★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
হাদিসের আলোকে মসজিদের প্রতি আদবঃ বর্তমান জামানায় সেটা কতটা পালিত হচ্ছে? - Mas'la Masayel Discussions on

হাদিসের আলোকে মসজিদের প্রতি আদবঃ বর্তমান জামানায় সেটা কতটা পালিত হচ্ছে?

edited June 2017 in Mas'la Masayel
ডাঃ মুহাম্মাদ রাযা কাদেরী

বর্তমান জামানায় দেখা যাচ্ছে আল্লাহর ঘর মসজিদকে কিছু যুবক কিছু মানুষ ইবাদত খানাকে আড্ডা খানাতে পরিবর্তন করার চেস্টা করছে।সেখানে আল্লাহর ইবাদত জিকির আযকার ভুলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া,ঘুমানো,আরাম আয়েশ, জোর শোরগোল, চেচামেচি,দুনিয়াদারী কথাবার্তা,হাসাহাসি ইত্যাদিতে ব্যাস্ত থাকছে। আজ আমি হাদিস শরীফের আলোকে এর স্বরুপ উদঘাটণ করবো সম্পুর্ণ পড়বেন আর এই হাদীস শরীফের কথা গুলি সকলের কাছে পৌছে দেয়ার চেস্টা করবেন ,যেন আল্লাহর পবিত্র ঘরের মর্যাদা সকলে বুঝতে পারে  এবং আদব রক্ষার চেস্টা করে।
আল্লাহর সাথে তাদের কোন কাজ নেই
হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رحمة الله عليه থেকে বর্ণিত, সারকারে কায়েনাত,
শাহে মওজূদাত হযরত মুহাম্মদ ﷺ এরশাদ করেন,
অর্থ ঃ মানুষের উপর একটা যুগ
আসবে যে, মসজিদে তাদের দুনিয়াবী
কথাবার্তা হবে। তোমরা তাদের সাথে
বসিওনা। কারণ, আল্লাহ্‌ তাআলার
সাথে তাদের কোন কাজ নেই।
(শুআবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২৯৬২)
মসজিদে পানাহার করা
মনে রাখবেন! মসজিদের ভিতর পানাহার করা ও ঘুমানো শরীআত মতে
জায়েজ নেই। যদি ইতিকাফের নিয়্যত করে নেন, তবে আনুষঙ্গিকভাবে পানাহার
ও ঘুমানোর অনুমতি হয়ে যাবে। আমাদের দেশে বেশীরভাগ মসজিদে দুরূদ
সালামের ওযীফা আদায় করা হয়, তারপর পানিতে ফু দিয়ে তা পান করে
আমাদের ইসলামী ভাইয়েরা যদি ই’তিকাফের নিয়্যত না করে তাহলে সে মসজিদে
পানি পান করতে পারবে না।
অনুরূপভাবে, রমযানুল মুবারকে মসজিদের ভিতর ইফতার করা হয়।
অবশ্য যে ব্যক্তি ই’তিকাফের নিয়্যত করে আছে, সেই মসজিদের ভিতর ইফতার
করতে পারে। তেমনিভাবে মসজিদে হারাম শরীফেও আবে জমজম এর পানি পান
করা, ইফতার করা ও শোয়ার জন্য ই’তিকাফের নিয়্যত থাকা চাই। মসজিদে
নবভী শরীফ
এর মধ্যেও ই’তিকাফের নিয়্যত ছাড়া পানি
ইত্যাদি পান করতে পারবেন না। এখানে একথাও স্মরণ রাখা জরুরী যে,
ই’তিকাফের নিয়্যত শুধু পানাহার ও ঘুমানোর জন্য করা যাবে না, বরং সাওয়াব
লাভের জন্য করবেন। রদ্দুল মুহতার (শামী) এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে, যদি
কেউ মসজিদে পানাহার ও ঘুমাতে চায়, তবে সে ই’তিকাফের নিয়্যত করে।

কিছুক্ষণ  আল্লাহ তাআলার যিকর করে নেবে, তারপর যা চায় করবে। (অর্থাৎ এখন
চাইলে পানাহার করতে পারে।) (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-২য়, পৃষ্টা-৪৩৫)

