প্রশ্ন:- আম্বিয়ায়ে কেরাম ইন্তেকালের পরেও কী জীবিত
আছেন?
তাঁহাদের জিন্দেগির ব্যাপারে কিছু দলীল পেশ করুন? উত্তর:- হাজরাত ইবনে হাজম আর হাজরাত আনাস বিন
মালিক রাদ্বীয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَفَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ – عَلَى أُمَّتِي خَمْسِيْنَ صَلوةٌ فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُؤسَى فَقَالَ مَا فَرَضَ الله لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ فَرَضَ خَمْسِينَ صَلوةٌ قَالَ فَارْجِعُ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ .
উচ্চারণ:- জ্বালান্নাবীয়ু স্বাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামা ফা-ফারাদাল্লাহু আজ্জা ও জাল্লা আলা উম্মাতী খামসীনা স্বালাতান ফা রাজা’তু বিযালিকা হাত্তা মারারতু আলা মুসা ফা-কালা মা ফারাদাল্লাহু লাকা আলা উম্মাতিকা? কুলতু ফারাদা খামসীনা স্বালাতান জ্বালা ফারজি ইলা রাব্বিকা। বুখারী শরীফ ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং-৫১ কিতাবুস স্বালাত বাবু কাইফা ফুরিদাতিস স্বালত ফীল ইসরা । হাদীষ নং-৩৪৯
অর্থ:- নবী স্বাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার উম্মাতের জন্য পঞ্চাশ অয়াক্তের নামায আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন আমি সেই আদেশ নিয়ে ফিরে এলাম, পথে হাজরাত মুসা আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন আল্লাহ তা’আলা আপনার উম্মাতের প্রতি, কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম পঞ্চাশ ওয়াক্তের নামায, তিনি বললেন, আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান কারণ আপনার উম্মাত পঞ্চাশ ওয়াক্তের নামায আদায় করার শক্তি রাখে না।
আবার এই হাদীষটি বুখারী শরীফ ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং ৫৪৯ আছে কিতাবু মানাকিবিল আনসার বাবুল মেরাজ হাদীষ নং-৩৮৮৭ এই হাদীষেরই কিছু অংশ আগে বর্ণনা করা হচ্ছে।
فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُؤسَى قُلْتُ
وَضَعَ شَطْرَهَا فَقَالَ ارْجِعُ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ ارْجِعُ إِلَى رَبِكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُهُ فَقَالَ هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُونَ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَى.
উচ্চারণ:- ফারাজ’তু ফাঅদায়া শারাহা ফা রাজা’তু ইলা মুসা কুলতু অদায়া শাতুরাহা ফাক্কালা ইরজে: ইলা রাব্বিকা ফাইন্না উম্মাতা লা তুত্বিকু যালিকা ফা রাজা’তু ফা অদায়া শাত্মারাহা ফারজাতু ইলাইহি ফাক্কালা ইরজি ইলা রাব্বিকা ফাইন্না উম্মাতা লা তুত্বিকু যালিকা ফা রাজা’তু ফা অদায়া শাত্মারাহা ফারজা তু ইলাইহি ফাকালা হিয়া
খামসুন অ হিয়া খামস্ না-লা ইয়ু বাদ্দালুল কাওলা লাদাই-ইয়া। অর্থ:- অতঃপর আমি ফিরে গেলাম সুতরাং আল্লাহ তা’আলা তার কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন, যখন, আমি হাজরাত মুসা আলইহিস সালামের নিকট গেলাম, আর বললাম নামাযের কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি বললেন আপনি আপনার প্রতি পালকের নিকট ফিরে যান, আপনার উম্মত এই শক্তিও রাখে না, আবার ও আমি গেলাম, তাই আল্লাহ তা’আলা নামাযের কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন, যখন আমি তিনার নিকট এলাম তখন তিনি আগের ন্যায় আমাকে বললেন, আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান কারণ আপনার উম্মত ইহারও শক্তি রাখেনা তাই আবারও আমি ফিরে গেলাম এই রূপ কয়েক বার আসা যাওয়া করলেন এবারে আল্লাহ তা’আলা বললেন বাহ্যিক ইহা পাঁচ ওয়াক্তের নামায কিন্তু আসলে পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই আছে, কারণ আমার এখানে কথা বদলানো যাই না! এই কথার সার মর্ম হলো যে এই পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় করলে পঞ্চাশ ওয়াক্তের নেকী পাওয়া যাবে।
فَرَجَعْتُ مُؤسَى فَقَالَ ارْجِعُ رَبِّكَ فَقُلْتُ اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِي
