[ad_1]
মাদারেজুন নবুয়াত গ্রন্থের ভূমিকায় শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) বলেনঃ-
هُوَالْاَوَّلُ وَالْاَجِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْئٍ عَلِيْمٌ
তিনিই প্রথম তিনিই সর্বশেষ তিনিই দৃশ্যমান তিনিই গোপন এবং তিনি প্রত্যেক কিছু জানেন।)
এ কথাগুলো আল্লাহ তা’আলার প্রশংসায় যেমন বলা যায়, আবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এ গুণকীর্তনেও বলা যায়। যেমন তিনি (দেহলবী) বলেনঃ- হুযুর আলাইহিস সালাম সব কিছুর জ্ঞান রাখেন। এমনকি আল্লাহ তা’আলার স্বত্ত্বগত বিষয়াদি, গুণাবলী, বিধিবিধান, বিভিন্ন নাম, যাবতীয় কার্যাবলী বিবিধ নিদর্শন, সমস্ত দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয়াদি, অদি অন্ত প্রভৃতির যাবতীয় জ্ঞান তারই করায়ত্ত্ব। প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর অপেক্ষাকৃত বেশী জ্ঞানী বিদ্যমান প্রবচনটি তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
উক্ত মাদারেজ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের পঞ্চম অধ্যায়ে হুযুর আলাইহিস সালামের ফযীলতের বর্ণনা প্রসঙ্গে ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছেঃ- (হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শিঙ্গায় ফুক দেয়া পর্যন্ত সব কিছুই হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে প্রতিভাত করা হয়েছে, যাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর অবস্থাদি সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত হন। তিনি এ ধরনের কিছু কিছু বিষয়ের সংবাদ সাহাবায়ে কিরামকেও দিয়েছেন।)
আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে মওয়াহেবে লদুনীয়ায় বলেছেনঃ- অগণিত বর্ণনাকারীর সমর্থনপুষ্ট হাদীছ সমূহের সর্বসম্মত ভাবার্থে এ কথা বলা হয়েছে যে, গায়ব সম্পর্কে হুযুর আলাইহিস সালাম অবগত এবং এ মাসআলাটি সে সব আয়াতের পরিপন্থী নয় যেগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়ব জানে না। কেননা উক্ত আয়াত সমূহে যে বিষয়টির অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে তা হলো মাধ্যম ছাড়া অর্জিত জ্ঞান (স্বত্বাগত জ্ঞান) আর হুযুর আলাইহিস সালামের খোদা প্রদত্ত জ্ঞানের বলে গায়ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহর কালামের সে আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যেখানে বলা হয়েছেঃ اِلَّامَنِ ارْتَضى مِنْ رَّسُوْالٍ (কেবল তাঁর পছন্দনীয় রসূলকে অদৃশ্য বিষয়াদির জ্ঞান দান করা হয়।)
শেফা শরীফে কাজী সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন, (খরপূতী) শরহে কসিদায়ে বোর্দা থেকে সংগৃহীত।)
(আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহিস সালামকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে দ্বীন-দুনিয়ার সমস্ত মঙ্গলময় বিষয়াদির জ্ঞান দান করেন। নিজ উম্মতের মঙ্গলজনক বিষয়, আগের উম্মতগণের ঘটনাবলী এবং নিজ উম্মতের নগণ্য হতে নগণ্যতর ঘটনা সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করেছে; মারিফাতের সমস্ত বিষয় তথা অন্তরের অবস্থাসমূহ, ফরয কার্যাবলী ইবাদত সমূহ এবং হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি বিষয়েও তাঁকে অবহিত করেছেন।)
কাসীদায়ে বোর্দায় আছেঃ-