আল্লাহ তোমার হারানো বস্তু মিলিয়ে না দিক
হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার
হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করেন,
অর্থ ঃ যে কেউ মসজিদে উচ্চস্বরে হারানো
জিনিস তালাশ করতে কাউকে শুনে, তাহলে
তাকে বলবে, “আল্লাহ্‌ তাআলা ওই হারানো
জিনিষ তোমাকে যেনো মিলিয়ে না দেন,
কেননা, মসজিদগুলো এ কাজের জন্য তৈরী
করা হয়নি।” (মুসলিম শরীফ, ২৮৪ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৫৬৮)

হযরত সায়্যিদুনা সাইব ইবনে ইয়াযীদ رضي الله عنه
 বলেন, “আমি
মসজিদে দাঁড়ানো ছিলাম। আমাকে কেউ কঙ্কর মারলো। তাকিয়ে দেখলাম সে
হযরত সায়্যিদুনা আমীরুল মু’মিনীন ওমর ফারুকে আযম رضي الله عنه
  ছিলেন।তিনি আমাকে (ইঙ্গিত করে) বললেন, “ওই দু’জন লোককে আমার নিকট নিয়ে
আস।” আমি ওই দু’জনকে নিয়ে এলাম। হযরত সায়্যিদুনা ওমর 
 رضي الله عنه
তাদেরকে বললেন, “তোমরা কোন্ জায়গার সাথে সম্পর্ক রাখো?” তারা বললো,
“আমরা তায়েফের।” তিনি বললেন, “যদি তোমরা মদীনা মুনাওয়ারার অধিবাসী
হতে, (কেননা, মদীনার অধিবাসীরা মসজিদের আদব ভালভাবে জানেন) তাহলে
আমি তোমাদেরকে অবশ্যই শাস্তি দিতাম। (কেননা) তোমরা আল্লাহ তাআলার
রসূল 
ﷺ এর মসজিদে তোমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করেছ।”
(সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৪৭০)

মুবাহকথা নেকী গুলোকে খেয়ে ফেলে
হযরত সায়্যিদুনা  মোল্লা আলী কারী رحمة الله عليه
 শায়খ ইবনে হুমাম رحمة الله عليه
 এর বরাতে উদ্ধৃত করছেন,
অর্থ ঃ মসজিদে মুবাহ কথাবার্তা বলা
মাকরুহ, নেকীগুলোকে খেয়ে ফেলে।
(মুবাহ: এটি এমন যা সম্পাদন বা বর্জন কোনোটিই ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ নয়। আবার একাজ করতে উত্‌সাহিতও করা হয়নি।)
সায়্যিদুনা আনাস ইবনে মালিক 
 رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুর তাজেদারে
মদীনা, সুরুরে কলবো সীনা হযরত মুহাম্মদ 
করেন,
অর্থ ঃ মসজিদে হাসলে কবর অন্ধকার
হবে।
(আল জামে’উস সগীর, ৩২২ পৃষ্ঠা, হাদিস
নং ৫২৩১)

মুখে দুর্গন্ধ হলে নামায মাকরূহ হয়
ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যার ৭ম খন্ডের ৩৮৪ নং পৃষ্ঠায় উলে−খ আছে যে, মুখে
দুর্গন্ধ থাকা অবস্থায় (ঘরে আদায়কৃত) নামাযও মাকরূহ। আর এমতাবস্থায়
মসজিদে যাওয়া হারাম। যতক্ষণ না মুখের দুর্গন্ধ দূর না হয়।
আর অপর নামাযীকেও কষ্ট দেয়া হারাম। আর অন্য নামাযী না থাকলে
তখনও দুর্গন্ধের কারণে ফিরিশতাদের কষ্ট হয়। হাদীস শরীফে আছে, যেই সব
জিনিষ দ্বারা মানুষ কষ্ট পায় এতে ফিরিস্তারাও কষ্ট পায়।
(সহীহ মুসলিম, পৃ-২৮২, হাদীস নং-৫৬৪)

দুর্গন্ধ মুক্ত মলম লাগিয়ে মসজিদে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
আমার আকা আলা হযরত 
رضي الله عنه বর্ণনা করেন, যার শরীরে
দুর্গন্ধ হয় যাতে (অপরাপর) নামাযীদের কষ্ট হয় যেমন, “মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের
হওয়া) বগল থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো, ঘা, খশ পাচড়ার কারণে গন্ধক মালিশ করা বা
অন্য কোন দুর্গন্ধ যুক্ত মলম বা লোশন লাগায় তাকেও মসজিদে আসতে নিষেধ
করেছেন। (সংশোধিত ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, খণ্ড-৮ম, পৃ-৭২)

