[ad_1]
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ইসলামের বীজ বীশ্বে রপন করে সেই
বীজ থেকে প্রচুর চাড়া বানিয়ে দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন । যে কোন
চাড়া গাছের যেমন পানির প্রয়জোন হয় , প্রয়োজন হয় সেবা যত্নের এমন কি
ভালবাসার পর্যন্ত এবং তা দেখাশুনা করবার জন্য প্রয়োজন হয় ট্রেনিংপ্রাপ্ত
শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের অর্থাত উদ্ভীদবিদের ,তেমনি ইসলামের সেই
চাড়াগুলোকে যত্ন করে প্রচুর পরিশ্রম করে ঝড় , বৃষ্টি, টর্নেডো ,সাইক্লোন
(তুলনা করা হয়েছে ইসলামের শত্রুদের ) থেকে রক্ষা করে তাকে মহিবৃক্ষ রূপে
বেড়ে উঠতে যারা সাহায্য করেছেন ।
অতঃপর সেই বৃক্ষের বীজ নিয়ে
তার বংশ বিস্তার করে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে পৌঁছে দেন । এক অর্থে সেই
অমূল্য বার্তাবাহকদেরকেই বলা হয় “সাহাবী ” ।
একমাত্র সাহাবীদের মাধ্যমেই কোরান মজীদ এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃ)
এর পরিচয় আর জীবনাদর্শ বিশ্বের একমাথা থেকে আর এক মাথায় পৌঁছে দেয়া
যায় । সাহাবী হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত আছে । যার মধ্যে এই তিনটি শর্ত থাকবে
সেই কেবল সাহাবী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে ।
(১) নবী (সাঃ) কে
স্বচক্ষে দেখতে হবে অথবা অন্ধ হলে নবী (সাঃ) এর মজলিশে বসতে হবে ।(২)
নবীজীর উপর ঈমান আনতে হবে । (৩) ঈমান অবস্থায় ইন্তেকাল করতে হবে ।
আল্লাহপাক তার সৃষ্টির সেরা হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কে অসংখ্য অলৌকিক
গুনে আলোকিত করেছেন । তাঁর মধ্যে একটি ছিলো তার পরশ পাথর দৃষ্টি ? যে
সৃষ্টিকর্তার বদৌলতে ধুলিকনা খনন করে তার নীচে থেকে বের করা হয় হিড়ার
মত অমূল্য ধন , সোনা রূপার মত চমকপ্রদ বস্তু ।আবার সেই ধূলিকনাতে রোপনের
মাধ্যমে জন্ম নেয় প্রতিটি প্রানীর খাদ্য এবং সব চাইতে আশ্চর্য বিষয় এই যে এই
ধূলিকনা থেকেই সৃষ্টি করেছেন প্রতিটি মানব সন্তানকে । একদিন আমাদেরকে
ফিরে যেতে হবে আবার সেই একমুঠো ধূলাতেই ।এরমত বাস্তব আর কি হতে
পারে ? উত্তাপে পানি হয়ে যায় বাস্প , আবার সেই বাস্প ঘনিভূত হয়ে নেমে
আসে বৃষ্টির মাধ্যমে । সমস্ত প্রানী জগতের জীবন-ধারনের রসদ হিসাবে ।
বিন্দুর চাইতেও ছোট্ট শুক্রকনা থেকে সৃষ্টি করেন তিনি একজন পরিপূর্ন মানব
সন্তান । বিশ্বের চারপাশে ছড়িয়ে আছে তার লীলাখেলা । আমরা
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানব সন্তানরা তার কত টুকু উদ্ধার করতে পেরেছি? সেই
সৃজনকর্তার কুদরতেই সৃষ্টির সেরা
মানব হযরত মুহ্মমদ (সাঃ) লাভ করেন পরশ
দৃষ্টির মত অমূল্য ক্ষমতা , যার ছোঁয়ায় ক্ষনিকের মধ্যে মাটির মানুষ হয়ে যেত
সোনার মানুষ ।তার মনের সমস্ত কালিমা , হিংসা ,হিংস্রতা দূর হয়ে সে হয়ে
যেত সত্যিকারের মানবীয় চরিত্রের অধিকারী ।
হিজরী দশম সনে মদীনায় প্রচন্ড রকমের দূর্ভিক্ষ দেখা দেয় । বহু লোক
অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছিলো । তির্থের কাকের মত তারা বসে
ছিলো যদি কোন দিক থেকে কোন সাহায্য আসে? এমনি পরিস্থিতিতে রাসূল
(সঃ) মসজীদে খোতবা দিচ্ছিলেন ।
এমন সমায় এক লোক এসে খবর দিলো , ” শাম
দেশ থেকে প্রচুর খাবার নিয়ে একদল বনিকের আগমন হয়েছে । এ খাবার কিনতে
কি এখানে কেউ ইচ্ছুক ?
