[ad_1]
এই প্রিয়তমা মহিয়সী উম্মুল মু,মিনীন হযরত আয়েশা(রাঃ),র স্থান কুল নারী জগতের সবার ঊর্দ্ধে। তাহার সুদুর প্রসারী শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম-কর্ম, জ্ঞান-বুদ্ধি, স্বভাব-চরিত্র, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাধনা-প্রতিভায় তিনি যে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিতা তাহা একদিকে যেমন মহিলাকুলের মহা-মর্যাদা ও গর্বের কথা অন্যদিকে তেমনি তাহাদের সাধনা ও প্রেরণার উৎস বঠে। তাহার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। মিল্লাতে মুসলিমের সম্মানিত শিক্ষিকা হযরতে আয়েশার সমুদ্রসম জীবন কাহিনী সীমিত আকারে লিখা কঠিন ও দুরুহ। এমনিতেই আমি মর্যাদাপূর্ণ কাহারো ব্যাপারে পাঠ করা ছাড়া লিখনিতে আগ্রহী নই । যদি পাছে লোকে কোন ভূল বেয়াদবী হয় তাহলে সম্পূর্ণ জীবনের অর্জনই বৃথা। তথাপী কয়েকদিন পর পর তাগাদা দিয়ে অভিমানী কন্ঠে নারী ম্যাগাজিন সম্পাদক আমাকে স্মরণ ও দাবীর প্রেক্ষিতে আমি বাধ্য হয়েই লিখছি। তাই ভূল ভ্রান্তি আশা করবো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন পাঠকমহল।
পবিত্র আল-কুরআনের আয়াতে করীমা পাঠের আগে-আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানীর রাজিম পাঠে মর্জি হয়। উনার জন্মকালীন সময় আরবে চলছিল স্বর্ণযোগ। সেই সময়ে মেয়েদের প্রতি যে একটি কুৎসা ভাব ছিল সমাজে তা প্রায় অনেকটাই উদাও হয়ে গিয়েছিল ইসলামের জ্যৌতির্ময়তায় । সেই সময়ে প্রয়োজন ছিল এমন একজনের যিনি সৃষ্টিকূলের মাতৃত্বের, অবিভাবকত্বের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হবেন। যিনি পথ প্রদর্শনে অগ্রগামী হয়ে নিয়ে যাবেন মাতৃকুল জাতিকে।
আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা তাহার জন্মের পূর্বেই তাহার অভিবাবক, শিক্ষক, বন্ধু, স্বামী ঠিক করে ঘোষনা দিয়েই রেখেছিলেন। যাহার জন্মে হল আলোকিত রমনীকুল। তাহার মাতা-পিতার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। তাহারা উভয়ই সর্বত্র সমাদৃত এবং মর্যাদান্বিত। পিতা হযরত আব্দুলাহ আবু বাক্কার সিদ্দিক (রাঃ) এবং মাতা সাইয়্যেদিনা উম্মে র্ওামান (রঃ)। সাত ভাই-বোনের মধ্যে হযরত আয়েশা (রাঃ) ছিলেন ৬ষ্ঠ। ভাই আব্দুর রাহমান ইবনে আবু বাকার আর তিনি ছিলেন একদম পিঠাপিঠি। খুবই চঞ্চল ছিলেন। মা উম্মে র্ওামান তাই তাহাকে আরব্য প্রথা অনুযায়ী ধাত্রী মাতা ঠিক করে দিয়ে দিলেন তুলনামূলক ধনী কোহাফাকে। নাতিন কে পেয়ে ওয়ায়েল দম্পতি খুশী মনে লালন-পালন করতে লাগলেন।
হযরত আয়েশার শিশুকালীন দুষ্ঠামী দেখে ওরাতো অবাক হয়ে যেতেন। মাত্র ২বৎসর বয়স, সেই সময় আয়শা চাঁদ দেখলেই দুনো হাত দিয়ে ধরে ফেলতে চাইতেন। ওয়ায়েল দম্পতি মাঝে মধ্যে দেখতেন যেন আয়েশা অলৌকিক কিছুর সাথে খেলা করিতেছেন। মুখে কথা ফুটে সময়ের আগেই। ৪বৎসর প্রায় ধাত্রী মায়ের কাছে তিনি লালিত পালিত হয়েছিলেন। বয়স এর সাথে সাথে তাহার ধর্ম কান্ডও বাড়তে থাকে। শৈশবেই তিনি ক্রীড়া, কৌতুকের প্রতি একটু আগ্রহী হয়ে উঠেন। পুতুল খেলা এবং দৌড়ের প্রতি তাহার আকৃষ্টতা ছিল লক্ষনীয়। কোরআন সৈনিক বাবার কোলে তিনি তন্ময় হয়ে কোরআন পাঠ শুনতেন। বাবা চলে গেলেই তিনি গুন গুন করে তা আবৃত্তি আকারে গাইতেন। তখন বর্তমান সময়ের মত পুথিগত বা ডিগ্রীগত বিদ্যালাভের প্রচলন ছিল না। কিন্তু শিক্ষা অর্জন এবং জ্ঞানের চর্চার অভাব মেঠানো হত ভিন্নভাবে। আরবে কবিতা বা প্রবাদ বাক্য প্রচলিত খুব। দাদা কোহাফা দম্পতি আদরের নাতীনকে কায়দা কানুন, রীতি-নীতি প্রাচীন গল্প খুব করেই শিখিয়ে ছিলেন। এমনিতেই আল্লাহ মেয়েদের-কে কিছু আলাদা বোধশক্তি ও বৈশিষ্ট দিয়েছেন যাহা দ্বারা তাহারা সহজেই কাজ-কর্মে গতিশীলতা আনতে পারে। আর তাদের ধৈর্য শক্তি তো অতুলনীয়। প্রত্যেকটি সৎকর্মেই তাই তাহারা আল্লাহর নৈকঠ্য পেয়েছেন সর্বাগ্রে। হযরত আয়েশা সেই সব দিক দিয়ে বেশ অগ্রগামী ছিলেন। তাহার স্মরণ শক্তির বর্ণনা দেওয়া ও প্রায় অসম্ভব।