কাঁচা মূলা, কাঁচা পিয়াজ, কাঁচা রসুন, ও ঐ সমস্ত জিনিষ যার গন্ধ
অপছন্দ হয়, সেগুলো খেয়ে মসজিদে ততক্ষণ পর্যন্ত যাওয়া জায়েজ নেই যতক্ষণ
পর্যন্ত হাত, মুখ ইত্যাদিতে গন্ধ থাকে। যাতে করে ফিরিশতাদের কষ্ট হয়।
হাদিস শরীফে আছে, আল্লাহর মাহবুব, অদৃশ্যের সংবাদদাতা, হযরত
মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পিঁয়াজ, রসুন,
গিনদানা নামক তরকারী খেয়েছে অবশ্যই সে যেন আমাদের মসজিদের
নিকটবর্তীও না আসে, আরো বলেছেন, যদি খেতেই চাও তবে রানড়বা করে তার গন্ধ
দূর করে নাও। (সহীহ মুসলিম শরীফ, পৃ-২৮২, হাদীস নং-৫৬৪, দারু ইবনে হাযাম, বৈরুত)
সাদরুশ শরীআ, বদরুত তরীকা, আল্লামা মওলানা মুফতী মুহাম্মদ
আমজাদ আলী 
رحمة الله عليه
 বর্ণনা করেন, মসজিদে কাঁচা রসুন ও পিঁয়াজ
খাওয়া বা খেয়ে যাওয়া জায়িজ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্গন্ধ অবশিষ্ট থাকে এবং এই
একই হুকুম ঐ সমস্ত জিনিসের ব্যাপারে যেগুলোতে গন্ধ হয় যেমন- “গিন্দানা”
(এটা রসূনের তৈরী তরকারী), মূলা, কাঁচা মাংস, কেরোসিন। ঐ দিয়াশলাই যাতে
ঘষা দিলে গন্ধ ছড়ায়, বায়ু বের করা ইত্যাদি।
যার গান্ধা দেহনীর (তথা মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার রোগ আছে বা
দুর্গন্ধযুক্ত অন্য কোন আঘাত থেকে বা দুর্গন্ধযুক্ত কোন ঔষধ লাগালে তাহলে
যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্গন্ধ চলে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তার মসজিদে আসা নিষেধ।)
(বাহারে শরীআত, খণ্ড-৩য়, প-ৃ ১৫৪)

ইমাম আহমদ রেযা 
 رضي الله عنه এর দরবারে প্রশড়ব করা হল যে,
নামাযীদের জন্য টয়লেট মসজিদ থেকে কতটুকু দূরে তৈরী করা যাবে? এর উত্তরে
আমার আকা আলা হযরত 
رضي الله عنه বললেন, মসজিদকে দুর্গন্ধ থেকে
রক্ষা করা ওয়াজিব। এজন্য মসজিদে কেরোসিন তৈল জ্বালানো হারাম। মসজিদে
দিয়াশলাই (অর্থাৎ দুর্গন্ধযুক্ত বারুদ বিশিষ্ট ম্যাচের কাঠি) জ্বালানো হারাম। এমন
কি হাদীস পাকে ইরশাদ হয়েছে, মসজিদে কাঁচা মাংস নিয়ে যাওয়া জায়েজ নেই।
(ইবনে মাজাহ্, খন্ড-১ম, পৃ-৪১৩, হাদীস নং-৭৪৮, দারুল মারিফাত, বৈরুত)

অথচ কাঁচা মাংসের দুর্গন্ধ অনেকটা হালকা। অতএব যেখান থেকে
মসজিদে দুর্গন্ধ পৌঁছে সেখান পর্যন্ত টয়লেট, প্রস্রাবখানা তৈরী করাতে নিষেধ
রয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ্, খন্ড-১৬, পৃ-২৩২)