এ খবর শুনে অধিকাংশ খোতবা শ্রবনকারী ছুটে যায় সেই বনিকের কাছে
খাবার কিনবার জন্য । এরমধ্যে শুধূমাত্র দশজন (মতান্তরে বারোজন ) বিশিষ্ট
সাহাবী (রাঃ) প্রচন্ড ক্ষুধার্ত থাকা সত্তেও পার্থিব প্রয়োজন এবং
পারিপার্শিক দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মুখনিশ্রিত অমুল্য
বানী শ্রবনেই মনোযোগী থাকেন ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহতায়ালা
বলেনঃ
” আর যখন তাহারা কোথাও ব্যবসায়-বানিজ্যে কিংবা কোন তামাশা দেখে
তখন তাহারা আপনাকে খোতবায় দন্ডায়মান অবস্থায় ছাড়িয়া দিয়া
বিক্ষিপ্তভাবে চলিয়া যায় । আপনি বলিয়া দিন যে , (আমাদের জন্য ) আল্লাহর
নিকট যাহাকিছু রহিয়াছে উহা বানিজ্য এবং তামাশার চাইতে বহুগুন উত্তম !
আর আল্লাহ উত্তম রিজিকদাতা । ”
যারা খতবা থেকে উঠে যান তাদেরকে সাধারন মুসলমান বলে গন্য করা হয় ।
আর যারা খোতবা থেকে উঠে যান নাই তাদের প্রতি রাসূল (সঃ) এত সন্তুষ্ট হন
যে , তাদেরকে বেহেশতী বলে ঘোষনা করা হয় । এই দশজন বিশিষ্ট সাহাবীর
নাম হলোঃ
(১) হযরত আবুবকর (রাঃ)
(২) হযরত ওমর (রাঃ)
(৩) হযরত ওসমান ইবনে
আফফান (রাঃ)
(৪) হযরত আলী ইবনে আবীতালেব (রাঃ)
(৫) হযরত তালহা (রাঃ)
(৬) হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়ান (রাঃ)
(৭) হযরত সা ‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস
(রাঃ)
(৮) হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ)
(৯) হযরত সাইদ ইবনে যাইদ
(রাঃ)
(১০) হযরত আবু ওবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)
একটি হাদিসে এই দশজন সাহাবীকে তাদের নাম উল্লেখ করে
বেহেশতী বলে রাসূল (সাঃ) ঘোষনা করেছেন । ইসলামের পরিভাষায় তাদেরকে
“আশরা-মোবাশশরা” নাম দেয়া হয় ।
খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবন প্রায়
সবারই জানা । সেখানে চারজন সাহাবীর কথা বলা হয়েছে কিন্তু
বাকী ছয়জনের ইতিহাস খুব কম জায়গায় পাওয়া যায় ।অবশিষ্ট বাকী ছয়জনেকে
বলা হয় “সিত্তাতুল বাকিয়াহ ” ।
পক্ষান্তরে রাসূল (সঃ) এর কতগুলি হাদীসের মাধ্যমেও বহুসংখ্যক
সাহাবী বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হন । অর্থাত তারা জীবদ্দশায়ই
বেহেশতবাসী হবার আগাম খবর জেনে যান । আবার কোন কোন হাদীস দ্বারা
রাসূল পরিবারের সদস্যবর্গেরও বেহেশতী হওয়ার ঘোষনা প্রমানিত হয় । এমন কি
কোরানের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূলের অমূল্য কোন হাদীসে সমস্ত
সাহাবীকেই বেহেশতী বলে পরোক্ষভাবে ঘোষনা করা হয়েছে । যেমনঃ
হাদীসঃ- ” আমার সাহাবীগন নক্ষত্রতুল্য । তাহাদের মধ্যে তোমরা যাহারই
অনুসরন করিবে, সতপথ প্রাপ্ত হইবে ।” no-2
তাদের প্রসংসা শুধু রাসূল (সাঃ) করেন নাই , বরং আল্লাহ পাকও তাঁদের ভুয়সী