فَاِنَّ مِنْ جُوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا – وَمِنْ عُلُوْمِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ
অর্থাৎ হে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আপনার বদান্যতায় দুনিয়া ও আখিরাতের অস্তিত্ব। লওহে মাহফুজ ও ‘কলমের’ জ্ঞান আপনার জ্ঞান ভাণ্ডারের কিয়দাংশ মাত্র।)
আল্লামা ইব্রাহীম বাজুরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর শরহে কসীদায়ে বোর্দার এ পংক্তিদ্বয়ের তাৎপর্য বিশ্লেষণে লিখা হয়েছে-
যদি লওহে মাহফুজ ও কলমের জ্ঞানকে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের কিয়দাংশ বলা হয়, তাহলে তার জ্ঞানের অন্যান্য অংশগুলো দ্বারা কোন ধরনের জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে? এর উত্তরে বলা হয়েছে যে উহা হলো পরকালের অবস্থাদির জ্ঞান যা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তাকে অবহিত করেছেন। কেননা কলম দিয়ে লওহে মাহফুজে ঐ সকল বিষয়ই লিখা হয়েছে যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।
মোল্লা আলী কারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) حل العقده شرح قصيده برده নামক গ্রন্থে উপরোক্ত পংক্তিদ্বয়ের মর্ম উদঘাটন করতে গিয়ে বলেছেনঃ-
(লওহে মাহফুজ ও কলমের জ্ঞানকে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের কিয়দাংশ এ জন্যই বলা হয় যে হুযুরের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করা যেতে পারে। যেমন তাঁর জ্ঞান বস্তু বা বিষয়ের একক, সামগ্রিক সত্ত্বা, মৌলিক সত্ত্বা ও খোদার পরিচিতি এমনকি খোদার সত্ত্বাও গুণাবলী সম্পর্কিত পরিচিতিকে ও পরিবেষ্টন করে রয়েছে। সুতরাং লওহ ও কলমের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের একটি খালতুল্য কিংবা তার জ্ঞানের দপ্তরের এক অক্ষর সদৃশ্য মাত্র।
উল্লেখিত উদ্ধৃতি সমূহ থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, লওহ ও কলমের বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান যার সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে-وَ لَارَطَبِ وَلَا يَابِسٍ اِلَّا فِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ (ভিজা শুকনা এমন কোন বস্তু নেই যা লওহে মাহফুজে উল্লেখ করা হয়নি) হুযুর আলাইহিস সালামের বহুমুখী জ্ঞান সমদ্রের এক ফোটা মাত্র। তাহলে বোঝা গেল যে পূর্বাপর সব বিষয়ের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান ভাণ্ডারের একটি বিন্দু মাত্র।
কসীদায়ে বোর্দার সুপ্রসিদ্ধ লিখক ইমাম বু’চিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার অন্য এক কসিদায় বলেছেনঃ-
وَسِعَ الْعَالَمِيْنَ عِلْمًا وَّ حِكْمًا-فَهُوَ بَحْرٌ لَّمْ تَعِيْهَا الْاَعْبَاءُ
হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান-বিজ্ঞান সমগ্র জগতকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তিনি হচ্ছেন এমন এক সাগর যাকে অন্যান্য পরিবেষ্টনকারীরাও পরিবেষ্টন করতে পারেননি)
শাইখ সুলাইমান জুমাল উক্ত পংক্তিদ্বয়ের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফুতুহাতে আহমদীয়া গ্রন্থে লিখেছেনঃ-