সুলতানে মদীনা হযরত মুহাম্মদ 
ﷺ ইরশাদ
করেছেন, মসজিদ সমূহকে বেচা-কেনা, ঝগড়া-বিবাদ, উচ্চস্বরে আওয়াজ করা,শরয়ী শাস্তি প্রতিষ্ঠা করা ও তলোয়ারের আঘাত থেকে বাঁচাও।
(ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, পৃ-৪১৫, হাদীস নং-৭৫০)
এমন বাচ্চা যার নাপাকীর (অর্থাৎ পেশাব ইত্যাদি করে দেয়ার) সম্ভবনা থাকে ও
পাগলকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হারাম। যদি নাপাকীর সম্ভবনা না থাকে তাহলে
মাকরুহ্। *
বাচ্চা অথবা পাগলকে (অথবা বেঁহুশ বা যাকে জ্বিনে ধরেছে তাকে) ঝাড়-ফুঁক,
তাবিজ নেওয়ার জন্যও মসজিদে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শরীআতের পক্ষ থেকে
অনুমতি নেই। ছোট বাচ্চাকে ভালভাবে কাপড়ে পেচিয়ে এমনকি “পেকিং” করেও
নেয়া যাবে না। যদি আপনি বাচ্চা ইত্যাদি মসজিদে নেয়ার মত ভুল করে থেকে
থাকেন তবে মেহেরবানী করে দ্রুত তাওবা করে নিন, ভবিষ্যতে না নেওয়ার
নিয়্যত করুন। হ্যাঁ, মসজিদের বারান্দা যেমন ইমাম সাহেবের হুজরায় বাচ্চাকে
নিয়ে যেতে পারেন যখন মসজিদের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজন না হয়।

উপরিউক্ত হাদিস শরিফ থেকে বোঝা যায় মসজিদের প্রতি কেমন ভাবে আদব করা প্রয়োজন।আর আমাদের আসে পাশের মসজিদ গুলি দেখলে বুঝতে পারবো তা কতটি পালন করা হচ্ছে নেকি করতে গিয়ে আমরা কত পাপ করে ফেলছি, এমন কি মসজিদের ইমামগুলিও এই বিষয়ে সচেতন নয়। নিচে মসজিদ সম্পর্কে ১৯টি মাদানী ফুল বর্ণনা করা। সকলে আমরা পালন করার চেস্টা করবো ইন শা আল্লাহ। 