পুথি, কাব্য, কাছীদাহ, প্রবাদ, পংতি আল-কোরআন শুনামাত্রই তিনি মুখস্থ করে ফেলতে পারতেন। তখনকার সময়ে বিখ্যাত মহিলা কবি খানসার এবং পুরুষ কবি লবীদ, আদকিয়া, নাওয়াফেল, ইমরুল কায়েস প্রমুখ বিখ্যাত কবিদের কবিতা তিনি শুনে তখন থেকেই পাল্টা তাহার মনের ভাব ফুঠিয়ে তুলতেন। দাদা কুহাফা একবার প্রতিবৎসর আয়োজিত ও কাজ উৎসবে কাব্য প্রতিদ্বন্দিতার অনুষ্ঠানে তাহার কবিতা পাঠ করলে নামী কবি সাহিত্যিকেরা তাহাকে প্রশংসা করেছিল কবিতার প্রাণবলে। মা উম্মে রাওমান এই অবস্থা দেখে সাথে সাথে মহিলা শিক্ষায়িত্রি নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন । তাহার থেকেই তিনি সেলাই, নকশী কাথা, রান্না, হাতের কাজ, অংকনের কাজ মোঠামোঠি আয়ত্বে আনলেন এবং ধীরে ধীরে পারদর্শীতা অর্জন করলেন । ক্রমে ক্রমে তিনি যেন জীবনের বাস্তবতা উপলব্দি করতে লাগলেন। এরিমধ্যে পিতামাতা ঠিক করলেন বিয়ে দেবেন। পাত্র কে হতে পারে এই গুণী মহিয়সীর আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা-ই ঠিক করে দিলেন তাহার আপন মহিমায়। মেয়ে যার তাদের মধ্যে এমনিতেই একটি চিন্তা কাজ করে যোগ্য পাত্র ঠিক করে দেওয়ার। তেমনি পিতা আবু বাক্কার (রাঃ) যাহাকে সিদ্দিকে আকবর বলা হয়। তিনি ঠিক করলেন পাত্র হিসেবে সম্রাটে দু জাহান হযরত মুহাম্মদ (সঃ) -কে। প্রস্তাবে সম্মতি নিয়ে আসলেন জিব্রিলে আমীন খোদ মালিক ও মাওলার বয়স সাত মতান্তরে নয়। তিনি হলেন ঘরণী। খেতাব হল তাহার কপালে উম্মত জননীর। এর পরে তাহার কর্ম গুনের যাত্রা শুরু। সাথের সাথী নুরের খনি। তিনি হতে লাগলেন মহিলা জগৎসহ উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যমনি। পূর্ণতায় তিনি সিক্ত। জীবন উপভোগে তৃপ্ত রমণী। ঈমানের দৃঢ়তায় তিনি অবিচল এক মূর্ত-প্রতীক। একাধারে স্বামী সেবা, সমাজ সেবা ও ইসলামের সেবায় পুরোপুরি আত্বনিয়োগ করলেন। সমাজের সর্বস্ত্ররের মহিলাদের সংঘঠিত করে তাদের মধ্যে সেই গুনের জৌতি ছড়াতে লাগলেন। চরিত্র, আদব, তাহজীব দ্বারা তিনি মহিলাদের শিক্ষা দিতে থাকলেন এবং মন জয় করলেন। স্ত্রীদের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ট তথাপি ঘনিষ্টতায় এগিয়ে থাকতেন। মহিলাদের মধ্যে তৎকালীন সময়ে তিনিই মূলত কর্ম-তৎপরতায় ভূমিকা পালন করেন আগ্রহী হয়ে। মেয়েদের সমাজে যাহাতে অসুবিধায় ভুগতে না হয় তাহার কর্ম-পন্থা বের করে দেন মহানবীর (সঃ) এর পরামর্শে। স্ত্রীর কর্মে খুশী পতি নবী (সঃ) সন্তুষ্ট হয়ে ডাকতেন হুমায়রা বলে। হুমায়রা অর্থ লালাভ রমনী। ইসলামের গূঢ় তত্বাবধানে তাহার জুরী মেলানো কঠিন। ইন্তিকালকাল অবধি অজস্র হাদিস বর্ণনা করেছেন যা আজো জীবন্ত। কিশোরী আয়েশা কর্ম ফাকে খেলতেন পুতুল খেলা এবং দৌড়াতেন। কিশোরী মনে দোলা দিতে পতি এগিয়ে আসতেন। উৎফুল স্ত্রী তাই আবেগে জড়িয়ে ধরতেন এবং কবিতা আবৃত্তি করতেন। পত্নি কম নয় তিনি ইচ্ছে করেই হারতেন এবং মাথা ঝাকিয়ে শুনতেন স্ত্রীর প্রেম মেশানো কবিতা এবং দিতেন বাহবা। উম্মতের আদর্শতায় যেন কমতি না হয় সে জন্য আপন মনে খুব অল্প দিনেই গড়ে তোলেন স্ত্রী আয়শাকে।
আয়েশাও তাহাতে গতিশীলতা আনতে কমতি করেননি। যার ফলে অনায়াশে তিনি পৌছে যান সর্বোচ্চ আসনে। তাহার একেকটি কর্মের আলোচনা দিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর লেখনী রচনা করা যাবে। যাহার তুলনা তিনি ব্যতীত ভিন্ন কেহই নয়। শাইতানের চোখে তখন জ্বলছিল আগুন তাই হঠাৎ করেই বসিয়ে দিল তাহার উপরে অপবাদের হিংস্র থাবা। যেহেতু শাইতানের কোন শক্র নেই তাই সে দিল জীবন তেহেছ নেছ এর মতো এক ঝাকুনি। কিন্তু ঈমানের অবিচলতা এমনি এক মহৌষধ যা কস্মিনকালেও বিনষ্ট করা সম্ভব হয়নি। চলতে পথে এই সব ঝড় ঝাপটায় বরং প্রকাশিত হয়ে যায় আলোর ঝলক এবং এতে থাকে প্রচুর শিক্ষনীয় বিষয়। যা জীবনে এনে দেয় সমৃদ্ধতা। শাইতানের এই কু কান্ডের ফলে বরং তারই পাতানো জাল ছিন্ন ভিন্ন হয়ে লোপাট হয়ে যায় অমানিশা। বাস্তবতাকে অস্বীকার করাই দুষ্টু চক্রের মূল কাজ। কিন্তু ওরা ভাবে না সততার দৌড় খরগোশের ন্যায় খিপ্র নয় তবে কচ্ছপের তুলনায়ও ত্বুচ্ছ। ঘনিভূত বিপদের তেজস্বীতা ছড়ালে ক্ষতির সম্মুখীন হয় সে নিজে। সত্যের প্রমান কোন না কোন ভাবে বিদ্যমান ও রক্ষিত থাকে। মিথ্যার স্থায়িত্ব মুখে মুখেই ম্বীমাবদ্ধ। আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকে মিথ্যা। একটি মিথ্যা প্রমানে শত চেষ্ঠা বিফলে যায়। অপরাধের পরিপূরক আরেকটি অপরাধ করে পুরণ করতে হয়। এতে সমূহ ব্যর্থতা এবং লোকসান গুনতে হয় চরমভাবে মূল্য দিয়ে। সময় সকল ক্ষেত্রে এক বিরাট পরীক্ষা। একই দিন, একই রকম রাত, একই মৌসুম, প্রতি বৎসর ঘুরে ফিরে আসে। কিন্তু যে সময় যায় তা আর কখনও ফেরৎ আসে না। চেষ্ঠায়রত অনেকেই সময়কে ফেরৎ আনতে চায়, ব্যর্থতা এবং বৃথা-অযথা আস্ফালন ছাড়া তাদের গতিপথ হয় নিকৃষ্টতার নিম্ন থেকে নিম্নস্তরে। ক্ষনিকের তামাশায় যখন চৈতনা ফেরৎ আসে তখন চেয়ে দেখে সময় ফুরিয়ে গেছে। হিসাবের পালায় যতই সুকর্ম মনে করা হোক না কেন, তখন দেখা যাবে ওজনে শূন্য বাটখারা।
