলে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তার মসজিদে আসা নিষেধ।)
(বাহারে শরীআত, খণ্ড-৩য়, প-ৃ ১৫৪)
ইমাম আহমদ রেযা
رضي الله عنه এর দরবারে প্রশড়ব করা হল যে,
নামাযীদের জন্য টয়লেট মসজিদ থেকে কতটুকু দূরে তৈরী করা যাবে? এর উত্তরে
আমার আকা আলা হযরত
رضي الله عنه বললেন, মসজিদকে দুর্গন্ধ থেকে
রক্ষা করা ওয়াজিব। এজন্য মসজিদে কেরোসিন তৈল জ্বালানো হারাম। মসজিদে
দিয়াশলাই (অর্থাৎ দুর্গন্ধযুক্ত বারুদ বিশিষ্ট ম্যাচের কাঠি) জ্বালানো হারাম। এমন
কি হাদীস পাকে ইরশাদ হয়েছে, মসজিদে কাঁচা মাংস নিয়ে যাওয়া জায়েজ নেই।
(ইবনে মাজাহ্, খন্ড-১ম, পৃ-৪১৩, হাদীস নং-৭৪৮, দারুল মারিফাত, বৈরুত)
অথচ কাঁচা মাংসের দুর্গন্ধ অনেকটা হালকা। অতএব যেখান থেকে
মসজিদে দুর্গন্ধ পৌঁছে সেখান পর্যন্ত টয়লেট, প্রস্রাবখানা তৈরী করাতে নিষেধ
রয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ্, খন্ড-১৬, পৃ-২৩২)
সুলতানে মদীনা হযরত মুহাম্মদ
ﷺ ইরশাদ
করেছেন, মসজিদ সমূহকে বেচা-কেনা, ঝগড়া-বিবাদ, উচ্চস্বরে আওয়াজ করা,শরয়ী শাস্তি প্রতিষ্ঠা করা ও তলোয়ারের আঘাত থেকে বাঁচাও।
(ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, পৃ-৪১৫, হাদীস নং-৭৫০)
এমন বাচ্চা যার নাপাকীর (অর্থাৎ পেশাব ইত্যাদি করে দেয়ার) সম্ভবনা থাকে ও
পাগলকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হারাম। যদি নাপাকীর সম্ভবনা না থাকে তাহলে
মাকরুহ্। *
বাচ্চা অথবা পাগলকে (অথবা বেঁহুশ বা যাকে জ্বিনে ধরেছে তাকে) ঝাড়-ফুঁক,
তাবিজ নেওয়ার জন্যও মসজিদে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শরীআতের পক্ষ থেকে
অনুমতি নেই। ছোট বাচ্চাকে ভালভাবে কাপড়ে পেচিয়ে এমনকি “পেকিং” করেও
নেয়া যাবে না। যদি আপনি বাচ্চা ইত্যাদি মসজিদে নেয়ার মত ভুল করে থেকে
থাকেন তবে মেহেরবানী করে দ্রুত তাওবা করে নিন, ভবিষ্যতে না নেওয়ার
নিয়্যত করুন। হ্যাঁ, মসজিদের বারান্দা যেমন ইমাম সাহেবের হুজরায় বাচ্চাকে
নিয়ে যেতে পারেন যখন মসজিদের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজন না হয়।
উপরিউক্ত হাদিস শরিফ থেকে বোঝা যায় মসজিদের প্রতি কেমন ভাবে আদব করা প্রয়োজন।আর আমাদের আসে পাশের মসজিদ গুলি দেখলে বুঝতে পারবো তা কতটি পালন করা হচ্ছে নেকি করতে গিয়ে আমরা কত পাপ করে ফেলছি, এমন কি মসজিদের ইমামগুলিও এই বিষয়ে সচেতন নয়। নিচে মসজিদ সম্পর্কে ১৯টি মাদানী ফুল বর্ণনা করা। সকলে আমরা পালন করার চেস্টা করবো ইন শা আল্লাহ।
মসজিদ সম্পর্কে ১৯ টি মাদানী ফুল
১। বর্ণিত আছে, এক মসজিদ আল্লাহ তাআলার নিকট অভিযোগ করল, মানুষ
আমার ভিতর বসে দুনিয়াবী কথা বলে, অভিযোগ করে ফেরার পথে তার সাথে
পথিমধ্যে ফিরিস্তার সাক্ষাত হল এবং বললেন, আমাদেরকে মসজিদে দুনিয়াবী
আলোচনাকারীদের ধ্বংস করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, খন্ড-১৬, পৃ-৩১২)
২। বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি গীবত করে (যা কঠিন হারাম ও যিনা থেকেও
নিকৃষ্ট) এবং যারা মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলে তাদের মুখ থেকে খুব নিকৃষ্ট