মসজিদ সম্পর্কে ১৯ টি মাদানী ফুল

১। বর্ণিত আছে, এক মসজিদ আল্লাহ  তাআলার নিকট অভিযোগ করল, মানুষ
আমার ভিতর বসে দুনিয়াবী কথা বলে, অভিযোগ করে ফেরার পথে তার সাথে
পথিমধ্যে ফিরিস্তার সাক্ষাত হল এবং বললেন, আমাদেরকে মসজিদে দুনিয়াবী
আলোচনাকারীদের ধ্বংস করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, খন্ড-১৬, পৃ-৩১২)
২। বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি গীবত করে (যা কঠিন হারাম ও যিনা থেকেও
নিকৃষ্ট) এবং যারা মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলে তাদের মুখ থেকে খুব নিকৃষ্ট
দুর্গন্ধ বের হয়, তাদের ব্যাপারে ফিরিশতারা আল্লাহ তাআলার দরবারে
অভিযোগ করে। আল্লাহর  পানাহ! যেখানে মুবাহ ও বৈধ কথা মসজিদে বসে শরয়ী
প্রয়োজন ছাড়া করার ব্যাপারে এই বিপদ, সেখানে মসজিদের ভিতর বসে হারাম
ও অবৈধ কাজ করলে কি অবস্থা হবে! (প্রাগুক্ত)
৩। দর্জির জন্য মসজিদে বসে কাপড় সেলাই করার অনুমতি নেই। অবশ্য, যদি
শিশুদের বাধা প্রদান ও মসজিদের হিফাযতের জন্য বসে, তবে ক্ষতি নেই।
অনুরূপভাবে লিখকের জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লিখার অনুমতি নেই।
(আলমগীরি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১০)
৪। মসজিদের ভিতর কোন ধরণের খড়কুটা কখনো ফেলবেন না। সায়্যিদুনা শায়খ
আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী 
رحمة الله عليه  জযবুল কুলুব এ উদ্ধৃতি দিয়ে
লিখেন, “মসজিদে যদি সামান্য খড়কুটাও ফেলা হয়, তবে মসজিদের এতো বেশি
কষ্ট অনুভূত হয়, যেমন কষ্ট মানুষ তার চোখে সামান্য কণা পড়লে অনুভব করে।
(জয্বুল কুলূব, পৃ-২৫৭)
৫। মসজিদের দেয়াল, ফ্লোর, চাটাই কিংবা কারপেটের মধ্যে কিংবা সেটার
নিচে থুু ফেলা, নাক সাফ করা, নাক কিংবা কান থেকে ময়লা আবর্জনা বের করে
লাগানো, মসজিদের ফ্লোর বা চাটাই থেকে সূতা কিংবা কিছু ভগ্নাংশ  বের করাসবই
নিষেধ।
৬। প্রয়োজনে রুমাল ইত্যাদি দিয়ে নাক মোছলে ক্ষতি নেই।
৭। মসজিদের ধুলা-বালি ঝেড়ে তা এমন জায়গায় ফেলবেন না, যেখানে ফেললে
বেয়াদবী হয়।
৮। জুতা খুলে মসজিদের ভিতর সাথে নিয়ে যেতে চাইলে, ধুলিবালি ইত্যাদি
বাইরে ঝেড়ে নেবেন। যদি পায়ের তালুতে ধূলাবালী ইত্যাদি লেগে থাকে, তবে
নিজের রুমাল ইত্যাদি দিয়ে মুছে মসজিদে প্রবেশ করবেন।
৯। মসজিদের ওযু খানায় ওযু করার পর পা দু’টি ওযূখানাতেই ভাল করে মুছে
নেবেন। ভেজা পায়ে মসজিদে চলাফেরা করলে মসজিদের ফ্লোর ও কার্পেটগুলো
অপরিস্কার ও বিশ্রী হয়ে যায়।
এখন আমার আকা আলা হযরত ইমামে আহলে সুনড়বত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত
মওলানা শাহ আহমদ রাযা খান رضي الله عنه
এর মলফূযাত শরীফ থেকে
মসজিদের কিছু নিয়মাবলী পেশ করা হচ্ছে।
১০। মসজিদে দৌঁড়ানো কিংবা সজোরে চলাচল করা, যার ফলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়,
তা নিষেধ।
১১। ওযু করার পর ওযূর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে পানির এক ফোটাও যেন মসজিদের
ফ্লোরের উপর না পড়্ (েমনে রাখবেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে ওযূর পানির ফোটা
মসজিদের ফ্লোরের উপর ফেলা বৈধ নয়।)
১২। মসজিদের এক দরজা থেকে অন্য দরজায় প্রবেশের সময় (উদাহরণ স্বরূপ,
বারান্দা থেকে ভিতরের অংশে প্রবেশের সময়) ডান পা বাড়ানো চাই। এমনকি
যদি কার্পেট বিছানো হয় তাতেও ডান পা রাখবেন। আর যখন সেখান থেকে সরে
আসবেন, তখনও ডান পা মসজিদের কার্পেটের উপর রাখবেন। (অর্থাৎ আসতে ও
যেতে প্রতিটি বিছানো কার্পেটের উপর ডান পা রাখবেন।) অথবা খতীব যখন
মিম্বরের উপর যাবার ইচ্ছা করবেন, তখন প্রমে ডান পা রাখবেন, আর যখন
নামবেন তখনও ডান পা আগে নামাবেন।
১৩। মসজিদে যদি হাঁচি আসে তবে চেষ্টা করবেন যেন আওয়াজ নিচু হয়।
অনুরূপভাবে, কাঁশিও। সরকারে মদীনা হযরত মুহাম্মদ ﷺ
মসজিদে সজোরে হাঁচি দেয়াকে অপছন্দ করতেন। অনুরূপভাবে, ঢেকুরও দমিয়ে
রাখা চাই। সম্ভব না হলে আওয়াজকে চেপে রাখা চাই, যদিও মসজিদ ছাড়া
অন্যত্রও হয়। বিশেষ করে মজলিস কিংবা কোন সম্মানিত ব্যক্তির সামনে তাতো
অভদ্রতাই। হাদীসে শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি হুযুর  ﷺ এর পবিত্র দরবারে ঢেকুর ছাড়লো। হুযুর ﷺ ইরশাদ
করলেন, “আমাদের নিকট থেকে তোমার ঢেকুর দূরে রাখো। যে ব্যক্তি দুনিয়ায়
বেশী সময় পেট ভরতে থাকে, সে কিয়ামতের দিন ততবেশি সময় ক্ষুধার্ত থাকবে।
(শরহুস সুন্নাহ, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯৪ হাদিস নং ২৯৪৪)
আর হাই তোলার সময় আওয়াজকে উঁচু করে বের না করা চাই; যদি
মসজিদের বাইরে একাকী অবস্থায় হোক না কেন, এটা হচ্ছে শয়তানের অট্ট
হাসি। হাই আসলে যথাসম্ভব মুখ বন্ধ রাখবেন। মুখ খুললে শয়তান মুখে থুু
দেয়। যদি এভাবে না থামে তবে উপরে মাড়ির দাঁত দিয়ে নিচের ঠোট চেপে
ধরবেন। আর এভাবেও না থামলে যথাসম্ভব মুখ কম করে খুলবেন। আর বাম
হাতকে উল্টো দিক থেকে মুখের উপর ধরবেন। যেহেতু হাই শয়তানের পক্ষ
থেকে আসে এবং সম্মানিত নবীগণ  আলাইহিস সাল্লাম তা থেকে পবিত্র, সেহেতু
হাই আসলে এ কথা মনে মনে কল্পনা করবেন যে, সম্মানিত নবীগণ  আলাইহিস সালাম এর হাই আসতনা। ইন শা আল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে তা থেমে যাবে।”
(রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪১৩ পৃষ্ঠা)
১৪। হাসি ঠাট্টা এমনিতেই নিষেধ। আর মসজিদেতো আরো কঠোরভাবে নিষেধ।
১৫। মসজিদে হাসা নিষেধ। কারণ, তা কবরে অন্ধকার আনে। স্থানও সময় ভেদে
মুচকি হাসাতে ক্ষতি নেই।