হযরত আয়েশা (রাঃ) এবং নবী মোর পরশমনি (সঃ) এর জীবনে চলে আসলো সে রকম এক দূর্যোগ। বলার অপেক্ষা রাখেনা দাম্পত্য জীবনের অশান্তি নিশ্চিত এক আযাব। অসহনীয় কষ্ট শুধু ২টি জীবনে নয় ভোগায় গোটা জাতিকে। সন্তানের প্রতিতো এর প্রভাব পড়বেই। স্ত্রী এবং স্বামীর জীবন হয়ে যায় ছন্ন ছাড়া। তাছাড়া হয় যে ক্ষতি, তা ঈমানের খুলুছিয়তা। দাম্পত্য জীবনে উভয়ের ঈমান পায় পূর্ণতা। তাই এই অশান্তিকে অনেকে আযাবে বরযখের সাথে তুলনা করেছেন এবং তালাক এর মতো অনাকাংখিত ঘটনায় তো আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেপে উঠে। এই সব সমস্যার জন্য উভয়কে সর্বোতোভাবে ত্যাগ স্বীকার করে চলতে নির্দেশ রয়েছে আল কোরআনে। সমঝোতার সমূহ সব পন্থা খোজে বের করতে সালিশকারীদের প্রতি বলা হয়েছে। স্বামী এবং স্ত্রীর মর্যাদা রক্ষায় আল্লাহ খুবই কঠোর। অনেকেই সেই দাম্পত্য মর্যাদা কি তা বুঝতে পারে না। দাম্পত্য সুখে সুখী যাহারা তাহাদের প্রথম এবং শেষ শক্র হলো শাইতান ও তাদের দোষররা। তাই সে এদের মহব্বতে ফাটল ধরাতে চেষ্টায় থাকে অবিরত। তাদের এই সব তৎপরতায় যেন কোন মানুষ বিপথগামী না হয় এবং কোন মহিলাই যেন কাহারো বুঝা হয়ে না যায় সেই জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা স্বয়ং নিজে এই কলহ কলংক মেঠাতে এগিয়ে আসলেন এবং দু-জাহান তারকা সাইয়্যেদিনা হাসীনে জান্নাত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)-কে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। মাতৃকুল মহিলাদের প্রতি সর্বকালের জন্য। এতে উপকৃত হয়ে যেন চলে উম্মতকুল সে জন্য উম্মত জননীর প্রতি-ই আবার এক মহান দায়িত্বই যেন অর্পিত হলো। ঘটনাটি নিতান্তই তুচ্ছ। কিন্তু রটনা হয়েছে বিশাল। ঐদিকে অংশ নিতে পিছপা হয়নি তামেশগার অশান্ত জ্ঞান পাপীরা। তাদের জন্য সর্ব সুখের তখতে মখমল দুনিয়াই মূলত চাহিদা। পরের ধনে পোদ্দারী এই গাদ্দার সম্প্রদায় নিজ ঘরের বিড়াল ছানা, অন্যের জন্য দেখিতে হিংস্র শাবক। মহীয়ানে মহিমের সময় এমনি এক শিক্ষক যা মানুষ্য জাতীর জন্য কল্পনাতীত ব্যাপার। এই দূর্যোগপূর্ণ সময়ে তাদের ধৈর্য্য ও ঈমান ই হলো তাদের রক্ষা কবজ।
ঘটনাটি হলো মক্কা নগরীর নিকঠবর্তী বনি মোন্তালিক গোত্র পবিত্র মদিনা আক্রমন করিতে তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে সংবাদে রাসূল (সঃ) মদিনা থেকে সৈন্য বাহিনী নিয়ে তাদের প্রতিরোধের রওয়ানা হয়ে নজদের প্রান্তসীমা মোরায়সীতে তাসরীফ নিলেন। স্বভাবতই সেনাপতি রাসূল (সঃ) তাহার স্ত্রী হিসাবে এ সফরে সঙ্গীনী করলেন আয়শা (রাঃ)-কে। যুদ্ধ শেষে ফিরতি পথে মনজিল অতিক্রম করতে, হলো রাত্রিবাস। আয়শা (রাঃ) হাজতের তাড়নায় গেলে এ সময় এসে তৈরি হবেন ঠিক সেই সময় দেখিলেন তাহার খুবই মূল্যবান হার গলায় নেই। ইতিমধ্যে কাফেলার চলতি শুরু। তিনি তড়িগরি করে সেই হার খোঁজতে গেলেন। এদিকে তিনি সওয়ারীতে আছেন মনে করেই তাহার উটকে চালিয়ে দেওয়া হলো। তিনি ফেরৎ আসলে পরে যখন দেখলেন তাহার সাওয়ারী নেই এবং কাফেলাও চলে গেছে তখন অবাক হয়ে বসে রইলেন যে নিশ্চই তাহার জন্য সাহায্য আসবে। তিনি ছিলেন একদম হালকা পাতলা মধ্যম গড়নের। ক্ষুদ্র ছিল কাফেলা তাই তিনি ভাবলেন অবশ্যই উনাকে নিতে রাসূল (সঃ) কাউকে পাঠাবেনই। তখন নিয়মও ছিল শিবির তুলে চলে গেলে কিছু দুর থেকে আবার লোক পাঠিয়ে তথায় কিছু অবশিষ্ট বা কারো হারানো কিছু থাকলে কুরিয়ে নিয়ে যেতো এবং কাফেলা-কে অনুসরণ করতো। সাহাবী সাফ্ওয়ান ইবনে সুরাততিল (রাঃ) এই কাজে নিয়োগ পেলেন। তিনি এসে যখন দেখলেন হযরত আয়েশা (রাঃ) চাদর মুরি দিয়ে বৃত্তাকারে বসা তখন আওয়াজ দিয়ে পরিচয় জানার পরে তিনি তাহাকে পরিচয় দিয়ে স্বীয় উটকে বসিয়ে দিলে হাসিনে জান্নাত আয়েশা (রাঃ) উহার পৃষ্টে আসন নিলেন এবং মানজিলে পৌছিলেন। এই