দুর্গন্ধ বের হয়, তাদের ব্যাপারে ফিরিশতারা আল্লাহ তাআলার দরবারে
অভিযোগ করে। আল্লাহর পানাহ! যেখানে মুবাহ ও বৈধ কথা মসজিদে বসে শরয়ী
প্রয়োজন ছাড়া করার ব্যাপারে এই বিপদ, সেখানে মসজিদের ভিতর বসে হারাম
ও অবৈধ কাজ করলে কি অবস্থা হবে! (প্রাগুক্ত)
৩। দর্জির জন্য মসজিদে বসে কাপড় সেলাই করার অনুমতি নেই। অবশ্য, যদি
শিশুদের বাধা প্রদান ও মসজিদের হিফাযতের জন্য বসে, তবে ক্ষতি নেই।
অনুরূপভাবে লিখকের জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লিখার অনুমতি নেই।
(আলমগীরি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১০)
৪। মসজিদের ভিতর কোন ধরণের খড়কুটা কখনো ফেলবেন না। সায়্যিদুনা শায়খ
আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী
رحمة الله عليه জযবুল কুলুব এ উদ্ধৃতি দিয়ে
লিখেন, “মসজিদে যদি সামান্য খড়কুটাও ফেলা হয়, তবে মসজিদের এতো বেশি
কষ্ট অনুভূত হয়, যেমন কষ্ট মানুষ তার চোখে সামান্য কণা পড়লে অনুভব করে।
(জয্বুল কুলূব, পৃ-২৫৭)
৫। মসজিদের দেয়াল, ফ্লোর, চাটাই কিংবা কারপেটের মধ্যে কিংবা সেটার
নিচে থুু ফেলা, নাক সাফ করা, নাক কিংবা কান থেকে ময়লা আবর্জনা বের করে
লাগানো, মসজিদের ফ্লোর বা চাটাই থেকে সূতা কিংবা কিছু ভগ্নাংশ বের করাসবই
নিষেধ।
৬। প্রয়োজনে রুমাল ইত্যাদি দিয়ে নাক মোছলে ক্ষতি নেই।
৭। মসজিদের ধুলা-বালি ঝেড়ে তা এমন জায়গায় ফেলবেন না, যেখানে ফেললে
বেয়াদবী হয়।
৮। জুতা খুলে মসজিদের ভিতর সাথে নিয়ে যেতে চাইলে, ধুলিবালি ইত্যাদি
বাইরে ঝেড়ে নেবেন। যদি পায়ের তালুতে ধূলাবালী ইত্যাদি লেগে থাকে, তবে
নিজের রুমাল ইত্যাদি দিয়ে মুছে মসজিদে প্রবেশ করবেন।
৯। মসজিদের ওযু খানায় ওযু করার পর পা দু’টি ওযূখানাতেই ভাল করে মুছে
নেবেন। ভেজা পায়ে মসজিদে চলাফেরা করলে মসজিদের ফ্লোর ও কার্পেটগুলো
অপরিস্কার ও বিশ্রী হয়ে যায়।
এখন আমার আকা আলা হযরত ইমামে আহলে সুনড়বত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত
মওলানা শাহ আহমদ রাযা খান رضي الله عنه
এর মলফূযাত শরীফ থেকে
মসজিদের কিছু নিয়মাবলী পেশ করা হচ্ছে।
১০। মসজিদে দৌঁড়ানো কিংবা সজোরে চলাচল করা, যার ফলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়,
তা নিষেধ।
১১। ওযু করার পর ওযূর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে পানির এক ফোটাও যেন মসজিদের
ফ্লোরের উপর না পড়্ (েমনে রাখবেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে ওযূর পানির ফোটা
মসজিদের ফ্লোরের উপর ফেলা বৈধ নয়।)
১২। মসজিদের এক দরজা থেকে অন্য দরজায় প্রবেশের সময় (উদাহরণ স্বরূপ,
বারান্দা থেকে ভিতরের অংশে প্রবেশের সময়) ডান পা বাড়ানো চাই। এমনকি
যদি কার্পেট বিছানো হয় তাতেও ডান পা রাখবেন। আর যখন সেখান থেকে সরে
আসবেন, তখনও ডান পা মসজিদের কার্পেটের উপর রাখবেন। (অর্থাৎ আসতে ও
যেতে প্রতিটি বিছানো কার্পেটের উপর ডান পা রাখবেন।) অথবা খতীব যখন
মিম্বরের উপর যাবার ইচ্ছা করবেন, তখন প্রমে ডান পা রাখবেন, আর যখন
নামবেন তখনও ডান পা আগে নামাবেন।