তার জ্ঞান সমগ্র জগত তথা জীন-ইনসান এবং ফিরিশতাগণের ব্যাপক জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ তাকে সারা জগত সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। তার এ ব্যাপক জ্ঞানের জন্য কুরআনের জ্ঞানই যথেষ্ট। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ مَا فَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَيْىٍئ অর্থাৎ আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ দিইনি। ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) উক্ত পংক্তিদ্বয়ের ব্যাখ্যায় اَفْضَلُ الْقُرَى নামক কিতাবে লিখেছেনঃ-
لِاَنَّ اللهَ تَعَالَى اَطْلَعَهُ عَلَى الْعَالَمِ فَعَلِمَ الْاَو َّلِيْنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَمَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ
মহান আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামকে সমস্ত জগত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সুতরাং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিষয়সমূহ ও যা কিছু হয়েছে এবং যা কিছু হবে সবকিছুই জেনে নিয়েছেন।)
উক্ত উদ্ধৃতিসমূহ থেকে বোঝা গেল যে, সমস্ত বিশ্ববাসীর জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববাসীদের মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম।)ও রয়েছেন।
ফিরিশতাগণ, মৃত্যুর ফিরিশতা ও শয়তানও অন্তর্ভুক্ত আছে। উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর ফিরিশতা ও শয়তানের ইলমে গায়ব দেওবন্দীরাও স্বীকার করে।
ইমাম বু’চিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে)‘কসীদায়ে বোর্দায় উল্লেখ করেছেনঃ-
وَكُلُّهُمْ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ مُلْتَمِسٌ-
غَرْفًا مِّنَ الْبَحْرِ اَوْ رَشْفًا مِنَ الدِّيْمِ
(সবাই হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট থেকে জ্ঞান আহরণ করে থাকেন, যেমন কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফোঁটা থেকে পানি সংগ্রহ করে।)
আল্লামা খর পূতী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে কছীদায়ে বোর্দায় এ পংক্তিদ্বয়ের তাৎপর্য বিশ্লেষণে লিখেছেনঃ-
(প্রত্যেক নবী হুযুর আলাইহিস সালামের সে জ্ঞান ভান্ডার থেকে জ্ঞান চেয়ে নিয়েছেন, যা বিস্তৃতি ও ব্যাপকতার দিক দিয়ে বিশাল সমুদ্রের মত এবং সবাই তাঁর সে করুণারাশি থেকে করুনা প্রাপ্ত হয়েছে, যা অঝোর বারিধারার মত। কেননা, হুযুর আলাইহিস সালাম হলেন ফয়েয দাতা আর অন্যান্য নবীগণ হলেন ফয়েয গ্রহীতা। মহাপ্রভু সর্বপ্রথম হুযুর আলাইহিস সালামের রুহ মুবারক সৃষ্টি করে তাতে নবীগণের ও পূর্বাপর প্রত্যেক বিষয়ের জ্ঞান রাশি সঞ্চিত রাখেন। অতঃপর অন্যান্য রসুলগণকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং তারা সবাই নিজ নিজ জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে সংগ্রহ করেছেন)
হযরত হাফিজ সোলাইমান (রহঃ) ইবরীয শরীফের ২৫৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ-
وَ عِنْدَنَا يَعْلَمُ عَلَيْهِ السَّلَامِ مِنَ الْعَرْشِ اِلَى الْفَرْشِ وَيَطَّلِعُ عَلَى جَمِيْعِ مَا فِيْهَا وَهَذَا الْعُلُوْمُ بِالنِّسْبَلةِ اِلَيْهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَاَلْفٍ مِنْ سِتِّيْنَ جُزْءُ الَّتِىْ هِىَ الْقُرْاَنُ الْعَزِيْزُ
(আমাদের মতে হুযুর আলাইহিস সালাম আরশ থেকে পাতালপুরী পর্যন্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে তারও খবর রাখেন। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপরে আর কেউ নেই। এ ব্যাপক জ্ঞানও হুযুর (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞানের পরিধির তুলনা মুলক সম্পর্ক হচ্ছে এরুপ, যেরূপ ষাট অংশ বিশিষ্ট কুরআনের তুলনায় ‘আলিফ’ অক্ষরটি।