ঘটনাটি খুবই সামান্য এবং হালকা ও ঠুনকো। যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম উন্নতির যুগেও অনেক সময় পথে ঘাটে বহু গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসব নিয়ে তখন কোন কথা উঠানো হয় না। কিন্তু তাহার এবং রাসূলের তরে এই ঘৃন্যতম অপবাধ প্রচার করিলো হিংসুক, লোভী, হীন প্রবৃত্ত কিছু মোনাফেক। যাহারা সমাজে ভদ্র এবং নিজেকে ক্ষমতাশালী মনে করে। তাহারা বললো সাহাবী সাফ্ওয়ানের সাথে আয়েশা রাত্রি যাপন করেছেন এবং অপবিত্র হয়েছেন। ‘আস্তাগফিরুলাহ’ বিশ্বাসীরা প্রত্যাখ্যান করলো এবং স্বার্থভোগী, লোলুপ, মোনাফিকেরা তাহাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিলো। কোন ভদ্র ঘরের হালাল জাতি তাহার চরিত্র সম্ভ্রমকে কোনভাবেই বিকাতে পারে না। অবশ্য শাইতান ছাড়া। চরিত্র এমন একটি সোপান যা মহিলাদের জন্য দুনিয়াতে জান্নাতী চাদর এবং পুরুষদের বেলায় ঈমানী অহংকার। কবরের প্রশ্নে যুবক-যুবতীদের জবাবদিহী করতে হবে । যৌবন ব্যয় করেছ কোন পথে ? বর্তমান সময়ে ও দেখেছি অনেক মেয়েরা প্রেম করে প্রেমিক-কে বিয়ে করেছে তো নিতান্তর নতুবা প্রাণ ত্যাগ। চরিত্রের মাধুর্যতা এবং নিস্কলুষ বিশ্বস্থতা যদি না থাকে তা হলে তা প্রজন্ম, জাতীকে বেহায়াপনা ও দুষ্টাপনা উপহার দিয়ে পঙ্গু করে দেয় আলোর জ্যোতি।
আয়েশার ব্যাপারে এ ধরনের অপবাদতো ধুপে ঠিকে না। তথাপি স্বামী রাসূল (সঃ) একটু ধৈয্য ধরলেন, উনার মনে সন্দেহ নেই কিন্ত শরীয়াতী ব্যাপারতো তাই তিনি উদ্বিঘ্ন। কথা ছড়িয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) কান পর্যন্ত পৌছাল। তিনি শুনেতো পাগল পারা, হুশ হারা। বাবা আবু বাকর সিদ্দিক (রাঃ) এর স্মরণাপন্ন হলে সোজা সাপটা জ্ওয়াব এটা তোমাদের দু-জনার ব্যাপার আর তোমার স্বামী দু-জাহানের কান্ডারী। মেয়ে হিসাবে আমরা মাতা-পিতা সান্তনা দিতে পারি মাত্র। বিবি আয়েশা (রাঃ) তো আরো ভেঙ্গে পড়লেন। তিনি স্বামী গৃহে না য্ওায়ায় স্বামীতো আরো বেশী মর্মাহত হলেন বঠে কিন্তু বিপধে ধৈর্যই মহৌষধ। অপরদিকে মুনাফিক শাইতানরা আরো রটনায় হলো মশগুল। এই মূহুর্তে রায় হলে জনমত যাবে বিপক্ষে এমন থম থমে অবস্থা। আসলে জনমত সবসময় সত্য হয় না। জনমতকে কুৎসা দিয়ে প্রভাবিত করে প্রতারণা করা অসম্ভব নয়। আমি দেখেছি প্রায় সময়ই জনমত হেরেছে এবং সততার বিজয় হয়েছে। তাদের এই বিপদ মূহুর্তে আপনজনই অগ্রনই ভূমিকা নিলো অপবাদী করতে। নিজ অন্নে প্রতিপালিত এই সব বিশ্বাস ঘাতকদের অভাব নেই যুগে যুগে। এসব করে কেউ যে কোনদিন লাভবান হয়নি সেই অংকের হিসাব ও ভুলে যায় কু-চক্রিরা।
হযরত আয়েশা (রাঃ) এই মিথ্যা রটনা শুনে দুঃখে, ক্ষোভে মৃতপ্রায়। অপরদিকে রাসূলে আকরাম (সঃ) অবুঝ শিশুর মতো কখনো আবার পারিপাশ্বিক ঘটনায় বাকরুদ্ধ। অপবাদ, অপ-প্রচার যে যাহার বিরুদ্ধে করে তাহারা বদ্ধ মাতাল। না শুনে না বুঝে না দেখে কারো বিরুদ্ধে অপ-প্রচার বা অপবাধ রঠানো মানব সভ্যতার বিপরীত। জানোয়ারসম এসব আচরণে তোহমতকারীদের ক্ষতির পালাই ভারী হয়। এতসব ঘটে যাবার পর্ওে উনারা উভয়ে অবিচল আলাহর প্রতি। হযরত আয়েশা (রাঃ) তো কথা-বার্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মা উম্মে রাওমান অবস্থাদৃষ্টে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। অন্যদিকে কুল উম্মত কান্ডারী নবী (সঃ) মর্মাহত যেমন উদ্ভিগ্নও তেমন। এমন পেরেশানীতে কখনো পড়তে হয়নি তাহাকে। তাহার উপরে অত্যাচার-অবিচার, অপপ্রচার, অভিযোগ মোদ্দাকথা নির্মমতার সর্ব্বোচ্চ শিকার হয়েছেন তিনি। কিন্তু এ ব্যাপারে যে ব্যথাও আঘাত পেয়েছেন তা বর্ণনাতীত। ওহী না আসলে বিচার বিচারে নির্ঘাৎ মৃত্যু সাফ্ওয়ান ও আয়েশার। শরীয়তের আলোকে প্রস্তরাঘাতে ছিন্নভিন্ন করতে হবে উভয়ের মস্তিস্ক। সাফ্ওয়ান ও আয়েশা ২জনই ছিলেন স্বওা একা। দীর্ঘ কয়েকদিন ইলমূল ওহী আসেনি। সেহেতু নবী মোর পরশমনি নীজ থেকে কোন কথাই বলেন না। তাই অপেক্ষা ওহীর। ‘মা ইয়াত্বিকু আনিল হাওয়া, ইন হুয়া ইলা ওয়াহ ইউং ইউহা’ ফারসী কবির ভাষায় মর্মার্থ ‘মুহাম্মদ হাবীব না গুফতা তা না না গুফতা জিব্রাইল-জিব্রাইল হারগীজ না গুফতা তা না গুফতা রাব্বুল জালিল’। সেই ওহী আসছেনা তাই চিন্তায় তিনিও এক রকম ভেঙ্গেই পড়ছিলেন। তিনি সিজদায় দিলেন মাথা