★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য - Mas'la Masayel Discussions on

নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য



“পুরুষ ও নারীদের নামাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই” এবং “পুরুষ ও নারীদের নামাজের মধ্যে পার্থক্য আছে”। দুটো বিষয়ই উল্লেখ থাকল, পাঠকরা বিচার করবেন কোনটি সঠিক। উত্তরটি নিচে আলোচনা করা হল ,,,,

 
মেয়েরা পুরুষদের মত সালাত আদায় করবে আহলে হাদীসের অনুসারীগন এই মতের পতিনিধিত্ব করেন। এখান থেকে একটি প্রশ্নের জন্ম নেয় !!!

তাহলে কি এমতের অনুসারীগন ছাড়া বাকী সবাই যুগ যুগ ধরে ভূল করেছেন ?

সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈ, তাবে তাবেঈ,আইম্মায়ে কিরামগন সহ কেউ কি এবিষয়টি অনুধাবন করেন নি ?

 
প্রকৃত কথা হচ্ছে হক্ব বাতিলের সংঘাত চিরন্তন -অন্যথায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বর্ণ যুগে তারকারাজীর ন্যায় উজ্জ্বল আদর্শবান সাহাবায়েকেরাম, তাবেঈ,তাবে তাবেঈগন থেকে শত শত বছরের গবেষক, বিচক্ষণ ইমামদের সর্ব স্বীকৃত কুরআন ও হাদীসের আলোকে নারীদের সালাত পদ্ধতিকে ইদানিং জন্ম নেয়া একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দল কিভাবে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে পারে ? নিম্নে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হল,,,

 
✔️ মহিলাদের সালাত পদ্ধতি সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের উলামায়ে কেরামগনের মতামত ।

সালাত পদ্ধতিতে মহিলাদের ক্ষেত্রে মৌলিক ভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে,,

???? সতর কেন্দ্রিক, অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে মহিলারা সালাত আদায় করবে।

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

“তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” - সূরা আল আহযাব- আয়াত নং ৩৩।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “মহিলাদের নিজকক্ষে নামায পড়া বাড়িতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামায পড়া ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ‘‘ - হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩- , মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮।

হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনঃ- “ওরনা বা চাদর ব্যতিত মহিলাদের নামায কবুল হবেনা।” - আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫১।
 
হাকেম আবু আব্দিল্লাহ নিসাপুরী রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় কিতাব মুসতাদরাক লিল হাকেমে (৯/২৫১) বলেন ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ এর হাদীস গ্রহন করার শর্ত অনুযায়ী হাদীসটি সহীহ । হাকেম রাহিমাহুল্লাহ এর উক্ত মতকে ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ সমর্থন করেছেন।

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস এ কথার উপর সুস্পষ্ট প্রমান বহন করে মহিলাদের সব সময় পর্দার আড়ালেই থাকা প্রয়োজন । আর নামায ইসলামের অন্যতম একটি বিধান সুতরাং তাহা অধিক পর্দায় হবে ইহাই আহলে ইলিমগনের দাবী।

উপরে আমরা দেখলাম পর্দার ক্ষেত্রে নামাজ পড়ার সময় পুরুষ ও মহিলাদের কি পার্থক্য আছে , এখন আমরা দেখব নামাজ-এর রুকন বা পড়ার পদ্ধতির ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলাদের কি পার্থক্য আছে ?

???? নামাজ-এর রুকন বা পড়ার পদ্ধতিতে মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে পার্থক্য।

চার ধরনের দলীলের আলোকে সংক্ষিপ্ত ভাবে পদ্ধতিগত এই পার্থক্য তুলে ধরা হল,,,

১। হাদীস শরীফের আলোকে

২। সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য ও কর্মের আলোকে।

৩। তাবেয়ী ইমাম গনের ঐক্যমত্যের আলোকে।

৪। চার ইমামের ঐক্যমত্যের আলোকে।

???? হাদীস শরীফের আলোকে,,,

নামাজী মহিলার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বাধা দিবার লক্ষে করণীয় কি ? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসংগে বলেছেন, পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর মহিলাদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। - বুখারী শরীফ ১/৪০৩।

হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে সংশোধনের উদ্দেশ্য বললেন যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে, কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। - কিতাবুল মারাসিল-ইমাম আবু দাউদ – পৃঃ১১৭।

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়েখ শুয়াইব আরনাউত রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটির সুত্র সম্পর্কে বলেন, বণর্না কারী প্রত্যেক রাবী সর্ব্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য রাবীদের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং হাদীসটি “সহীহ”।- তালীক আলা মারাসিলে আবী দাউদ পৃঃ ১১৭।