প্রসংসা করেন । যেমন পাক কোরানের এক স্থানে তিনি এরশাদ করেছেনঃ-
” মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল । আর তাহার সঙ্গে যাহারা আছেন,
তাহারা কাফেরদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ! কিন্তু নিজেদের বেলায় অত্যন্ত
দয়াবান । তুমি তাহাদিগকে দেখিবে তাঁহারা রুকু-সেজদায় (তথা নামাযের)
মাধ্যমে আল্লাহর দান ও সন্তুষ্টি অন্বেষন করেন । তাঁহাদের (বন্দেগীর) চিহ্ন
তাঁহাদের চেহারায় ,সেজদার কারনে প্রস্ফুটিত হইয়া আছে । ” “সূরা আল
ফাতাহ”।
ইসলামে সাহাবীগনের গুরুত্ব এবং তাদের দোষ চর্চ্চা থেকে বিরত থাকতে
বলা হয়েছে ।স্বয়ং রাসূল (সাঃ) সতর্ক করে দিয়ে বলেনঃ
হাদীসঃ- সাবধান ! সাবধান !! আল্লাহকে ভয় করিও ! আমার সাহাবীদের
সম্পর্কে ! খবরদার ! খবরদার !! আমার পরে আমার সাহাবীদের ভালবাসিবে ! যে
কেহ আমার সাহাবীদিগকে
ভালবাসিবে বস্তুতঃ সেই ভালবাসা আমার প্রতিই
ভালবাসা হইবে । আর যে কেহ তাহাদের প্রতি খারাপ ধারনা পোষন করিবে
বস্তুতঃ সেই খারাপ ধারনা আমার প্রতি পোষন করা গন্য হইবে । যে কেহ
তাহাদিগকে ব্যথা দিবে এ যেন আল্লাহকেই ব্যথা দিল ।এবং আল্লাহকে যে
ব্যথা দিল অনতিবিলম্বে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করিবেন ।(তিরমিযী শরীফ )
হাদীসঃ- রাসুল (সাঃ) বলেছেন ,”আল্লাহতায়ালা আমাকে বাছাই
করিয়াছেন নবীগনের শ্রেষ্ঠরূপে। আমার সাহাবীগনকে বাছাই করিয়াছেন
নবীর পরে মানবশ্রেষ্ঠ রূপে । তাহাদিগকে আমার এত ঘনিষ্ঠ বানাইয়াছেন যে,
আমার শ্বশুর ,জামাতা সব তাহাদের মধ্য হইতে আসিয়াছেন । আর তাহাদিগকে
আমার সাহায্যকারী হিসাবে পাশে দার করাইয়াছেন ।
কোন কাজই হীনস্বার্থের বশে না করা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ
উদ্দেশ্যে করাকে “এখলাস” বলে । এই এখলাস একটি মহত গুন । এই “এখলাস “গুনের
তারতম্যে মানুষ অসাধারন বৈশিষ্ট গৌরব লাভে ধন্য হয় ।
হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর সাহায্যেই সাহাবীগন ঐ অমুল্য নুর লাভ করেছিলেন ।
সেই নূর বা আলোই সাহাবীগনের অসাধারন বৈশিষ্টের উতস ।ঐ বৈশিষ্ট্যের
মধ্যে যেটি ছিলো অন্যতম তার নাম “এখলাস”।
হাদিসঃ- হযরত ওমর (রাঃ) বর্ননা করেছেন , ‘আমি নিজ কানে রাসূল (সাঃ)
কে এই কথা বলিতে শুনিয়াছি তিনি বলিয়াছেন ,” আমি আল্লাহতায়ালার
নিকট আমার পরে আমার সাহাবীদের বিরোধ সম্পর্কে আবেদন করিলাম ।
তদুত্তরে আল্লাহ তায়ালা আমার নিকট ওহী পাঠাইয়া দিলেন ,’ হে মুহহ্মদ ,
আপনার সাহাবীগন আমার নিকট আকাশে নক্ষত্ররাজি তুল্য ! কম বেশী
প্রত্যেকের মধ্যেই আলো আছে । অবশ্য কাহারও আলো কাহারও অপেক্ষা
অধিক শক্তিশালী ( কিন্তু অন্ধকার কাহারও মধ্যে নাই )। অতএব কোনক্ষেত্রে