লুটাইয়া। অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি বিচার দিনের স্বামী। যত গুন গান করি হে মহান তুমি অন্তর্যামী। দুলুকে ভূলুকে সবারে ছাড়িয়া তোমারি চরণে পড়ি হে লুটাইয়া– ওহী আসার বিলম্ব হেতু মোনাফেক, ভন্ড শাইতানরা তামাশাই করছিল। এমনকি নবুয়্যাতী গেল, স্ত্রী গেল বলে কঠাক্ষ পর্যন্ত চালাতে লাগল। এভাবে আরো একবার আলাহ তায়ালা ওহী প্রেরণে সময় নিয়েছিলেন। একবার নবী (সঃ) একজনকে কথা দিয়েছিলেন কালকে দেব বলে কিন্তু ইনশাআল্লাহ বলেন নাই তাই পরদিন অর্থাৎ কালকে আর ওহী নিয়ে মালাইকা জিব্রাইল আমীন আসেননি। এসেছেন তাও চতুর্থদিন এবং কথা বলতে ইনশা আল্লাহ, মাশা আলাহ, আল হামদুলিলাহ, সুবহানালাহ, মারহাবা গুনবাচন, ভরসামূলক শব্দগুলো কথায় কথায় বলতে নির্দেশ সহকারে।
কিন্তু এবারে এত বিলম্ব হেতু কি হতে পারে তাই নবী (সঃ) ভাবনায়রত হলেন। আসলে মিথ্যা ¶নস্থায়ী এবং সত্য চিরস্থায়ী। তাই সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে একটু ধীরগতি এবং এখানে স্বয়ং রাহমাতালিল আল-আমিন জড়িত তাই এমন কিছু ঘটুক যা হতে হবে সমস্থ সৃষ্টির জন্য দৃষ্টান্ত। সাময়িক কষ্টে কখনো মু’মিন বিচলিত হয় না বরং এই সাময়িকতার খুশিতে শাইতান আটখানা হয়ে পুলকিত হয় পথভ্রষ্টতায়। কারো মদদে কোন ইনসান কক্ষনো যেতে পারেনা। পারিপার্শিক অবস্থায় হযরত আয়েশা কাহারো কোন কথাই না শুনে অবিচল রইলেন। দাসী নানা কথায় নানা কথায় তাহাকে শান্তনা দিতে গেলে তিনি বললেন আমি যাহার প্রেমে বিভোর তিনি হলেন মালিক ও মাওলা আমি যেহেতু অন্যায় করিনি আমি আমার চরিত্র বিকিয়ে দেইনি। আমি স্বামীর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করিনি। আমি কাউকে হেয় করিনি, আমি কাহরো চরিত্র হরণ করিনি। আন্দাজে কাহাকেও অপবাদ দেইনি, এমনকি কোন ধরনের মিথ্যা কঠাক্ষ বা সামান্যতম অনুমানমূলক কথা পর্যন্ত ছড়াইনি, সর্বোপরি আমি সবকিছূ ত্যাগ করেছি মাবুদে এলাহীতরে। সেখানে চিন্তা বা ভয় কিসের? আমার জন্য তিনিই যথেষ্ট এবং স্মরণ থাকা উচিৎ আমি খোদ রাহমতে এলাহীর স্ত্রী। আমি তাহারই করুনাকামী। কবিতা সাহিত্যে ভরপুর ঐশীবাণী এবং হাদিসে রাসুলের সরাসরি বর্ণনাকারী তিনি। এদিকে স্ত্রী বিরহ এবং ওহী বাণী না আসায় নবী মোহাম্মদ (সঃ) তটস্থ ঠিক কিন্তু পুরস্কারের আশায় তিনি প্রভু পানে সিজদা অবনত। তামেশগীর সমাজের তামাশা নির্মূল, সত্য প্রতিষ্টায় দৃঢ়তা এবং জাতির জন্য পুরস্কারের কল্যানে মেহেরবানে মালিক আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এমন কিছ সিদ্ধান্ত প্রেরণ করলেন যার কারণে সমস্যা সুরাহাই হল না শুধু সত্যই প্রমান পেল আলহামদুলিলাহ। ‘ওয়ালাযিনা ইয়ারমুনাল মুহছানাতি ছুম্মা লাম ইয়াতু বি আরবা’ আতি, শুহাদা-আ ফাজ্বলিদুহুম ছামানীনা জ্বালদাতাও ওয়ালা-তাক্ববাল লাহুম শাহাদাতান আবাদান ওয়া উলা-ইকা হুমুল ফা-সিকুন, ইলাললাযিনা তা-বু মিম বা,দি যা-লিকা ওয়া আছলাহ ফাইন্নাল লা-হা গাফুরুর রাহিম। ওয়ালাযীনা ইয়ারমুনা আয্ওয়াহাহুম ওয়ালাম ইয়াকুল লাহুম শুহাদা-উ ইলা আনফুসুহুম ফা শাহা-দাতু আহাদিহিম আরবাউ শাহা-দা-তিম বিলা-হি ইন্নাহু লা মিনাছ ছাদিকীন । ওয়াল খামিছাতু আন্না লা, নাতালা-হি আলাইহি ইন কা-না মিনাল কা-যিবীন । ওয়া ইয়াদরাউ আনহাল আযা-বা আন তাশহাদা আরবা, আ শাহা-দা তিম বিলাহি ইন্নাহু লা মিনাল কা-যিবীন । ওয়াল খা-মিসাতা আন্না গাদ্বা বালা-হি আলাই হা-ইন কা-না মিনাছ ছাদিকীন। ওয়া লাওলা ফাদলুল লা-হি আলাইকুম ওয়া রাহমাতুহু ওয়া আন্নালা-হা তাওয়াবুন হাকীম। ইন্নালাযিনা জ্বা-উবিল ইফকি উছবাতুম মিনকুম; লা তাহসাবুহ শাররাল লাকুম; বাল হ্ওুয়া খাইরুল লাকুম: লি কুলিম-রিয়িমমিনহুম মাকতাসাবা মিনাল ইছমি, ওয়ালাযী ত্ওায়ালা-কিবরাহ মিনহুম লাহ আযাবুন আজীম। ল্ওালা সামিতুমুহু জান্নাল মু,মিনুনা ওয়াল মু,মিনা-তু বি আন ফুসিহিম খাইর্ওা ওয়া ক্বা-লু হা-যা-ইফকুম মুবীন। লাওলা -জ্বা উ আলাইহি বি আরবা’ আতি শুহাদা-আ ফাইয লাম ইয়া’ তু বিশ শুহাদা-ই ফাউলা- ই কা ইন্দালা-হি হুমুল কা-যিবুন। ওয়া ল্ওালা ফাদলুলা-হি আলাইকুম ওয়া রাহমাতুহু ফিদ দুনিয়া -ওয়াল আ-খিরাতি লামাস্ সাকুম ফী মা-আফাদতুম ফী হি আযাবুন আজীম। ইয তালাক ক্ব্ওানাহু বি আল সিনাতিকুম ওয়া তাক্বলুনা বি আফ্ওয়া হিকুম মা লাইসা লাকুম বিহী ইলমু ওয়া তাহসাবুনাহু হাইয়্যিন্ওা ওয়া