কথিত আহলে হাদীসে স্বীকৃত শীর্ষস্থানীয় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ‘‘আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন উল্লেখিত হাদীস সকল ইমামের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসাবে পেশ করার যোগ্য। আর এ হাদীসটির উপরই আহলে সুন্নাত ও চার মাযহাবসহ অন্যন্যদের আমল চলে আসছে।

উল্লেখ্যঃ- এই সব হাদীসর সমর্থনে মহিলা ও পুরুষদের নামায আদায়ের পদ্ধতিগত পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে । এমন আরো অনেক হাদীস রয়েছে । পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধ পুর্ন একটি হাদীস ও কোথাও পাওয়া যাবে না, যাতে বলা রয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই।

???? সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকে,,,

হযরত নাফেয় রাহিমাহুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,তাহাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় মহিলদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “প্রথমত তারা চার পা হয়ে বসত অত পর এক পক্ষ হয়ে বসার জন্য বলা হল।” আসারাট সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ। - জামেউল মাসানীদ-ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) খঃ ১/৪০০।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাহাকে মহিলাদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “মহিলারা বৈঠকে আংগুল সমুহ মিলিয়ে ও সমবেত ভাবে বসবে। - এই হাদীসের সমস্‌ত রাবী সিকাহ- সুতারাং হাদীস সহীহ। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-খঃ১/২৪২।

???? তাবেয়ী ইমামগনের ঐক্যমতের আলোকে,,

হযরত হাসান বসরী ও হযরত কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করবে তখন তারা যথাস্ভব জরসড় হয়ে থাকবে। অঙ্গঁ প্রত্যঙ্গঁ ফাঁকা রেখে সিজদা দিবে না, যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে।- হাদীসটি সহীহ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক খঃ৩/১৩৭-ইবনে আবী শাইবা ১/৪২।

✔️ কুফাবসীদের ইমামঃ- ইবরাহীম নাখয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন মহিলারা বসা অবস্থায় এক পক্ষ হয়ে বসবে । সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খঃ১/৪৩।

✔️ মক্কা বাসীদের ইমাম আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন মহিলা যখন রুকুতে যাবে অত্যান্ত সংকোচিত ভাবে যাবে এবং হাতদ্বয় পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে। সহীহ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১৩৭।

খালেদ ইবনে লাজলাজ সিরিয়া বাসীদের ইমাম , তিনি বলেন মহিলাদের আদেশ করা হত, তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে । আবরনযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়। হাসান, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০৫।
 
মোট কথা তাবেয়ী-যুগে যারা ইমাম এবং ইসলামি বিধি বিধানের ক্ষেত্রে অনুসরনীয় তাদের মতামত থেকে প্রমানিত হল যে, মহিলা ও পুরুষদের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন মনে করা সম্পুর্ন ভুল । সাহাবী ও তাবেয়ীদের মতামতের সাথে এই ধারনার কোনই মিল নেই।

???? চার ইমামের ফিক্বহের আলোকে,,

ফিক্বহে হানাফীঃ- ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এর অন্যতম শাগরেদ ইমাম মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রখবে না। - কিতাবুরল আসার ১/৬০৯।

আরো দ্রষ্টব্যঃ- হিদায়াঃ ১/১০০-১১০-১১১- ফাতওয়ায়ে শামী ১/৫০৪- ফাতওয়ায়ে আলমগীরি-১/৭৩-।

ফিক্বহে শাফেয়ীঃ ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন ’’ আল্লাহ পাক মহিলাদের কে পুরো পুরি পর্দায় থাকার শিক্ষা দিয়েছেন । এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও অনুরুপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সিজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গেঁর সাথে অপর অঙ্গঁকে মিলিয়ে রাখবে, পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমন ভাবে করবে যাতে সতরের অধিক হেফাযত হয়। - যাখীরা, ইমাম কারাফী ২/১৯৩।

ফিক্বহে হাম্বলীঃ- তাকবীরে মহিলাদের হাত উঠানোর সম্পর্কে ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন হাত তুলনামুলক কম উঠাবে। - আল মুগনী -২/১৩৯।

এই পর্যন্ত হাদীস, আসারে সাহাবা, আসারে তাবেয়ীন ও চার ইমামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট হল যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলা আল্লাহ তা’য়ালার মনোনীত ধর্ম ইসলামের মাঝে নিজেকে সংস্কার পন্থী রুপে আবিস্কার করার অপচেষ্টা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে সহীহ আক্বিদা বুঝার এবং বাতিল আক্বিদাকে প্রত্যাখান করার তাওফিক দান করুন। আমিন

ইসলামের শাশ্বত বাণী সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সকল মুসলমানের দায়িত্ব। 
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|