[ad_1]
নবী মানব জাতীর মধ্যে আবির্ভূত হয়ে থাকেন, আর মানবই হন; জ্বিন কিংবা ফিরিশতা নন। এটি হচ্ছে পার্থিব বিধি-বিধান অনুযায়ী। কেননা মনুষ্য সৃষ্টির সূচনা হয় হযরত আদম (আ:) থেকে- তিনিই হলেন মানুষের পিতা । আর হুযুর (আলাইহিস সালাম) সে সময়েও নবী ছিলন যখন আদি পিতা হযরত আদম (আ:) মাটির ও পানির সাথে একাকার ছিলেন । স্বয়ং হুযুর (আলাইহিস সালাম) ইরশাদ করেন-
كُنْتُ نَبِيَّا وَ اَدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ وَالطِّيْنِ
আমি তখনও নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম (আঃ) পানি ও মাটির সাথে একীভূত ছিলেন ।] সে সময় অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টির পূর্বে হুযুর আলাইহিস সালাম নবী ছিলেন, মানব ছিলেন না । এসব কিছুই সঠিক । তবে, নবীদেরকে ‘বশর’ বা ‘ইনসান’ বলে আহবান করা, কিংবা হুযুর (আলাইহিস সালাম ) কে ‘হে মুহাম্মদ’, ‘হে ইব্রাহীমের পিতা’, ‘হে ভাই’, ‘হে দাদা’, ইত্যাদি ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নির্দেশক শব্দাবলী দ্বারা সম্বোধন করা ‘হারাম’ বা নিষিদ্ব । যদি কেউ অবমাননার উদ্দেশ্যে এভাবে সম্বোধন করে, তা’হলে ‘কাফির’ বলে গণ্য হবে ।
‘আলমগীরী’ও অন্যান্য ফিকাহ এর কিতাবসমূহে আছে, যে ব্যক্তি হুযুর (আলাইহিস সালাম) কে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে ‘هَذَا الرَّجُلُ এ লোকটি’ বলে অভিহিত করে, সে ‘কাফির’। তাকে বরং ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ ! ‘ইয়া শফীয়াল মুযনেবীন’“ইত্যাদি সম্মান সূচক শব্দাবলী দ্বারা স্মরণ করা জরুরী । কবিগণ তাদের কাব্যে ‘ইয়া মুহাম্মদ’ লিখে থাকেন বটে, তবে তা স্থানের সংকীণ্নতার কারণে লিখা হয় । অবশ্য কবিতা পাঠকারী যেন সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম পড়ে নেন । যেমন এ পংক্তিতে বলা হয়েছে। واه كيا جود وكرم هے شه بطحاتير
(বাহ! হে সপ্রশস্থ, বিস্তীর্ণ ভূ-খন্ড তথা মক্কার বাদশাহ! ‘তোর’ দান ও বদান্যতা কী অপূর্ব !) এ ‘তোর’ শব্দটি নিবিড় সম্পর্ক ও আবদার নির্দেশক শব্দ । যেমন বলা হয়ে থাকে হে মাওলা! আমি তোর জন্য উৎসর্গিকৃত । ওহে মা! তুই কোথায়? ‘হে আল্লাহ! তুই আমাদের প্রতি দয়া কর’ । এ ধরনের ‘তুই’ ও ‘তোর’ প্রভৃতি শব্দাবলীর তাৎপর্য ভিন্ন।
১। কুরআন কারীমে ইরশাদ করেছে-
لَا تَجْعَلُوْا دُعَاءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًاوَ لَاتَجْهَرُوْ الَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ اَنْ تَحْبَطَ اَعْمَالُكُمْ وَاَنْتُمْ لَاتَشْعُرُوْنَه
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের মধ্যে রাসুলকে ডাকার এমন রীতির প্রচলন করিও না, যেমন করে তোমরা একে অপরকে ডেকে থাক । তাঁর সমীপে চেঁচিয়ে কথা বলিও না, যেমন করে তোমরা পরস্পরের সাথে উচ্চস্বরে কথা বল; পাছে তোমাদের আমলসমূহ তোমাদের অজ্ঞাতসারে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয় ।
আমলসমূহ কুফরের কারণে নস্যাৎ হয়ে থাকে । ‘মদারেজ’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে –
وصل از جمله رعايت حقوق اوليست
শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছেঃ-
مخوانيد ا ور ابنام مبارك اوچنانكه مى خوانيد بعضے از شما بعض را بلكه باگويد يارسول لله يانبى الله يا توقير وتوضيع.