হুওয়া ইন্দালাহি আজীম। ওয়া ল্ওালা -ইয সামী তুমুহু কুলতুম মা-ইয়াকুনু লানা -আন নাতাকালামা বিহা-যা-সুবহা-নাকা হা যা বুহ তা নুন, আজীম। ইয়া ই জুকুমুলা-হু আন তা উদু লিমিছলিহী আবাদান ইন কুনতুম মু,মিনীন। ওয়া ইউ বাইয়্যিনুল লাহু লাকুমুল আ-য়া-তি; ওয়ালাহু আলীমুন হাকীম। ইন্নালাযীনা ইউহিব্বুনা আন তাশী আল ফাহিশাতু ফিলাযীনা আ-মানু লাহুম আযাবুন আলিমুন ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাতি। ওয়াল লা হু ইয়ালামু ওয়া আনতুম লা তা লা,মুন। ওয়া লাওলা ফাদলুলাহি আালাইকুম ওয়া রাহমাতুহু ওয়া আন্নালা-হা রাউফুর রাহীম। ইয়া–আউয়ূহাল লাযীনা আ-মানু লা-তাওয়াবি, উ খুতুওয়া-তিশ শাইত্বা-নি, ওয়া মাই ইয়্ওাবিতু খুতুওয়া-তিশ শাইত্বা-নি ফাইন্নাহু ইয়া,মুরু বিল ফাহশা-ই ওয়াল মুনকারী ওয়া লাওলা ফাদলুলাহি আলাইকুম ওয়া রাহমাতুহু মা যাকা-মিনকুম মিন আ-হাদিন আবাদাও ওয়ালা কিন্নালা-হা ইউফাক্কী মাই ইয়াশা-উ ওয়ালা-হু সামীউন আলীম।
সূরা নূর-পারা ২৪: এখানে বর্ণিত হয়েছে ঘটনার সম্পূর্ণ বিস্তারিত এবং এর সমাধান। আয়াত ৪ থেকে ২১। অর্থাৎ (সংক্ষেপে) যাহারা সম্ভ্রান্ত ঘরের স্ত্রীলোকদের সস্বন্ধে কুৎসা রটনা করে এবং অপবাদ ছড়ায় এবং চারিটি প্রমান উপস্থাপিত করিতে না পারে তা দিগকে আশিটি দুররা মারিবে এবং কখনো তাহাদের স্বাক্ষীকে সত্য বলে গ্রহন করিবে না কারণ তাহারা সীমা লংঘনকারী। নিশ্চয়ই যাহারা (আয়েশা সিদ্দিকা) মিথ্যা অপবাদ রটনা করিয়াছে তাহারা তোমাদেরই দলভুক্ত লোক। ইহাকে তুমি অশুভ মনে করিওনা, পরন্তু ইহার মধ্যে তোমার কল্যান নিহিত আছে। অপবাদকারীদের প্রত্যেকে তাহাদের কার্যের জন্য যথাযোগ্য শাস্তি ভোগ করিবে, যে সর্বাপেক্ষা এই কার্য্যে আগ্রহশীল তাহাকে গুরুতর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা হইবে এবং আমার শাস্তি যেমন ভয়াবহ তেমনি দৃষ্টান্তমূলক, শিক্ষনীয়ও বঠে। হে বিশ্বাসী পুরুষ এবং নারীগন তোমরা যখন এই কুৎসা-কাহিনী শুনলে তখন জন-দিগের কথা মনে করে কেন বলিলেনা যে ইহা মিথ্যা এবং সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা এবং যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকিত এবং দুনিয়া ও আখিরাতে করুনাই না প্রকাশ পাইত তবে তোমরা (হযরত আয়েশা) সস্বন্ধে যেসব কুৎসিত আলোচনায় যোগ দিয়াছিলে তাহার জন্য নিশ্চই তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হইত। তোমরা এমন বিষয়ে আলোচনা আরম্ভ করিলে যাহার সম্বন্ধে তোমরা কিছুই জানিতে না। তোমাদের কাছে বিষয়টি হালকা মনে হইয়াছিল কিন্তু আমি আল্লাহর কাছে উহা খুবই গুরুতর ছিল এবং যখন তোমরা শুনিলে ঘটনা তখন কেন বলিলেনা যে এ সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করা আমাদের সাজে না। সমস্থ গৌরব আলল্লাহর, নিশ্চই ইহা একটি মস্থ বড় অপবাদ। আমি(আল্লাহ) তোমাদিগকে উপদেশ দিতেছি যে, তোমারা যদি বিশ্বাসী হও তবে ভবিষ্যতে যেন এরুপ কার্য্য আর না হয়। উভয়কে মিলিয়ে দিতে যদি কেহ না আসে তা হলে সন্দেহ নেই সেই অপরাধী। সত্যই তো বটে যে যাহাকে অপবাদ দিলো বা দোষী বলে সাক্ষ দিলো সে যদি সামনা সামনি না আসে এবং বলতে না পারে তা হলে সেই অপরাধী-অপর পক্ষ একদম নির্দোষ। তবে সত্য উপলব্দি করা মু’মিনদের জন্যই সহজ।
বর্ণিত আয়াতগুলো দ্বারা সব সমস্যার সমাধান হলো এবং নবী মোর পরশমনি এবং হযরত আয়েশা আবার ফিরে পেলেন নব প্রান। হুজুরে আকরাম হযরত আয়েশাকে ডাকতেন হুমায়রা বলে। এবারে তিনি প্রকাশ্যে প্রিয়তমাকে বললেন এখন থেকে তুমি সিদ্দিকা পিতা আবু বকর বিশ্বাসে হয়েছিলেন সিদ্দিক উপাধী এবং মেয়েও পেলেন দৃঢ়তায় সিদ্দীকা লকব। দাম্পত্য জীবনের পবিত্রতার উপরেই পারিবারিক সুখও সামাজিক শৃংখলা নির্ভর করে। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা ছিলেন সে ব্যাপারে খুবই তৎপর। তাহার স্বামী সে তো সাধারণ নয়-ভিন্ন তো বঠেই এর উপরে তিনি পয়গাম্বর সুতরাং কলংকমুক্ত থাকার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। কেননা তিনি জানিতেন তিনি শুধু আয়েশা নন তিনি উম্মত জননী। তাহার দিকে তাকিয়ে থাকবে সম্পূর্ণ নারীকুল ও জাতী। আয়েশা সিদ্দীকার চরিত্র জ্যোতি জ্বল জ্বল করছিল আলাহর পক্ষ থেকে ওহী আসায়। তাই তিনি আরো বেশী বেশী মনোনিবেশ করলেন প্রভু প্রেমে। তিনি যে কোন ত্যাগে প্রস্তুত থেকে সামাজিক অবকাঠামো ঠিক করতে নারীদের মধ্যে আলো ছড়াতে থাকলেন। তাহার কর্মতৎপরতায় যেন আরশ লৌহ মূলক জ্বল জ্বল করছিল। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা তাহার কঠিনতম পরীক্ষায় পাশ করতে যে দৃঢ়তার প্রমান দেখলেন এতে পুরস্কার না দিয়ে কেমনে নীরব থাকেন? তিন মাস যেতে না যেতেই যাহাতে অনুরুপ ঘটনায় আর পতিত না হয় এবং এই ধরনের কান্ডে কোন গন্ডগোল না ঘটে তার জন্য হযরতে আয়েশা সিদ্দীকার কারণেই নারী, পুরুষস’হ সকলের জন্য আল্লাহতায়ালা তোহফা দিলেন তাইয়াম্মুম। ভিন্ন ঘটনা কিন্তু প্রেক্ষাপঠ সমান পানির অভাবে যাহাতে অপবিত্রতার ছেদ না আসে এবং বিশেষ করে মহিলাদের যাহাতে কষ্ট না হয় সেই জন্যই এই বিশেষ নিয়ামত দিলেন।
মহীয়সী নারীদের তপস্যাও প্রেমের উপহার এভাবেই মহান প্রভু দেন এবং তা কেয়ামত পর্যন্ত নির্দেশিত হয়ে থাকে জীবনের সকল প্রয়োজনে। হযরত আয়েশা আবেগে আপুত শুকরিয়ায় তিনি কান্নায় জারে জার। তিনি তার জন্য কি শুকরিয়া আদায় করবেন ভেবে আকুল। নারীরা যে ফেলনা নয় এবং তাহারা যে সব ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যেতে পাওে তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ তিনি। তাহার সাহিত্য, কবিতা চর্চা এমন ব্যাপ্তি ছড়িয়েছিল যা ঘরে ঘরে নারী কন্ঠে ধ্বনিত হত । শিক্ষার আলো ছড়াতে তাহার সমকক্ষ খোজে পাওয়া দুস্কর। তাহার ধর্ম স্পৃহা এবং ব্যবহারিক চারিত্রিক মাধুর্যতায় তিনি সমগ্র মানব জাতীর জন্য এক দিকপাল এতে কারো কোন দ্বিমত নেই। মহিলাদের তিনি শিখিয়েছেন কি করে শত বাধা পেরিয়ে মাথা উচু করে দাড়াতে হয়। উনি শিক্ষকতা করেছেন হযরতে আমীর মোয়াবিয়ার আমলে। দারুল খিলাফতে যথাক্রমে কুফায় এবং দামেস্কে স্থানান্থরিত হয় এবং আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় সেই সময়। মাদিনা মোন্ওায়ারায় তাহার শিক্ষাগার ছিল সর্বশ্রেষ্ট। তাহার সনদ পেতে ছাহাবী মন্ডলীদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগীতা হতো।
হযরত আবু হুরায়রা, আব্দুলাহ ইবনে উমর, আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস, যায়েদ ইবনে ছাবিত, ইবনে জাবির ও তাহাদের পত্নী ও কন্যারা তাহার ছাত্র-ছাত্রী হয়েছিলেন। যদিও হাদিস বর্ণনায় তাহার স্থান পঞ্চম তথাপি উম্মত জননী হ্ওয়ায় স্বীয় পিতা হযরত আবু বকর, হযরত উমর ফারুক (রাঃ) দের মতো বৃদ্ধর্ওা তাহার ইলমে হাদিসের মজলিসে উপস্থিত হতেন শুধুমাত্র বারাকাতের জন্য। তাহার ছাত্রী সারাইয়া, রাহতা, উম্মে রাইসা, ফাযলী প্রমুখ বিভিন্ন সময়ে দুত হিসাবে মহিলাদের কাছে প্রেরিত হতেন দুরদেশে। তিনি প্রতি বৎসর-ই প্রায় হ্জ্জ-এ যেতেন-এমনি কিংবা হজ্জেও কাফেলা নিয়ে তাবু সন্নিবেশিত করতেন হেরা ও র্মাওয়া পর্বতের মধ্যবর্তী সাবীর পাহাড়ের পাদদেশে। তখন তাহার দরবারে আগত প্রশ্নকারী ও শিক্ষার্থীদের ভীর সামলাতে হিমসিম খেতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের।
ঐতিহাসিক ইবনে সাদ ও ইবনে হাজার গ্রন্থের সাথে সখ্যতা ছিল অতুলনীয়। হযরতে হাসান হোসাইন (রাঃ) মায়ের অবর্তমানে তাহাকে ডাকতেন নানী-মা বলে। তিনি দিতে পছন্দ করতেন। কিছু যদি না থাকত তখন তিনি স্ওয়ালকারীকে অন্তত হাদীসে রাসুল (সঃ) শুনিয়ে তুষ্ট করতেন। নির্ভরযোগ্য কথিত রয়েছে যে তিনি জীবনের শেষ মূহুর্তে নিজের বাসগৃহখানও আমীর-এ মোয়াবিয়ার নিকট বিক্রয় করত উহার থেকে প্রাপ্ত মূল্য গরীব-দুঃখীদের জন্য ওয়াক্ফ করে রেখেছিলেন। বৎসরের অধিক সময় সাওম পালন করতেন। খুবই অল্প আহার ছিল তাহার। প্রিয় খাবারের মধ্যে শরবত ও গমের আঠার সাথে খেজুরের হাল্ওয়া সংমিশ্রনে একধরনের পিঠা ছিল অন্যতম। অল্পে তুষ্টি ছিল তাহার এক প্রঘধান গুন। এই গুনটি সচরাচর নারীদের মধ্যে দেখা যায় না। কিন্তু আলাহ ভীরু ও প্রেমিকদের দুনিয়াবী লোভে কখনো গ্রাস করতে পারে না। তাহার মধ্যে অলসতা ছিলনা মোঠেই । তিনি বুজর্গ ও মনিষীদের প্রতি শ্রদ্ধা পোষন করতেন। তিনি বলতেন সালাতে ফজরের ব্যাপারে আলাহ খোদ নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষভাবে। সালাতে কার্পন্যকারীদের তিনি কঠোরভাবে শাষন করতেন। তিনি বলতেন সালাতের অমান্যকারীরা দুনিয়ালোভী ও পরশ্রীকাতর। তাহার জ্ঞানের ভান্ডার ছিলেন স্বামী মুহাম্মদ (সঃ)। একট্ওু