তাহাদের বিরোধ হইলে যে কেহ তাহাদের যে কোন একজনের মত ও পথ অবলম্বন
করিবে ।সে আমার নিকট সতপথের পথিক বলেই সব্যস্ত হইবে । ( মেশকাত ৫৫৪
পৃষ্ঠা )
সাহাবীদের মর্যাদাপূর্ন বৈশিষ্টের কথা আসমানী কিতাবেও লেখা
আছে । যথা – তাওরাত শরীফে নবীজী (সাঃ) এর আবির্ভাব আলোচনায় মক্কা
বিজয় ঘটনার ভবিষ্যদ্বানীতে বলা হয় ,”তিনি দশ সহস্র পবিত্রাত্নাসহ এমন
অবস্থায় আসিলেন যে, তাহার দক্ষিন হস্তে এক অগ্নিশিখাতুল্য (জ্যেতির্ময়)
ব্যবস্থা রহিয়াছে । মক্কা বিজয় অভিযানে নবীজ়ীর (সাঃ) সঙ্গে দশ সহস্র
সাহাবী ছিলেন । তাওরাত কিতাবে ঐ সাহাবীগনকে “কুদ্দুসী’ বা “পবিত্রাত্না
” বলা হয় ।
নবীগনের পরে কোন একজন সাহাবীর সমপর্যায়ে যাওয়া তো দূরের কথা ,
কাছা-কাছিও যাওয়া সম্ভব না । ইসলামকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রাখতে এই
সাহাবীগনের দান অপরিসীম ! সাহাবীগনের ত্যাগ-তিতিক্ষার কাহিনী বলে
শেষ করা যাবেনা । তাঁরা শত্রুর হাতে অমানুষিক অত্যাচার সহ্ন করেছেন ,
মৃত্যুবরন করেছেন তবু তাঁদের ঈমান থেকে কেউ তাঁদেরকে একচুল সরাতে পারেনি ।
একবার ক্কাবা শরিফে শত্রুরা রাসূল (সাঃ) কে ঘেরাও করে এবং তাকে
মাটিতে ফেলে প্রচন্ড রকমের প্রহার করছিলো , সে খবর হযরত আবুবকর (রাঃ) এর
কানে গেলে তিনি পাগলের মত ছুটে আসেন এবং বলেন ,” তোমরা কি সে
ব্যক্তিকে হত্যা করিতে চাও যিনি তোমাদের এ কথা বলেন ,” তোমার লালন
কর্তা আল্লাহ এবং যিনি তোমাদের নিকট আল্লাহর নিশান হইয়া আসিয়াছেন?
” একথা শুনে শত্রুরা রাসূল (সাঃ) কে ছেড়ে আবু বকর (রাঃ) এর উপর ঝপিয়ে পড়ে
এবং বেদম প্রহার করে যাতে তিনি তিনদিন পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে ছিলেন । জ্ঞান
ফিরবার পরই তিনি নবী করীম (সাঃ) এর কাছে যেতে চাইলে অনেকে বাঁধা দেন
, কিন্তু তিনি তা কিছুতেই শুনতে চান না । এমতঅবস্থায় হযরত আবুবকর (রাঃ) এর
মা নিজে তাকে হুজুর (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যান । নবী করীম (সাঃ) আবুবকর
(রাঃ) কে আলিংগন করেন এবং সেই দিনই আবুবকর (রাঃ) এর মা রাসূল (সাঃ) এর
কাছে ইসলামের দিক্ষায় দিক্ষিত হন ।
মক্কায় ইসলাম গ্রহনকালে বহু সাহাবীকে অমানুষিক অত্যাচার সহ্ন করতে হয়
। এরমধ্যে কিছু গোলামও ছিলেন । ইসলামের শত্রুগন এই গরীব ও গোলাম
মুসলমানগনের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন চালাত । তারা এই
অমানূষিক অত্যাচার নীরবে সহ্ন করতেন , কিন্তু ইসলাম ত্যাগ করতেন না ।
………….✔✔✔✘✘✘✘✘✘✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔✔
তাদের মধ্যে হযরত বেলাল (রাঃ) , হযরত জাবিরা (রাঃ) হযরত আম্মার ও তার
পরিবার খব্বার (রাঃ) ও হযরত বিনতে জারিয়া (রাঃ) নাম বিশেষ
উল্লেখযোগ্য !