প্রখ্যাত ইমাম কুসতালানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) মওয়াহেব শরীফে উল্লেখ করেনঃ-
اَلنَّبُوَّةُ مَا خُوْذَةٌ مِنَ النَّبَّاءِ بِمَعْنِىَ الْخَبَرِ اَىْ اَطْلَعَهُ اللهُ عَلَى الْغَيْبِ
نَبُوَّت শব্দটি نَبَا শব্দ প্রকৃতি থেকে উদ্ভুত যার অর্থ হচ্ছে খবর বা জ্ঞান। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাকে অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। মওয়াহেবে লদুনীয়ার দ্বিতীয় খন্ডে ১৯২পৃষ্ঠায় اَلْقِسْمُ الثانِى فِيْمَا لَخْبَرَبِهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنَ الْغُيُبِশীর্ষক আলোচনায় লিখা হয়েছেঃ
لَاشَكَّ اَنَّ اللهَ تَعَالَى قَدْ اَطْلَعَهُ عَلَي اَزِيْدَ مِنْ ذلِكَ وَاَلْقَى عَلَيْهِ عِلْمَ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاَخِرِيْنَ
(এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহিস সালামকে এর থেকে বেশী বিষয় সমুহ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তার কাছে পূর্ববতী ও পরবর্তী জ্ঞানীদের সমুদয় জ্ঞান অর্পণ করেছেন)
হযরত মুজাদ্দিতে আলফে ছানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর মকতুবাত শরীফের প্রথম খন্ডের ৩১০ নং মকতুবে বলেছেনঃ
هر علم كه مخصوص به اوست سبحانه خاص رسل رااطلاع مى بخشند
(যে জ্ঞান আল্লাহর জন্য বিশেষরুপে নির্দ্ধারিত, সে জ্ঞান কেবল রসুল-গণকে জ্ঞাত করা হয়।
মাদারেজুন নাবুয়াতের প্রথম খন্ডে উল্লেখিত আছেঃ-
(কোন পুন্যাত্মা আলেমের মুখে শুনা গেছে যে, কোন আরেফ বা খোদার পরিচয় প্রাপ্ত ব্যাক্তি একটি কিতাব লিখেছেন। সেখানে তিনি প্রমান করেছেন যে, আল্লাহ তাআলার সমস্ত জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দান করেছেন। এ কথাটি আপাতঃ দৃষ্টিতে অনেক দলীল প্রমানের পরীপন্থী। জানিনা এরুপ উক্তি থেকে বক্তা কি বোঝাতে চেয়েছেন।)
উপরোক্ত উক্তিটি এখানে এ জন্য উল্লেখ করা হলো যে, কোন কোন লোক হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানকে আল্লাহ তা’আলা জ্ঞানের সমপরিমাণ বলে বিশ্বাস করেন; শুধু একথা স্বীকার করেন যে খোদার জ্ঞান সত্ত্বাগত আর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জ্ঞান খোদা প্রদত্ত এই যা পার্থক্য। কিন্তু দেখুন শাইখ আবদুল হক ছাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাদেরকে মুশরিক বলেননি বরং আরিফই বলেছে। এতে বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জন্য ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান স্বীকার করা শিরক নয়।
মীর যাহেদের রেসালার ভূমিকায় উল্লেখিত আছেঃ-
অর্থাৎ যাবতীয় অবধারণ প্রসূত জ্ঞান রাশি স্বভাবতই সেই পবিত্র সত্ত্বাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। আর সামান্য ধারণা সমূহের স্বয়ং জাত্যর্থ সমূহও ওই পূতঃপবিত্র সত্ত্বাভিমুখী তাবৎ প্রজ্ঞামূলক বিষয়ের সামান্য ধারণা ও অবধারণ সমূহের কেন্দ্র হচ্ছে তারই সুমহান রূহ মুবারক। আর প্রজ্ঞার সাথে সম্বন্ধিত বুদ্ধি বৃত্তি নির্ভর ও বুদ্ধি বৃত্তি প্রয়োগ ছাড়া বোধগম্য তাবৎ জ্ঞাতব্য বিষয়ের নির্ঝরণী হচ্ছে তারই মহিমান্বিত আত্মসত্ত্বা।
বিঃদ্রঃ যুক্তি বিদ্যায় দু’টো ধারণার মধ্যে একটির সাথে অপরটির সম্পর্কের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক মানসিক প্রক্রিয়াকে تصديق অবধারণ বলা হয়।