উচ্চারণ:- ফারাজাতু মুসা ফাক্কালা ইরজে রাব্বাকা ফা কুলতু ইসতাহাইতু রাব্বী।
অর্থ:- অত:পর আমি হাজরাত মুসার নিকট এলাম সুতরাং তিনি আমাকে বললেন, আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান, অবশেষে রাসুলুল্লাহ বললেন, আর কিছু আমার রবের নিকট বলতে লজ্জা বোধ হচ্ছে।
উপকার:- উল্লিখিত হাদীষ থেকে ইহাই বোঝা গেল যে হাজরাত মুসা আলাইহিস সালাম ও অনান্য নবীগণ হুজুরের নবুয়তের
পূর্বে যাহারা ইন্ত্মেকাল করে গেছেন, মেরাজের রাত্রে তাদের সঙ্গে হুজুরের সাক্ষাৎ হয়েছে এবং হাজরাত মুসা আলাইহিস সালামের সুপারিসে নামায ও কম করে দেওয়া হয়েছে, তাই ইােকালের পরেও নবীগণের জীবিত থাকার পরিস্কার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে । এবং কুরআন পাক দ্বারাও তার সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে যেমন
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন ।
وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ في سَبِيلِ اللهِ
اموَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ
উচ্চারণ:- অ লাতাকুলু লিমাই ইউক্তালু ফী সাবীলিল্লাহি আমওয়া তান,বাল আহ্ইয়ার্ড অলাকিল লাতাশউরুন। পারা নং-২ সূরা বাকারা আয়াত নং ১৫৪
অর্থ:- এবং যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত
বলোনা, বরং তারা জীবিত; হাঁ, তোমাদের খবর নেয় ।
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَانَا بَلْ أَحْيَاء عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ فَرِحِينَ بِمَا أَنه هُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِم مِّن خَلْفِهِمُ الْاخَونَ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
উচ্চারণ:-অলা তাসাবান্নাল্লাযীনা কুতিলু ফী সাবীলিল্লাহি আমওয়াতান বাল আহ্ইয়ার্ড ইন্দা রাব্বীহিম ইয়ুর জাকুন, ফারিহীনা বিমা আ-তাহুমূল্লাহু মিন ফাদলিহি অ ইয়াস তাবশিরুনা বিল্লাযীনা লাম ইয়ালহাকু বিহিম মিন খালফিহিম আল্লা খাওফুন আলাইহিম, অলাহুম ইয়াজানুন। পারা নং-৪ সূরা আল ইমরান আয়াত নং ১৬৯, ১৭০
অর্থ:- এবং যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে কখনো মৃত বলে ধারণা করো না, বরং তারা নিজ রবের নিকট জীবিত
রয়েছে জীবিকা পায়, তারা উৎফুল্ল এরই উপর যা আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ ক্রমে দান করেছেন এবং আনন্দ উদযাপন করছে, তাদের পরবর্তীদের জন্য, যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি এজন্য যে তাদের না কোন আশংকা আছে এবং না আছে কোন দুঃখ। উক্ত আয়াত দ্বারাই তিন রকমের উপকার বুঝা গেল
১। উপকার:- উল্লিখিত দুইটি আয়াত দ্বারাই ইহাই বুঝা
গেল যে, শহীদগণ শাহাদাত বরণ করার পর জীবিত আছেন, এবং তিনাদেরকে রুজিও দেওয়া হয়, তাঁদেরকে মৃত বলা তো দূর আত্ম মৃত মনে করতেও কুরআন নিষেধ করেছে, ইহা অন্য কথা যে তাহাদের জিন্দেগী কিরূপ আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ, কান, নাক রসনা ও ত্বক তাহা অনুভাব করতে পারে না কিন্তু যে বাক্তিকে আল্লাহ সে শক্তিদান করেছেন সে অবশ্যই পারে।
২। উপকার:-যখন শহীদগণ জীবিত আছেন, আর তিনাদের জীবিত থাকার সম্পর্কে কুরআন পাকের আয়াতও বলছে তখন নবীগণ যাঁহারা শহীদগণ ও সমত্ম সৃষ্টি থেকে উত্তম তখন তিনাদের জীবিত থাকা সম্পর্কে সন্দেহ কি রূপে করা যাই? নবীগনের জীবিত থাকা তো শহীদ গণের চাইতেও উর্দ্ধেও উঁচু, আল্লাহ পাকের অঙ্গিকারের সত্যতার জন্য, এক মূহুর্তের জন্য নবীগণ কেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে। অত:পর তিনারা পূর্বের ন্যায় জীবিত হয়েগেছেন, তিনারা যেখানে ইচ্ছা যাতায়াত করেন আর মানুষের সাহায্য করেন যেমন ইতি পূর্বে মেরাজের হাদীষ শরীফ থেকে জানা গেছে
৩। উপকার:-নবীগণ সমস্থ সৃষ্টির চাইতে উত্তম, সমা নবীর প্রতি ঈমান রাখা অবশ্যই জরুরী, প্রত্যেক নবীর সম্মান বজায় রাখা ফরজ, আর কোন নবীর বিন্দু মাত্র অসম্মান করা এবং তিনাদের সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা করা কাফেরের পরিচয় ।