অর্থাৎ- নবী (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর পবিত্র নাম ধরে ডাকতে নেই, যেমন তোমরা পরম্পরকে ডেকে থাক । বরং তাঁকে আদব সম্মান ও বিনয় সহকারে এভাবেই ডাকবে- ‘ইয়া রাসুলাল্লা’ । ইয়া নাবীয়াল্লা’ ।
তাফসীরে ‘রুহুল বয়ানে’ উক্ত আয়াত এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরূপঃ
وَالْمَعْنَى لَاتَجْعَلُوْ ابِدَاءَ كُمْ اِيَّاهُ وَتَسْمِيْتَكُمْ لَهُ كَنِدَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْصًالِاِسْمِهِ مِثْلُ يَامُحَمَّدُ وَيَااِبْنَ عَبْدِ اللهِ وَلَكِنْ بِلَقَبِهِ الْمُعَظَّمِ مِثْلُ يَنَبِىَّ اللهِ وَيَارَسُوْلَ اللهِ كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى يَااَيُّهَاا لنَّبِىُّ وَيَااَيُّهَا الرَّسُوْلُ
অর্থাৎ মূল কথা হচ্ছে হুজুর (আলাহিস সালাম) কে ডাকার ও তাঁর নাম লওয়ার সময় এমন ভাবে ডাকবে না’ যে ভাবে তোমরা পরস্পরকে নাম ধরে ডাকাডাকি কর । যেমন- হে মুহাম্মদ! ওহে আবদুল্লার পুত্র ! তবে, তাঁকে মহিমান্বিত উপাধিসমূহের মাধ্যমে ডাকবে, যেমন -ওহে আল্লাহর নবী ! ওহে আল্লার রাসুল ! যেমন স্বয়ং মহা প্রভু আল্লাহ তাঁকে ‘হে নবী ।’ হে রাসুল বলে সম্বোধন করে থাকেন ।
এসব কুরআনের আয়াত, তাফসীরকারক ও হাদীছবেত্তাগণের উক্তি সমূহ থেকে বোঝা যায় যে, যে কোন অবস্থায় হুজুর (আলাইহিস সালাম) এর মান মর্যাদার প্রতি সবিশেষ লক্ষ রাখতে হবে, চাই ডাকার সময় হোক, বা কথা বলার সময় হোক কিংবা তাঁর সাথে যে কোন আচরণের সময় হোক ।
২। পার্থিব মান-সম্মানের অধিকারী ব্যাক্তিবর্গকেও তাদের নাম ধরে ডাকা যায় না । ‘মাকে আম্মাসাহেবানী’, বাপকে ‘শ্রদ্ধেয় পিতা’ এবং ভাইকে ‘ভাইজান’ ইত্যাদি শব্দাবলীর দ্বারা অভিহিত করা হয় । কেউ যদি নিজের মাকে ‘বাপের বউ’ বাপকে ‘মার স্বামী’ বলে অভিহিত করে’ কিংবা তাদের নাম ধরে ডাকে’ বা ‘ভাই’ ইত্যাদি বলে আহবান করে’ তাকে বেআদব’ অভদ্র বলা হবে’ যদিও কথাগুলো সত্য । তার সম্পর্কে বলা হবে -সমতাসূচক শব্দাবলী দ্বারা কেন সে মরুব্বীদের সম্বোধন করলো? আর হুজুর (আলাইহিস সালাম) হচ্ছেন আল্লহ পাকের সর্ব শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি, তাঁর নাম ধরে ডাকা, বা তাঁকে ‘ভাই’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করা নিশ্চিতরূপে ‘হারাম’। ঘরের মধ্যে বোন, মা, স্ত্রী ও কন্যা সবেই মেয়ে লোক কিন্তু তাদের নাম, কাজকর্ম ও তাদের সাথে আচরণের রীতি-নীতি ভিন্ন। কেউ যদি মাকে স্ত্রী বলে বা স্ত্রীকে মা ডাকে, সে বেঈমান ; যে ব্যাক্তি তাদের সবাইকে একই দৃষ্টিভঙ্গি দেখে, সে ‘মরদুদ’। অনুরূপ, যে নবীকে উম্মত ও উম্মতের কাউকে নবীর মত মনে করে, সে ‘মলউন’ (অভিশপ্ত) । দেওবন্দীগণ নবীকে উম্মতের সমপর্যায়ে নিয়ে এসেছে বা তাদের পথের দিশারী/নেতা মওলী ইসমাঈল, সৈয়দ আহমদ বেরলবীকে নবীর স্তরে নিয়ে গেছেন । খোদা মাফ করুন । (‘সিরাতুল সুস্তাকীম’ গ্রন্থের সমাপ্তি পর্ব দ্রষ্টব্য)