বস্তুর মানসিক প্রতিবেদনকে সামান্য ধারণা تصور বলা হয়ে থাকে।
উপজাতিবাচক পদ যা উপজাতির অন্তর্ভক্ত ব্যক্তিবৃন্দের افرادউপর সমভাবে প্রযোজ্য হয়। তাই حقيقت জাত্যর্থ। যেমন-মানুষ ধারণাটি রহিম, করিম, বকর, যায়দ প্রমুখের উপর সমভাবে প্রযোজ্য ।
উক্ত রেসালার ব্যাখ্যাগ্রন্থ মওলানা গোলাম ইয়াহিয়া কর্তৃক রচিত لواءالهدى নামক কিতাবে উক্ত উদ্ধৃতি তাৎপর্য বিশ্লেষণে লিখা হয়েছে فذاته عليه السلام جامع بين حميع انحاء العلوم অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম এর সত্ত্বা সর্ববিধ জ্ঞানের আকর।
সুবাহানাল্লা! এ উদ্ধৃতি দ্বারা রহস্যঘেরা যবনিকার উত্থোলন হল। যুক্তিবাদীরাও নবীর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ও মহান দরবারে মাথা নত করলেন।
বাহরুল উলুম মওলানা আবদুল আলী লখনবী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) মীর যাহেদ রেসালার টীকার ভূমিকায় লিখেছেন-
আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালামকে সেই সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন যেগুলো সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কলম বা কলমে আলার আওতায়ও আসেনি। লওহে মাহফুজও সেগুলোকে আয়ত্ত্ব করতে পারেনি। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মত কোন কালে কেউ জন্মগ্রহণ করেননি সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে; আর অনন্তকাল পর্যন্ত কেউ তার সমকক্ষ হবেন না। সমস্ত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কোথাও তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
আল্লামা শুনউয়ারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) جمع النهاية নামক কিতাবে বলেন-
قَدْ وَارَدَ اَنَّ اللهَ تَعَالَى لَمْ يُخْرِجِ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَتَّى اَطْلَعَهُ عَلَى كُلِّى شَىْءٍ
(একথা বর্ণিত হয়েছে যে আল্লাহ তাআলা নবী আলাইহিস সালামকে সর্ব বিষয়ে অবহিত না করে ধরাধাম থেকে নিয়ে যাননি।
শরহে আকায়িদে নসফী গ্রন্থের ১৭৫ পৃষ্ঠায় আছেঃ-
بِالْجُمْلَةِ الْعِلْمُ بِالْغَيْبِ اَمْرٌ تَفَرَّدَ بِه اللهُ تَعَالى لَا سَبِيْلَ اِلَيْهِ لِلْعِبَادِ اِلَّا بِاِعْلَامٍ مِنْهُ اَوْ اِلْهَامٍ بِطَرِيْقِ الْمُعْجِزَاتِ اَوِ الْكِرامَةِ
(সার কথা হলো এযে অদৃশ্য বিষয়াবলীর জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যার একমাত্র অধিকারী আল্লাহ তাআলা। বান্দাদের পক্ষে ওইগুলো আয়ত্ব করার কোন উপায় নেই, যদি মহান প্রভু মুজিযা বা কারামত স্বরুপ ইলহাম বা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন।
সুপ্রসিদ্ধ দুররুল মুখতার গ্রন্থের কিতাবুল হজ্বের প্রারম্ভে আছে-
فُرِضَ الْحَجُّ سَنَةَ تِسْعٍ وَ اِنَّمَا اَخَّرَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لِعَشَرِ لِعُذْرٍ مَعَ عِلْمِه بِبَقَاءِ حَيَاتِه لِيَكْمُل التَّبْلِيْغُ
হজ্ব নবম হিজরীতে ফরজ হয়, কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম বিশেষ কোন কারনে একে দশম হিজরী পর্যন্ত বিলম্বিত করেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তার পবিত্র ইহকালীন জীবনের বাকী সময় সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন বিধায় হজ্ব স্থগিত করেছিলেন যাতে ইসলাম প্রচারের কাজ পূর্ণতা লাভ করে )