✔✔✔✔♬♬♬
হযরত বেলাল (রাঃ) মক্কাবাসী উমাইয়া ইবনে খালফ নামক ধনী ব্যক্তির
গোলাম ছিলেন । উমাইয়া যখন জানতে পারলো হযরত বেলাল (রাঃ) ইসলাম ধর্ম
গ্রহন করেছেন তখন সে উন্মাদ প্রায় হয়ে বেলাল (রাঃ) এর উপর অমানুষিক
অত্যাচার শুরু করেন । উত্তপ্ত বালুর উপর ফেলে গড়ম লোহার শেক দিলো ।
গলায়
রশি বেঁধে মক্কার অলিতে গলিতে হেঁচরে নিয়ে যায় । কিন্তু এত অত্যাচারের
পরও হযরত বেলাল (রাঃ) এর একটি কথাই তার মুখ থেকে নিশ্রিত হচ্ছিলো আর
তা হলো “আহাদ” “আহাদ” অর্থাত “আল্লাহ এক” ” আল্লাহ এক” ।
হযরত আবুবকর
(রাঃ) উমাইয়াকে নম্র ভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেন , কিন্তু উমাইয়া আবুবকর
(রাঃ) কে অত্যন্ত রূক্ষভাবে বলেন ,” তোমার যদি এত দয়া হয় তবে তাকে ক্রয়
করে আযাদ করে দাও না কেনো ? এর পর দিন আবুবকর(রাঃ) উপযুক্ত দাম দিয়ে
বেলাল (রাঃ) কে খরিদ করে নেন এবং রাসূল (সাঃ) এর কাছে নিয়ে গিয়ে বলেন
,”আমি আল্লার ওয়াস্তে বেলালকে আযাদ করে দিলাম ।” রাসূলুল্লাহ এ সংবাদে
অত্যন্ত খুশী হন ।
পরবর্তীকালে ক্রীতদাস হযরত বেলাল (রাঃ) মহানবী (সাঃ) এর অন্যতম
সাহাবীর সম্মান লাভকরেন। ইসলামের প্রথম সমর বদর যুদ্ধে তাঁর অতীত দিনের
মহা অত্যাচারী প্রভূ উমাইয়া বিন খালফের সাথে সম্মুখ সমরে অবতীর্ন হলে
উমাইয়ার দেহ তাঁর দূর অতীতের ক্রীতদাস হযরত বেলালের হাতে খন্ড খন্ড হয়ে
গেল! ইতিহাসের কি নিষ্ঠুর উত্তর !! উমাইয়ার পুত্র আলিও একই যুদ্ধে একই জনের
হাতে প্রান হারান । হযরত বেলাল (রাঃ) এর নাম -যশ-খ্যাতি ইসলাম জগতের
যে স্থানটিতে অতুলনীয় , সেখানে তিনি মহানবী (সাঃ) অনুমদিত ইসলামের
প্রথম ঐতিহাসিক “মোয়াজ্জীন।”
নবী করীম (সাঃ) তাঁহার সাহাবীগনের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলেন । সব
ব্যপারেই তিনি তাঁহাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন । তাঁদের পারিবারিক সুখ-
শান্তি পর্যন্ত তিনি নিজে ভাগ করে নিতেন । সাহায্য করতেন তার সাধ্যমত ।
কিছুদিন অসুস্থ থাকবার পর যখন রাসূল (সাঃ) ইহধাম ত্যাগ করলেন
(ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজিউন ) তখন মসজীদে নববী এবং তার
আশে-পাশে লোকে লোকারন্ন হয়ে উঠে । হযরত ওমর (রাঃ) ছিলেন নবী
করীম (সাঃ) এর অত্যন্ত কাছের মানুষদের একজন । এ সংবাদ শুনে তিনি তা
কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ।তিনি পাগলপ্রায় হয়ে উঠেন ।তিনি
নিজেও তখন বুঝতে পারছিলেন না কি করছেন ? হযরত আবুবকর (রাঃ) বাইরে এসে
দেখেন হযরত ওমর (রাঃ) খোলা তরবারী হাতে চিৎকার করে বলছেন ,” যে এ কথা
বলিবে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইন্তেকাল করিয়াছেন , এই তরবারী দিয়া আমি
তার মস্তক ছিন্ন করিব । ” হযরত ওমর (রাঃ) এর এই ভয়ংকর মূর্তী দেখে অনেকেই