১৬। মসজিদের ফ্লোরের উপর কোন জিনিস ছুঁড়ে মারা উচিত নয়, বরং আস্তে
রাখা চাই। গরমের মৌসুমে লোকেরা হাত পাখা ঘুরাতে ঘুরাতে এক পর্যায়ে ছুঁড়ে
মারে। মসজিদে টুপি, চাঁদর ইত্যাদিও ছুঁড়ে মারা উচিত নয়। অনুরূপভাবে চাঁদর
কিংবা রুমাল দ্বারা ফ্লোর এভাবে ঝাড়বেন না, যাতে আওয়াজ সৃষ্টি হয় কিংবা ছাতা
ইত্যাদি রাখার সময় উপর থেকে ফেলে দেয়। এমন করা নিষেধ রয়েছে।
মোটকথা, মসজিদের প্রতি সম্মান দেখানো প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।
১৭। মসজিদের ভিতর ‘হাদস’ (অর্থাৎ বাতাস বের করা) নিষেধ। প্রয়োজন হলে
(যারা ই’তিকাফকারী নয়, তারা) বাইরে চলে যাবে। সুতরাং ই’তিকাফকারীর
উচিত হচ্ছে-ই’তিকাফের দিনগুলোতে অল্প আহার করে, পেট হালকা রাখা যাতে
হাজত পূরণ করার প্রয়োজন কম হয়। ইতিকারফকারী এজন্য (বাতাস বের করার
জন্য) বাইরে যেতে পারবেনা। অবশ্য মসজিদের এরিয়ার ভিতর টয়লেট থাকলে
তাতে বাতাস ছাড়ার জন্য যেতে পারবে।
১৮। কিবলার দিকে পা প্রসারিত করা সব জায়গাতে নিষেধ। মসজিদে কোন
দিকেই প্রসারিত করবেন না। এটা দরবারের আদব বিরোধী কাজ। হযরত
ইব্রাহীম ইবনে আদহাম 
 رحمة الله عليه মসজিদে একাকী বসা ছিলেন। পা দু’টি
প্রসারিত করলেন। মসজিদের এক কোণ থেকে অদৃশ্য আহ্বানকারী আওয়াজ
দিলো, “ইব্রাহীম! বাদশাহ্র দরবারে কি এভাবে বসে? তাৎক্ষণিকভাবে তিনি পা
দু’টি গুটিয়ে নিলেন। আর এমনিভাবে গুটালেন যে, ইনতিকালের সময় সে পা
দু’টি প্রসারিত হয়েছে।
(ছোট শিশুদেরকে ও প্রস্রাব করাতে, শোয়াতে, উঠাতে ও সেড়বহ করতে গিয়ে তখন
সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যেন তাদের পা কিবলার দিকে না থাকে।)
১৯। ব্যবহৃত জুতা পরে মসজিদে যাওয়া বেয়াদবী ও আদব বহির্ভূত কাজ। (আল
মালফূয, ২য় খন্ড, ৩৭৭ পৃষ্ঠা হতে সংকলিত)

আল্লাহ আমাদের সকলকে মসজিদের আদব করার তৌফিক আতা করুক ,আমীন।সুম্মামীন।
Tagged:
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|