এ ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে মৃত্যু কখন হবে সে বিষয়ের জ্ঞান পঞ্চজ্ঞানেরই অন্তভূক্ত। কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম তার ওফাত সম্পর্কে অবগত ছিলেন, জানতেন যে নবম হিজরীতে তার ওফাত হবে না। এ জন্য সে বছর হজ্ব আদায় করেননি। অথচ হজ্ব ফরজ হওয়ার সাথে সাথে উহা আদায় করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা আমরা মৃত্যুর খবর রাখি না।
আল্লামা খরপুর্তী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে কসীদায়ে বোর্দায় ইমাম বুচিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) রচিত উপরোক্ত পংক্তিদ্বয় প্রসঙ্গে বলেছেনঃ-
হযরত আমীর মুআবিয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে হাদীছ বর্ণিত আছে যে, তিনি হুযুর আলাইহিস সালামের সামনেই লিখার কাজ করতেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তাকে বলছিলেন দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘুরাও, (ب) বা অক্ষরকে সোজা কর, (س) সীন অক্ষরটি পৃথক কর এবং (م) মীমকে বাঁকা করো না। অথচ হুযুর আলাইহিস সালাম লিখার পদ্ধতি শিখেননি পূর্ববর্তীদের কোন কিতাবও পড়েননি।
তাফিসীরে রুহুল বয়ানে وَلَا تَخُطُّ بِيَمِيْنِكَ আয়াতটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছেঃ-
كَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَعْلَمُ لْخُطُوْطَ وَيُخْبِرُ عَنْهَا
(হুযুর আলাইহিস সালাম লিখতে জানতেন এবং সে বিষয়ে অপরকেও জ্ঞাত করতেন।)
এ থেকে প্রমাণিত হল যে হুযুর আলাইহিস সালাম ভালমতে লিখতে জানতেন। এর পূর্ণাঙ্গ গবেষণামূলক বিবরণ আমার রচিত ‘শানে হাবীবুর রাহমান বি আয়াতিল কুরআন’ নামক কিতাবে দেখুন।
মছনবী শরীফে আছেঃ-
অর্থাৎ ওলীগণের পদধুলিকে তোমার চোখের সুরমা স্বরূপ গ্রহণ কর যাতে তোমার আদি অন্তকালীন অবস্থা দৃষ্টিগোচন হয়। কামিল ওলীগণ অনেকদূর থেকে তোমার কথা শুনতে পান, তারা প্রয়োজনবোধে তোমার অংগ প্রত্যংগের রন্ধ্রে রন্ধ্রেও প্রবেশ করতে পারেন। তোমার জন্মের বহু পূর্বেই তোমার যাবতীয় অবস্থা অবলোকন করে থাকেন। তোমার যাবতীয় অবস্থা পুরোপুরিভাবে তাঁরা জানেন, কেননা তারা আল্লাহর রহস্যাবলীর ধারক হয়ে থাকেন।
সেই মছনবী শরীফে মওলানা রুমী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বিধর্মী যুদ্ধ বন্দীদের একটি ঘটনা উল্লেখপূর্বক বলেন যে হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমানঃ-
আমি সমস্ত সৃষ্টি জগতকে সে সময় থেকে দেখে আসছি তখন আদম ও হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টিও হয়নি। হে বিধর্মী বন্দীগণ প্রতিশ্রুতি গ্রহণের দিন (মীছাকের দিন) আমি তোমাদেরকে মুমিন ও নামাযীরূপে দেখেছিলাম। তোমাদেরকে এ জন্যই বন্দী করেছি যাতে তোমরা ঈমান আন। খুটিবিহীন আসমান ইত্যাদির সৃষ্টি আমি যেরূপ দেখেছি তার কোনরূপ তারতম্য এখনও পরিলক্ষিত হয়নি।)
উলামায়ে কিরামের এসব উক্তি থেকে বোঝা গেল যে আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালামকে সমস্ত নবী ও ফিরিশতা থেকেও বেশী জ্ঞান দান করেছেন। লওহে মাহফুজ ও কলমের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের এক ফোটা মাত্র। সৃষ্টি জগতের এমন কোন কিছু নেই যা হুযুর আলাইহিস সালামের সত্যদর্শী দৃষ্টি থেকে গোপন রয়েছে। -সূত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড-
[ad_2]
Source link