৩। মহান আল্লাহ তায়ালা যাকে কোন বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন, তাঁকে সাধারণের জন্য ব্যবহৃত উপাধি দ্বারা আহবান করা তাঁর উচ্চ পদ মর্যাদাকে অস্বীকার করার নামান্তর । পার্থিব সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যদি ‘নবাব’ বা খান ‘বাহাদুর’ খেতাব পান, তাহলে তাকে ‘মানুষ’ ,মানব সন্তান’ বা ‘ভাই’ ইত্যাদি বলে ডাকা তথা তাঁর প্রপ্ত উপাধির মাধ্যমে না ডাকা অপরাধ হিসেবে গণ্য । কারণ এ ধরনের আচরণ দ্বারা সরকার প্রদত্ত উপাধিসমূহের প্রতি তার অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে । তাহলে যে মহান সত্ত্বাকে আল্লাহ তা’আলা ‘নবী-রাসুল’ ইত্যাদি উপাধিকে ভূষিত করেছেন’ তাকে ওসব উপাধি বাদ দিয়ে ‘ভাই’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করা মারাত্মক অপরাধ ।
৪। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা মহা প্রতিপালক হয়েও যেখানে কুরআন করীমের মধ্যে হুযুর (আলাইহিস সালাম) কে ‘হে মুহাম্মদ’ হে ‘মুমিনদের ভাই’ বলে সম্বোধন করেননি, বরং ‘হে নবী’ ‘হে রাসুল’ হে কম্বলাবৃত বন্ধু’ ‘হে চাদর পরিহিত বন্ধু প্রভৃতি প্রিয়-উপাধিসমূহ দ্বারা সম্বোধন করেছেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের মত গোলামদের তাঁকে মানুষ’ বা ভাই’ বলে আখ্যায়িত করার কি অধিকার আছে?
৫ । কুরআন মক্কার কাফিরদের চিরাচরিত প্রথার বর্ণনা দিচ্ছে-
قَالُوْا مَا اَنْتُمْاِلَّابَشَرٌ مِّثْلُنَا لَئِنْ اَطَعْتُمْ بَشْرً امِثْلَكُمْ اِىَّكُمْ اِذًا لَّخَسِرُوْنَ
(তাঁরা বলত, আপনারা আমাদেরই মত মানুষ বৈ অন্য কিছু নন)। (তোমরা যদি তোমাদের মত একজন মানুষের কথা মত চল, তাহলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য ।) ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এ ধরনের আরও অনেক আয়াত আছে । এভাবে সমতা বিধান বা আম্বিয়ায়ে কিরামের মান-সম্মান খর্ব করা ইবলীসের রীতি । সে বলেছিল –
خَلَقْتَنِىْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَهُ مِنْ طِيْنٍ
[হে খোদা! তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে, আর তাকে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি করেছে মাটি থেকে।] এ কথার তাৎপর্য হলো আমি তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ।’ এরূপ আমাদের ও পয়গাম্বরদের মধ্যে কি পার্থক্য আমরা যেমন মনুষ তাঁরাও সেরূপ মানুষ বরং আমরা জীবিত, তারা মৃত এসব ইবলীসী কথা ও ধ্যান ধ্যারণা । -সুত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড-
[ad_2]
Source link