ভয় পেয়ে যায় । তখন আবু বকর (রাঃ) তার সেই যুগান্তকারী বক্তৃতা এবং
কোরানের আয়াতের মাধ্যমে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনেন । এরপর তিনি বলেন,”
হে মানব সমাজ, তোমাদের মধ্যে যেই ব্যক্তি মোহাম্মদ (সাঃ) এর পূজা করিত
,তাহারা জানিয়া রখুক যে , আল্লাহ পাক আছেন এবং চিরদিন থাকবেন ।”
উপরোক্ত আলোচনায় প্রমানিত হয় যে, সাহাবীগনের সম্পর্কে উচ্চ ধারনা ও
বিশ্বাস ইসলামের বিশেষ কর্তব্য । এই কারনে অধিকাংশ হাদীস গ্রন্থে
সাহাবীগনের বৈশিষ্ট্যের বিশেষ বর্ননা দেয়া হয় ।এমন কি বোখারী শরীফ ,
মুসলীম শরীফ ও তিরমিজী শরীফ যে শ্রেনীর গ্রন্থ এই শ্রেনীর হাদীস গ্রন্থের
পরিভাষায় “জামে” বলা হয় । যেই গ্রন্থে সাহাবীগনের বৈশিষ্ট্যের অধ্যায় না
থাকবে , সেই গ্রন্থ “জামে” পরিগনিত হবে না ।
“জামে” অর্থ “পরিপুর্ন “। যে গ্রন্থে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর গুনাবলী ও
কার্যকলাপের সঙ্গে তার সাহাবীগনের কার্যকলাপ ও গুনাবলীর বিষদ বর্ননা
দেয়া হয়েছে সে সমস্ত গ্রন্থকে “জামে” বলা হয় ।
এমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) বর্ননা করেছেন , ” রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
ফরমাইয়াছেন ,” আমার (গঠিত) যুগ ও জামাত ( তথা আমার সাহাবীগনের যুগ)
তারপর এই যুগ সংলগ্ন যুগ অর্থাত সাহাবিদের হাতে গঠিত ( তাবেয়ীনের যুগ ও
জামাত) । তারপর এই দ্বিতীয় যুগ সংলগ্ন তৃতীয় যুগ (অর্থাত তাবেয়ীনের দ্বারা
গঠিত তাবয়ে তাবেয়ীনের যুগ ও জামাত ) । এই যুগটির উল্লেখ হযরত মুহ্মমদ (সাঃ)
করিয়াছেন কি না সেই সম্পর্কে বর্ননাকারী সন্দিহান রহিয়াছেন ।”
(হাদীস ১৮১৩)
আবু সায়ীদ খুদয়ী (রাঃ) এর বর্ননায় পাওয়া যায় ” রাসূল (সাঃ) বলিয়াছেন
,” তোমরা আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলিও না , ( তাঁহাদের মর্তবা তোমাদের
অনেক উর্ধেব ) । তোমাদের কেহ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ন আল্লাহর
রাস্তায় ব্যয় করে , (তাহার এত বড় দানও ) সাহাবীদের কোন একজনের এক মুদ্দা
(প্রায় চৌদ্দ ছটাক ) বা অর্ধ মুদ্দা (গম বা যব ) ব্যয় করার সমান হইতে পারিবেনা
।
১৮১৫ হাদীস (পৃষ্ঠা ৫১৮)
ব্যাখ্যাঃ- এক এক জিনিসের মূল্য এক এক গুনের উপর নির্ভর করে থাকে , এবং
সেই গুনের অনুপাতেই তাঁর মূল্যমান নির্ধারিত হয়ে থাকে । নেক আমলের মুল্য
‘এখলাস” ও “লিল্লাহিয়াতের ” মাপ কাঠিতে পরিমাকৃত হয়। এই দিক দিয়া
সাহাবীগন হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর সোহবতের অসিলায় এত উর্ধেব পৌঁছেছিলেন
যে, অন্য কোন মানুষের পক্ষে সেখানে পৌঁছা সম্ভবই না, বরং এটাই সত্যি ,
সাহাবীদের জীবন ইতিহাসই এর প্রকৃত প্রমান !!!
[ad_2]
Source link