হেরফের হয়নি শিক্ষা নিতে। একটু সময় পেলেই কৌতুকে মেতে উঠতেন স্বামীর সাথে। তিনি উচ্ছল ও অট্টহাসিতে ফুটে উঠতেন। স্বামী প্রেরণায় তিনি এতটাই মা,বুদ প্রিয় হয়ে উঠেন যে একবার একটি কৌতুকের জবাব দিতে মালাইকা জিব্রাইল পর্যন্ত এগিয়ে এসেছেন বলে জানা যায়। স্বামী-স্ত্রী একই থালায় আহার করিতে পছন্দ করতেন। দরিদ্রসীমার ঘরে বাতি জ্বালানোর মতো তৈল নেই এমতাবস্থায় হুজুরের আগমন তাহার হুজরায়। তিনি স্ত্রী আয়েশাকে বললেন খিদে পেয়েছে খাবারের আয়োজন করা যাক। তিনি (আয়েশা) বললেন ইয়া রাসুলুলাহ বাতি জ্বালতে পারছিনা, চুলায় আগুন দিব কি করে? আচমকা এই কৌতুকের জবাবেই নাকি জিব্রিলে আমিন এসে কানে কানে বলে যান হুজুর আয়েশার লেজ আছে নাকি আগু জ্বালাবে? হুজুর তা বলতেই তিনি বললেন বুঝেছি তা মালাইকারই কারসাজী-তাইতো আমি আজ সকাল থেকে লেজ খোঁজেই পাচ্ছি না। সরস কৌতুক ও সানন্দ গল্পই ছিল তাদের অš—রঙ্গ মূহুর্তের মনি মুক্তা । অপূর্ব এই দাম্পত্য জীবন গোটা মানবকুলের জন্য অতুলনীয় এবং উত্তম আদর্শ। মানুষ মাত্রই দোষে-গুনে হয়-এর মধ্যে কিছু কিছূ মানুষ হয় অনুকরণীয়। তিনি হলেন এর মধ্যে অন্যতম।
হুজুরের (সঃ) আরেক স্ত্রী সাইয়্যেদিনা জয়নাব (রাঃ)’র মতে আয়েশার ভিতরে গুন ছাড়া দোষের কিছুই তিনি দেখেননি। আধুনিক মন মানষিকতায় পূর্ণ এবং নান্দনিকতায় তিনি অগ্রগামী এক মূর্তপ্রতীক। তখনকারকালে আধুনিকতার ছোয়ায় তিনি ছিলেন মহিলা সমাজে আদর্শ। ইদানিংকালে আমরা দেখতে পাই অনেকেই আয়েশা নাম রাখলে লজ্জা পায় এবং নাম বদলে ফেলে। অথচ তখন থেকেই প্রতিটি ঘরেই মেয়ে জন্মালে আয়েশা নাম রাখা ছিলো আভিজাত্যের প্রতীক। সাধারণত আয়েশা বলতে আমরা বুঝি তিনি রাসূলের স্ত্রী তা কিন্তু নয় শুধু, তিনি দুনো জাহানে মহিলাদের জন্য এক উজ্জল তারকাও বটে। অবশ্য আয়েশা (রাঃ) নিজেই বলেছেন রাসুল (সঃ) ব্যতিরেকে তিনি নিঃপ্রভ। তাহার মধ্যে যা যা আছে তা তিনি স্বামী থেকেই প্রাপ্ত ভাগ্যবাতি। রাসুলে আকরাম (সঃ) লোক চক্ষুর অন্তরালে গেলে তিনি পবিত্র র্ওাযায়ে রাতে গমন করে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন । যেহেতু স্বামী হায়াতান নবী এতে মোলাকাতে সমস্যা নয়। স্বামী রাসুল (সঃ) এর প্রতি দুরুদ ও সালাম পৌছাতে সর্বকুলের সবাইকে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ নিজেই বলেছেন আমি যেমনটি করি তেমনটি সবাই কর। ইন্নালাহা ওয়া মালাইকাতু হু ইউসালুনা আলান নাবী, ইয়া আইয়্যুহালাযিনা আমানু সালু আ্লাইহি ্ওয়া সালিমু তাসলিমা’ আয়েশা (রাঃ) তাহার কর্মগুনে এমন একটি পোখতা স্থান করে নিয়েছেন যা কোন কালেই স্থান হবার নয়। তিনি কখনো ভাবেননি যে, তাহার অবদান এর স্বীকৃতি পেতে। তাইতো তিনি আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমর (রাঃ) -কে তাহার কবরের জায়গাটুকুন পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে সর্বশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মা’কেই অনুকরণ এবং অনুসরণ করে সন্তানেরা। কোন না কোনভাবেই সন্তানের উপর মায়ের ভূমিকার ছাপ পড়ে থাকে। তিনি এমন যে একদম সৃষ্টিকুল জননী। তাহার চরিত্র ধারণ করতে আজো তৎপর দেখা যায় অনেক-কে। দুনিয়ায় থাকতেই জান্নাত পুরস্কার প্রাপ্ত এই মহীয়সীর ব্যাপারে আলোচনা যতই করা যাবে ততই মুগ্ধ হতে হবে। তাহার সম্পর্কে এই কিঞ্চিত লেখনী সিন্দুতে বিন্দুই বলতে হবে। তিনি প্রায় সত্তর বৎসর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তাহার মৃত্যু কালে এমনি এক কুদরতি জ্যৌতি ছড়িয়ে পড়ে যা কল্পনাতীত। তিনি চির শায়িত হয়ে আছেন জান্নাতুল বাকীতে। আমরা যেন তাহার চরিত্র মাধুর্যতায় আলোকিত হতে পারি সেই কামনাই রইল। কবিতার প্রাণ প্রেমিক আয়শা গরীব ও বুড়ো স্বামীর ব্যাপারে বান্ধবীদের প্রশ্নের জবাবে যে,কটি পংতি রচনা করে আবৃত্তি করেছিলেন তা নারী ম্যাগাজিনের সুহ্নদ পাঠকদের জন্য উপহার সরুপ:
আনা সামছুন ওয়ালিল আফাকে সামছুন
ওয়া সামছি আফযালু মিনাস সামায়েই
ইন্নাস সামছি তাতলুয়ু ইলা বা’দাল ফাজ রি
ওয়া সামছি তাতল্যুয়ু ইলা বা’দাল ইশায়িই।
বান্ধবী রা গো শুন আমার স্বামী এমন যে,
তোমাদের যেমন সূর্য আছে উদিত হয় ভোরে ,
আমার সূর্য তা নয়-আমার সূর্য উদিত হয়
সন্ধা যখন নেমে আসে অস্ত যায় না সে,
[ad_2]
Source link